ভারতে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৬ জন নিহত
Published: 8th, May 2025 GMT
ভারতের উত্তরকাশীর গঙ্গনানি এলাকার কাছে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ছয়জন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেরাদুন থেকে গঙ্গোত্রী ধামে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।
কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়কের গঙ্গনানি এলাকার কাছে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ, এসডিআরএফ, অগ্নিনির্বাপণ, চিকিৎসা ও বিপর্যয় মোকাবিলায় নিয়োজিত অন্যান্য কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
হেলিকপ্টারটি হেলি অ্যারোট্রান্স কোম্পানির। সকালে দেরাদুনের সহস্রধারা হেলিপ্যাড থেকে হরশিল যাওয়ার উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে এটি। হেলিকপ্টারে পাইলটসহ মোট সাতজন ছিলেন। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
পুলিশ জানায়, যাত্রীদের মধ্যে চারজন মুম্বাইয়ের ও দুজন অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ (পাইলট)। ৫১ বছর বয়সী অন্ধ্রপ্রদেশের এক ব্যক্তি আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হেলিকপ্টারটি চার ধাম যাত্রার গঙ্গোত্রী ধামে যাচ্ছিল।
হেলিকপ্টারটি হেলি অ্যারোট্রান্স কোম্পানির। সকালে দেরাদুনের সহস্রধারা হেলিপ্যাড থেকে হরশিল যাওয়ার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে এটি। হেলিকপ্টারে পাইলটসহ মোট সাতজন ছিলেন। ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।এসডিআরএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারটি প্রায় ২০০-২৫০ মিটার গভীর খাদে পড়ে যায়। উদ্ধারকারী দল সেখানে একটি বেজ স্থাপন করে খাদে নেমে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন রবিন সিং। হেলিকপ্টারে সাতজন ছিলেন। একজন পাইলট ও ছয়জন যাত্রী। পুলিশ এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবা ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে এসডিআরএফ উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও একজন
এছাড়াও পড়ুন:
এক যে আছে মন
প্রথম আলো আমার কেউ না। এ কথা ভেবে একবার মনে হয়, ঠিক বলেছি। পরক্ষণেই মনে হয়ে যায়, ঠিক বলিনি। এই ঠিক–বেঠিকের যুক্তিতর্কের ফাঁকে স্মৃতির ঘোড়া দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
স্বাধীনতার পর মুখপাত্র আর স্পোকসম্যান নামে দুটো পত্রিকা প্রকাশিত হতো। সম্ভবত সে দুটো সাপ্তাহিক ছিল। তখন আর্ট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমি। তখন খুব শখ হয়, পত্রিকায় কার্টুন আঁকব। কার্টুন এঁকে এ পত্রিকা–সে পত্রিকায় ঘোরাঘুরি করি। ছোকরা কার্টুনিস্টের কার্টুন কেউ ছাপে না। একদিন মুখপাত্র আর স্পোকসম্যান সামনের পৃষ্ঠায় সে কার্টুন ছেপে দেয়। মানুষের জীবনে এই রকম ভূমিকায় মানুষ বা মানুষের কর্ম বিশেষ হয়ে ওঠে। চিরদিন মনে রাখার মতো এ রকম অসংখ্য বিষয় জীবনে আনন্দের ও অশেষ হয়ে থাকে।
তখন দেশে চারটি দৈনিক খুবই বিখ্যাত ছিল। ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, পূর্বদেশ ও সংবাদ। ইত্তেফাক–এর সামনের পাতায় একদিন দেখি আমার আঁকা কার্টুন ছাপা হয়েছে। পূর্বদেশ–এ রেখে আসা কিছু কার্টুন এক এক করে ছাপা হতে শুরু হয়।
দৈনিক বাংলায় শেষের পাতায় আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রফিকুন নবীর আঁকা ছবি দিয়ে ধারাবাহিক কার্টুন গল্প ছাপা হতো। সে গল্পের নাম ছিল ‘ফাঁদ’। গল্প লিখতেন ‘শাচৌ’ নামের আড়ালে বিখ্যাত শাহাদত চৌধুরী। তখন আমার বয়স কম, সাহস বেশি। পূর্বদেশ–এ গিয়ে প্রস্তাব দিই, চাইলে তারা ওই রকম একটা ধারাবাহিক কার্টুন গল্প চালু করতে পারে। খুব না ভেবে একজন ছোকরা আর্টিস্টের সেই প্রস্তাবে পূর্বদেশ রাজি হয়ে যায়।
আরও পড়ুনপ্রথম আলো সময় ও সমাজের দায় কতটুকু পূরণ করতে পারল০৬ নভেম্বর ২০২৪এসব না–ভোলার মতো স্মৃতি, অনুপ্রেরণা। পূর্বদেশ পত্রিকায় ছোটদের সাহিত্য–সংস্কৃতিচর্চার জন্য ‘চাঁদের হাট’ নামে একটা পৃষ্ঠা ছিল। সে পৃষ্ঠায় ছাপা হওয়া গল্প, কবিতা, ছড়ার জন্য ছবি এঁকে দেওয়ার সুযোগ মিলে যায়। আঁকতে আঁকতে একসময় দেখি, সারা বাংলাদেশের লেখালেখি করা তরুণেরা আমাকে বিশেষভাবে চেনে। এসব সুযোগ পাওয়ায় জীবন সমৃদ্ধ হয়েছে। তার জন্য সময়, মানুষের উদারতা, প্রেরণাদায়ক ভূমিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই যথেষ্ট নয়।
অনেক পরে ঘটে আরও একটা বিশেষ ঘটনা। আনন্দপত্র নামে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা একসময় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেই পত্রিকার সম্পাদক মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে পরিচয় ছিল না। পরিচয় যেদিন হয়, তিনি চমকে দেওয়ার মতো একটা প্রস্তাব করে বসেন, ঈদসংখ্যার জন্য উপন্যাস লিখে দিতে হবে। পারব কি পারব না—এমন দোদুল্যমানতায় লেখা হয়ে গেল প্রথম উপন্যাস ‘বিরহকাল’। এসব ঘটনা জীবনে এনে দিয়েছে অসাধারণত্বের স্বাদ। জীবন সদা মুখর থেকেছে। অনবরত জোগান দিয়ে গেছে আত্মবিশ্বাস।
কবি সিকদার আমিনুল হকের সম্পাদনায় বিপ্লব নামে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হবে, আমাকে সে পত্রিকার শিল্প সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জীবনপথে এসব সুযোগকে নতুন মোড় হিসেবে বিবেচনা করি। একেকটা মোড় জীবনে নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত করেছে, জীবনে এনে দিয়েছে নতুন নতুন উপলব্ধি ও গতি। জীবন দৃঢ় হয়েছে আত্মবিশ্বাসে।
মানুষ সচেতনভাবে বা অসচেতনতায় জনমভর বিশেষত্ব খোঁজে। বোধ করি সে সাহস ও বিশ্বাস নিয়েই জন্ম হয় প্রথম আলোর। প্রথম আলো বহু মানুষের কাছে খুব দ্রুতই পছন্দের হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক। বহুল প্রচারিত দৈনিক হয়ে ওঠার সমস্যা রয়েছে। খুবই সাধারণ একজন মানুষ একদিন কোনো কথা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, এ দেশে মানুষ কিংবা বস্তু বিশেষ হয়ে উঠলে দশ দিকে বিপজ্জনক দশটা দরজা খুলে যায়।আজকের কাগজ যখন বের হবে হবে, তখন সে দৈনিক পত্রিকার জন্য একটা বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করে দেওয়ার প্রস্তাব আসে। সে প্রস্তাব অবাক হওয়ার মতোই; কারণ, সে সময়টাতে দৈনিক পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করার কথা কাউকেও ভাবতে দেখিনি। আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। পূর্ণ স্বাধীনতা পাওয়ার কারণেই সে বিজ্ঞাপনচিত্রের ধারণা চট করে মাথায় এসে যায়।
একজন মানুষকে একটা অন্ধকার ঘরে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে, মানুষটার চোখ–মুখও বাঁধা। নেপথ্য থেকে ভারী কণ্ঠে বলা হয়, হাত বাঁধা নেই, মুখ বাঁধা নেই, আমরা বলতে পারি। সাংবাদিকতায় তরুণ রক্ত প্রবেশ করেছিল বলেই এই বলা ও করতে পারার সাহস, শক্তি মিলেছিল।
জন্ম হলো ভোরের কাগজ–এর। সেখানেও তারুণ্যের উদ্দীপনা। আবার প্রস্তাব আসে, আবারও সুযোগ হলো ভোরের কাগজ–এর জন্য বিজ্ঞাপনচিত্র বানানোর। নতুনেরা নতুনত্ব চায় এবং বুকে বুকে তীব্র সাহস, তাই বিজ্ঞাপনচিত্রের ভাবনা আটকা পড়ল না।
সে বিজ্ঞাপনে দেখানো হবে, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ভোরের কাগজ কেন পড়ে—এ প্রশ্নের মুখে পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারে না কিন্তু সবাই–ই আগ্রহ নিয়ে পত্রিকাটা পড়ে। এমন বিজ্ঞাপন ধারণার কথা আজও কাউকে শোনানো হলে কপালে চট করে ভাঁজ পড়ে যাবে। মন্তব্য করা হবে, যদি পড়ার কোনো কারণ স্পষ্ট করে কেউই না বলতে পারে, সেটা কাগজকে অবশ্যই বিশেষত্বহীন করে দেয়।
আরও পড়ুনস্বাধীন সাংবাদিকতায় অবিচল থাকবে প্রথম আলো০৪ নভেম্বর ২০২৪মানুষ সচেতনভাবে বা অসচেতনতায় জনমভর বিশেষত্ব খোঁজে। বোধ করি সে সাহস ও বিশ্বাস নিয়েই জন্ম হয় প্রথম আলোর। প্রথম আলো বহু মানুষের কাছে খুব দ্রুতই পছন্দের হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক। বহুল প্রচারিত দৈনিক হয়ে ওঠার সমস্যা রয়েছে। খুবই সাধারণ একজন মানুষ একদিন কোনো কথা প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, এ দেশে মানুষ কিংবা বস্তু বিশেষ হয়ে উঠলে দশ দিকে বিপজ্জনক দশটা দরজা খুলে যায়।
একদিন এ বিষয় নিয়ে প্রিয় লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, তুমি যা করছ, সেটা নিয়ে যদি কারও মাথাব্যথা না হয়, ধরে নেবে উল্লেখযোগ্য কিছুই হচ্ছে না। যদি দেখো অনেক মন্দ কথা ছোটাছুটি করছে, মন খারাপ না করে বুঝে নিতে হবে, যা করছ, তা বিশেষ কিছু নিশ্চয়ই হচ্ছে।
আরও পড়ুনবাক্স্বাধীনতা, প্রথম আলো ও আমাদের গণতন্ত্র০৪ নভেম্বর ২০২২তিনি হাসতে হাসতে আরও বলেছিলেন, গাছে ফল থাকলেই মানুষ ঢিল ছোড়ে, শূন্য গাছে ছোড়ে না। যদি কাউকে ছুড়তে দেখে, লোকে নিশ্চয়ই তাকে পাগল ভাববে। এই পর্যন্ত বলে তিনি মুচকি হাসেন এবং অদ্ভুত এক প্রশ্ন করেন, তুমি শিঙাড়া পছন্দ করো? মাথা নেড়ে জানাই, করি। তাঁর মুচকি হাসি বড় হয়ে যায়, আমার খুব আজব লাগে, এ রকম একটা সুখাদ্যের আকৃতি এমন বিদঘুটে কেন? তিন শিংঅলা শক্ত শিঙাড়ায় কামড় দিলে ভেতরে দারুণভাবে রান্না করা নরম সবজি আর চমৎকার ঘ্রাণে মন ভরে যায়।
আমি তখনো বুঝতে পারিনি, হঠাৎ শিঙাড়ার গল্প হাজির করলেন কেন। তিনি বললেন, বাঙালি সর্বদা এবং সর্বত্র আলাদা হতে পছন্দ করে। ঘুরিয়ে প্রশংসা করতে ভালোবাসে। এই শিঙাড়া হচ্ছে বহু বাঙালির চরিত্রের প্রতীক। ওপরে তিনটা শিং দেখালেও ভেতরে লুকানো থাকে সুঘ্রাণ, সুস্বাদ।
আরও পড়ুনপ্রথম আলো, সমাজ ও রাজনীতি০৪ নভেম্বর ২০২৩‘যা কিছু ভালো তার সাথে প্রথম আলো’ কথাটা শুনতে খুব ভালো লাগে কিন্তু একেবারে মন্দবিহীন কি হওয়া যায়! কিছু মন্দ থাকতেই হয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। নির্ভুল, নিখুঁত, নিষ্পাপ, নির্দোষ হলে সেটা দৈনিক পত্রিকার অফিস হয়ে টিকে থাকতে পারত না। জীবিত এবং পবিত্রতম স্থান বিবেচনা করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজির হওয়ার হুলুস্থুল পড়ে যেত।
সেখানে এখনো কলম চলে। প্রার্থনা বা রহম প্রাপ্তির স্থানে পরিণত হয়নি, দলেবলে মানুষ সেখানে আগরবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা, বিপদ থেকে উদ্ধার কিংবা মানত করার জন্য ভিড় জমায় না। লৌকিক–অলৌকিকের পার্থক্য এইভাবে টিকে থাকে।
অনেক পত্রপত্রিকার সঙ্গে আমার আবেগময় নানাবিধ স্মৃতি রয়েছে। সেসব সৌভাগ্য, অসংখ্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা বলে বিবেচনা করি। মনে করে আজও কৃতজ্ঞ হই, আনন্দিত বোধ করি। অনেক ভেবে দেখি, প্রথম আলোর সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্কের কথা মনে করতে পারি না। পারি না, তবু নিজের এবং কাছের বলে অনুভূত হয়।
প্রথম আলোর সার্থকতা বা শক্তি ‘দূরের নই, কাছের’—এই অনুভব মনে মনে, বহু মনে নিঃশব্দে ছড়াতে পেরেছে।
আফজাল হোসেন অভিনেতা, লেখক, নির্দেশক, চিত্রশিল্পী