নিজেকে পরিচয় দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। পরিচিত অনেক শিক্ষক রয়েছেনও দাবি করেন। ‘নিশ্চয়তা’ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে (সম্মানে) ভর্তি করানোর। এ জন্য এক নারীর কাছ থেকে ছেলেকে ভর্তি করানোর কথা বলে নেন দেড় লাখ টাকার বেশি। অবশেষে ধরা পড়েছেন সেই ‘প্রতারক’।

তাঁর নাম জাহিন চৌধুরী (৪১) ওরফে জাবেদ। গতকাল শনিবার রাতে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। আগের দিন শুক্রবার প্রতারণার শিকার ওই নারী মামলা করেন।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার মামলা হওয়ার পর গোপন তথ্যের ভিত্তিতে খবর পেয়ে প্রতারণা মামলায় আসামি জাবেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাদীর সঙ্গে আসামির পরিচয় হয় গত ২৮ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও নিজেকে প্রাক্তন শিক্ষার্থী পরিচয় দেন। সেখানে তাঁর অনেক পরিচিত শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষী থাকায় যেকোনোভাবে বাদীর ছেলেকে ভর্তি করিয়ে দিতে পারবেন বলে নিশ্চয়তা দেন। বাদীর কাছ থেকে নেন টাকাও।

ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার জাবেদ নিজেকে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাদীর ১২ ভরি পুরোনো স্বর্ণালংকারের পরিবর্তে ২২ থেকে ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে নেন। কিন্তু আর দেননি। আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামের হাজারী গলির একটি জুয়েলার্স থেকে বিক্রির ১২ ভরির মধ্যে ৮ ভরি স্বর্ণালংকার উদ্ধার করেন।

জুয়েলার্সের মালিক জানান, কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে স্বর্ণগুলো বিক্রি করেছিলেন জাবেদ। ওই ঘটনা ছাড়াও নিজেকে কখনো বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পোশাক কারখানার মালিক, বিসিএস কর্মকর্তা পরিচয় দেন জাবেদ। বিদেশে লোক পাঠানো ও পাসপোর্ট তৈরির কথা বলেও লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন জাবেদ। তাঁর বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় প্রতারণার মামলা রয়েছে।

ওসি আবদুল করিম বলেন, গ্রেপ্তার জাবেদ পড়াশোনা তেমন করেননি। তাঁর নির্দিষ্ট কোনো পেশাও নেই। কখনো ঢাকা, কখনো চট্টগ্রামে থাকেন। প্রতারণা করাই তাঁর পেশা। আগেও তাঁকে একবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

ওসি বলেন, সঠিক পরিচয় না জেনে কারও সঙ্গে কোনো টাকা লেনদেন করা উচিত নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রলার থেকে নামলেন কয়রার ঘাটে। তিন দিন পর তিনি ফিরেছেন সুন্দরবনের গভীর দুবলারচরের আলোরকোল থেকে। চোখে–মুখে ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে প্রশান্তি।

বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘গতকাল বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে আমরা ফিরতি পথ ধরে আজ লোকালয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার মা আর দিদি—দুজনেই অসুস্থ। তাঁরাও ছিলেন, খুব ভয়ে ছিলাম।’

৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব শেষ হয় গতকাল ভোরে। পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুণ্যস্নান। আলোরকোলের দুই কিলোমিটারজুড়ে তখন শুধু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একসঙ্গে নেমে পড়েন সমুদ্রের জলে। শঙ্খধ্বনি, কীর্তন, ঢাকের বাদ্য আর ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।

কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনোজিত কুমার রায় বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করলে পাপমোচন হয়—এ বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। সৈকতের পাড়ে চোখ বুজে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।’

বন বিভাগের হিসাবে, এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। পূজা-অর্চনা, ভজন ও লীলাকীর্তন শেষে গতকাল ভোরে তাঁরা সাগরে স্নান করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। উৎসব চলাকালে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। গত মঙ্গলবার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে সুমন নামের এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হলেও কোস্টগার্ড পরে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করে।

রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে সাধু হরিভজন প্রথম দুবলারচরের আলোরকোলে রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই আয়োজন লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ আছে।

রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার বেড়ে যায়—এ অভিযোগ পুরোনো। তবে এ বছর বন বিভাগ বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা দমন করতে পেরেছে।

পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাস উৎসবের দ্বিতীয় দিন কেওড়াবনে টহলের সময় বনরক্ষীরা প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করেন। এবার উৎসবের সময় ৩২ জন শিকারি আটক হয়েছেন। শিকারের ফাঁদগুলো আগেভাগে না সরাতে পারলে শতাধিক হরিণ মারা যেত।’

দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতাব্দীকাল ধরে আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত থেকেও অনেক ভক্ত অংশ নেন। এটি শুধু পূজা নয়, এক আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।

সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা সব নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। আগাম প্রস্তুতি ও যৌথ টহলের কারণে অপরাধও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ