ডি পল-সুয়ারেজে কোয়ার্টার ফাইনালে মেসিহীন মায়ামি
Published: 7th, August 2025 GMT
লুইস সুয়ারেজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে লিগস কাপে পুমাসকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ইন্টার মায়ামি। গোলের পাশাপাশি সতীর্থদের দুটি গোলেও সহায়তা করেছেন উরুগুইয়ান এই তারকা।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) ভোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পাওয়া এই জয়ে লিগস কাপের নকআউট পর্ব তথা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে ডেভিড বেকহ্যামের দল।
তবে এই ম্যাচে ছিলেন না লিওনেল মেসি। ডান পায়ের হালকা চোটের কারণে তিনি আপাতত মাঠের বাইরে। গত শনিবার নেকাক্সার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতেই চোট পেয়েছিলেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। যদিও স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন তিনি। তবে মাঠের বাইরে থেকে ম্যাচটি উপভোগ করেছেন দর্শক গ্যালারির স্যুট থেকে।
আরো পড়ুন:
অবশেষে সংশয়ই সত্যি হলো, মাঠের বাইরে মেসি
ইনজুরির শঙ্কা, উত্তেজনার ঝড়: শেষ হাসি হাসল মেসিহীন মায়ামি
এই জয়ের ফলে ইন্টার মায়ামি প্রথম এমএলএস ক্লাব হিসেবে লিগস কাপের এবারের আসরের নকআউট পর্বে জায়গা করে নিলো। বর্তমানে তাদের পয়েন্ট সংখ্যা ৮।
এদিন ম্যাচের ৩৪ মিনিটে পুমাসের জর্জে রুভালকাবা গোল করে দলকে এগিয়ে দেন। তবে প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে (৪৫তম মিনিটে) সুয়ারেজের অ্যাসিস্টে দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান ডি পল। এটি ছিল ইন্টার মায়ামির হয়ে ডি পলের প্রথম গোল।
ডি পল, যিনি মূলত লিওনেল মেসির সঙ্গে খেলার লক্ষ্যেই এমএলএসে এসেছেন। ক্লাবটির হয়ে অভিষেক করেছিলেন গত সপ্তাহে আটলাসের বিপক্ষে। নেকাক্সার বিপক্ষে ম্যাচে তিনি দুটি অ্যাসিস্ট করেছিলেন।
৫৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ইন্টার মায়ামিকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন সুয়ারেজ। পেনাল্টিটি এসেছিল পুমাস ডিফেন্ডার হোসে কাইসেদোর হ্যান্ডবলের কারণে। গত ২৩ জুন ক্লাব বিশ্বকাপে পামেইরাসের বিপক্ষে গোলের পর এটিই সুয়ারেজের প্রথম গোল।
এরপর ৬৯ মিনিটে সুয়ারেজের আরেকটি দারুণ অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন তাদেও অ্যালেন্দে। ম্যাচের বাকি সময়টায় আর কোনো গোল না হলে ৩-১ ব্যবধানের জয় নিয়ে ও শেষ আট নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়ে ইন্টার মায়ামি।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ইন ট র ম য় ম গ ল কর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব
খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রলার থেকে নামলেন কয়রার ঘাটে। তিন দিন পর তিনি ফিরেছেন সুন্দরবনের গভীর দুবলারচরের আলোরকোল থেকে। চোখে–মুখে ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে প্রশান্তি।
বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘গতকাল বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে আমরা ফিরতি পথ ধরে আজ লোকালয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার মা আর দিদি—দুজনেই অসুস্থ। তাঁরাও ছিলেন, খুব ভয়ে ছিলাম।’
৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব শেষ হয় গতকাল ভোরে। পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুণ্যস্নান। আলোরকোলের দুই কিলোমিটারজুড়ে তখন শুধু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একসঙ্গে নেমে পড়েন সমুদ্রের জলে। শঙ্খধ্বনি, কীর্তন, ঢাকের বাদ্য আর ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।
কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনোজিত কুমার রায় বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করলে পাপমোচন হয়—এ বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। সৈকতের পাড়ে চোখ বুজে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।’
বন বিভাগের হিসাবে, এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। পূজা-অর্চনা, ভজন ও লীলাকীর্তন শেষে গতকাল ভোরে তাঁরা সাগরে স্নান করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। উৎসব চলাকালে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। গত মঙ্গলবার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে সুমন নামের এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হলেও কোস্টগার্ড পরে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করে।
রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে সাধু হরিভজন প্রথম দুবলারচরের আলোরকোলে রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই আয়োজন লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ আছে।
রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার বেড়ে যায়—এ অভিযোগ পুরোনো। তবে এ বছর বন বিভাগ বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা দমন করতে পেরেছে।
পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাস উৎসবের দ্বিতীয় দিন কেওড়াবনে টহলের সময় বনরক্ষীরা প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করেন। এবার উৎসবের সময় ৩২ জন শিকারি আটক হয়েছেন। শিকারের ফাঁদগুলো আগেভাগে না সরাতে পারলে শতাধিক হরিণ মারা যেত।’
দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতাব্দীকাল ধরে আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত থেকেও অনেক ভক্ত অংশ নেন। এটি শুধু পূজা নয়, এক আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।
সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা সব নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। আগাম প্রস্তুতি ও যৌথ টহলের কারণে অপরাধও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।