দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস–সংকট, ঢাকায় যাচ্ছে না এলএনজি
Published: 19th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের খাজা রোড এলাকার বাসিন্দা রুবি আক্তারের বাসায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রান্না হয়নি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তাঁদের বাসায় গ্যাস নেই। বেলা দুইটার দিকে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। দুপুরে হোটেল থেকে খাবার এনে খেয়েছেন। রাতেও গ্যাস না এলে একই অবস্থা হবে।
শুধু রুবি আক্তার নন, চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নগরের ফিলিং স্টেশনগুলোয়ও গ্যাস নেই। এতে গ্যাসের জন্য যানবাহনের লম্বা লাইন দেখা গেছে। মূলত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে দুই দিন ধরে গ্যাসবাহী জাহাজ ভিড়তে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রামসহ জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। পেট্রোবাংলাও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে।
আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। অন্যটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল। এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দিনে প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। টার্মিনাল থেকে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন মো.
জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় আপাতত আনা যাচ্ছে না। তবে এরই মধ্যে একটি কার্গো টার্মিনালে ভিড়তে পেরেছে। সন্ধ্যার মধ্যেই গ্যাসের চাপ বেড়ে যাবে। আরেকটি কার্গো সন্ধ্যায় যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আজকের মধ্যেই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
দুর্ভোগ নগরজুড়েগ্রাহক ও কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদ, চটেশ্বরী, লালখান বাজার, জামালখান, চেরাগীপাহাড়, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো গ্যাস নেই। অন্যান্য এলাকায় গ্যাস থাকলেও চাপ একেবারে কম।
হালিশহরের বাসিন্দা রোকেয়া বেগমের বাসায় গতকাল বিকেল থেকে গ্যাস নেই। আজ বেলা আড়াইটায় তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, গ্যাস না আসায় রান্না হয়নি। হোটেল থেকে কিনে এনেছেন খাবার। এদিকে নগরের ফিলিং স্টেশনগুলোয়ও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে গ্যাসচালিত যানবাহনগুলো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
জিইসি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ নূরে আলমের বাসায়ও গ্যাস নেই। তাঁরা কেরোসিন তেলের চুলায় রান্না করে কোনোমতে দিন পার করছেন। মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘গ্যাস চলে যাবে জানতাম না। এ কারণে দুর্ভোগটা বেশি পোহাতে হলো। আগে জানলে রান্না করে রাখতে পারতাম।’
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানিটির মহাব্যবস্থাপক মো. শফিউল আজম খান প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে চাহিদা ২৮০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। গতকাল পাওয়া গেছে ২০০ মিলিয়ন। এ কারণে শিল্প ও বাসাবাড়িতে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া নগরের ফিলিং স্টেশনেও গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তবে সার ও বিদ্যুতে গ্যাস যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার বেলা তিনটা থেকে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত কক্সবাজারে ১১২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর পর থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি কিছুটা কম ছিল। ২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে আবার বৃষ্টি বাড়তে থাকে। বর্তমানে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। দমকা হাওয়া বইছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ সরবর হ ব নগর র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম এখনই বাড়ছে না। তবে সংঘাত বেশি দিন হলে তখন একটা প্রভাব পড়বে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে আমাদের দেশের জ্বালানি তেলের দামে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ইরান- ইসরায়েল সংঘাত আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেখেছি, এরইমধ্যে কিছুটা বেড়েছে। তবে যেগুলোতে আমরা অর্ডার করেছি সেগুলোতে প্রভাব ফেলে নাই৷”
তিনি বলেন, “গ্যাস, এলএনজির দাম যদি বেড়ে যায় তাহলে আমরা বিবেচনায় নেবো। আজকে যে এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছি সেটা পুরানো দামেই কোড করেছে। আমাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা আগের দামেই পাবো।”
আপাতত বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না না আপাতত বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন কি না জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “বিশেষ প্রস্তুতি বলতে আজকে আমরা যে এলএনজি, সার আনার প্রস্তাব অনুমোদন দিলাম সেটা পুরানো দামে। ভবিষ্যতে যখন নতুন কোনো কিছু আনবো তখন হয়তো কিছুটা ইফেক্ট পড়বে।”
সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে বিকল্প কিছু চিন্তা করছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বিকল্প চিন্তা বলতে অবশ্যই জ্বালানি মন্ত্রণালয় করছে। যেহেতু আমরা এলএনজির ওপর নির্ভর করি বেশি। জ্বালানি শুধু না, সার, জাহাজ চলাচলেও প্রভাব পড়বে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে জাহাজ আসে সেখানে প্রভাব পড়তে পারে। আমার মনে হয় সংঘাত বেশি দিন চলবে না।”
ঢাকা/হাসনাত/ইভা