এমনিতেই দেশে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। এর মধ্যে সরবরাহ আরও কমে যায়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সাগরে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে আজ দিনভর বাসাবাড়ি ও শিল্পে ভোগান্তি চরম আকার নেয়। তবে এদিন সন্ধ্যা থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুই এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। গত সোমবার দেওয়া হয় প্রায় ১০০ কোটি ঘনফুট। সাগর উত্তাল থাকায় মঙ্গলবার থেকে টার্মিনালগুলোতে এলএনজি আমদানি করা কার্গো যুক্ত হতে পারছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনালে মজুত এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন করে লাইনে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। এতে মঙ্গলবার রাত থেকেই সরবরাহ কমতে শুরু করে। বুধবার সন্ধ্যায় সরবরাহ কমে ২০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসে। বৃহস্পতিবারও দিনভর ২০-২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে এলএনজি টার্মিনালগুলো।
দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৮১ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ কমায় মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশজুড়ে সংকট বিরাট আকার ধারণ করে।
আজ সন্ধ্যায় পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা জানান, বিকেলের মধ্যে দুই টার্মিনালে দুটি কার্গো জাহাজ যুক্ত হয়েছে। সন্ধ্যায় এলএনজি সরবরাহ বেড়ে ৬০ কোটি ঘনফুট হয়েছে। সকাল নাগাদ তা ১০০ কোটিতে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা করেন।
ভোগান্তি
ঢাকার গোপীবাগ এলাকার ঝর্ণা রায় বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন, তাঁর বাসায় গ্যাস নেই। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও তাঁর স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে জানান, তাদের এলাকাতেও গ্যাস নেই। চুলা জ্বলছে না। জানতে চাইলে সন্ধ্যায় ঝর্ণা বলেন, সকাল থেকে চুলায় গ্যাস ছিল না বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে একটু চাপ বেড়েছে, তাও চুলা জ্বলার মতো গ্যাস আসেনি। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা রফিকুল জানান, বুধবার রাত থেকেই গ্যাসের চাপ কম ছিল। বৃহস্পতিবার সারাদিন চুলা জ্বলেনি। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে হয়েছে।
ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর অঞ্চলের শিল্পকারখানাগুলোতেও বুধবার থেকে গ্যাসের সংকট বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অধিকাংশ কারখানায় বৃহস্পতিবার দিনভর উৎপাদন বন্ধ ছিল। অনেকে উৎপাদন ধরে রাখতে ডিজেলসহ অন্য বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করেন।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকার গৃহিণী সানজিদা আক্তার জানান, গ্যাস না থাকায় তিনি চুলা জ্বালাতে পারেননি। তাই সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারও আনতে হয় হোটেল থেকে।
হোটেলগুলোতে দেখা যায় খাবার কিনতে যাওয়া মানুষের দীর্ঘ সারি। এ অবস্থা শুধু বহদ্দারহাটের নয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার চিত্রও ছিল এমন। গ্যাসের অভাবে সংকটে পড়ে চট্টগ্রামের কারাখানাগুলোও।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির (কেজিডিসিএল) মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম খান বলেন, তাদের গ্যাস সরবরাহ ২৮ কোটি ঘনফুট ১৬ কোটিতে নেমেছে। এ জন্য সংকট হচ্ছে।
গ্যাসের সংকট দেখা দেয় কুমিল্লাতেও। আজ ভোর থেকে সরবরাহ একেবারে কমে যায়। গ্যাস সংকটে বৃহস্পতিবার বিপাকে পড়েন চাঁদপুর জেলার ২০ হাজার আবাসিক গ্রাহক। বুধবার সকাল থেকে আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। আজ সকাল থেকে একবারে বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁদপুর শহরের মমিনপাড়ার গৃহিণী লাবণী বলেন, সকালে (বৃহস্পতিবার) চুলা ধরাতে গিয়ে দেখি খুবই কম গ্যাস আসছে। সকাল ৯টার দিকে গ্যাস আসা পুরো বন্ধ হয়ে যায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ য স সরবর হ য স সরবর হ ক সরবর হ কম এল ক র ঘনফ ট
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন আনা হবে
বাংলাদেশের তিনটি বড় শিল্পগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক বছরে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সয়াবিনবীজ আমদানি করবে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ ও ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) ও ইউএস সয়ের সঙ্গে দেশীয় তিন প্রতিষ্ঠান আগ্রহপত্র (এলওআই) সই করেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
তানজিমা বিনতে মোস্তফা আরও বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বর্তমানে সয়াবিন আমদানিতে যে শুল্ককাঠামো রয়েছে, তা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। শুল্ককাঠামো ঠিক করা হলে পোলট্রি ও মৎস্য খাতের খাদ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকবে।’
আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি তাদের পণ্যের মান, পরিবহনব্যবস্থা ও স্বচ্ছ নিয়মভিত্তিক বাণিজ্যের কারণে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আগ্রহপত্র বা এলওআই স্বাক্ষর দেশে খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, কৃষিশিল্পকে আরও জোরদার করা এবং টেকসই সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেতানজিমা বিনতে মোস্তফা, পরিচালক, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।সিটি গ্রুপের এমডি মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’
এলওআই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা আসলে দুই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথা বলছি, যেখানে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ৭৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। আর এ বছর তা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে বলে আশা করছি।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী সয়াবিনবীজ আমদানি হয় মূলত ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৮ কোটি ডলারের ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল ৩৫ কোটি ডলারের সয়াবিনবীজ, যা এবার আরও বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।