ইসরায়েল এবারের হামলার শুরু থেকেই ইরানের সরকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে নিজেদের সরকার পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অবশ্য ইরানিদের রয়েছে। ১৯৫৩ সালের ওই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসা শাহ সরকার টিকেছিল ২৭ বছরের মতো। ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থানে তাদের পতন ঘটে, সূচনা হয় ইসলামী শাসনের। তখনকার ঘটনাক্রমের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।

তেলক্ষেত্র
ইরানে ১৯৫৩ সালে যে অভ্যুত্থান হয়, তাতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র। মোসাদ্দেগ ইরানিদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। দেশের তেলক্ষেত্র জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোসাদ্দেগ, যা ছিল তৎকালীন মার্কিন ও ব্রিটিশ সরকারের জন্য বড় ধরনের আঘাত। 

স্নায়ুযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়
তেলক্ষেত্র জাতীয়করণের পদক্ষেপটি ইরানে জনপ্রিয় হিসেবে দেখা হয়। এটি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় হিসেবেও বিবেচিত হয় কারও কারও কাছে। 

শাহের শাসন জোরদার করা
১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল, ইরানের রাজা মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে শাহ শাসক হিসেবে ক্ষমতায় বসানো এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জেনারেল ফজলুল্লাহ জাহেদিকে নিয়োগ দেওয়া।

অভ্যুত্থান
অভ্যুত্থানের আগে মার্কিন তদন্ত সংস্থা সিআইএ এবং ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এসআইএস মিলে নানা অপপ্রচার ছড়িয়ে মোসাদ্দেগবিরোধী জনমত উস্কে দেয়। ১৯৫৩ সালে সিআইএ ও এসআইএস শাহপন্থি বাহিনীকে সংগঠিত করে এবং মোসাদ্দেগবিরোধী বড় বিক্ষোভ আয়োজন করে, যেখানে পরে সেনাবাহিনীও যোগ দেয়।

মার্কিন অর্থ
অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন জাহেদি। তাঁর সরকার যেন স্থিতিশীলতা অর্জন করে, সেজন্য গোপনে দুই দিনের মধ্যে ৫০ লাখ ডলার সরবরাহ করে সিআইএ, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন নথিতে প্রমাণিত হয়েছে।

মার্কিন স্বীকারোক্তি
২০১৩ সালে সিআইএর কিছু নথি প্রকাশ পায়, যেখানে প্রথমবারের মতো অভ্যুত্থানে সংস্থাটির ভূমিকার প্রমাণ প্রকাশ্যে আসে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের যে ভূমিকা ছিল, সেটা সবারই জানা। এর আগে ২০০৯ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও ওই অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে নেন।

ফল হয় উল্টো
মোসাদ্দেগকে উৎখাতের পর যুক্তরাষ্ট্র শাহ পাহলভির প্রতি সমর্থন আরও জোরালো করে। কিন্তু বাইরের হস্তক্ষেপে ইরানিরা ক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং দশকের পর দশক ধরে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব দানা বাঁধতে থাকে।

ইসলামী বিপ্লব
শাহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে ওঠেন। কিন্তু গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষ দিকে লাখ লাখ ইরানি তাঁর শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসেন। তাদের চোখে, শাহ সরকার ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ও অবৈধ। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প এই যুদ্ধে জড়ালে তা ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ট্রাম্প যুদ্ধে জড়ালে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও তাদের মিত্ররা নতুন বৈরিতার মুখে পড়বে বলে মনে করেন মার্কিন সিনেটর ক্রিস মারফি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ১৯৫৩ স ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিকেএমইএ সভাপতি হাতেম ‘অভ্যুত্থানের শত্রু’ : এনসিপি নেতা আল আমিন

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ও উত্তরণের করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীক সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে গণ-অভ্যুত্থানের শত্রু আখ্যা দিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব ও শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান আব্দুল্লাহ আল আমিন। এ সময় তিনি হাতেমকে এ আয়োজনে স্পেস দেয়া উচিৎ হয়নি বলেও মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ শহরের শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জেলার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের নিয়ে এক বিশেষ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।

সভায় আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘আজ আসার পর দেখলাম একজন স্টেজে এসে ছাত্ররা কীভাবে পড়ালেখা করবে, রেজাল্ট ভালো করবে, ওই পরামর্শ দিচ্ছেন; যে ব্যক্তি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে কীভাবে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করতে হবে, সেই অনুরোধ করেছিলেন।’

আব্দুল্লাহ আল আমিন আরও বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়িয়ে সে ছাত্রদের দমনের ব্যাপারে বলেছে। তাকে আমরা এই স্পেস দিতে পারি না। খুবই দুঃখ লেগেছে, নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমরা এগুলো জানি। জানার পরও কেন আমরা এটা করি? আমরা কি সব ভুলে গেলাম। এই ভুলে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি।

এর আগে এই এনপিসি নেতা বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক নানান ধরনের জটিলতা হয়েছে মানে ম্যানেজিং কমিটি এড কমিটি কোথাও কমিটি নাই কোথাও অধ্যক্ষ বা শিক্ষক আছে নাই বা নানান ধরনের ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে। 

এইজন্য এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ছিল যেই ধরনের চেইন অফ কমান্ডে স্কুল কলেজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলে ওভাবে চলতে পারেনি। ছাত্রদের মধ্যেও গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক একটা ট্রমা আছে। আমরা যখন শহীদ পরিবার বা আহতদের সাথে কাজ করি, আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক ধরনের ট্রমা আছে। 

তাদের যে আবার পড়ালেখায় মনোনিবেশ করতে হবে। সে মানসিকতা সবার হয়ে ওঠে নাই। আমরা যেই প্রফেশনে ছিলাম অভুত্থানের পরে আবার যে আমাদের কাজটা আমরা করব এই মানসিকতাটা হয় নাই। তো আমাদের পুরা ন্যাশনাল একটা গ্রুমিং এর প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, “গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে আমরা দেখছিলাম যে, একিলিস হিল বলতে একটা ব্যাপার আছে। একিলিসের মতো এত বছরে হাসিনা প্রশ্নফাস, জালিয়াতি অটোপাসের মতো নানা ধরনের বড় বড় লুপস তারা রেখে দিছে। কিন্তু তারা উপস্থাপন করছে একটা বিশাল সাফল্য। এই দুর্বলতাটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি এটা সামনে আমাদের জেনারেশন, ছাত্র, দেশের জন্য ভালো হবে।”

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফজলুল হক রুমন রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার এহসানুল কবির, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শোয়াইব আহমাদ খান, নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. আ.ফ.ম. মশিউর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম সুজন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মাইনুদ্দীন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুদ বিল্লাহ প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ