আপনজনের প্রতি অভিমান কার না হয়! শিশুরাও ব্যতিক্রম নয়। অভিমান হয় তাদেরও। তবে অভিমান যখন স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন শিশু নিজেও ভোগে ভালো না লাগার এক অনুভূতিতে, আর তার আপনজনেরাও তাকে নিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, শিশুর অতি অভিমানী হয়ে ওঠার দায়টা অনেকাংশেই তার আপনজনদের ওপর বর্তায়।

পুষ্টি, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষার মতোই শিশুর মনের প্রতি যত্নশীল হতে হয় অভিভাবকদের। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের কাছে শিশুর মনের চাহিদা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু শিশুর অনুভূতিকে তার মতো করে বোঝার চেষ্টা করা খুব জরুরি। নইলে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা ব্যাহত হয়। সে হয়ে ওঠে অতি অভিমানী। এর জের চলতে থাকে কৈশোরে-তারুণ্যেও। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা.

টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ

কারণগুলো জানা থাক

ছোটখাটো নেতিবাচক কথাই শিশুর মনোজগতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ভালো কাজের জন্য প্রশংসার তেমন চল না থাকলেও দুষ্টুমির জন্য কড়া শাসন ঠিকই জোটে। হঠাৎ করে ফেলা দুষ্টুমির জন্য অভিভাবক কিংবা শিক্ষক যদি কটু কথা শোনান, তাতে শিশুর বেশ অভিমান হতে পারে। শারীরিক গড়ন, একাডেমিক ফলাফল কিংবা অন্য কোনো কারণে শিশুর আত্মমর্যাদা কম থাকলেও সে হয়ে উঠতে পারে অতিরিক্ত অভিমানী। নানান বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি সহপাঠী বা খেলার সঙ্গীদের কাছ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে অভিমান হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। পারিবারিক বিদ্বেষও শিশুকে অভিমানী করে তোলে। তা ছাড়া যে শিশুর মা কিংবা বাবা অতি অভিমানী ছিলেন, সে–ও অতি অভিমানী হতে পারে জিনগত কারণে।

যদি আপনার শিশুটি অতিরিক্ত অভিমানী হয়

কারণটা খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ীই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তবে অভিমান বা আবেগের মুহূর্তে শিশুকে কিছু বোঝাতে যাওয়া বা তার কাছে কিছু জানতে চাওয়া ঠিক নয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে কথা বলুন। অভিমানের কারণ খোঁজার সময় অবশ্যই শিশুর প্রতি সহমর্মী হতে হবে। তার আবেগের মূল্য দিন। রেগে যাবেন না। কড়া স্বরে কথা বললে কিংবা ধমক দিলে হিতে বিপরীত হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, তাকে যেন অতি অভিমানী কিংবা অতিরিক্ত জেদি হিসেবে আখ্যায়িত করা না হয়। সে বাড়াবাড়ি করছে এটা বলা হলে সে মানসিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আপনার চোখে যা বাড়াবাড়ি, সে তা করছে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই। এটি তার দোষ নয়। বরং পরিস্থিতির কারণেই সে এমন আচরণ করছে।

আরও পড়ুনদুই বছরে এসে শিশুরা কেন জেদি আর রাগী হয়? ০৪ অক্টোবর ২০২৩কারণ বুঝে সমাধান

শিশুর মনোকষ্ট দূর করতে চেষ্টা করুন। শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলুন বাড়িতে। প্রয়োজনে শিক্ষকের সঙ্গেও আলাপ করুন। সমবয়সী অন্য শিশুর আচরণে নেতিবাচকতা থাকলে আপনি হয়তো তা শোধরাতে সক্ষম হবেন না। তবে আপনার সন্তানকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলতে পারেন। কারও কারও ক্ষেত্রে মনোরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে।

সমাধান না করলে

অতি অভিমানী শিশু বড় হওয়ার পরও এর জের রয়ে যায়। আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আরও কমে যায়। মনের জোর কম থাকে। মানসিক অশান্তি, হতাশা বা দুশ্চিন্তাতেও ভুগতে হতে পারে। বন্ধুত্ব এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অভিভাবক এবং শিক্ষকের জন্য

শিশু পালনের জন্য শিশুর সঙ্গে আবেগীয় সংযোগ ভীষণ জরুরি। শিশুর সঙ্গে কোমল স্বরে কথা বলুন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন। শিশু যেন আপনাকে ভয় না করে, বরং তার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটি হোক ভালোবাসার। বাড়ি যেন শিশুর জন্য স্বস্তির জায়গা হয়। শিক্ষক একটি শিশুর জীবন বদলে দিতে পারেন। স্বপ্ন দেখাতে পারেন তাকে। স্কুল হোক আনন্দময়। ভালো কাজের প্রশংসার রীতি গড়ে উঠুক সব জায়গায়। দুষ্টুমি তো শৈশবেরই এক সহজসরল বৈশিষ্ট্য। সব শিশু একই রকম হবে না, তবে ভালোবেসে বুঝিয়ে বললে যেকোনো শিশুকে খারাপ দিক থেকে ফেরানো সহজ। ভালোবাসায় পূর্ণ হোক সবার শৈশব।

আরও পড়ুনশিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি কমানোর এখনই সময়২৪ জুলাই ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শ র মন র জন য আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

অতি অভিমানী শিশুকে সামলাবেন যেভাবে

আপনজনের প্রতি অভিমান কার না হয়! শিশুরাও ব্যতিক্রম নয়। অভিমান হয় তাদেরও। তবে অভিমান যখন স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন শিশু নিজেও ভোগে ভালো না লাগার এক অনুভূতিতে, আর তার আপনজনেরাও তাকে নিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, শিশুর অতি অভিমানী হয়ে ওঠার দায়টা অনেকাংশেই তার আপনজনদের ওপর বর্তায়।

পুষ্টি, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষার মতোই শিশুর মনের প্রতি যত্নশীল হতে হয় অভিভাবকদের। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের কাছে শিশুর মনের চাহিদা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু শিশুর অনুভূতিকে তার মতো করে বোঝার চেষ্টা করা খুব জরুরি। নইলে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা ব্যাহত হয়। সে হয়ে ওঠে অতি অভিমানী। এর জের চলতে থাকে কৈশোরে-তারুণ্যেও। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ

কারণগুলো জানা থাক

ছোটখাটো নেতিবাচক কথাই শিশুর মনোজগতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ভালো কাজের জন্য প্রশংসার তেমন চল না থাকলেও দুষ্টুমির জন্য কড়া শাসন ঠিকই জোটে। হঠাৎ করে ফেলা দুষ্টুমির জন্য অভিভাবক কিংবা শিক্ষক যদি কটু কথা শোনান, তাতে শিশুর বেশ অভিমান হতে পারে। শারীরিক গড়ন, একাডেমিক ফলাফল কিংবা অন্য কোনো কারণে শিশুর আত্মমর্যাদা কম থাকলেও সে হয়ে উঠতে পারে অতিরিক্ত অভিমানী। নানান বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি সহপাঠী বা খেলার সঙ্গীদের কাছ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে অভিমান হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। পারিবারিক বিদ্বেষও শিশুকে অভিমানী করে তোলে। তা ছাড়া যে শিশুর মা কিংবা বাবা অতি অভিমানী ছিলেন, সে–ও অতি অভিমানী হতে পারে জিনগত কারণে।

যদি আপনার শিশুটি অতিরিক্ত অভিমানী হয়

কারণটা খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ীই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তবে অভিমান বা আবেগের মুহূর্তে শিশুকে কিছু বোঝাতে যাওয়া বা তার কাছে কিছু জানতে চাওয়া ঠিক নয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে কথা বলুন। অভিমানের কারণ খোঁজার সময় অবশ্যই শিশুর প্রতি সহমর্মী হতে হবে। তার আবেগের মূল্য দিন। রেগে যাবেন না। কড়া স্বরে কথা বললে কিংবা ধমক দিলে হিতে বিপরীত হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, তাকে যেন অতি অভিমানী কিংবা অতিরিক্ত জেদি হিসেবে আখ্যায়িত করা না হয়। সে বাড়াবাড়ি করছে এটা বলা হলে সে মানসিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আপনার চোখে যা বাড়াবাড়ি, সে তা করছে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই। এটি তার দোষ নয়। বরং পরিস্থিতির কারণেই সে এমন আচরণ করছে।

আরও পড়ুনদুই বছরে এসে শিশুরা কেন জেদি আর রাগী হয়? ০৪ অক্টোবর ২০২৩কারণ বুঝে সমাধান

শিশুর মনোকষ্ট দূর করতে চেষ্টা করুন। শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলুন বাড়িতে। প্রয়োজনে শিক্ষকের সঙ্গেও আলাপ করুন। সমবয়সী অন্য শিশুর আচরণে নেতিবাচকতা থাকলে আপনি হয়তো তা শোধরাতে সক্ষম হবেন না। তবে আপনার সন্তানকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলতে পারেন। কারও কারও ক্ষেত্রে মনোরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে।

সমাধান না করলে

অতি অভিমানী শিশু বড় হওয়ার পরও এর জের রয়ে যায়। আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আরও কমে যায়। মনের জোর কম থাকে। মানসিক অশান্তি, হতাশা বা দুশ্চিন্তাতেও ভুগতে হতে পারে। বন্ধুত্ব এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

অভিভাবক এবং শিক্ষকের জন্য

শিশু পালনের জন্য শিশুর সঙ্গে আবেগীয় সংযোগ ভীষণ জরুরি। শিশুর সঙ্গে কোমল স্বরে কথা বলুন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন। শিশু যেন আপনাকে ভয় না করে, বরং তার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটি হোক ভালোবাসার। বাড়ি যেন শিশুর জন্য স্বস্তির জায়গা হয়। শিক্ষক একটি শিশুর জীবন বদলে দিতে পারেন। স্বপ্ন দেখাতে পারেন তাকে। স্কুল হোক আনন্দময়। ভালো কাজের প্রশংসার রীতি গড়ে উঠুক সব জায়গায়। দুষ্টুমি তো শৈশবেরই এক সহজসরল বৈশিষ্ট্য। সব শিশু একই রকম হবে না, তবে ভালোবেসে বুঝিয়ে বললে যেকোনো শিশুকে খারাপ দিক থেকে ফেরানো সহজ। ভালোবাসায় পূর্ণ হোক সবার শৈশব।

আরও পড়ুনশিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি কমানোর এখনই সময়২৪ জুলাই ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ