গত এপ্রিল মাসে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিস।

অ্যাপলের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পরিকল্পনা দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের কারণে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে তাঁরা সতর্ক করেছেন, এই উদ্যোগ ট্রাম্প প্রশাসন ও চীনের কাছ থেকে বাধার মুখে পড়তে পারে।

ক্যানালিসের তথ্যানুসারে, এপ্রিল মাসে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ লাখ আইফোন পাঠানো হয়েছে। একই সময় চীন থেকে আইফোন রপ্তানি প্রায় ৭৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ লাখে। খবর সিএনবিসির

ক্যানালিসের গবেষণা ব্যবস্থাপক লে সুয়ান চিউ বলেন, ‘এপ্রিলের তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অ্যাপল কতটা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে।’ তবে এই প্রক্রিয়া নতুন নয়, কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকেই অ্যাপল ভারতে উৎপাদন ও সংযোজনে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছে।

ক্যানালিসের হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চ মাসেই ভারত প্রথমবার চীনকে পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন রপ্তানিতে এগিয়ে যায়। ওই মাসেই ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতির প্রথম ধাপ কার্যকর হয় ২ এপ্রিল। বিশ্লেষকদের মতে, ওই সময় রপ্তানির পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল মূলত অ্যাপলের মজুত কৌশলের কারণে।

গত ১১ এপ্রিল ট্রাম্পের প্রশাসন আইফোনসহ বিভিন্ন ভোক্তা ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর শুল্কছাড় ঘোষণা করলেও এই প্রবণতা থেমে থাকেনি। মে মাসের শুরুতে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক ঘোষণা দেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে যত আইফোন বিক্রি হবে, তার অধিকাংশই তৈরি হবে ভারতে।

বর্তমানে ট্রাম্পের শুল্কনীতির আওতায় চীন থেকে আসা আইফোনের ওপর অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। অন্যদিকে ভারতসহ বেশির ভাগ দেশের জন্য এই হার ১০ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলেন, মার্চ ও এপ্রিল মাসে ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়টি মূলত অ্যাপলের সরবরাহব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার ফল। সারা বছর এই গতি থাকবে না বলেই শঙ্কা। যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা পূরণে ভারতের উৎপাদন সক্ষমতা এখনো যথেষ্ট নয়। তবে ভারত থেকে আইফোনের সর্বশেষ মডেল ১৬ প্রো রপ্তানি হচ্ছে।

ক্যানালিসের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি প্রান্তিকে আইফোনের চাহিদা প্রায় ২ কোটি ইউনিট—ভারত ২০২৬ সাল নাগাদ এই চাহিদা পূরণ করতে পারবে।

অন্যদিকে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফিউচারাম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ড্যানিয়েল নিউম্যান বলেন, ভারত থেকে রপ্তানির এই পরিসংখ্যান মূলত সংযোজিত ফোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর অর্থ এই নয় যে সম্পূর্ণ উৎপাদনপ্রক্রিয়া বা সরবরাহব্যবস্থা ভারতে চলে এসেছে। আইফোনের চূড়ান্ত সংযোজন চীন থেকে ভারতে স্থানান্তর করা খুব কঠিন নয় বলে মনে করেন তিনি। তবে বেশির ভাগ উপসংযোজন এখনো চীনে হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অ্যাপলের এই কৌশল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয় পক্ষ থেকেই বাধার মুখে পড়তে পারে। নিউম্যান বলেন, ‘অ্যাপলের জন্য এটি যুক্তিসংগত পদক্ষেপ হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য পূরণে এটি যথেষ্ট নয়।’ এ পরিস্থিতিতে অ্যাপল বরং বিপজ্জনক খেলা শুরু করেছে।

গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে ট্রাম্প হুমকি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসা সব আইফোনের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া আইফোন যুক্তরাষ্ট্রেই তৈরি হতে হবে, ভারত বা অন্য কোথাও নয়।

চীনের দিক থেকেও পরিস্থিতি সহজ নয়। তারাও অ্যাপলকে সহজে ছেড়ে কথা বলবে না। নিউম্যান জানান, অ্যাপলকে চীনের পক্ষ থেকে বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, চীন ভারতের প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি ও বিশেষজ্ঞ জনবল পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করছে, যদিও ভারতে অ্যাপলের সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলতে এসব দরকার।

ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বৈশ্বিক প্রযুক্তি গবেষণার প্রধান ড্যান আইভস সিএনবিসিকে বলেন, ভারতের লজিস্টিকস, সরবরাহ ও বিতরণব্যবস্থায় কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও শুল্কযুদ্ধের এই সময় ভারত অ্যাপলের জন্য বড় সহায় হয়ে উঠবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ড্যান আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন উৎপাদনের চিন্তা আমাদের কাছে কল্পকাহিনি মনে হয়। অ্যাপল ভারতের দিকেই এগোবে এবং কুক ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজবেন, কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গি বদলাবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য পল র আইফ ন র ব যবস থ সরবর হ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কাল ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না

ডিএনডি খাল খনন প্রকল্পের আওতায় জরুরি গ্যাস পাইপলাইন স্থানান্তর কাজের জন্য নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

আজ বুধবার তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট ১১ ঘণ্টা নারায়ণগঞ্জের ভুইগড় উত্তরপাড়া, দেলপাড়া, নুরবাগ, শাহী মহল্লা, চিতাশাল, বউবাজার, পাগলা এলাকার সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

একই সময়ে আশপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ থাকতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পানি সংকটে হবিগঞ্জ পৌরবাসী
  • সংশ্লিষ্টদের কেন জবাবদিহি করা হবে না
  • পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন চলছেই, বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নের শঙ্কা
  • নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কাল ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
  • রপ্তানি অর্থায়ন বৃদ্ধিতে বিজিবিএ ও এয়ার৮-এর মধ্যে সমঝোতা
  • মীনা বাজারে পাওয়া যাবে রিমার্কের পণ্য
  • সাভার-নবীনগরের কয়েকটি এলাকায় আজ ৪ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
  • শিল্প খাত বাড়তি ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাবে আজ থেকে 
  • রিমার্ক হারল্যান ও মীনা বাজারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর