বৃষ্টির প্রভাব সবজির বাজারে, কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা
Published: 11th, July 2025 GMT
টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম নগরের খুচরা সবজির বাজারে। বাজারে সবজিভেদে দাম গত সপ্তাহের তুলনায় অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচা মরিচের। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়েছিল কাঁচা মরিচ। তবে এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকার আশপাশে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টিতে ফলন নষ্ট হওয়া ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। অন্যান্য সবজির দাম পাইকারিতে ৩ থেকে ৫ টাকা বাড়লেও খুচরায় বেড়েছে বেশি। তবে আগামী সপ্তাহে আমদানি করা অনেক কাঁচা মরিচ বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন মরিচের দাম কমে যাবে।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট, চকবাজার ও কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে গত সপ্তাহে বরবটি, ঝিঙে, পটোল, করলা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে আজ শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকার আশপাশে। একই দামে বিক্রি হয়েছে বেগুন, গাজর, ফুলকপি। সপ্তাহের ব্যবধানে দামের পার্থক্য গড়ে ১০ টাকা।
কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারের সবজি বিক্রেতা মো.
বাজারে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়ার শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভিন্ন চিত্র পাইকারি বাজারে। চট্টগ্রামের সবজির পাইকারি আড়ত রিয়াজউদ্দিন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়তে সব সবজির দাম এখনো কম। বৃষ্টিতে প্রভাব পড়লেও কেজিতে সেটি সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা। তবে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। অধিকাংশ সবজির দাম ৪০ টাকার মধ্যে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, কাঁচা মরিচের দাম আড়তে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আমদানি করা কাঁচা মরিচ বাজারে এলে দাম কমে যাবে। বাকি সবজির দাম কম আছে। সরবরাহ কমেছে কিছুটা, তবে তা দামে প্রভাব ফেলেনি।
মাংসের বাজারে দামের পরিবর্তন হয়নি গত সপ্তাহের তুলনায়। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩১০ টাকা আর দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৮০ টাকায়। গরুর মাংসের দামেও বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি। কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকায়। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়।
মাছের বাজারে লইট্যা গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১৪০ টাকা থাকলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। অন্যান্য মাছের মধ্যে রুই ৩০০ থেকে ৫৫০, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০, চিংড়ি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০, কাঁচকি ৪০০, চাষের কই ২৫০ থেকে ৩০০, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০, শিং ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ এবং ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সবজ র দ ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা চায় আদানি
শীতে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতের খোলাবাজারে বিক্রি করতে চায় আদানি পাওয়ার। এ জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুমোদন চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পিডিবি বলছে, তারা আদানির প্রস্তাবে রাজি হবে, যদি কোম্পানিটি কয়লার দাম কমায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হলেও সুরাহা হয়নি। পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, সিদ্ধান্ত জানানোর মতো পর্যায়ে বিষয়টি এখনও পৌঁছেনি। আলোচনা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। চুক্তি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাণিজ্যিক লেনদেনও কমে আসে। এ পরিস্থিতিতে গত আগস্টে অন্য দেশে রপ্তানির জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেও বিক্রির সুযোগ রেখে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন করে দেশটির সরকার।
বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন নথিতে উল্লেখ করা হয়, শুধু একটি প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রণীত ২০১৮ সালের ওই নির্দেশিকায় সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হলে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে আরও বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ বা আংশিক উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার না হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধার্থে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ভারতীয় গ্রিডে যুক্ত করার অনুমোদন দিতে পারবে ভারত সরকার।
আদানি পাওয়ার তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি স্থানীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে। তবে এই নির্দিষ্ট লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে পিডিবির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কারণ বাংলাদেশে শতভাগ রপ্তানির জন্য আদানি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি নির্মাণ করেছে।
সম্প্রতি আদানি শীতকালে বাংলাদেশের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নিজ দেশের খোলাবাজারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। পিডিবি বলছে, আদানিকে যদি এই অনুমোদন নিতে হয়, তাহলে কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব মানতে হবে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৮ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে।
পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, শীতকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। যে কারণে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির আলোচনা চলছে। একই কারণে আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চাহিদাও কমে যায়। বিদ্যুৎ না কিনলেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ঠিকই দিতে হয়। এ জন্য আদানি বাড়তি বিদ্যুৎ অন্য কোথাও বিক্রি করলে তার লাভ, বাংলাদেশেরও লাভ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পিডিবি ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্সকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের সব কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের কয়লা এই ইনডেক্স অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে। আর আদানি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক ইনডেক্সের গড় করে কয়লার দর নির্ধারণ করে। ফলে টনপ্রতি কয়লার দাম ১০ থেকে ১২ ডলার বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করে পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। পায়রা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দামে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়, যার সুবিধা প্রকৃতপক্ষে পিডিবি ভোগ করে। রামপালও বছরজুড়ে কয়লা কেনার সময় ছাড়ের শর্তেই চুক্তি করে। আদানি নিজের খনির কয়লা সরবরাহ করে। চুক্তিতে ছাড়ের বিষয়টি নেই। ফলে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিটি। ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, এ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে।