প্রথমেই পৌরাণিক কাহিনির কথা জেনে নেওয়া যাক।

দেবতা সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার এক কন‍্যা ও এক পুত্র। তাঁদের নাম যথাক্রমে যমুনা আর যম। সন্তানদের জন্মের পর সূর্যজায়া দেবী সংজ্ঞা সূর্যর তাপ সহ‍্য করতে না পেরে নিজের ছায়াকে দেবলোকে রেখে নিজে একা মর্ত‍্যবাসী হন। পুত্র–কন‍্যাদের বিমাতা ছায়া স্নেহের পরিবর্তে দুর্ব‍্যবহারই করতেন।

এদিকে ছায়ার মায়ায় সূর্যদেব পুত্র–কন‍্যার প্রতি দুর্ব‍্যবহারের কোনো প্রতিবাদও করতে পারতেন না। এ কারণে অত‍্যাচার বাড়তেই থাকে। শেষে একদিন কন‍্যা যমুনাকে বিমাতা ছায়া স্বর্গলোক থেকে বিতাড়িত করেন।

পরে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে ভাই যমের সঙ্গে দিদি যমুনার দেখাসাক্ষাৎ প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। এদিকে দিদিকে দেখতে না পাওয়ার দরুন যমের মন কেমন করতে থাকে। দিদি যমুনারও মন খারাপ।

দিদির ইচ্ছানুসারে যমরাজ সেই বর সবার জন্য দান করেন এবং তাঁর আহ্বানে বারবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন। দিদি যমুনার মঙ্গল কামনায় যম অমরত্ব লাভ করেছিলেন।

একদিন ভাই যম তাই ঠিক করেন, দিদির সঙ্গে দেখা করতে হবে। মর্ত‍্যে কালীপূজা মিটে যাওয়ার দুই দিন পর যম দিদি যমুনার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। হঠাৎ ভাইকে দেখে আনন্দে আত্মহারা দিদি যমুনা আদর–আপ‍্যায়ন করে খাইয়ে–দাইয়ে তাঁর সর্বাঙ্গীণ কুশল ও মঙ্গল কামনা করলেন।

এমন আপ‍্যায়নে মুগ্ধ হয়ে ভাই যম উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে দিদি যমুনা সব বোনের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে একটি বর প্রার্থনা করেন। যমুনা বলেন, ‘এই দ্বিতীয়ার দিনে প্রত‍্যেক ভাই যেন তাঁর বোনের কথা স্মরণ করেন এবং প্রত‍্যেক বোন যেন তাঁর ভাইয়ের মঙ্গলময় দীর্ঘায়ু কামনা করেন।’

দিদির ইচ্ছানুসারে যমরাজ সেই বর সবার জন্য দান করেন এবং তাঁর আহ্বানে বারবার আসার প্রতিশ্রুতি দেন। দিদি যমুনার মঙ্গল কামনায় যম অমরত্ব লাভ করেছিলেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে ভাইফোঁটা উদ্‌যাপনের যে রীতি এই দ্বিতীয়ার দিনে প্রচলিত, তার আদিতে আছে এমন এক ভাই–বোনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পুরাণকথা।

আরও পড়ুনরাখিবন্ধন: ভেদাভেদ ভুলে মানবতার উৎসব০৯ আগস্ট ২০২৫

অনেকে যদিও এই প্রসঙ্গে আরেকটি কাহিনির কথাও বলে থাকেন। সেখানে আছে, যমুনার সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণর দাদা বলরামের বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ের দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথি। বিয়ের আগে যমুনা ভাইদের কপালে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে দীর্ঘায়ুর জন‍্য মঙ্গল কামনা করেছিলেন।

এসব পৌরাণিক কাহিনি ও এর পাশাপাশি আধুনিক কালে ভাইফোঁটার আচারকে অবশ‍্যই সম্প্রীতির একটি চিরন্তন উৎসব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। চলতি কথায় একে ‘ভাইফোঁটা’ বলা হলেও এর আভিধানিক নাম ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’।

পিঁড়িতে বসা ভাইয়ের কপালে সেদিন বোনেরা চন্দন, ঘি, দই বা প্রদীপের পোড়া পলতের কালো টিকা পরিয়ে দেন। বোনেরা বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে এই টিকা বা ফোঁটা দেন।

ভাই–বোনের পারিবারিক, পারস্পরিক, সামাজিক বন্ধন এবং ঐক‍্যের এই রীতি সনাতন ধর্মের সব ভাষাভাষীর মানুষের মধ‍্যে প্রচলিত। শুধু প্রচলিত বললে ভুল বলা হবে, বরং বলা যেতে পারে খুবই জনপ্রিয় একটি লোকাচার।

কার্তিক মাসের অমাবস‍্যা তিথিতে কালীপূজা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিপদে বা দ্বিতীয়া তিথিতে ঘরে ঘরে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়। হিন্দিভাষী সনাতনীরা এই পার্বণকে ‘ভাইদুজ’ বলে থাকেন।

যেহেতু ভাইয়ের কপালে তিলক কাটা হয়ে থাকে, তাই অনেক জায়গায় বলা হয় ‘ভাইটিকা’। পিঁড়িতে বসা ভাইয়ের কপালে সেদিন বোনেরা চন্দন, ঘি, দই বা প্রদীপের পোড়া পলতের কালো টিকা পরিয়ে দেন। বোনেরা বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে এই টিকা বা ফোঁটা দেন। তিনবার ফোঁটা দিতে দিতে মন্ত্র উচ্চারণ করেন:

‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। 

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।।

যমুনার হাতে ফোঁটা পেয়ে যম হলো অমর।

আমার হাতে ফোঁটা পেয়ে আমার ভাই হোক অমর।।’

আরও পড়ুনদীপাবলি: অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর উৎসব২০ অক্টোবর ২০২৫

যদিও প্রতিপদে অনেক পরিবারেই ফোঁটা দেওয়ার চল আছে। সেখানে আবার মন্ত্র উচ্চারণে সামান‍্য তারতম‍্য লক্ষ‍ করা যায়। অনেকে আবার একে মন্ত্র না বলে ছড়াও বলে থাকেন। ছড়াটি এমন:

‘প্রতিপদে দিয়ে ফোঁটা,

দ্বিতীয়াতে নিতে,

আজ হতে ভাই আমার, যমের ঘরে

নিমের অধিক তিতে।

ঢাক বাজে, ঢোল বাজে, আরও বাজে কাড়া,

বোনের ফোঁটা না নিয়ে ভাই,

না যেয়ো যমপাড়া

না যেয়ো যমের ঘর,

আজ হতে ভাই আমার রাজরাজেশ্বর।

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,

আমি দিই আমার ভাইয়ের কপালে ফোঁটা। 

ভাইয়ের কপালে দিলুম ফোঁটা,

যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা।’

বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলকে সনাতনধর্মীরা মহাশূন‍্যের প্রতীক মনে করেন। হিন্দুশাস্ত্রে আছে, পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। এই পঞ্চভূত হলো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব‍্যোম।

বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙুলকে সনাতনধর্মীরা মহাশূন‍্যের প্রতীক মনে করেন। হিন্দুশাস্ত্রে আছে, পাঁচটি আঙুল পঞ্চভূতের প্রতীক। এই পঞ্চভূত হলো ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব‍্যোম। যেহেতু ভাই–বোনের ভালোবাসা অসীম, তাই ব‍্যোমের প্রতীক কনিষ্ঠ আঙুলকেই ফোঁটা দেওয়ার উপযুক্ত মনে করেন শাস্ত্রবিদেরা।

এরপর আশীর্বাদের পালা চলে বড়দের সঙ্গে ছোটদের। আশীর্বাদের সময় ধান ও দূর্বার শিষ ব‍্যবহৃত হয়। সঙ্গে মিষ্টিমুখ ও উপহার তো থাকেই। আর দিনে বা রাতে ভূরিভোজের মস্ত আয়োজনও করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনভাই-বোনের মধ্যকার অনিন্দ্যসুন্দর সম্পর্ক ঘিরেই প্রচলিত ভাইফোঁটা ০৩ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রচল ত ই আম র

এছাড়াও পড়ুন:

আড্ডা আর গানে চুয়েটে ‘জয়ধ্বনির’ উৎসবমুখর আয়োজন

মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেউ গাইছেন গান, কেউ গিটারের তারে তুলছেন সুর। দর্শকেরাও সেই সুর মোহিত হয়ে উপভোগ করছেন। কেউ দিচ্ছেন করতালি, কেউবা মুঠোফোনের ফ্ল্যাশ জ্বেলে শিল্পীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে মঞ্চের আলোকসজ্জা তো আছেই।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) বাস্কেটবল মাঠে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। উৎসবমুখর এ পরিবেশের আয়োজন করেছিল চুয়েটের সাংস্কৃতিক সংগঠন জয়ধ্বনি। সংগঠনটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়।

সংগঠনটির দুই দিনব্যাপী এ উৎসবে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান সদস্যরাও রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এ উৎসব শেষ হয়েছে। এ উৎসব ঘিরে মাঠের চারপাশে বসে বিভিন্ন ধরনের স্টল। এতে ছিল নানা পণ্য, খাবার ও শীতের পিঠা।

উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো, পৃষ্ঠপোষকতায় ইলেকট্রনিক কোম্পানি ‘হ্যাভিট’, খাদ্যসহায়তায় ‘পাহাড়িকা কিচেন’ আর বেভারেজ সহায়তায় মোজো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। এরপর পর্যায়ক্রমে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিল্পীরা। বিরতির পর রাত নয়টায় আবার শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একে একে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে পরিবেশকদের সম্মাননা দিয়ে প্রথম দিনের উৎসব শেষ হয়।

দুই দিনব্যাপী উৎসবের এ আয়োজন দেখতে ভিড় করেন হাজারো শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়েটের বাস্কেটবল মাঠে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তোরেসের প্রথম হ্যাটট্রিকে বার্সার গোল উৎসব
  • সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে অভিনয়, অপছন্দের সেই দৃশ্য নিয়ে কথা বললেন জেসিকা
  • ডিসেম্বরজুড়ে আড়ংয়ে চলবে কারুশিল্পের উৎসব
  • আড্ডা আর গানে চুয়েটে ‘জয়ধ্বনির’ উৎসবমুখর আয়োজন
  • গোপনেই শেষ হলো বাঁধন, সুনেরাহ ও শিমুদের শুটিং
  • সাংহাই থিয়েটার উৎসবে মূল বক্তা ইসরাফিল শাহীন
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবান্নের আয়োজনে বাংলার ঐতিহ্যের পরিচয়
  • প্রেম ও দ্রোহের গল্পে সাজানো ২৬তম টোকিও ফিল্মেক্স আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
  • বিজয় বইমেলা ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু