অতি অভিমানী শিশুকে সামলাবেন যেভাবে
Published: 30th, April 2025 GMT
আপনজনের প্রতি অভিমান কার না হয়! শিশুরাও ব্যতিক্রম নয়। অভিমান হয় তাদেরও। তবে অভিমান যখন স্বাভাবিকতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন শিশু নিজেও ভোগে ভালো না লাগার এক অনুভূতিতে, আর তার আপনজনেরাও তাকে নিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। তবে মনে রাখা প্রয়োজন, শিশুর অতি অভিমানী হয়ে ওঠার দায়টা অনেকাংশেই তার আপনজনদের ওপর বর্তায়।
পুষ্টি, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষার মতোই শিশুর মনের প্রতি যত্নশীল হতে হয় অভিভাবকদের। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের কাছে শিশুর মনের চাহিদা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু শিশুর অনুভূতিকে তার মতো করে বোঝার চেষ্টা করা খুব জরুরি। নইলে তার আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা ব্যাহত হয়। সে হয়ে ওঠে অতি অভিমানী। এর জের চলতে থাকে কৈশোরে-তারুণ্যেও। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা.
ছোটখাটো নেতিবাচক কথাই শিশুর মনোজগতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ভালো কাজের জন্য প্রশংসার তেমন চল না থাকলেও দুষ্টুমির জন্য কড়া শাসন ঠিকই জোটে। হঠাৎ করে ফেলা দুষ্টুমির জন্য অভিভাবক কিংবা শিক্ষক যদি কটু কথা শোনান, তাতে শিশুর বেশ অভিমান হতে পারে। শারীরিক গড়ন, একাডেমিক ফলাফল কিংবা অন্য কোনো কারণে শিশুর আত্মমর্যাদা কম থাকলেও সে হয়ে উঠতে পারে অতিরিক্ত অভিমানী। নানান বিষয়ে অভিভাবক, শিক্ষক এমনকি সহপাঠী বা খেলার সঙ্গীদের কাছ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে শুনতে অভিমান হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। পারিবারিক বিদ্বেষও শিশুকে অভিমানী করে তোলে। তা ছাড়া যে শিশুর মা কিংবা বাবা অতি অভিমানী ছিলেন, সে–ও অতি অভিমানী হতে পারে জিনগত কারণে।
যদি আপনার শিশুটি অতিরিক্ত অভিমানী হয়কারণটা খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ীই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তবে অভিমান বা আবেগের মুহূর্তে শিশুকে কিছু বোঝাতে যাওয়া বা তার কাছে কিছু জানতে চাওয়া ঠিক নয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে কথা বলুন। অভিমানের কারণ খোঁজার সময় অবশ্যই শিশুর প্রতি সহমর্মী হতে হবে। তার আবেগের মূল্য দিন। রেগে যাবেন না। কড়া স্বরে কথা বললে কিংবা ধমক দিলে হিতে বিপরীত হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, তাকে যেন অতি অভিমানী কিংবা অতিরিক্ত জেদি হিসেবে আখ্যায়িত করা না হয়। সে বাড়াবাড়ি করছে এটা বলা হলে সে মানসিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আপনার চোখে যা বাড়াবাড়ি, সে তা করছে নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই। এটি তার দোষ নয়। বরং পরিস্থিতির কারণেই সে এমন আচরণ করছে।
আরও পড়ুনদুই বছরে এসে শিশুরা কেন জেদি আর রাগী হয়? ০৪ অক্টোবর ২০২৩কারণ বুঝে সমাধানশিশুর মনোকষ্ট দূর করতে চেষ্টা করুন। শিশুবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলুন বাড়িতে। প্রয়োজনে শিক্ষকের সঙ্গেও আলাপ করুন। সমবয়সী অন্য শিশুর আচরণে নেতিবাচকতা থাকলে আপনি হয়তো তা শোধরাতে সক্ষম হবেন না। তবে আপনার সন্তানকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলতে পারেন। কারও কারও ক্ষেত্রে মনোরোগবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
সমাধান না করলেঅতি অভিমানী শিশু বড় হওয়ার পরও এর জের রয়ে যায়। আবেগ নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আরও কমে যায়। মনের জোর কম থাকে। মানসিক অশান্তি, হতাশা বা দুশ্চিন্তাতেও ভুগতে হতে পারে। বন্ধুত্ব এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অভিভাবক এবং শিক্ষকের জন্যশিশু পালনের জন্য শিশুর সঙ্গে আবেগীয় সংযোগ ভীষণ জরুরি। শিশুর সঙ্গে কোমল স্বরে কথা বলুন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন। শিশু যেন আপনাকে ভয় না করে, বরং তার সঙ্গে আপনার সম্পর্কটি হোক ভালোবাসার। বাড়ি যেন শিশুর জন্য স্বস্তির জায়গা হয়। শিক্ষক একটি শিশুর জীবন বদলে দিতে পারেন। স্বপ্ন দেখাতে পারেন তাকে। স্কুল হোক আনন্দময়। ভালো কাজের প্রশংসার রীতি গড়ে উঠুক সব জায়গায়। দুষ্টুমি তো শৈশবেরই এক সহজসরল বৈশিষ্ট্য। সব শিশু একই রকম হবে না, তবে ভালোবেসে বুঝিয়ে বললে যেকোনো শিশুকে খারাপ দিক থেকে ফেরানো সহজ। ভালোবাসায় পূর্ণ হোক সবার শৈশব।
আরও পড়ুনশিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি কমানোর এখনই সময়২৪ জুলাই ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ শ র মন র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’