নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে জয়ের পরদিন থেকেই দায়িত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন জোহরান মামদানি। গতকাল বুধবার তিনি তাঁর ‘ট্রানজিশন টিম’ বা ক্ষমতা গ্রহণকারী দলের নাম ঘোষণা করেছেন। পাঁচ সদস্যের এ দলের সবাই নারী।

আগামী ১ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন জোহরান মামদানি। ৩৪ বছর বয়সী দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এই মেয়র নিজেকে একজন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন।

স্থানীয় সময় গতকাল সকালে কুইন্সে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রানজিশন দলের নাম ঘোষণা করেন জোহরান মামদানি। এর নেতৃত্ব দেবেন লানা লেপোড। তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করবেন। কো–চেয়ার হিসেবে থাকবেন নিউইয়র্কের সাবেক ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র মারিয়া তোরেস-স্প্রিংগার। আরও আছেন নিউইয়র্কের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের সাবেক প্রধান লিনা খান, ইউনাইটেড ওয়েজের প্রেসিডেন্ট ও সিইও গ্রেস বোনিয়া এবং সিটির স্বাস্থ্য ও মানবিক পরিষেবাবিষয়ক সাবেক ডেপুটি মেয়র মেলানি হারজোগ।

নিউইয়র্কের দায়িত্ব গ্রহণ করে জোহরান মামদানি প্রশাসনকে শুরুতেই বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং তিনি মেয়র হলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিলের সরবরাহ বন্ধ করাসহ নানা হুমকি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জোহরান মামদানি বলেন, ‘আগামী মাসগুলোতে আমার দল ও আমি এমন একটি সিটি হল গড়ে তুলব, যেটি (আমাদের) নির্বাচনী প্রচারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে সক্ষম হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্রশাসন গড়ে তুলব; যা সমানভাবে সক্ষম ও সহানুভূতিশীল হবে, সততা দিয়ে পরিচালিত হবে এবং ততটাই কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকবে; যতটা পরিশ্রম এ শহরকে নিজেদের বাড়ি মনে করা কোটি কোটি নিউইয়র্কবাসী করে থাকেন।’

গত মঙ্গলবার রাতে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গতকাল টেলিভিশনে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে জোহরান মামদানি দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দায়িত্ব পালন শুরু করতে প্রস্তুত থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের হাতে ৫৭ দিন আছে।’

নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি। একই সঙ্গে তিনি প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ও আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী নিউইয়র্কের মেয়র। এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে তাঁর চেয়ে কম বয়সী মেয়র নিউইয়র্ক সিটি আর পায়নি।

আরও পড়ুনজোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প৫ ঘণ্টা আগে

নিউইয়র্ক সিটির দায়িত্ব গ্রহণ করে জোহরান মামদানি প্রশাসনকে শুরুতেই বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি (জোহরান) মেয়র হলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল সরবরাহ বন্ধ করাসহ নানা হুমকি দিয়েছেন।

আমরা এমন এক প্রশাসন গড়ে তুলব; যা সমানভাবে সক্ষম ও সহানুভূতিশীল হবে, সততা দিয়ে পরিচালিত হবে এবং ততটাই কঠোর পরিশ্রম করতে প্রস্তুত থাকবে যতটা পরিশ্রম এ শহরকে নিজেদের বাড়ি মনে করা কোটি কোটি নিউইয়র্কবাসী করে থাকেন।জোহরান মামদানি, নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র

জোহরান মামদানি নিজেও স্বীকার করেছেন, তাঁকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনিক জটিলতা সামলানো ও শত্রুভাবাপন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন কাজ করা। তবে তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, এর মধ্যেও তিনি নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবেন।

জোহরান মামদানি বলেন, তিনি রাজনৈতিক বিভাজনকে পেছনে ফেলে নিউইয়র্কবাসীদের একত্র করার লক্ষ্যে কাজ করবেন। তাঁর মতে, নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের রাজনৈতিক মত যা–ই হোক, সবাইকে একই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সামনের দিনগুলোতে তিনি ডেপুটি মেয়র ও এজেন্সি কমিশনারদের নাম ঘোষণা করবেন।

গত মঙ্গলবার রাতে জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর গতকাল টেলিভিশনে নিজের প্রথম সাক্ষাৎকারে জোহরান মামদানি দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ১ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের দায়িত্ব পালন শুরু করতে প্রস্তুত থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের হাতে ৫৭ দিন আছে।’

এ ব্যাপারে মেয়র বলেন, কয়েকটি নাম আপনাদের চেনা হবে, কয়েকটি হবে না। তবে তাঁরা সবাই পুরোনো সমস্যার নতুন সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১ জানুয়ারি, যখন আমাদের শহর নতুন প্রশাসনের শপথ অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করবে, চলুন একই সঙ্গে আমরা আমাদের শহরে একটি নতুন যুগের সূচনাও উদ্‌যাপন করি।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানির জয়: নিউইয়র্কের ইহুদিদের ইসরায়েলে চলে আসতে বলছেন ইসরায়েলি মন্ত্রী৩ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনমেয়র নির্বাচনে জয়ের পর এবার আসল চ্যালেঞ্জের মুখে মামদানি১৫ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক স ট র দ য় ত ব গ রহণ ন উইয়র ক র প রস ত ত থ আম দ র প রথম গতক ল করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

মামদানির বিজয় ভাষণ শেষে মঞ্চে বাজল ‘ধুম মাচালে’

জোহরান মামদানির জীবনাচারে ভারতীয় টান বেশ প্রবল। ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ তরুণ রাজনীতিক। বিজয় ভাষণেও ভারতীয় রেশ রাখলেন তিনি। বক্তব্য শেষে স্ত্রী আর মা–বাবাকে যখন মঞ্চে ডেকে নেন, তখন বাজছিল বলিউডের জনপ্রিয় ‘ধুম মাচালে’ গানটি।

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার মেয়র নির্বাচনে ভোচ গ্রহণ হয়। এবারের নির্বাচনে বাঘা রাজনীতিক আর সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থী। ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়া সেই কুমোকে হারিয়ে বাজিমাত করেন জোহরান মামদানি।

আরও পড়ুনমীরা নায়ারের সেই ছেলেটি কোন কোন ক্ষেত্রে প্রথম হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র হলেন১ ঘণ্টা আগে

গতকালই নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে সমর্থকদের উদ্দেশে বিজয় ভাষণ দেন জোহরান মামদানি। বক্তব্যে তিনি সমর্থকদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি ট্রাম্পকে খোঁচা দেন।

বক্তব্য শেষে হাত নেড়ে সমর্থকদের অভিবাদন জানান জোহরান মামদানি। স্ত্রী সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক রমা দুওয়াজিকে মঞ্চে ডেকে নেন তিনি। ঠিক তখনই আবহ সংগীত হিসেবে বেজে ওঠে ‘ধুম মাচালে’ গানটি।

এরপর একে একে মঞ্চে আসেন জোহরান মামদানির মা–বাবা। তাঁর মা ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মিরা নায়ার। বাবা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খ্যাতিমান অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি। তাঁরা দুজনই জন্মগতভাবে ভারতীয়।

মা–বাবা ও স্ত্রীকে নিয়ে মঞ্চে যখন জোহরান মামদানি আবেগঘন মুহূর্ত পার করছিলেন, তখনও বাজছিল ‘ধুম মাচালে’।

আরও পড়ুননিউইয়র্কে ইতিহাস গড়া জোহরান কেন ‘বাংলাদেশি আন্টিদের’ ধন্যবাদ দিলেন২৬ জুন ২০২৫সমর্থকদের উদ্দেশে কথা বলছেন জোহরান মামদানি। পাশে তাঁর বাবা মাহমুদ মামদানি, স্ত্রী রমা দুওয়াজি ও মা মীরা নায়ার (ডানে)। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে, ৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়
  • জোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে আমরা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
  • মামদানির জয়, ট্রাম্পকে বার্তা
  • ধনকুবেরদের ৪ কোটি ডলার ব্যয়েও জিততে পারেননি কুমো
  • মেয়র নির্বাচনে জয়ের পর এবার আসল চ্যালেঞ্জের মুখে মামদানি
  • নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির ভোটাররা ট্রাম্পকে প্রত্যাখ্যান করে কী বার্তা দিলেন
  • মামদানি-মামদানি—বাংলাদেশিদের স্লোগানে মুখর কুইন্স
  • মামদানির বিজয় ভাষণ শেষে মঞ্চে বাজল ‘ধুম মাচালে’