চতুর্থ বিকেলে রুমির আর সৈকতে যাওয়া হবে না। কেনাকাটা করতে করতে রাত নেমে আসবে। রাতের খাবার শেষ করে ফেরার বাস ধরবে। হোটেল থেকে সরাসরি গিয়ে উঠবে বাস কাউন্টারে। বাস ছাড়তে দেরি হবে। ওয়েটিং রুমে সবাই খোশমেজাজে থাকবে। শুধু রুমি একটা চাপা অস্বস্তিতে ভুগবে। ভাববে, তরুণটির সঙ্গে আবারও হয়তো তার দেখা হয়ে যেতে পারে। হয়তো দেখা হয়ে যাবে এই ওয়েটিং রুমেই।
ওয়েটিং রুমে কেমন যেন গুমোট গরম। যদিও দেখা যাবে, এসি ঠিকঠাকই চলছে, কিন্তু অস্বস্তি হবে রুমির। মনে হবে, ঠান্ডা কিছু খেলে ভালো হতো। দুলাভাই আর বোনকে রেখে ওরা তাই বাইরে যাবে। ওরা মানে রুমি আর রুমির বছর চারেক ছোট দুলাভাইয়ের ছোট বোন। কাউন্টারের কাছেই থাকবে একটা কনফেকশনারি। ওরা আইসক্রিম খাবে। খাওয়া শেষে ফিরে আসবে। ওয়েটিং রুমে ততক্ষণে আরও কিছু লোক এসে যাবে। এক–এক করে বক্সে লাগেজ তোলা হবে। এক–এক করে বাসে উঠে পড়বে অপেক্ষমাণ যাত্রী। ইচ্ছা করেই সবার শেষে উঠবে রুমি।
বাস ছাড়বে। সামান্য দূর যেতে না যেতেই বাস থামবে। এটা এই বাসেরই আরেকটা কাউন্টার। রুমি তাকিয়ে থাকবে দরজার দিকে। জনাকয়েক নতুন যাত্রী উঠবে। কোনো পরিচিত মুখ থাকবে না। দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে। বাস আবার চলতে শুরু করবে।
বাসের ভেতর কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হবে তার। রুমি ভাববে, হয়তো আবারও তরুণটির সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাবে এবং তা আজ রাতেই।
হয়তো বা দেখবে ফুটপাত দিয়ে তরুণটি হন্তদন্ত হেঁটে যাচ্ছে।
হয়তো বা দেখবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে তরুণটি।
হয়তো বা তরুণটি পরের কোনো কাউন্টারে বাস থামলে উঠে পড়বে।
কী সব এই সব ভাবছে রুমি! জীবন কি সিনেমা? সিনেমা কি জীবনের মতো?
কিছু দূর গিয়ে বাস আবার থামবে। এটাও এই বাসের আরেকটা কাউন্টার। এবারও জন দুই নতুন যাত্রী উঠবে। এবারও রুমি তাকিয়ে থাকবে দরজার দিকে। এবারও কোনো পরিচিত মুখ থাকবে না। এবারও দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে। এবারও বাস আবার চলতে শুরু করবে।
বাস এবার টানা চলতে শুরু করবে।
রুমির মনটা টানা খারাপ হতে থাকবে।
অনেকক্ষণ চলতে চলতে চলতে বাসটা থামবে। এখানে কোনো কাউন্টার থাকবে না। তবে থামবে কেন? থামবে, কেননা রাস্তায় অনেক জ্যাম। বাস এভাবে থেমেই থাকবে। বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ ফুটপাতের দিকে নজর যাবে রুমির। নজর পড়তেই বুকটা ধক করে উঠবে। একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে দেখা যাবে একজনকে। সেই একজনের গায়ে থাকবে ইয়েলো টি–শার্ট। প্রথমে কিছু না বুঝেই সে চোখ ফিরিয়ে নেবে কিন্তু তখন তখনই তার চোখ আবার চলে যাবে ওইখানে। আগেরবার ফোনে কথা বলতে থাকায় তরুণটির মুখ পুরোপুরি দেখা যাবে না। এবার যেই না তাকে ভালো করে দেখতে যাবে, তখন তখনই দেখা যাবে, বাসের গতি হঠাৎ বেড়ে গেছে।
তৃতীয় বিকেলে বৃষ্টি নামবে হুট করে। কিছু লোক হোটেলে ফিরে যাবে। কিছু লোক বৃষ্টিতে ভিজবে। রুমি ঠিক করবে যে সে হোটেলে ফিরে যাবে না আবার সৈকতেও থাকবে না। তার অন্য কোথাও যেতে মন চাইবে। ঠিক তখন তখনই সে দেখতে পাবে তরুণটিকে। একটা ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তরুণটির পরনে ইয়েলো টি–শার্ট। চোখাচোখি হতেই আচমকা একটা দমকা হাওয়া বইবে। দমকা হাওয়ায় তরুণটির ছাতা উড়ে যাবে। রুমি ফিক করে হেসে উঠবে।
দ্বিতীয় বিকেলে ঝাউবনের ভেতরে হাঁটতে থাকবে রুমি। সারি সারি গাছের ভেতর দিয়ে এইভাবে হাঁটতে তার ভীষণ ভালো লাগবে। এইভাবে হাঁটার ইচ্ছা তার বহুদিনের। এর আগে সে বহুবার দেখে থাকবে, বিজ্ঞাপনের নারীরা এইভাবে ঝাউবনে হাঁটে। হাওয়ায় উড়তে থাকে তাদের দুরন্ত চুল। এই প্রথম তার সমুদ্র দেখতে আসা। অথচ তার ইচ্ছা থাকবে, বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে প্রথম সমুদ্র দেখার। অথচ এখানেই সহসা তরুণটির সঙ্গে আবার দেখা হবে তার। ইয়েলো টি–শার্ট পরা তরুণটি ঝাউবনের ভেতর দিয়ে হয়তো কোথাও যেতে থাকবে। চোখাচোখি হতেই দুজনে থমকে দাঁড়াবে। নিজেকে সামলে নিয়ে রুমি আবার হাঁটা শুরু করবে। নিজেকে সামলে নিয়ে তরুণটিও আবার হাঁটা শুরু করবে। মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকা তরুণটি একবার একটু হাসবে। মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকা রুমিও একবার একটু হাসবে।
এই বাদলাদিনে রুমি সমুদ্র দেখতে চাইবে না। চাইবে শীতের সময়। কিন্তু দুলাভাই বলবে, বর্ষাতেই সমুদ্র বেশি সুন্দর। বালুতে খুব সহজে হাঁটা যায়। পা দেবে যায় না। বহুদূর থেকে সাগরের গর্জন শোনা যায়। যুক্তিতে মুক্তি মিলবে। রুমির আসা হবে। এসে ভালো লাগবে। খুব বেশি ভালো লাগবে।
তরুণটির সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে হুট করেই। হাঁটতে শুরু করার একটু পরই রুমি তাকে দেখতে পাবে। রুমি হাঁটবে পানির খুব কাছাকাছি। দুলাভাই আর বোন পিছিয়ে থাকবে আর বোনের ননদ এগিয়ে। সে হবে দলছুট। হাঁটবে একা। নগ্ন পায়ের ছাপ পড়তে থাকবে ভেজা বালুতে। একটু পরপর পেছনে ফিরে সে দেখবে ছাপগুলো। সহসা একটা বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে দেখে সে সরে আসবে। আর ঠিক তখন তখনই সে প্রথমবারের মতো দেখবে তরুণটিকে। খেয়াল করবে, আরেকটু হলেই তরুণটির সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে যেত। যেভাবে সিনেমায় ধাক্কা লাগে। সে যেমন ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখে ত্বরিত সরে আসবে, তরুণটিও তেমন তাকে আছড়ে পড়া দেখে ত্বরিত সরে যাবে। তরুণটির গায়ে থাকবে ইয়েলো টি–শার্ট। সমুদ্রে তাদের প্রথম বিকেল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক উন ট র র ভ তর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বিপ্লব সফল করতে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “যে কোনো বিপ্লব তখনই সফল হবে যখন সংগঠন শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হবে।”
তিনি বলেন, “আজকের সমাজের হতাশার মূল কারণ হলো বিপ্লবী সংগঠনের অভাব।”
আরো পড়ুন:
ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে: ফখরুল
নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন: ফখরুল
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে কমরেড বদরুদ্দীন উমরের শোকসভায় বক্তৃতা করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, “যারা সমাজ বদলাতে চান এবং সাধারণ মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে চান, তাদের অবশ্যই সংগঠনকে আরো মজবুত করতে হবে।”
তিনি প্রয়াত কমরেড বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার আদর্শ ও সংগ্রামের সঙ্গে কোনো আপস করেননি।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিপ্লব তখনই সফল হয় যখন তার পেছনে একটি শক্তিশালী সংগঠন থাকে। আজকের যে একটা হতাশা এসেছে, এই হতাশার মূল কারণ হচ্ছে সংগঠনের অভাব। বিপ্লবী সংগঠন যদি না থাকে তাহলে বিপ্লব হয় না।”
তিনি আরো বলেন, “নতুন প্রজন্মের উচিত বদরুদ্দীন উমরের মতো আদর্শিক ও আপসহীন নেতাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। উমরের ভাষায়: বিপ্লব করতে হলে একেবারে মানুষের কাছে চলে যেতে হবে।”
শোকসভার শুরুতে প্রয়াত বদরুদ্দীন উমরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মাহবুবউল্লাহ, কমরেড খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, ড. আকমল হোসেন, কমরেড সজীব রায় এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ