উন্নত বিশ্বের সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহের মৌলিক পার্থক্য এই যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে রাজনীতি সর্বক্ষেত্রে উপস্থিত থাকে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাবে সেখানে শিক্ষক রাজনীতি আছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব অনেক বেশি। কোন নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা পাবে, কোন নাগরিক স্বাস্থ্যসেবা পাবে না, সেটা সেই স্থানীয় রাজনীতি ধারা সীমাব্ধ করা আছে। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় নাগরিক জীবনের যে সার্টিফিকেশন, সেই সার্টিফিকেশন পেতে সরকারি দপ্তরে সকলকে হানা দিতে হয়। জনসাধারণকে সরকারি অফিস সার্টিফিকেট পেতে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতির আশ্রয় প্রশ্রয় মেনে নিতে হয়। টাকা ছাড়া অথবা দলীয় প্রভাব ছাড়া অথবা ক্ষমতাশীন কারোর কাছে থেকে আনুগত্য প্রকাশ ছাড়া এসব সার্ভিস পাওয়া সাধারণ নাগরিকের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ে। একই সাথে স্বজনপ্রীতি, দলীয় রাজনীতির ব্যবহার, অঞ্চলপ্রীতি, আত্মীয়স্বজনের কাছে থেকে তাদের সঙ্গ লাভ অথবা দলীয় ক্যাডার ব্যবহার করে সর্বত্র দেশের রাজনীতিকে যেভাবে কলুষিত করা হয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে রাজনীতি পরিচয়ের বাইরে সব রকমের নাগরিক সেবা পাওয়া এক ধরণের দুষ্কর। 

নাগরিক জীবনের সব কিছু রাজনীতির মধ্যে নিয়ে আসা উন্নয়শীল বিশ্বের জন্য এক বড় রকমের মাথা ব্যথা। সেইসব দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়নকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সম্পন্ন করার দরুন তৃতীয় বিশ্বের দেশের নাগরিকেরা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অন্য দিক, বাংলাদেশের মত দেশে সব রকমের উন্নয়ন প্রকল্প যা যা ইতো মধ্যে হয়েছে, সেগুলো হয়েছে আবার রাজনৈতিক বিবেচনায়। ফলে নাগরিক সুবিধার জন্য যে ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান আসলে নাগরিকদের সেবা দিয়ে থাকে তার সাথে কোন দলের সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের যোগাযোগ রক্ষা বা অর্থকড়ির বিনিময়ে। মোটা দাগে যাকে আর্থ-সামাজিক দুর্নীতি বলে আখ্যায়িত করা যায়। সে সব দেশে এমন লোক খুবই কম আছে যিনি সরকারি অফিসে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজটি অথবা পাসপোর্টের কাজটি রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যতীত বা অর্থকড়ির বিনিময় ছাড়া খুব সহজেই করে ফেলতে পেরেছেন। এমন সংখ্যা যে নেই! তা না আছে, কিন্তু সেটা খুবই নগণ্য। গড়পড়তা শতকরা ৮০ ভাগের মানুষকে অর্থ দিয়ে অথবা ক্ষমতাশীন কোন মানুষের পরিচয় ব্যবহার করে এইসব নাগরিক কাগজপত্র ম্যানেজ করতে দেখা যায়। রাজনীতি হচ্ছে সেসব দেশের জন্য প্রধান চরিত্র। রাজনীতির বাইরে কোন ব্যক্তিবর্গ কোনো রকম নাগরিক সুবিধা পান না বা পাওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়নি। এটা এক অর্থে উন্নত বিশ্বের সাথে উন্নয়শীল বিশ্বের মৌলিক তফাৎ। 

ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশগুলোতে নাগরিক সুবিধা যে কেউ পেতে পারে অথবা একজন মানুষের সব রকমের নাগরিক সুবিধা দরকার। একজনের হয়তো জন্ম সনদ দরকার, পাসপোর্ট দরকার, হয়তো খাদ্য কর্মসূচির অংশ হওয়া দরকার। অথবা একজন ব্যক্তি নিম্ন আয়ের মানুষ হলে তাকে যেকোনো সরকারি দপ্তরে গিয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে তার ঘরে খাদ্য সংস্থানের আয়োজন হয়তো পূরন হওয়া সম্ভব। সেখানে কোনভাবে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য বিষয় নয়। যে কোন নাগরিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার নাগরিক পরিচিতিই যথেষ্ট। রাজনৈতিক পরিচিয় সেখানে গৌণ।  

তবে সাম্প্রতিক সময়ে উন্নত বিশ্বে নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ হচ্ছে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে অভিবাসন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছে। উন্নত বিশ্বের নাগরিক হতে আসা যে কোন মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের পরিবেশ তৈরি করতে সেসব দেশের রাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। ফলে যে অভিযোগ আমরা করছিলাম, তৃতীয় বিশ্বের দেশে রাজনীতি ছাড়া কোনো রকমের নাগরিক সুবিধা বা নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। এখন দেখা যাচ্ছে যে, তৃতীয় বিশ্বের "সব কিছুর মধ্যে রাজনীতি থাকতে হবে" এমন পরিকল্পনা  উন্নত বিশ্বের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। তৃতীয় বিশ্বের মত উন্নত বিশ্বও এখন নাগরিক পরিচয়ের ক্ষেত্রে, নাগরিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে রাজনীতিকে প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে রুপান্তরিত করার চেষ্টা করছে। 

তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নত বিশ্বে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল যেসব মানুষ অভিবাসী হিসেবে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে, তাদের সেইসব থাকবার জন্য সুযোগ সুবিধা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য এক ধরনের আইনকানুন বিগত বছর ধরে প্রচলিত ছিল। 
উন্নত বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ে এমন এক উগ্র ধানপন্থি রাজনীতির প্রচলন হয়েছে, সেই রাজনীতিতে অভিবাসীদের সুরক্ষায় জন্য যে সব আইনকানুন ছিল, সে সব আইনকানুন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে এমন এক বিশ্ব তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে রাজনীতির বাইরে কোনকিছু কে স্থান দেওয়ার সুযোগ হচ্ছে না। ফলে যেটা দেখা গেল যে সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ট ট্রাম্প যে আমেরিকাতে রাষ্ট্রপ্রতি হয়ে এসেছেন, সেই রাষ্ট্রপ্রতি এদেশের কোটি জনসাধারণকে প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত করছে। 

মার্কিন দেশে কয়েক কোটি অবৈধ নাগরিক রয়েছে যারা নানা সময় সে দেশে পাড়ি দিয়েছে। অবৈধ এই অর্থে যে, এদেশে থাকার বৈধ কাগজপত্র তাদের হাতে নাই। কিন্তু তাদের কাজকর্ম, তাদের নাগরিক হিসেবে এখানে অংশগ্রহণ সেটা কোনোভাবেই আবার নেতিবাচক নয়। তৃতীয় বিশ্ব থেকে আসা এইসব "অবৈধ" নাগরিক আমেরিকার উন্নতির জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আর্থসামাজিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাবলম্বি করে যাচ্ছে। তারা কাগজপত্র নিয়ে আসে নাই কিন্তু এখানে অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা একেবারেই নেই। তারা খুবই স্বল্প মূল্যে এদেশের আবাসন প্রকল্প  বাস্তবায়ন করছে। এদেশের কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। বলা যায়, যত প্রকার কায়গিক শ্রম নির্ভর কর্মসস্থান আছে, তার সর্ব ক্ষেত্রে শ্রমিকের যোগান এই ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের মাধ্যমেই হচ্ছে। মার্কিন দেশের সকল রকমের নিম্ন আয়ের কর্মসংস্থান, খাবার হোটেল, গ্যাস স্টেশন থেকে শুরু করে বড় বড় সুপার মার্কেটে তারা দক্ষতার সাথে দিনের পর দিন কাজ করে যাচ্ছে। এদেশের প্রত্যেকটি বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী থেকে শুরু করে যারা ক্লিনার ছিলো তারা প্রত্যেকেই দক্ষতার সাথে এদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু যে ধরনের রাজনীতি সাম্প্রতিক সময়ে সমগ্র ইউরোপে, আমেরিকায়, কানাডাতে ও অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হয়েছে সেই রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে যে, এই নিম্ন আয়ের মানুষদের আক্রান্ত করার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের যে জীবিকা তাকে রাজনৈতিক মানদন্ডে দেখার রাস্তা তৈরি হচ্ছে। ফলে ডোনাল্ট ট্রাম্পকেও তার রাষ্ট্রপ্রতি হওয়ার শুরুতেই অনেকগুলো বিষয়ে স্বাক্ষর করতে দেখা গেছে যেগুলো প্রকৃতপক্ষে এদেশের শ্রমিক শ্রেণি ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের আসলে কোনোরকম রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে গিয়ে এদেশের বসবাস করার যে পরিবেশ ছিল সেই পরিবেশ হুমকির মুখে ফেলছে। 

তৃতীয় বিশ্বের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের এক ধরনের বোঝাপড়া ছিল যে উন্নত দেশগুলো সাধারণ মানুষকে তার রাজনৈতিক কাঠামোর বাইরে রেখে দেশ চালায়- সে অণুসিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছি বা বের হতে হচ্ছে। যেভাবে হিসেব করেছিলাম যে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট থেকে শুরু করে সবরকমের নাগরিক পরিচিতি অথবা স্বাস্থ্যসেবা অথবা পুলিশি নিরাপত্তা বা আইনগত সাহায্য পাবার অধিকার অথবা স্থানীয় বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়; এইসব নাগরিক সুবিধা পেতে রাজনৈতিভাবে পরিচিতির দরকার হয়। অথবা দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়। আমেরিকাতে এসে সেই পর্যায়ের না হলেও সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা, নাগরিক অধিকার প্রাপ্তদের রাজনীতির মধ্যে নিয়ে আসার রাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্রমশও জন্ম লাভ করছে। 

ফলে মোটা দাগে এই কথা দাঁড়াচ্ছে যে, সারা বিশ্বে যে ধরনের রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে; এই  সংকটের মধ্যে সাধারণ মানুষ যে কোনো ভাবেই রাজনীতির বাইরে থেকে নাগরিক জীবনযাপন করার চেষ্টা করছিল। বলা যায় রাজনীতিকে এক ধরনের সংকট মনে করে রাজনীতির বাইরে থেকে জীবনযাপন করার চেষ্টা করছিল। এখন দেখা যাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ বা উন্নত বিশ্ব সেই রাজনীতির মধ্যে জনগনকে বার বার টেনে আনার চেষ্টা করছে। এতে করে সারা বিশ্বে  রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের যে ধরনের মনোভাব রয়েছে সেটি কোনদিকে নিয়ে যায় সেটি সকলকে ভাবাচ্ছে। রাজনীতির বাইরে গিয়ে আধুনিক বিশ্ব নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পারে কিনা সেটিও নির্ভর করছে বিশ্বনাগরিক মহলে নতুন রাষ্ট্র পদ্ধতির সূচনা হবে কিনা তার উপর। 


নিয়ামত আলী: গ্র্যাজুয়েট টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ন ম ন আয় র ম ন ষ কর র চ ষ ট র র জন ত ক ই র জন ত আম র ক ক পর চ সব দ শ র জন য ন ত কর ধরন র দরক র ইউর প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব

ক্ষমতা বিষয়টি নিছকই এক রাজনৈতিক বা সামাজিক কাঠামো নয়; এটি তীব্রভাবে শাসকের মনস্তত্ত্বের সঙ্গেও যুক্ত, যা শাসকের ব্যক্তিত্বের গভীরতম স্তরকে উন্মোচিত ও বিবর্ধিত করে। যখন একজন নেতার মনস্তত্ত্ব—তাঁর অন্তর্নিহিত আঘাত, তাঁর আত্মমগ্নতা এবং নিরাপত্তাহীনতা একটি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ করতে শুরু করে, তখন রাষ্ট্র আর জনগণের থাকে না, হয়ে ওঠে সেই নেতার ব্যক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক নাটকের মঞ্চ। 

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনকালকে এই ভয়ংকর রূপান্তরের এক ‘পাঠ্যপুস্তকীয়’ উদাহরণ বললে ভুল বলা হবে না। রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিভিন্ন উদাহরণের আলোকে দেখা যাক, কীভাবে একজন নেতার মনস্তত্ত্ব একটি জাতিকে প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, সামাজিক বিভাজন ও চূড়ান্ত নৃশংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আরও পড়ুনফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হলেও ফ্যাসিবাদ যেভাবে থেকে যায়৩১ অক্টোবর ২০২৪‘লার্জার দ্যান লাইফ’ সিনড্রোম

কর্তৃত্ববাদী শাসনের মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি হলো একটি ‘কাল্ট অব পারসোনালিটি’ বা ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি নির্মাণ। রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানী জেরল্ড পোস্টের মতে, আত্মপ্রেমী বা নার্সিসিস্ট নেতারা নিজেদের এক ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ সত্তা হিসেবে কল্পনা করেন; তাঁরা ভাবেন, যাঁদের একটি ঐতিহাসিক বা ঐশ্বরিক মিশন রয়েছে। তাঁরা নিজেদের জাতির ত্রাণকর্তা এবং ইতিহাসের অনিবার্য নায়ক হিসেবে দেখেন। এই আত্ম-অবধারণাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁদের প্রয়োজন হয় অবিরাম প্রশংসা ও প্রশ্নাতীত আনুগত্য।

শেখ হাসিনার শাসনামলে ঠিক এ প্রকল্পই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাস্তবায়িত হয়েছে। তাঁকে ‘উন্নয়নের রূপকার’, ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ থেকে ‘মানবতার মা’ ইত্যাদি বিশেষণে মহিমান্বিত করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে কেবল প্রচারণা হিসেবে দেখলে পুরো বিষয়কে বোঝা যাবে না। বরং এটি ছিল রাষ্ট্র, দল ও নেতাকে একাকার করে ফেলার এক সুচিন্তিত কৌশল, যা কার্ল শ্মিটের ‘সার্বভৌমত্বের’ ধারণাকে মনে করিয়ে দেয়, যেখানে সার্বভৌম নেতাকেই মনে করা হয় আইনের উৎস।

প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে এমন এক বাস্তবতা তৈরি করা হয়, যেখানে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও রাষ্ট্রের স্বার্থ সমার্থক হয়ে ওঠে। তাঁর বাবার ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে ব্যবহার করে এই ব্যক্তিপূজাকে এক আবেগময় ও নৈতিক বৈধতা দেওয়া হয়। এর ফলে তাঁর সমালোচনা আর রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকে না, পরিণত হয় ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বা ‘জাতির পিতার অবমাননা’র মতো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে।

এই একই কৌশল আমরা দেখেছি তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন বা হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবানের মতো নেতাদের ক্ষেত্রেও। যাঁরা জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে নিজেদের প্রশ্নাতীত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আরও পড়ুননুরেমবার্গ থেকে ঢাকা: স্বীকারোক্তির আয়নায় স্বৈরাচার২৩ আগস্ট ২০২৫‘ম্যালিগন্যান্ট নার্সিসিজম’: সমালোচনার প্রতি অসহিষ্ণুতা

মনোবিশ্লেষক এরিখ ফ্রম ও অটো কার্নবার্গ ‘ম্যালিগন্যান্ট নার্সিসিজম’ নামে একটি ধারণার কথা বলেছেন, যা সাধারণ নার্সিসিজমের চেয়েও ভয়ংকর। এর বৈশিষ্ট্য হলো আত্মপ্রেম, প্যারানয়া, সমাজবিরোধী আচরণ ও স্যাডিজম বা পরপীড়নের আনন্দ। এ ধরনের নেতারা সমালোচনাকে কেবল ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবেই দেখেন না; বরং এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখেন। তাঁদের মনোজগতে যেকোনো ভিন্নমতই হলো শত্রুর কারসাজি।

■ শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন এবং তাঁর পতন নিছকই এক রাজনৈতিক ঘটনা নয়; এটিকে বলা যায় ক্ষমতার মনস্তত্ত্বের এক গভীর ও শিক্ষণীয় আখ্যান। ■ গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গায়েবি মামলার পদ্ধতিগত প্রয়োগ প্রমাণ করে, এটি ছিল এক শীতল ও পরিকল্পিত নির্মূল অভিযান। ■ প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে এমন এক বাস্তবতা তৈরি করা হয়, যেখানে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও রাষ্ট্রের স্বার্থ সমার্থক হয়ে ওঠে। 

শেখ হাসিনার শাসনামলে সমালোচনার প্রতি যে চরম অসহিষ্ণুতা দেখা গেছে, তা এই মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোর সঙ্গে মিলে যায়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ছিল এই প্যারানয়ার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র কার্যত জনগণের চিন্তা ও মতপ্রকাশের ওপর এক সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা কায়েম করে। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হান্না আরেন্ট তাঁর দ্য অরিজিনস অব টোটালিটারিয়েনিজম গ্রন্থে দেখিয়েছেন, কীভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থায় আইনকে ন্যায়বিচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় না; বরং তাকে ব্যবহার করা হয় ‘শত্রু’ চিহ্নিতকরণ ও নির্মূলের যন্ত্র হিসেবে।

ডিএসএ ঠিক সে কাজই করেছে। লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যু বা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের হেনস্তা কিংবা ধরুন, সাভারের এক দিনমজুরের ‘আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগবো’ মন্তব্য ধরে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করানোর মতো ঘটনা ঘটেছে খুব নিকট–অতীতেই। সরকারের কাছে সত্য প্রকাশ করা ছিল এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ।

এ অসহিষ্ণুতা কেবল রাজনৈতিক কৌশল নয়; এটি এক গভীর নিরাপত্তাহীনতা ও ভঙ্গুর অহংয়ের প্রতিফলন, যা নিজের নির্মিত বাস্তবতার বাইরে কোনো ভিন্ন সত্যকে সহ্য করতে পারে না।

আরও পড়ুনফ্যাসিবাদের মানদণ্ডে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামল০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫‘হিস্টোরিক্যাল ট্রমা’ এবং প্রতিশোধের রাজনীতি

রাজনৈতিক মনস্তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো নেতাদের ব্যক্তিগত জীবনের আঘাত বা ট্রমা কীভাবে তাঁদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে, তা বিশ্লেষণ করা। ১৯৭৫ সালের ট্র্যাজেডি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব গঠনে একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে।

মনোবিজ্ঞানী ভামিক ভলকানের ‘চুজেন ট্রমা’ তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি গোষ্ঠী বা তার নেতা যখন একটি ঐতিহাসিক আঘাতকে তাদের পরিচয়ের কেন্দ্রীয় অংশ বানিয়ে ফেলে, তখন সেই আঘাতের স্মৃতি তাঁদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।

শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে ১৯৭৫-এর হত্যাকাণ্ড কেবল একটি ব্যক্তিগত শোক ছিল না, এটি পরিণত হয়েছিল এক রাজনৈতিক দর্শনে। তাঁর রাজনৈতিক ‘প্রতিপক্ষ’, বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত আর তাঁর নিছক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকেনি; তারা হয়ে উঠেছিল ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার জীবন্ত প্রতীক। এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি আর ক্ষমতা ভাগাভাগি বা নীতির বিতর্ক থাকেনি; এটি পরিণত হয়েছে এক নৈতিক যুদ্ধে, এক প্রতিশোধের আখ্যানে।

এই ‘প্রতিশোধের রাজনীতি’ আমরা দেখেছি রুয়ান্ডা গণহত্যার পরও, যেখানে বিজয়ী তুতসিদের নেতৃত্বাধীন আরপিএফ তাদের ঐতিহাসিক নিপীড়নের স্মৃতিকে ব্যবহার করে একটি কঠোর ও দমনমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। একইভাবে শেখ হাসিনার সরকারও যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো একটি নৈতিকভাবে অপরিহার্য প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। 

গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গায়েবি মামলার পদ্ধতিগত প্রয়োগ প্রমাণ করে, এটি ছিল এক শীতল ও পরিকল্পিত নির্মূল অভিযান, যার গভীরে কাজ করেছে এক ঐতিহাসিক ক্ষতের প্রতিশোধস্পৃহা।

আরও পড়ুনযে কারণে আওয়ামী লীগ বারবার গণবিরোধী হয়ে ওঠে১১ মার্চ ২০২৫‘আইভরি টাওয়ার সিনড্রোম’: বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্নতা

ক্ষমতার একটি অনিবার্য মনস্তাত্ত্বিক পরিণতি হলো বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, যাকে ‘আইভরি টাওয়ার সিনড্রোম’ বলা হয়। দীর্ঘকাল ধরে প্রশ্নাতীতভাবে ক্ষমতায় থাকার ফলে একজন শাসক স্তাবক, সুবিধাভোগী ও অনুগত আমলাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েন। তাঁরা শাসককে কেবল সে তথ্যই দেন, যা তিনি শুনতে চান। এর ফলে শাসকের চারপাশে একটি প্রতিধ্বনির কক্ষ বা ইকো চেম্বার তৈরি হয়, যেখানে বাইরের জগতের চিত্র প্রবেশ করতে পারে না।

শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার এই সিনড্রোমের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ‘উন্নয়নের জোয়ার’-এর একরৈখিক প্রচারণা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এর আড়ালে থাকা ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, আয়বৈষম্য এবং সাধারণ মানুষের দীর্ঘশ্বাস তাঁদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। তারা এমন এক বিকল্প বাস্তবতায় বাস করত, যা রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ও অনুগত বুদ্ধিজীবীরা তাঁদের জন্য তৈরি করে দিয়েছিল।

 ব্রুস বুয়েনো ডি মেসকুইটা ও অ্যালেস্টার স্মিথ দ্য ডিক্টেটরস হ্যান্ডবুক গ্রন্থে দেখিয়েছেন, স্বৈরশাসকেরা প্রায়ই নিজেদের প্রচারণাকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন এবং জনগণের প্রকৃত মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ হন, যা অবশেষে তাঁদের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল সেই বুদ্‌বুদ ফেটে যাওয়ার মুহূর্ত। শেখ হাসিনা এ আন্দোলনকে তাঁর প্যারানয়েড দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এটি তাঁর বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ‘ষড়যন্ত্র’। তিনি বুঝতে পারেননি যে এটি ছিল দেড় দশক ধরে জমে থাকা পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তাঁর সেই কুখ্যাত ‘রাজাকারের বাচ্চা’ উক্তিটি ছিল এই মনস্তাত্ত্বিক বিচ্ছিন্নতারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা, বঞ্চনা ও স্বপ্নকে পড়তে ব্যর্থ হয়েছিলেন; কারণ, তিনি তখন আর মাটির পৃথিবীতে ছিলেন না, বাস করছিলেন তাঁর ক্ষমতার ‘আইভরি টাওয়ারে’।

শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসন এবং তাঁর পতন নিছকই এক রাজনৈতিক ঘটনা নয়; এটিকে বলা যায় ক্ষমতার মনস্তত্ত্বের এক গভীর ও শিক্ষণীয় আখ্যান। এটি আমাদের দেখায়, কীভাবে একজন নেতার ব্যক্তিগত ট্রমা, আত্মমগ্নতা ও প্রতিশোধস্পৃহা একটি পুরো রাষ্ট্রকে তাঁর নিজের মনস্তাত্ত্বিক প্রতিচ্ছবিতে পুনর্নির্মাণ করতে পারে। তাঁর অধীন বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক ‘নার্সিসিস্টিক’ রাষ্ট্রে, যে রাষ্ট্র বাইরে থেকে দেখতে ছিল উন্নয়নের আলোকসজ্জায় ঝলমলে, কিন্তু ভেতরে ছিল ভয়, বিভাজন ও গভীর নৈতিক ক্ষরণে পরিপূর্ণ।

হাসিনার শাসন আলবেয়ার কামুর ‘ক্যালিগুলা’র কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে একজন সম্রাট তাঁর ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও অর্থহীনতার বোধ থেকে পুরো সাম্রাজ্যকে এক অবিশ্বাস্য নাটকের মঞ্চে পরিণত করেন। শেখ হাসিনার শাসনকাল ছিল তেমনই এক ট্র্যাজেডি, যেখানে ক্ষমতা তার নিরাময়কারী বা রূপান্তরকারী ভূমিকা হারিয়ে পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রে।

হাসিনার শাসন আলবেয়ার কামুর ‘ক্যালিগুলা’র কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে একজন সম্রাট তাঁর ব্যক্তিগত যন্ত্রণা ও অর্থহীনতার বোধ থেকে পুরো সাম্রাজ্যকে এক অবিশ্বাস্য নাটকের মঞ্চে পরিণত করেন। শেখ হাসিনার শাসনকাল ছিল তেমনই এক ট্র্যাজেডি, যেখানে ক্ষমতা তার নিরাময়কারী বা রূপান্তরকারী ভূমিকা হারিয়ে পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসাত্মক অস্ত্রে। ইতিহাস প্রমাণ করে, যে শাসক জনগণের হৃদয়ের ভাষা পড়তে ব্যর্থ হন এবং কেবল নিজের প্রতিবিম্বের প্রেমে মগ্ন থাকেন, তাঁর পতন ইতিহাসের পাতায় এক অবশ্যম্ভাবী অধ্যায় হিসেবেই লেখা থাকে।

এই মনস্তাত্ত্বিক রূপান্তরের সবচেয়ে ভয়ংকর দিকটি হলো, এটি কেবল একজন নেতা বা একটি সরকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি ক্যানসারের মতো পুরো সমাজের নৈতিক কাঠামোতে ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক মনোবিজ্ঞানী আন্দ্রজেজ লোবাচেভস্কি তাঁর পলিটিক্যাল পোনেরোলজি বইয়ে এ প্রক্রিয়াকে ‘বিকারগ্রস্তদের শাসন’ বলে অভিহিত করেছেন, যেখানে একটি সমাজের নেতৃত্ব এবং প্রভাবশালী অবস্থানগুলো ধীরে ধীরে মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের দখলে চলে যায়।

আরও পড়ুন১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণে ডুবিয়ে হাসিনা যেভাবে উন্নয়নের গল্প বানাতেন১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শেখ হাসিনার শাসনামলে ঠিক এ প্রক্রিয়াই ঘটেছিল। রাষ্ট্র যখন নিজেই নিপীড়ককে পুরস্কৃত করে এবং ভিন্নমতকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, তখন সমাজের সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষেরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সততা, সহানুভূতি ও নৈতিক সাহসের পরিবর্তে চাটুকারিতা, নিষ্ঠুরতা ও অন্ধ আনুগত্যই হয়ে ওঠে টিকে থাকার এবং উন্নতি করার একমাত্র উপায়। 

ছাত্রলীগ বা যুবলীগের মতো সংগঠনগুলো হয়ে ওঠে সেই তরুণদের জন্য এক আকর্ষণীয় ক্ষেত্র, যাঁদের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সহিংসতার প্রতি স্বাভাবিক প্রবণতা রয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ, এমনকি বিচার বিভাগেও সেই কর্মকর্তারাই পদোন্নতি পান, যাঁরা নৈতিকতার চেয়ে আনুগত্যকে বড় করে দেখেন।

এর ফলে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রটিই নেতার নার্সিসিজমের এক বর্ধিত সংস্করণে পরিণত হয়। তখন জুলাই-আগস্টের মতো হত্যাকাণ্ড আর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা থাকে না; এটি হয়ে ওঠে সেই বিকারগ্রস্ত ব্যবস্থার এক যৌক্তিক ও অনিবার্য পরিণতি।

আরও পড়ুনজাতিসংঘের প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগের সামনে কী অপেক্ষা করছে১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র ছাত্রদের বুকে গুলি চালায়, তখন তারা আর কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে না; তারা হত্যা করে সেই ‘শত্রু’কে, যা তাদের মহান নেতা তাদের চোখে দেখিয়ে দিয়েছেন। তারা তখন আর রাষ্ট্রের রক্ষক থাকে না, হয়ে ওঠে নেতার মনস্তাত্ত্বিক বিকারের বাস্তবায়নকারী একদল প্রশিক্ষিত ‘জল্লাদ’।

সুতরাং শেখ হাসিনার পতন কেবল একজন ব্যক্তির পতন নয়; এটি একটি প্যাথোক্রেসির পতন। এটি আমাদের দেখায়, ক্ষমতা যখন আত্মমগ্নতার শিকার হয়, তখন তা কেবল গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করে না, একটি জাতির আত্মাকেও কলুষিত করে। 

এই কলুষতা থেকে মুক্তি পাওয়া এক দীর্ঘ ও যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়া। কারণ, যে মনস্তাত্ত্বিক বিষ দেড় দশক ধরে একটি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে, তার নিরাময় কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনেই সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন এক গভীর আত্মোপলব্ধি ও নৈতিক পুনর্জন্ম।

বাংলাদেশের আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কেবল একটি গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্নির্মাণ করা নয়; বরং ক্ষমতার এই আত্মমগ্নতার ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি সুস্থ ও সহানুভূতিশীল সমাজকে পুনরুদ্ধার করা।

আরিফ রহমান, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মী


*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‎ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বেরোবির ৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
  • ব্যাংকিং খাতে আস্থা বাড়াতে নিজের কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগের গল্প বললেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
  • গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
  • রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
  • শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব