রাষ্ট্রীয় মনোযোগহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায় বায়ুদূষণে মৃত্যু, পানিতে ডুবে মৃত্যু, সাপে কাটা মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। সড়কে মৃত্যুর বিষয়টি অন্যান্য ক্ষেত্রের মৃত্যুগুলোর চেয়ে ভয়াবহ হলেও এ মৃত্যু রুখতে রাষ্ট্রীয় ও সরকারের পর্যায়ে কার্যত সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ নেই। যে কারণে বারবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে বড় বড় আন্দোলন হলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালে দেশে মোট ৩৭ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি জায়গায়। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজারের বেশি। জায়গাগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টিকে অতি উচ্চ ঝুঁকি, ১৩৯টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা এবং ১৭৫টিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অতি উচ্চ ঝুঁকির এলাকাগুলোর মধ্যে আছে রাজধানী ঢাকা ও ধামরাই, গাজীপুর সদর উপজেলা, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মাদারীপুরের শিবচর ও টেকেরহাট, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, চট্টগ্রামের মিরসরাই, পটিয়া ও সীতাকুণ্ড, কক্সবাজারের চকরিয়া, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, বরিশালের গৌরনদী, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ভালুকা। গত পাঁচ বছরে এই উচ্চ ঝুঁকির স্থানগুলোতে নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৯ জন।

এই পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশে সড়ক যেভাবে হয়েছে, সেভাবে হয়নি সড়কের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন কৌশল। উন্নত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো কার্যকর নীতি ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনার কারণগুলো ঘুরেফিরে একই থাকছে। জেলা-উপজেলার সড়কগুলোতে একেবারে নিবন্ধনহীন ও অনুন্নত যান চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। অনেক রাস্তার পাশে অসংখ্য পরিবহনের কাউন্টার, হাটবাজার এবং বাসের টিকিট বিক্রয়কেন্দ্র থাকার কারণে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। দীর্ঘ সড়কগুলোতে চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালিয়ে থাকেন চালকেরা। আবার সড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলোর কোনো সংস্কার না করা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং বিআরটিএর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিতকরণ ও নিরসনের সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এ সমন্বয়হীনতা কাটাতেই হবে। চিহ্নিত ২১টি ‘হটস্পট’-এর প্রতিটির জন্য বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে, যেখানে ইউটার্ন, ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস নির্মাণ, সড়কের পাশে কাউন্টার ও হাটবাজার সরানো এবং গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকবে। মহাসড়কগুলোতে তিন চাকার যান বন্ধে কঠোর হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইনের প্রয়োগ। এটি নিশ্চিত করা না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা থামানো দুরূহ। তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সড়ক ব্যবস্থাপনায় কবে মনোযোগী হব

রাষ্ট্রীয় মনোযোগহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায় বায়ুদূষণে মৃত্যু, পানিতে ডুবে মৃত্যু, সাপে কাটা মৃত্যু, বজ্রপাতে মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু। সড়কে মৃত্যুর বিষয়টি অন্যান্য ক্ষেত্রের মৃত্যুগুলোর চেয়ে ভয়াবহ হলেও এ মৃত্যু রুখতে রাষ্ট্রীয় ও সরকারের পর্যায়ে কার্যত সমন্বিত ও বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ নেই। যে কারণে বারবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে বড় বড় আন্দোলন হলেও কোনো পরিবর্তন আসেনি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালে দেশে মোট ৩৭ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি জায়গায়। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজারের বেশি। জায়গাগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টিকে অতি উচ্চ ঝুঁকি, ১৩৯টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা এবং ১৭৫টিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

অতি উচ্চ ঝুঁকির এলাকাগুলোর মধ্যে আছে রাজধানী ঢাকা ও ধামরাই, গাজীপুর সদর উপজেলা, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মাদারীপুরের শিবচর ও টেকেরহাট, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, চট্টগ্রামের মিরসরাই, পটিয়া ও সীতাকুণ্ড, কক্সবাজারের চকরিয়া, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, বরিশালের গৌরনদী, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ভালুকা। গত পাঁচ বছরে এই উচ্চ ঝুঁকির স্থানগুলোতে নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৯ জন।

এই পরিসংখ্যান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে দেশে সড়ক যেভাবে হয়েছে, সেভাবে হয়নি সড়কের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন কৌশল। উন্নত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো কার্যকর নীতি ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনার কারণগুলো ঘুরেফিরে একই থাকছে। জেলা-উপজেলার সড়কগুলোতে একেবারে নিবন্ধনহীন ও অনুন্নত যান চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। অনেক রাস্তার পাশে অসংখ্য পরিবহনের কাউন্টার, হাটবাজার এবং বাসের টিকিট বিক্রয়কেন্দ্র থাকার কারণে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। দীর্ঘ সড়কগুলোতে চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি চালিয়ে থাকেন চালকেরা। আবার সড়কের পাশে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে বিপজ্জনক বাঁকগুলোর কোনো সংস্কার না করা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং বিআরটিএর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিতকরণ ও নিরসনের সমন্বিত উদ্যোগের অভাব রয়েছে। এ সমন্বয়হীনতা কাটাতেই হবে। চিহ্নিত ২১টি ‘হটস্পট’-এর প্রতিটির জন্য বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে, যেখানে ইউটার্ন, ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস নির্মাণ, সড়কের পাশে কাউন্টার ও হাটবাজার সরানো এবং গতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকবে। মহাসড়কগুলোতে তিন চাকার যান বন্ধে কঠোর হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আইনের প্রয়োগ। এটি নিশ্চিত করা না গেলে সড়ক দুর্ঘটনা থামানো দুরূহ। তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ