পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা
Published: 9th, November 2025 GMT
নতুন পে কমিশন গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার-এ কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
রবিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এবং অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “পে কমিশনের বিষয়ে আমরা এখন কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি আগামী সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, প্রাথমিক কাজগুলো শুরু হয়েছে। পরবর্তী সরকার চাইলে এটি বাস্তবায়ন করতে পারবে।”
আইএমএফ আলোচনা ও সংস্কার অগ্রগতি
আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) সঙ্গে চলমান আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, আগামী ১৫ নভেম্বর সংস্থাটির সঙ্গে তার চূড়ান্ত আলোচনা হবে। “আইএমএফের সঙ্গে আমার জুম মিটিং হয়েছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। তারা মনে করছে আমরা যেভাবে সংস্কার ও সমন্বয়ের কাজ করছি, সেটা ইতিবাচক,” বলেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, “ওদের কিছু সুপারিশ আছে, যেমন রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এটা আমি স্বীকার করি—আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত এখনো কম। এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। অনেক মানুষ ট্যাক্স দিতে চায় না, আবার এনবিআর দুই মাস বন্ধ থাকার কারণে রাজস্ব আয়ে ধাক্কা লেগেছে। আমরা এখন তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
অর্থ উপদেষ্টা জানান, আইএমএফ সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে। “বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও খাদ্য খাতে ব্যয় বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে তারা। খাদ্যখাতে আমরা তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছি,” বলেন তিনি।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের অবস্থা
নির্বাচনের তিন মাস বাকি, এমন প্রেক্ষাপটে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে আমরা যা করেছি, সেটাকে সুসংগঠিত করাই এখন লক্ষ্য। সংস্কার তো একদিনে শেষ করা যায় না, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা এটিকে একটি সমন্বিত প্যাকেজ আকারে সাজিয়ে আগামী সরকারের কাছে হস্তান্তর করব।”
তিনি আরও জানান, রাজস্ব সংস্কারের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। “কিছু অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদকে নিয়ে কমিটি করেছি, তারা স্বাধীনভাবে সুপারিশ দেবেন,” বলেন তিনি।
ব্যাংকিং খাতই বড় চ্যালেঞ্জ
দেশের ব্যাংকিং খাতকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমরা পদক্ষেপ নেব। এসব কার্যক্রম পরবর্তী সরকারের জন্য একটি দিকনির্দেশনা তৈরি করবে।”
আইএমএফের পরবর্তী কিস্তি
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আইএমএফের ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি পাওয়া যাবে কিনা—এমন প্রশ্নে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি যে, এখন কিস্তি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আইএমএফ চায় নতুন রাজনৈতিক সরকার আসার পর তারা রিভিউ সম্পন্ন করুক। ফেব্রুয়ারির দিকে, নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে, তারা পুনরায় পর্যালোচনায় আসবে এবং এরপর সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি বলেন, “আমরা যা যা সংস্কার করছি, আইএমএফ তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা দেখতে চায় নতুন সরকার কতটা ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। সেটিই এখন মূল বিষয়।”
ঢাকা/এএএম//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইএমএফ র সরক র র পরবর ত
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে ভূমি অফিসে গ্রাহক হয়রানী, দেড় মাস ধরে বন্ধ নামজারী
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেল অফিসে দেড় মাস ধরে নামজারি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে গ্রাহকদের সেবায় হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।
এলআর (লোকাল রিলেশন্স) ফান্ডের টাকা নিয়ে এসিল্যান্ড ও ওই কার্যালয়ের কর্মচারীদের মধ্যে দ্বন্দে নামজারী বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
ভূমি কার্যালয়ে সেবা গ্রহিতাদের দাবি, নামজারি বন্ধ থাকার কারণে জমি রেজিষ্ট্রি বন্ধ হয়ে আছে। ফলে তাদের দূরারোগের চিকিৎসা,মেয়ের বিয়েসহ আর্থিক জরুরী কাজ কর্ম করতে পারছেন না।
জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা অঞ্চল গঠিত। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের সোনারগাঁওয়ে একটি ভূমি কার্যালয় ছিল। পরবর্তীতে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধির জন্য ২০২৩ সালে জামপুর,সাদিপুর,নোয়াগাঁও, বারদী ও কাঁচপুর ইউনিয়নকে আলাদা করে কাঁচপুর সার্কেল অর্ন্তভূক্ত করা হয়।
বিগত সময়ে কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেলে ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে পরিচালিত হলেও বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড ফাইরুজ তাসনিম যোগদানের পর থেকে জটিলতা তৈরি হয়। ওই রাজস্ব সার্কেল অফিসে সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এলআর ফান্ডের টাকা বন্টন নিয়ে এসিল্যান্ড ও কর্মচারীদের মধ্যেদ্বন্ধ তৈরি হয়।
বিগত দিনে এলআর ফান্ড থেকে মাস শেষে এসিল্যান্ড ৫০শতাংশ ও কর্মচারী, অফিস খরচ এবং ওমেদারদের সম্মানী বাবদ ৫০ শতাংশ খচর করা হতো। এসিল্যান্ড ফাইরুজ তাসনিম যোগদান করার পর এলআর ফান্ড থেকে ৭০শতাংশ তিনি দাবি করেন।
কর্মচারীরা ৩০ শতাংশ টাকায় তাদের খরচ যোগান দেওয়া সম্ভব না বলে দাবি করেন। এসিল্যান্ড তার ৭০শতাংশ টাকা ছাড়া তিনি কোন নামজারি করবেন না বলে কর্মচারীদের জানিয়ে দেন। ফলে দেড় মাস ধরে নামজারি বন্ধ হয়ে আছে। এসিল্যান্ডের আইডি থেকে দেড় মাস ধরে সেকেন্ড অর্ডার দিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কার্যালয়ে এক কর্মচারী জানান, এসিল্যান্ড আসার পর ওই কার্যালয়ে ওমেদারদের অপসারণ করা হয়। এলআর ফান্ডের টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে মনমালিন্য হয়। তাই নামজারী হচ্ছে না। তবে দু’একটি নামজারী হলেও সেগুলো মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে গোপনে হচ্ছে।
হুমায়ুন কবির নামে এক সেবা গ্রহিতার দাবি, বর্তমানে এলআর ফান্ডের টাকা দ্বিগুন করা হয়েছে। আগে নামজারির জন্য নামজারি থেকে নামজারি করতে হলে আড়াই হাজার টাকা দিতে হতো। এখন ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। মূলজোত থেকে আগে বিঘা প্রতি ৫ হাজার দিতে হতো। এখন সেটা ১১হাজার করা হয়েছে। বর্তমান এসিল্যান্ড যোগদান করার পর থেকে এ নিয়ম করা হয়েছে। ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়গুলোতেও দ্বিগুন টাকা নেওয়া হয়েছে।
সেবা গ্রহিতাদের দাবি, এক/দেড় মাস আগে নামজারির আবেদন করেছেন। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নামজারী দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিলেও এসিল্যান্ড সেকেন্ড অর্ডার করছেন না। ফলে নামজারী করার প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় ধাপে আটকে আছে। এসব সমাধানের জন্য কেউ দেখার নেই।
সেবা গ্রহিতার আব্দুল মজিদ মিয়া জানান, বারদী ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের আওতায় লাধুরচর মৌজায় তার ২৬ শতাংশ জমি নামজারির জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে আবেদন করেছেন। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা প্রস্তাব পাঠালেও এসিল্যান্ড সেকেন্ড অর্ডার না করার কারনে নামজারি হচ্ছে না। ৫দিন এসিল্যান্ড অফিসে ঘুরেও কোন সাড়া পাচ্ছেন না।
কাঁচপুর ইউনিয়নের বেহাকৈর এলাকার তাহমিনা আক্তার জানান, ১৪ই নভেম্বর তার মেয়ের বিয়ে। জমি বিক্রি করে সকল ব্যয় বহন করবেন। জমি নামজারি না হওয়ার তার মেয়ের বিয়েতে ঋণ করতে হচ্ছে। পরবর্তীতে জমি বিক্রি করে ঋণের সুদসহ ফেরত দিবেন।
কাঁচপুর রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাইরুজ তাসনিমকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা নেই। তবে নামজারির রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে। এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।