বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবারও আদালতে জমা পড়েনি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আগামী ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ নিয়ে ৯০ বার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ পরিবর্তন হলো।

ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন আজ এ দিন ধার্য করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সুইফট পেমেন্ট পদ্ধতি থেকে বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।

চুরির ঘটনার ৩৯ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। আর ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) মাধ্যমে মাত্র ৬৮ হাজার ডলার ফেরত পায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার অন্য উদ্যোগে ফেরত আসে। আরসিবিসিতে থাকা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেয়াপ্ত করে ফেরত আনার বিষয়ে সম্প্রতি আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঝুলে থাকা সেই তরুণকে গুলি করেছিলেন পুলিশের ২ সদস্য

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম কিবরিয়া খান। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা থানায় কর্মরত ছিলেন। এখন বাড্ডা থানায় কর্মরত।

জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রড ধরে ঝুলে থাকা এক তরুণকে গুলি করেছিলেন এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এ ঘটনার ভিডিও তখন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তারিকুল তখন রামপুরা থানায় আর চঞ্চল রামপুরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই খিলগাঁও অঞ্চলের তৎকালীন এডিসি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে রামপুরা থানায় একটি সভা হয়। সেই সভায় ভিডিওটি সবাইকে দেখানো হয়। সেখানে উপস্থিত সবাই ভিডিওটি দেখে এসআই তারিকুল ও এএসআই চঞ্চলকে শনাক্ত করেন।

পরে জানা যায়, ওই তরুণের নাম আমির হোসেন। তিনি তখন আফতাবনগরে একটি দোকানের কর্মী ছিলেন। তাঁর পায়ে ছয়টি গুলি লেগেছিল। তিনি বেঁচে আছেন।

জবানবন্দিতে গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি থানায় ছিলেন। তখন থানার বেতার অপারেটরের মাধ্যমে জানতে পারেন হাবিবুর রহমান (ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার) আন্দোলন দমনে নিলিং পজিশনে (হাঁটু গেড়ে বসে) গিয়ে চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) জুমার নামাজের পরপরই থানার আশপাশের এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা জমায়েত হতে থাকে। সেই পরিস্থিতিতে থানার বেতার অপারেটর আব্দুর রহমান বেতার বার্তার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেন। তখন ওসি বিটিভি ভবন এলাকায় অবস্থান করছিলেন। সেই বার্তা পেয়ে খিলগাঁও অঞ্চলের এডিসি (তৎকালীন) রাশেদুল ইসলাম ও ওসি (তৎকালীন) মশিউর রহমান বিজিবির এপিসি নিয়ে সোয়া দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে রামপুরা থানায় আসেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁদের (রাশেদুল ও মশিউর) নির্দেশনায় আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

এসআই গোলাম কিবরিয়া জবানবন্দিতে বলেন, সেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ফলে বনশ্রী জামে মসজিদের পাশে নাদিম নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ছাড়া রামপুরা থানার পার্শ্ববর্তী রাস্তায় মায়া ইসলাম নামের একজন নিহত এবং মুসা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় বলে জানতে পারেন।

গত বছরের ২১ জুলাই কিংবা ২২ জুলাই তৎকালীন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রামপুরা থানায় এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ভূমিকা রাখার জন্য ওসিকে এক লাখ টাকা নগদ পুরস্কার দেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন গোলাম কিবরিয়া।
পুলিশের আরেক সদস্য কনস্টেবল (এখন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত) আবু বকর সিদ্দিকও এ মামলায় গতকাল জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, এসআই তারিকুল, এএসআই চঞ্চলসহ পাঁচজন আসামি।

এ মামলায় গতকাল কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক নামের আরও একজন জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলাটির পাঁচ আসামি হলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। এর মধ্যে চঞ্চল কারাগারে। বাকি চারজন পলাতক।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ