রাজস্ব খাতের সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে শুল্ক ও কর ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আজ নতুন কমিটি গঠন সংক্রান্ত এ আদেশ জারি করেছে এনবিআর।

কমিটির সদস্যরা হলেন এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এ ম আবুল কালাম কায়কোবাদ, সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট প্রশাসন) ফারজানা আফরোজ, সদস্য (কর অডিট ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশন) আলমগীর হোসেন, সদস্য (কাস্টমস নিরীক্ষা, আধুনিকীকরণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (কর) মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী ও সদস্য (ভ্যাট নীতি) আবদুর রউফ।

এ কমিটি রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির সঙ্গে সমন্বিতভাবে সভা করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে। পরবর্তী সময়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধির পরামর্শ নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।

গত ২৬ মে সরকার ঘোষণা দেয়, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এনবিআর নিয়ে জারি করা অধ্যাদেশের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় আজ একটি কমিটি গঠন করা হলো।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবি মূলত চারটি। প্রথমত, জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা; দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা; তিন, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; চার, এনবিআরে প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ব্যবসায়ী সংগঠন, সুধী সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে রাজস্বব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ট র স সদস য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রলার থেকে নামলেন কয়রার ঘাটে। তিন দিন পর তিনি ফিরেছেন সুন্দরবনের গভীর দুবলারচরের আলোরকোল থেকে। চোখে–মুখে ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে প্রশান্তি।

বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘গতকাল বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে আমরা ফিরতি পথ ধরে আজ লোকালয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার মা আর দিদি—দুজনেই অসুস্থ। তাঁরাও ছিলেন, খুব ভয়ে ছিলাম।’

৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব শেষ হয় গতকাল ভোরে। পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুণ্যস্নান। আলোরকোলের দুই কিলোমিটারজুড়ে তখন শুধু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একসঙ্গে নেমে পড়েন সমুদ্রের জলে। শঙ্খধ্বনি, কীর্তন, ঢাকের বাদ্য আর ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।

কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনোজিত কুমার রায় বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করলে পাপমোচন হয়—এ বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। সৈকতের পাড়ে চোখ বুজে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।’

বন বিভাগের হিসাবে, এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। পূজা-অর্চনা, ভজন ও লীলাকীর্তন শেষে গতকাল ভোরে তাঁরা সাগরে স্নান করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। উৎসব চলাকালে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। গত মঙ্গলবার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে সুমন নামের এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হলেও কোস্টগার্ড পরে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করে।

রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে সাধু হরিভজন প্রথম দুবলারচরের আলোরকোলে রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই আয়োজন লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ আছে।

রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার বেড়ে যায়—এ অভিযোগ পুরোনো। তবে এ বছর বন বিভাগ বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা দমন করতে পেরেছে।

পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাস উৎসবের দ্বিতীয় দিন কেওড়াবনে টহলের সময় বনরক্ষীরা প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করেন। এবার উৎসবের সময় ৩২ জন শিকারি আটক হয়েছেন। শিকারের ফাঁদগুলো আগেভাগে না সরাতে পারলে শতাধিক হরিণ মারা যেত।’

দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতাব্দীকাল ধরে আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত থেকেও অনেক ভক্ত অংশ নেন। এটি শুধু পূজা নয়, এক আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।

সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা সব নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। আগাম প্রস্তুতি ও যৌথ টহলের কারণে অপরাধও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ