বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের একটি মশালমিছিল দেখিয়েছে ভারতের টিভি চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’য়। তবে দাবি করা হয়েছে, এটি আওয়ামী লীগের ‘শাটডাউন’–এর কর্মসূচি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিও ভারতের আরও গণমাধ্যম তাদের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা ছড়ানোর ইঙ্গিত হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘোষণার পর ‘লকডাউন’, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রচার অনলাইনে চালাতে শুরু করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এরপর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ এবং গাড়ি পোড়ানোর ঘটনাও ঘটে।

এর মধ্যেই ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন রিপাবলিক বাংলা ১৩ নভেম্বর ভিডিওটি প্রকাশ করে। ‘এক্সক্লুসিভ’ খবরে বর্ণনা দিয়ে সংবাদ উপস্থাপক বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্তব্ধ করার অভিযান শুরু’, ‘আওয়ামী লীগের লকডাউনের ডাক’, ‘ঢাকার রাস্তায় নেমে পড়েছে মানুষ মশাল হাতে।’

লিংক: এখানে, এখানে

একই ভিডিও ভারতের আরেক প্রধান সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ হিন্দি ভিন্ন দাবি জুড়ে প্রচার করে। চ্যানেলটির সাংবাদিক হার্শিতা প্যাটেল ১৩ নভেম্বর ভিডিওটিকে ঢাকায় ‘ছাত্ররা বইপত্র ফেলে রেখে মশাল হাতে রাস্তায় নেমে এসেছে’ বলে উপস্থাপন করেন।

লিংক: এখানে

ভিডিওটির ক্যাপশনে আরও দাবি করা হয়, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে; সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষকদের পদ বাতিলের সিদ্ধান্তে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র আন্দোলনের নতুন স্ফুলিঙ্গ দেখা দিয়েছে।

স্বদেশ নিউজ, এশিয়া নেট নিউজ (তামিল) এবং ভারতের আরও কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ভিডিওটির স্থিরচিত্র ব্যবহার করে দাবি করে যে বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। কারও কারও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ঢাকায় লকডাউন চলছে এবং রাজধানী অগ্নিগর্ভ।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে

একই ভিডিও ১৩ নভেম্বর এক্স–প্ল্যাটফর্মে একাধিক অফিশিয়াল ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইরাল করা হয়, যার মধ্যে ছিল @NewsAlgebraIND, @RealBababanaras, @FrontalForce, @IndiaWarMonitor, @nabilajamal_ এবং @AadiAchint। এসব অ্যাকাউন্টে ভিডিওটির সঙ্গে যুক্ত করা হয় বিস্ফোরণ, সহিংস বিক্ষোভ, অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কিংবা শেখ হাসিনার পক্ষে বিক্ষোভ—এমন নানা বিপরীত দাবি।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে

ভিডিওটি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে লক্ষাধিকবার দেখা হয়েছে। এর মধ্যে @RealBababanaras–এর পোস্ট করা ভিডিও ২ লাখ ৮৬ হাজার বার এবং @NewsAlgebraIND–এর পোস্ট ২ লাখ ২৫ হাজার বার দেখা যায়।

লিংক:এখানে, এখানে

এ ছাড়া @nabilajamal নামের এক্স অ্যাকাউন্ট, যেখানে ব্যবহারকারী নিজেকে টিভি৯ নেটওয়ার্কের নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, সেখানে ভিডিওটিকে ‘বাংলাদেশে নতুন ছাত্র আন্দোলন’ দাবি করে ২৫ হাজার ভিউ পায়।

লিংক: এখানে

দাবি করা ভিডিওটি কি–ফ্রেমে ভাগ করে রিভার্স ইমেজে সার্চে স্পষ্ট হয়, ভিডিওটি কুমিল্লায় বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে এক নেতার সমর্থকদের মশালমিছিলের সময় ধারণ করা।

লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

কি–ওয়ার্ড সার্চ করে ১১ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার একাধিক ভিডিও ও স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউবেও সময় টিভি এবং কুমিল্লার কাগজ চ্যানেলে একই দিনের মশালমিছিলের প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

লিংক: এখানে, এখানে

প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, কুমিল্লা–৬ (সদর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় নেতা–কর্মীরা টানা ৯ দিন ধরে বিক্ষোভ করছে। এর অংশ হিসেবে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীতে মশালমিছিল হয়, যেখানে কয়েক হাজার নেতা–কর্মী অংশ নেন। মিছিলটি কুমিল্লা শহরের টাউন হল মাঠ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়।

প্রথম আলোর কুমিল্লা প্রতিনিধি আবদুর রহমান ভিডিওর ঘটনাস্থল যাচাই করে নিশ্চিত করেন, এটি ১১ নভেম্বর টাউন হল মাঠের মশালমিছিলের।

মিছিলে থাকা কুমিল্লা মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.

সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভিডিওটি টাউন হল মাঠের পূর্ব–দক্ষিণ পাশ থেকে ধারণ করা হয়েছে।

একই কর্মসূচির আরও ভিডিও রয়েছে। রিপাবলিকে প্রচারিত ভিডিও সঙ্গে আরেকটি ভিডিওর তুলনা করে দেখা যায়, দুটিরই বাম পাশে একটি বহুতল ভবন, ডান পাশে কুমিল্লা টাউন হলের বীরচন্দ্র গণ–পাঠাগার ও মিলনায়তন এবং পাশে বিদ্যুতের খুঁটি দেখা যাচ্ছে।

আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি দুই শতাধিক আসনে তাঁদের প্রার্থী মনোনীত করার পর বিভিন্ন স্থানেই ক্ষোভ–বিক্ষোভ চলছে। তার মধ্যে কুমিল্লা–৬ আসন একটি। সুতরাং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে এটা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে, এই ভিডিও কুমিল্লায় বিএনপির এক পক্ষেরই মশালমিছিলের, এটি ঢাকার কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো কর্মসূচির নয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য ক উন ট র প বল ক ব এনপ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁ-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ (ধামইরহাট-পত্নীতলা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে দলটির একাংশের নেতা–কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার পৌর বাজার এলাকায় নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়কে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা থেকে বিএনপির একাংশের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

সারা দেশে ঘোষিত বিএনপির প্রাথমিক ২৩৭টি মনোনয়নের মধ্যে নওগাঁ-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খানকে প্রাথমিকভাবে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মনোনয়ন পরিবর্তন করে এই আসনে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীকে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা।

আজ বেলা ১১টার দিকে ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনে থেকে আমইতাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের উভয় পাশে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে নওগাঁ-জয়পুরহাট মহাসড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, নওগাঁ-২ আসনে সামসুজ্জোহা খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তাঁর অনুসারী নেতা–কর্মীদের চাঁদাবাজি ও মামলাবাজির কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীরাও সামসুজ্জোহার ওপর ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগের শাসনামলে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি মাঠে ছিলেন না। নেতা–কর্মীরা মামলা-হামলার শিকার ও কারাবরণ করলেও তিনি কোনো খোঁজ নেননি। আওয়ামী লীগের শাসনামলে নাজিবুল্লাহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন। পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। নাজিবুল্লাহকে মনোনয়ন দিলে এই আসনে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়ী হবে।

ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আখরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নওগাঁ-২ আসন বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আসনটিতে যে প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছেন, তাতে আসনটি জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর যাঁরা রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি, বিগত সরকারের সময়ে মামলা খেয়েছি, ঘরছাড়া হয়েছি, তাঁদের কোনো খোঁজখবর রাখেননি সামসুজ্জোহা। আমাদের দুঃসময়ে নাজিবুল্লাহ চৌধুরী পাশে ছিলেন। এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে নাজিবুল্লাহ চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে নওগাঁ-২ (ধামইরহাট-পত্নীতলা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সামসুজ্জোহা খান বলেন, ‘যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসব। আশা করি, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিএনপির পক্ষে এক হয়ে কাজ করবেন।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ধামইরহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পত্নীতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও নজিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আনোয়ার হোসেন, ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আখরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দেওয়ান ফেরদৌস, ধামইরহাট উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন, ধামইরহাট পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজোয়ান হোসেন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ