প্রত্যাবর্তনেও সেরা, ফেরার ম্যাচেও সেরা বোলিং তাসকিনের
Published: 3rd, July 2025 GMT
বাংলাদেশের পেস বোলিং নিয়ে অহংকারের যে জায়গা তৈরি হয়েছিল তা ভেঙে গিয়েছিল আরব আমিরাত ও পাকিস্তানে টি২০ সিরিজ হার। উভয় সিরিজে বোলিং ইউনিটে একটা বড় শূন্যতা চোখে পড়ে। সেই শূন্যতা ছিল পেসার তাসকিন আহমেদের না থাকা। গোড়ালির চোটের কারণে ৩০ বছর বয়সী এ পেসারের অনুপস্থিতি নির্বাচক, টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল ধারণা ভাঙতে সহায়তা করে। এ কারণে নির্বাচক প্যানেল খুব করে চাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা সফরে সাদা বলের ক্রিকেট খেলেন তাসকিন। লম্বা সময় গোড়ালির চোট পরিচর্যা করে চট্টগ্রামে প্র্যাকটিস ম্যাচে লম্বা স্পেলে বোলিং করে ফেরার মঞ্চ প্রস্তুত করেন ডান হাতি এ পেসার। ফেরার ম্যাচে মঞ্চায়ন করলেন রোমাঞ্চকর বোলিং। ১০ ওভার, দুটি মেইডেন, ৩৭টি ডট, ৪ উইকেট ও ৪.
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচের বোলিং ইউনিটের শুরু ও শেষ ভালো হওয়ার কারণ পেস বোলিং। এই দুই সময়েই ছিলেন তাসকিন আর তানজিম হাসান সাকিব। বোলিংয়ের ওপেনিং জুটি তারা। পাওয়ার প্লে ও স্লগ বোলিংয়ের বিশ্বস্ত জুটি। যেখানে তাসকিনের ভূমিকা ছিল উজ্জীবিত করা। প্রতিপক্ষ শিবিরে প্রথম আঘাত সাকিবের হলেও টানা দুই ওভারে নিশান মাদুশঙ্কা ও কামিন্দু মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে দলকে উজ্জীতি করেন তাসকিন। তাসকিন-সাকিবের কল্যাণে ৬.১ ওভারে ২৯ রানে তিন উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা কিছুটা চাপে পড়ে। এই চাপ তৈরির কারিগর তাসকিন নিজের নবম ওভারে জোড়া উইকেট শিকার করে জানান দেন তিনিই পেস ইউনিটের সেরা।
এই সেরার স্বীকৃতি বিশ্বের অনেক তারকা বোলারের কাছ থেকে পেলেও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের প্রশংসায় আনন্দস্রোতে ভেসেছেন তিনি। আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের কাছে টি২০ সিরিজে বাজে হারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুজন বলেছিলেন, ‘বলা হচ্ছিল পেস ইউনিটে অনেক বিকল্প আছে। রিজার্ভ বেঞ্চও শক্তিশালী হয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো তাসকিনের থাকা না থাকা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাসকিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোলার। ও না খেললে পেস বোলিং ইউনিট হিসেবে ভালো করতে পারে না।’ সুজনের কথার প্রমাণ গতকালই পাওয়া গেছে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।
গোড়ালির হাড় বেড়ে যাওয়া অনেক দিন ধরে ভোগাচ্ছে তাসকিনকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর সেভাবে ম্যাচ খেলতে পারেননি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলতে রাজি হননি গোড়ালির ব্যথা বেড়ে যাওয়ায়। ব্যথায় ভুগতে থাকা টাইগার এ পেসারকে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেওয়া পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একটু একটু করে নিজেকে খেলার জন্য প্রস্তুত করেছেন তিনি। এই কলম্বোতেও ফিজিও, ট্রেনার, নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে পুরো লেন্থে জোরে বোলিং করে একাদশে থাকা নিশ্চিত করেন মঙ্গলবার।
গতকাল ম্যাচে পুরো ছন্দে বোলিং করতে না পারলেও মুস্তাফিজুর রহমান বা বাঁ হাতি স্পিনার তানভীর ইসলামের মতো হাল ছাড়েননি তিনি। লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করা দলের সফল ও সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন। ফিল্ডিংয়ে কিছুটা ছাড় দিয়ে, বোলিং রানআপে কিছুটা গতি কমিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বোলিং করতে পারাও বুদ্ধিমত্তা। ছয়-সাত বছর যাকে স্যালাইন বোলার হিসেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হতো, কালের পরিক্রমায় চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তোলেন দেশসেরা পেসার হিসেবে। প্রচণ্ড নিবেদন, গভীর একাগ্রতা ও লক্ষ্যে অবিচল না থাকলে গোড়ালির জড়তা নিয়ে এভাবে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব হতো না তাসকিনের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
সতীর্থ জোটার মৃত্যুতে রোনালদোর আবেগঘন বার্তা
ফুটবল মাঠে একসঙ্গে যাদের দৌড়, জয়, উদযাপন আর ট্রফি ভাগাভাগির সম্পর্ক একদিন সেই পথেই এসে থামে দুঃখের সীমানা। এবার সেই করুণ বিদায়ের সাক্ষী হলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।
দিয়েগো জোটার হঠাৎ মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছেন তিনি। লিখেছেন এক হৃদয়বিদারক বার্তা। যেখানে কেবল একজন সতীর্থের চলে যাওয়া নয়, হারিয়ে গেছে সম্পর্ক, স্মৃতি আর জীবনের এক অধ্যায়।
আজ বৃহস্পতিবার (০৩ জুলাই) স্পেনের জামোরা প্রদেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান জোটা ও তার ভাই আন্দ্রে সিলভা। গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আগুন ধরে যায় এবং মুহূর্তেই নিভে যায় দুটি প্রতিভাময় জীবন।
আরো পড়ুন:
অকালেই নিভে গেল দিয়েগো জোটার জীবনপ্রদীপ
ভারতের কোচের পদত্যাগ
জোটা মাত্র ২৮ বছর বয়সে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। যেখানে ঠিক দুই সপ্তাহ আগেই বিয়ে করেছিলেন দীর্ঘদিনের প্রেমিকা রুতে কার্দোসোকে। তাদের তিনটি সন্তান এখন অনাথ, স্ত্রী নিঃস্ব আর ফুটবল ভুবন শোকাচ্ছন্ন।
এই ঘটনায় নিজের সামাজিক মাধ্যমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো লেখেন, “সবকিছু যেন অবিশ্বাস্য। এইতো সেদিন আমরা একসাথে জাতীয় দলে খেলেছি, আর এখন তোমার শোকবার্তা লিখছি! তোমার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের জন্য আমি দোয়া করি। তুমি তাদের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবে। শান্তিতে ঘুমাও দিয়েগো, শান্তিতে ঘুমাও আন্দ্রে। তোমাদের আমরা ভীষণ মিস করব।”
রোনালদোর পাশাপাশি শোক প্রকাশ করেছেন জোটার আরেক জাতীয় দলসঙ্গী রুবেন নেভেস। তার কথায়, “তারা বলে তুমি তখনই হারাও, যখন মানুষ তোমাকে ভুলে যায়। আমি তোমাকে ভুলবো না, দিয়েগো।”
২০১৯ সাল থেকে জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলা জোটা ও রোনালদো ছিলেন মাঠের আক্রমণভাগের প্রধান অস্ত্র। উয়েফা নেশন্স লিগ জয় হোক বা প্রীতি ম্যাচের গোল উৎসব; জোটা ছিলেন সেই সব মুহূর্তের নীরব নায়ক। ক্লাব পর্যায়ে লিভারপুলের জার্সিতে তিনি জয় করেছেন প্রিমিয়ার লিগসহ নানা শিরোপা।
আজ সেই প্রাণচঞ্চল স্ট্রাইকার নেই। মাঠের গ্যালারিতে যিনি উদযাপনের সুর তুলতেন, আজ তার জন্য ফুটবলবিশ্ব নীরব। স্মৃতির পাতা জুড়ে থেকে যাবেন দিয়েগো জোটা; একজন ফুটবলার, একজন বাবা, একজন সতীর্থ, আর হাজারো হৃদয়ের ভালোবাসা।
ঢাকা/আমিনুল