Prothomalo:
2025-08-06@15:19:03 GMT

ইয়েলো টিশার্ট

Published: 6th, August 2025 GMT

চতুর্থ বিকেলে রুমির আর সৈকতে যাওয়া হবে না। কেনাকাটা করতে করতে রাত নেমে আসবে। রাতের খাবার শেষ করে ফেরার বাস ধরবে। হোটেল থেকে সরাসরি গিয়ে উঠবে বাস কাউন্টারে। বাস ছাড়তে দেরি হবে। ওয়েটিং রুমে সবাই খোশমেজাজে থাকবে। শুধু রুমি একটা চাপা অস্বস্তিতে ভুগবে। ভাববে, তরুণটির সঙ্গে আবারও হয়তো তার দেখা হয়ে যেতে পারে। হয়তো দেখা হয়ে যাবে এই ওয়েটিং রুমেই।

ওয়েটিং রুমে কেমন যেন গুমোট গরম। যদিও দেখা যাবে, এসি ঠিকঠাকই চলছে, কিন্তু অস্বস্তি হবে রুমির। মনে হবে, ঠান্ডা কিছু খেলে ভালো হতো। দুলাভাই আর বোনকে রেখে ওরা তাই বাইরে যাবে। ওরা মানে রুমি আর রুমির বছর চারেক ছোট দুলাভাইয়ের ছোট বোন। কাউন্টারের কাছেই থাকবে একটা কনফেকশনারি। ওরা আইসক্রিম খাবে। খাওয়া শেষে ফিরে আসবে। ওয়েটিং রুমে ততক্ষণে আরও কিছু লোক এসে যাবে। এক–এক করে বক্সে লাগেজ তোলা হবে। এক–এক করে বাসে উঠে পড়বে অপেক্ষমাণ যাত্রী। ইচ্ছা করেই সবার শেষে উঠবে রুমি।

বাস ছাড়বে। সামান্য দূর যেতে না যেতেই বাস থামবে। এটা এই বাসেরই আরেকটা কাউন্টার। রুমি তাকিয়ে থাকবে দরজার দিকে। জনাকয়েক নতুন যাত্রী উঠবে। কোনো পরিচিত মুখ থাকবে না। দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে। বাস আবার চলতে শুরু করবে।

বাসের ভেতর কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হবে তার। রুমি ভাববে, হয়তো আবারও তরুণটির সঙ্গে তার দেখা হয়ে যাবে এবং তা আজ রাতেই।

হয়তো বা দেখবে ফুটপাত দিয়ে তরুণটি হন্তদন্ত হেঁটে যাচ্ছে।

হয়তো বা দেখবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে তরুণটি।

হয়তো বা তরুণটি পরের কোনো কাউন্টারে বাস থামলে উঠে পড়বে।

কী সব এই সব ভাবছে রুমি! জীবন কি সিনেমা? সিনেমা কি জীবনের মতো?

কিছু দূর গিয়ে বাস আবার থামবে। এটাও এই বাসের আরেকটা কাউন্টার। এবারও জন দুই নতুন যাত্রী উঠবে। এবারও রুমি তাকিয়ে থাকবে দরজার দিকে। এবারও কোনো পরিচিত মুখ থাকবে না। এবারও দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে। এবারও বাস আবার চলতে শুরু করবে।

বাস এবার টানা চলতে শুরু করবে।

রুমির মনটা টানা খারাপ হতে থাকবে।

অনেকক্ষণ চলতে চলতে চলতে বাসটা থামবে। এখানে কোনো কাউন্টার থাকবে না। তবে থামবে কেন? থামবে, কেননা রাস্তায় অনেক জ্যাম। বাস এভাবে থেমেই থাকবে। বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ ফুটপাতের দিকে নজর যাবে রুমির। নজর পড়তেই বুকটা ধক করে উঠবে। একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে দেখা যাবে একজনকে। সেই একজনের গায়ে থাকবে ইয়েলো টি–শার্ট। প্রথমে কিছু না বুঝেই সে চোখ ফিরিয়ে নেবে কিন্তু তখন তখনই তার চোখ আবার চলে যাবে ওইখানে। আগেরবার ফোনে কথা বলতে থাকায় তরুণটির মুখ পুরোপুরি দেখা যাবে না। এবার যেই না তাকে ভালো করে দেখতে যাবে, তখন তখনই দেখা যাবে, বাসের গতি হঠাৎ বেড়ে গেছে।

তৃতীয় বিকেলে বৃষ্টি নামবে হুট করে। কিছু লোক হোটেলে ফিরে যাবে। কিছু লোক বৃষ্টিতে ভিজবে। রুমি ঠিক করবে যে সে হোটেলে ফিরে যাবে না আবার সৈকতেও থাকবে না। তার অন্য কোথাও যেতে মন চাইবে। ঠিক তখন তখনই সে দেখতে পাবে তরুণটিকে। একটা ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তরুণটির পরনে ইয়েলো টি–শার্ট। চোখাচোখি হতেই আচমকা একটা দমকা হাওয়া বইবে। দমকা হাওয়ায় তরুণটির ছাতা উড়ে যাবে। রুমি ফিক করে হেসে উঠবে।

দ্বিতীয় বিকেলে ঝাউবনের ভেতরে হাঁটতে থাকবে রুমি। সারি সারি গাছের ভেতর দিয়ে এইভাবে হাঁটতে তার ভীষণ ভালো লাগবে। এইভাবে হাঁটার ইচ্ছা তার বহুদিনের। এর আগে সে বহুবার দেখে থাকবে, বিজ্ঞাপনের নারীরা এইভাবে ঝাউবনে হাঁটে। হাওয়ায় উড়তে থাকে তাদের দুরন্ত চুল। এই প্রথম তার সমুদ্র দেখতে আসা। অথচ তার ইচ্ছা থাকবে, বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে প্রথম সমুদ্র দেখার। অথচ এখানেই সহসা তরুণটির সঙ্গে আবার দেখা হবে তার। ইয়েলো টি–শার্ট পরা তরুণটি ঝাউবনের ভেতর দিয়ে হয়তো কোথাও যেতে থাকবে। চোখাচোখি হতেই দুজনে থমকে দাঁড়াবে। নিজেকে সামলে নিয়ে রুমি আবার হাঁটা শুরু করবে। নিজেকে সামলে নিয়ে তরুণটিও আবার হাঁটা শুরু করবে। মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকা তরুণটি একবার একটু হাসবে। মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকা রুমিও একবার একটু হাসবে।

এই বাদলাদিনে রুমি সমুদ্র দেখতে চাইবে না। চাইবে শীতের সময়। কিন্তু দুলাভাই বলবে, বর্ষাতেই সমুদ্র বেশি সুন্দর। বালুতে খুব সহজে হাঁটা যায়। পা দেবে যায় না। বহুদূর থেকে সাগরের গর্জন শোনা যায়। যুক্তিতে মুক্তি মিলবে। রুমির আসা হবে। এসে ভালো লাগবে। খুব বেশি ভালো লাগবে।

তরুণটির সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে হুট করেই। হাঁটতে শুরু করার একটু পরই রুমি তাকে দেখতে পাবে। রুমি হাঁটবে পানির খুব কাছাকাছি। দুলাভাই আর বোন পিছিয়ে থাকবে আর বোনের ননদ এগিয়ে। সে হবে দলছুট। হাঁটবে একা। নগ্ন পায়ের ছাপ পড়তে থাকবে ভেজা বালুতে। একটু পরপর পেছনে ফিরে সে দেখবে ছাপগুলো। সহসা একটা বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে দেখে সে সরে আসবে। আর ঠিক তখন তখনই সে প্রথমবারের মতো দেখবে তরুণটিকে। খেয়াল করবে, আরেকটু হলেই তরুণটির সঙ্গে তার ধাক্কা লেগে যেত। যেভাবে সিনেমায় ধাক্কা লাগে। সে যেমন ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখে ত্বরিত সরে আসবে, তরুণটিও তেমন তাকে আছড়ে পড়া দেখে ত্বরিত সরে যাবে। তরুণটির গায়ে থাকবে ইয়েলো টি–শার্ট। সমুদ্রে তাদের প্রথম বিকেল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক উন ট র র ভ তর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’

‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ অপারেশন টেবিলে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এক চিকিৎসকের মুখে তারেক শাহরিয়ার তন্ময়কে শুনতে হয়েছিল এমন কটূক্তি।

তন্ময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের উত্তাল দিনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষার্থী। তার কাছে হাসপাতালের সেই অপমান আজো দগদগে ক্ষত।

গত বছর ১৬ জুলাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তন্ময়ও অংশ নেন। রাজধানীর ভাটারা থানা ও নতুন বাজারের রাস্তায় দিনভর চলতে থাকে স্লোগান ও মিছিল। ১৭ জুলাই আন্দোলনে সাময়িক বিরতি এলেও পরদিন সকালেই ফের রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা আয়োজন

বাকৃবি ২ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ১৫৪ জনকে শাস্তি

তন্ময় বলেন, “বন্ধুর ফোনে খবর পেয়ে বের হওয়ার আগে বেলকনি থেকে দেখি আওয়ামী লীগের কিছু লোক বস্তা থেকে অস্ত্র-ছুরি বের করছে। তখনই ভয় পেয়ে আইডি কার্ড গলায় ঝুলাইনি।”

তিনি বলেন, “সেদিন নতুন বাজার থেকে শুরু হওয়া মিছিল বাঁশতলা পেরিয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে এগোতে থাকলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। পুলিশও টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ঠিক তখনই পুলিশের শর্টগানের গুলি এসে লাগে আমার বাম চোখে।”

রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে প্রথমে এএমজেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। চিকিৎসকরা জানান, চোখ ফেরানো সম্ভব নয়।

তন্ময় বলেন, “অপারেশনের আগে এক চিকিৎসক এসে বলেছিলেন, ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’ তখন আমি দুর্বল অবস্থায় অপারেশন টেবিলে শুয়ে কিছু বলতে পারিনি।”

অপারেশনের পরও তাকে অন্য রোগীর সঙ্গে একই বেডে রাখা হয়। বাইরে ছাত্রলীগের হামলার চেষ্টা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে পাশে দাঁড়ান ও খরচ বহন করেন। খবর পেয়ে রংপুর থেকে ছুটে আসেন তার মা-বাবা। ছেলেকে দেখে ভেঙে পড়েন তারা।

পরে বিদেশে চিকিৎসার চেষ্টা হলেও ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা, শিক্ষক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেয়েও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। এখন বিদেশে গেলেও তেমন লাভ নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসকরা।

স্বৈরাচার পতনের এক বছর পর দেশ নতুন আশা দেখলেও তন্ময়ের চোখে আলো ফেরেনি। তিনি বলেন, “১৮ জুলাই শুধু আমার চোখে গুলি লাগেনি, সেদিন আমার স্বপ্নেও গুলি লেগেছিল। আমি শুধু একটা চোখ হারাইনি, হারিয়েছি জীবনের ছন্দও।”

তন্ময়ের জীবনে যে অন্ধকারের দাগ লেগেছে, তা দেশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে। স্বৈরাচার বিদায়ের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু সেই ক্ষতগুলো পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় প্রয়োজন।

তন্ময়ের মতো অসংখ্য তরুণের ত্যাগ ও বেদনায় আজকের মুক্তি সম্ভব হয়েছে, যা আমাদের সবার কাছে চিরস্মরণীয়।

ঢাকা/রাকিবুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কিরে, কেমন লাগছে?’, রাজের প্রাক্তন স্ত্রীর পোস্ট ঘিরে তোলপাড়
  • ‘নেতা হইছোস? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করো?’
  • মোহাম্মদ সিরাজ: বুমরাহীন ভারতের শেষ আশার নাম