নির্বাচন নিয়ে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা চলছে: খন্দকার মোশাররফ হোসেন
Published: 6th, November 2025 GMT
দেশে কিছু ব্যক্তি নন–ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে নির্বাচন নিয়ে সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এ সংকট মোকাবিলায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নির্বাচন সফল করতে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে গিয়ে সরকার গঠন করলে বর্তমান সরকার সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ করতে পারবে। নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আজ হোক, কাল হোক, নির্বাচন হতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে ‘রি-ইমাজিনিং বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ কথাগুলো বলেন। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ঢাকা ফোরাম ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি সংগঠন।
সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক চিন্তা ও নীতিনির্ধারণের ওপর রচিত বই ‘তারেক রহমান পলিটিকস অ্যান্ড পলিসিস ইন কনটেম্পোরারি বাংলাদেশ’ এবং সম্প্রতি দেওয়া একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান গণতান্ত্রিক শাসন, নেতৃত্বের দর্শন এবং নীতি-কাঠামোর ওপর আলোকপাত করা হয়।
নির্বাচনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই; তাই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সবচেয়ে নিরাপদ সময় হলো আগামী ফেব্রুয়ারি। এরপরে রোজা চলে আসবে।
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ তুলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনকে বিলম্বিত বা বাতিল করার ষড়যন্ত্র চলছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমসাময়িক রাজনীতির মূল কথা হলো নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করার পাশাপাশি দ্বিতীয় কথা ছিল, যত দ্রুত সম্ভব এই সরকার নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। অন্তর্বর্তী সরকারও গণমাধ্যমে জনগণকে এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, দল ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, তবে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র করছে। পিআর (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) লাগবে, তবে এর ব্যাখ্যা যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না।
পিআর হলে এমন সময়ও আসতে পারে, যখন দেশে কোনো সরকার গঠন সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেছেন খন্দকার মোশাররফ।
আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সমসাময়িক রাজনীতিতে বাংলাদেশে তারেক রহমান তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা ও বাতিঘর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, যারা বর্তমানে সংস্কারের জন্য উৎসাহী হয়ে উঠেছেন, তাঁদের জানা উচিত বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন ২০৩০-এর মাধ্যমে ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
বিএনপির ৩১ দফার কথা উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তিনি (তারেক রহমান) ৩১ দফার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি গড়ে তুলতে চাইছেন, যাতে সবার জন্য সমানভাবে জায়গা থাকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ‘উইনার টেক অল’ ব্যবস্থা, যেখানে ক্ষমতায় যাওয়া দল দেশের সম্পদের একচেটিয়া মালিক হয়ে যায়।
জাতীয়তাবাদী চেতনায় সবাইকে নিয়ে দেশ গঠন শুধু একটি দলের পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমান কেবল ৩১ দফায় নয়, বরং তাঁর কাজের মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণ করছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, তারেক রহমান বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ। তিনি পরস্পরের সম্মানবোধ, মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট এবং বাংলাদেশের মানুষের ভূরাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করতে চান।
এ ছাড়া আমীর খসরু বক্তব্যে বাংলাদের অর্থনীতির গণতান্ত্রিকীকরণ, তরুণদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তারেক রহমান মানুষের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চান, সরকারের নয়।
আরও পড়ুননির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে: মির্জা ফখরুল৪ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও ফাউন্ডেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.
এ ছাড়া ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন সমাজকর্মী ও নেলসন ম্যান্ডেলার নাতনি এনডিলেকা ম্যান্ডেলা। অনুষ্ঠানে লন্ডনের নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লিডারশিপ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি বিভাগের অধ্যাপক আলিয়ার হোসেনের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।
আরও পড়ুনবিএনপির সম্ভাব্য জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা কেন ঝুঁকিপূর্ণ৩৩ মিনিট আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ র স র জন ত কম ট র সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ: বিএনপিতে যোগ দিলেন যে কারণে
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সম্প্রতি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। দলের প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি।
স্নিগ্ধর হঠাৎ বিএনপিতে যোগদান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিএনপিতে যোগদান বিষয়ে তিনি নিজেই মুখ খুলেছেন।
বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গে ফেসবুক পেজে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘‘আসসালামু আলাইকুম
আমি মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। জুলাইয়ের পর থেকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের যে জোয়ার উঠেছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, সেই তরুণদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমিও সামাজিকভাবে নানা কার্যক্রমের প্রতিনিধিত্ব করেছি। পাশাপাশি তরুণদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা চলছে সেই লক্ষ বাস্তবায়নে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছি।
আপনারা জানেন যে আমি বা আমার ভাইদের কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না, মুগ্ধ একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাই আমি মনে করি মুগ্ধসহ সকল শহিদ কোন রাজনৈতিক দলের নয়, তারা সকল মানুষ এবং দেশের সম্পদ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং এই নতুন বাস্তবতায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছি। এবং সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে চাই।
অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে জুলাইকে নানাভাবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি, এখন সময় এসেছে রাজনৈতিকভাবে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার। আমার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার পিছনে অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো-
সর্বোচ্চ জায়গা থেকে জুলাইকে প্রতিনিধিত্ব করা। জুলাই শহিদ, আহত যোদ্ধা, শহিদ পরিবার এবং সর্বোপরি জুলাইয়ের ভয়েস হয়ে উঠা, রাজনীতিতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করা এবং বাংলাদেশপন্থী ও জুলাইপন্থী সকল অংশীজনের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান কারার পিছনে আমার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত বিএনপির দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে তাছাড়া বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন এবং রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা ২০২৩ এর অনেক জায়গা আছে যেগুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে আমি আগ্রহী।
দ্বিতীয়ত আমি মনে করি, সকল পরিসরে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। তাই আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হচ্ছি। এতে করে জুলাইয়ের ঐক্য শক্তিশালী এবং দীর্ঘায়িত হবে বলে আমি মনে করি।
তাছাড়া বিএনপির সন্মানিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান চাচ্ছেন যে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করি যা আমারও অন্যতম রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার একটি। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দল এবং তরুণদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারবো বলে আমি মনে করি।
তবে সর্বোপরি আমি সকল রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশ ও জুলাইপন্থী সকলের সাথে কাজ করে যেতে চাই। রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মান আমার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য। আমার এই পথচলাই সকলের সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করছি। মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ জনমানুষের সকল সংগ্রাম চির অম্লান হোক।
আরেকটি বিষয়, এতদিন যত দায়িত্ব আমি পালন করেছি সব দায়িত্ব নিষ্ঠা এবং সততার সাথে পালন করেছি। যদি কোন অভিযোগ থাকে দয়া করে অভিযোগে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রমাণসহ উপস্থাপন করবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। নতুন বাংলাদেশে সবাই মিলে এতটুকু সংস্কার তো আমরা আশাই করতে পারি।’’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//