সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক ও বিশিষ্ট শেয়ার ব্যবসায়ী মো. আবুল খায়ের হিরুসহ তার সহযোগীদের শেয়ার কারসাজি এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডজনখানেকের বেশি কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করে মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হিরু চক্রকে মোট ২০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবুল খায়ের হিরুসহ তার সহযোগীদের শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে অনৈতিকভাবে মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। তাই, সংস্থাটির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এসব তথ্য পাঠিয়েছে কমিশন।

এর আগে আবুল খায়ের হিরুর বিনিয়োগ-সংক্রান্ত অভিযোগের রেকর্ডপত্র/তথ্যাদি চেয়ে বিএসইসিতে চিঠি পাঠান দুদকের সহকারী পরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট বিভাগ থেকে হিরুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণের তথ্য দুদকে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

প্রথম কার্যদিবসে সূচকের বড় উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভার সময় পরিবর্তন

এর আগে চলতি বছরের ১৩ মে মাসের শেষের দিকে একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে আবুল খায়ের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন, বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে বিষয়টি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়েছে। তার আগে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর একই বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি পাঠিয়েছিল বিএসইসি।

দুদকে পাঠনো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মো.

আবুল খায়ের হিরুর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ- সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির দাখিল করা দুটি প্রতিবেদনের মধ্যে ফরচুন সুজ লিমিটেড-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি চলতি বছরের গত ৩ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সোনালী পেপার বোর্ড মিলস লিমিটেড-সংক্রান্ত অপর একটি প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আবুল খায়ের এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক এনফোর্সমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তার একটি তালিকা চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত করা হলো। আদেশগুলোর কাগজের পরিমাণ বেশি হওয়ায় শুধু আদেশের অগ্রণী পত্রগুলোর ছায়ালিপি এবং আদেশসমূহের পিডিএফ কপি ই-মেইলের মাধমে প্রেরণ করা হলো।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ার কারসাজির অভিযোগে আবুল খায়ের, তার পরিবারের সদস্য এবং সহযোগীদের নাম উঠে এলেও কারো বিরুদ্ধে তেমন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠিত বিএসইসি আবুল খায়ের ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এমনকি, আবুল খায়েরের ব্যবসায়িক পার্টনার বিশ্বখ্যাত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকেও ছাড় দেয়নি বিএসইসি।

আবুল খায়ের হিরু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী। তিনি সরকারি কর্মচারী। বর্তমানে সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক হিসাবে কর্মরত আছেন আবুল খায়ের হিরু। তিনি নিজে এবং সহযোগীদের সঙ্গে মিলিতভাবে বিভিন্ন সময়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজি করেছেন। ফলে, পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থী। পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে কারসাজির কারণে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদেরকে বিভিন্ন সময়ে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে।

আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদেরকে ২০২২ সালের ১৯ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা এবং ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৫ মে পর্যন্ত সময়ে ১৯৪ কোটি ৬ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে বিএসইসি। 

আবুল খায়ের হিরুর বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলো হলো-১২০১৯৫০০৬২১৬৪৫৩৫, ১২০২৬০০০৭১০৯১১১৬, ১২০৪৫৯০০৬৭৭১২৭৮১, ১২০৫৫৯০০৭১০৯১১১৬, ১২০৫৯৫০০৭১০৯১১১৬, ১৬০৪৫৩০০৬২১৬৪৫৩৫ ও ১৬০৫১১০০৭১০৯১১১৬। তিনি সরকারি কর্মচারী হয়েও বাবা, মা, ভাই, বোন, শ্যালক ও ব্যবসায়িক অংশীজনদের নিয়ে পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে করসাজি করেছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরুসহ তার সহযোগীদের শেয়ার কারসাজি করে মুনাফা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। তাই, তদন্তের স্বার্থে বিএসইসির কাছে তথ্য চেয়েছে দুদক। সংস্থাটির চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে বিএসইসি।

ঢাকা/এনটি/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ভ ন ন ক ম প ন র শ য় র ল নদ ন র শ য় র ক রস জ ত র সহয গ দ র ব এসইস র ২০২৪ স ল ব যবস থ র ব যবস র পর প সরক র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩ মাসে ১৬০ জন নিহত, বিএনপির কোন্দলেই ৮৫ জন

অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ মাসে (সেপ্টেম্বর ২০২৪—সেপ্টেম্বর ২০২৫) দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫০ জন। শুধু বিএনপির অন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছেন ৮৫ জন। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭ জন।

আজ মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। বরং নানা ধরনের সহিংসতা ও অপরাধের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

সহিংসতার বিস্তার

এইচআরএসএসের তথ্যমতে, গত ১৩ মাসে অন্তত ১ হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, সমাবেশকেন্দ্রিক সংঘর্ষ, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখল—এসব কারণেই অধিকাংশ সহিংসতা ঘটেছে।

বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর অন্তঃকোন্দলে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছে। শুধু বিএনপির ভেতরেই ৫৩৯টি ঘটনায় দলটির ৮৫ নেতা-কর্মী নিহত ও ৫ হাজার ১৭ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ২২১টি সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৪১ জন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ৪০টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জন নিহত হন।

আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ২০টি ঘটনায় ১ জন এবং আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ২৪টি সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জন নিহত হন। বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে ১৮টি সহিংসতার ঘটনায় আহত হন ১৪০ জন।

ছাত্ররাজনীতিতেও সহিংসতা কমেনি। ছাত্রদলের অন্তঃকোন্দলে ৩৮টি ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ১৭১টি ঘটনায় ১২০ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক কার্যালয়, বাড়িঘর, দোকানপাট ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে সাত হাজারের বেশি।

সহিংসতার উল্লেখযোগ্য ঘটনা

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, সুধা সদন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’–কেন্দ্রিক সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যুবদলের কর্মী মো. সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির সংঘর্ষের ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরদিন সেখানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৪৬০টি ঘটনায় ৮২ জন, ২০২২ সালে ৭৫৮টি ঘটনায় ৯২ জন এবং ২০২৩ সালে ৯২১টি ঘটনায় ৯৬ জন নিহত হয়েছিলেন। আর গত ১৩ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ জনে।

এইচআরএসএসের দাবি, গুম ও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা না ঘটলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সহিংসতা, গণপিটুনি, নারী নির্যাতন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা—এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি করতে না পারলে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট কাটল আমিরাত, ২০ দলই চূড়ান্ত
  • উন্নত খাদ্য ও টেকসই কৃষিতে স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ
  • কমেছে পাসের হার, অর্ধেকেরও কমে নেমেছে জিপিএ-৫
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যায় ছেলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড 
  • নয় মাসে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা কমেছে ৩.৯৭ শতাংশ
  • রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩ মাসে ১৬০ জন নিহত, বিএনপির কোন্দলেই ৮৫ জন
  • নতুন পাবলিক অফার রুলসের খসড়া অনুমোদন বিএসইসির
  • ‘আইএফআইসি শ্রীপুর বন্ডের’ তহবিল ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম তদন্তে বিএসইসি
  • ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স
  • শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিল পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স