সমাজের অনেক মানুষ সাধারণ মানুষের মতো ভাষা ব্যবহার করেন না। তাঁরা হয়তো শুনতে পান না কিংবা কথা বলতে পারেন না। বিশেষ ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। এসব মানুষ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফিরোজা মেহজাবিন বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেটর প্রকল্প তৈরি করেন।

মেহজাবিন বলেন, ‘অনেকেই ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে আমি এই ভাবনা নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই ভাষা–জড়তার কারণে যোগাযোগ করতে পারেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান—যেমন হাসপাতাল বা করপোরেট—থেকে তাদের গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। আমার এই উদ্ভাবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে ইশারা ভাষাকে লেখা ও বাক্যে পরিণত করা যাবে, যেন তাঁদের সঙ্গে আমরা সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করতে পারি। একইভাবে এআই ব্যবহার করে আমাদের ভাষাকে বাক্য ও ইশারা ভাষায় পরিণত করার মাধ্যমে তাঁরা আমাদের কথা সহজেই বুঝতে পারবেন।’

ফিরোজা মেহজাবিনের টিম ওয়াটারমেলন গ্রামীণফোনের এআইভিত্তিক ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী হিসেবে এআই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়াকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন মেহজাবিন। প্রযুক্তি খাতে নারীদের উপস্থিতি এমনিতেই কম, সেখানে এমন আয়োজন নারীদের আরও উৎসাহ দেবে।

গ্রামীণফোনের আয়োজনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ফিউচারমেকার্স নামের প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে আয়োজন করা হয়। দেশের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের এআইভিত্তিক আইডিয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ৭৮২টি আইডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছে টিম ওপিয়ন। তাদের প্রকল্প এআই-ড্রিভেন নিউজ ক্রেডিবিলিটি প্ল্যাটফর্ম। টিম সিন্যাপজ তাদের এআই ইনক্লুশন ফর ডিফারেন্টলি-এবলড লার্নারস প্রকল্প এবং টিম লাস্তা তাদের দিশা: ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন থ্রো এআই প্রকল্পের জন্য যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গত সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বাছাইপর্ব শেষে নির্বাচিত দল বিচারক প্যানেলের সামনে তাদের এআইভিত্তিক ধারণাগুলো উপস্থাপন করে।

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির (সিইও) আজমান বলেন, ‘আমরা যখন এআইনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তখন তরুণ প্রজন্মকে সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণফোনে আমরা এআইকে দেখি উদ্ভাবন, উৎপাদনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে। ফিউচারমেকার্সের মাধ্যমে আমরা এমন তরুণ উদ্ভাবকদের গড়ে তুলতে চাই, যারা ভবিষ্যতের কর্মশক্তিকে নেতৃত্ব দেবে এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা পুরস্কারের পাশাপাশি গ্রামীণফোনের শীর্ষ প্রতিভা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে দ্রুত অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। প্রাইজ মানির পাশাপাশি বাস্তব উদ্ভাবনী পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও নিজেদের ধারণা আরও পরিমার্জন করার সুযোগ পাবেন, যা তাঁদের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে।

বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকের দায়িত্বে থাকা গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, চিফ বিজনেস অফিসার আসিফ নাইমুর রশীদ ও চিফ ইনফরমেশন অফিসার ড.

নিরঞ্জন শ্রীনিবাসন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ম হজ ব ন প রকল প র এআই

এছাড়াও পড়ুন:

লাখো মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে, সতর্ক করলেন এআইয়ের গডফাদার জিওফ্রি হিন্টন

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভবিষ্যতে লাখ লাখ মানুষের চাকরি কেড়ে নিতে পারে বলে আবারও সতর্ক করছেন এ প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ জিওফ্রে হিন্টন। এআইয়ের গডফাদার হিসেবে পরিচিত জিওফ্রে হিন্টন জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন এমন সব কাজ সম্পন্ন করতে পারছে, যেগুলো একসময় কেবল মানুষের পক্ষেই করা সম্ভব ছিল। গ্রাহকসেবা, আইনি গবেষণা এমনকি সৃজনশীল লেখালেখি সব ক্ষেত্রেই এআই দ্রুত মানুষের জায়গা দখল করছে। আর তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিস্তার ভবিষ্যতে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিতে পারে।

ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিন্টন বলেন, কর্মসংস্থান সংকট কোনো প্রযুক্তিগত অনিবার্যতা নয়। এটি আসলে এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিফলন, যেখানে সরকার ও বাণিজ্যিক  প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পমেয়াদি মুনাফাকে দীর্ঘমেয়াদি মানবকল্যাণের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সমস্যা এআই নয়, আমরা সমাজ ও অর্থনীতিকে যেভাবে গড়ে তুলেছি, সেটিই বিপদের মূল কারণ।

এআই প্রযুক্তির অগ্রগতিকে থামাতে চান না হিন্টন। তাঁর মতে, এআইয়ের সুফল সমাজে সবার মধ্যে সমানভাবে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করা সবচেয়ে জরুরি। কার্যকর নীতিমালা না থাকলে স্বয়ংক্রিয়তার সুবিধা কেবল একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হবে আর বিপুলসংখ্যক মানুষ বেকার বা আংশিক কাজ করতে বাধ্য হবে।

বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করে হিন্টন বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান লক্ষ্য মুনাফা বাড়ানো, যেখানে শ্রমিকদের কল্যাণ ও মানবিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। যদি আমরা এআইকে কেবল মুনাফা বৃদ্ধির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করি, তবে সমাজ ভয়াবহ অবস্থার মুখে পড়বে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা কেন
  • লাখো মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে, সতর্ক করলেন এআইয়ের গডফাদার জিওফ্রি হিন্টন