ভোরে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ঘুম থেকে উঠে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের মুহম্মদ আলী শাহ লেনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ দেখেন, বাসায় স্রোতের মতো পানি ঢুকছে। সবাই মিলে দ্রুত ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নেন। তিনি বলেন, ‘ভাগ্য ভালো তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙছিল, না হলে ঘরের সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যেত পানিতে।’

আবদুল হামিদদের এলাকায় ভোর পাঁচটা থেকে পানি উঠতে শুরু করে। পানি জমে ছিল সকাল সাতটা পর্যন্ত। পানি নামার পর নোংরা ও ময়লা পানি সরিয়ে নিতে হয় এলাকার মানুষদের।

খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কারে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মীদের গাফিলতি নিয়ে আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর রাতের ভারী বৃষ্টিতে চকবাজারের মতো নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

সকালে রাস্তাঘাট ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন কর্মস্থলমুখী মানুষ। প্রবল বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে সন্তানকে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় অভিভাবকদের।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগরের আমবাগান কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এর মধ্যে গতকাল দিবাগত রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৫০ মিলিমিটার। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টি হচ্ছে।

১০ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় আবারও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ২৮ জুলাই ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নগরের অনেক এলাকায় হাঁটু থেকে কোমরসমান পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায় নগরের রাস্তাঘাট ও অলিগলি, বসতঘর।

গত তিন বছরে ৩০ বার ডুবেছে চট্টগ্রাম নগর—গত বছর (২০২৪) ৬ বার, ২০২৩ সালে ১৪ বার ও ২০২২ সালে ১০ বার। আর চলতি মৌসুমে অন্তত চার দফা তলিয়ে যায় নগরের অনেক এলাকা।

আজ ভোররাতের ভারী বৃষ্টিতে নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুড়তলা, জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়, ঝাউতলা, জাকির হোসেন সড়কের রেলক্রসিং, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁওয়ের ফরিদারপাড়া, নয়াবাজার, মৌসুমি আবাসিক এলাকা, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকাসহ অনেক এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমে ছিল।

নগরের ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম বলেন, সকালের বৃষ্টিতে তাঁদের এলাকায় হাঁটুসমান পানি উঠেছিল। পানি জমে ছিল দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। অফিসে যেতে শুধু একটা জায়গায় না, অন্তত চারটি জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখেন। কিছু দূর পরপর পানি জমে থাকায় অফিসে যেতেও দেরি হয়।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন একটি, পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। গত ৮ বছরে প্রকল্পগুলোর কাজে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৮৫২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আট বছর ধরে এসব প্রকল্পের কাজ চললেও এখনো নতুন খাল খননের পুরো কাজ, অন্তত ১৪টি জলকপাট (স্লুইসগেট), ১০টি খালের সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, খালের ভেতরে বালুর ফাঁদ (সিল্টট্র্যাপ), নালার নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আয়োজিত এক সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, খাল-নালা পরিষ্কারে গাফিলতি রয়েছে। ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কারে গাফিলতি রয়েছে। এতে সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রকল প এল ক য় ক এল ক

এছাড়াও পড়ুন:

মেজর সাদিকুলের স্ত্রী জাফরিন ৫ দিনের রিমান্ডে

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় সুমাইয়া জাফরিনকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

সুমাইয়া জাফরিন মেজর সাদিকুলের স্ত্রী। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন একটি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ‘গোপন বৈঠকের’ সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে জাফরিনকে গতকাল বুধবার হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মেজর সাদিকুল হকও এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সেনা হেফাজতে রয়েছেন।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সুমাইয়া জাফরিনকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ চাওয়া হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাঁকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে সুমাইয়া জাফরিনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আসছিল। পরে মিরপুর ডিওএইচএসের একটি রেস্তোরাঁ থেকে তাঁকে ডিবি হেফাজতে আনা হয়।

গত ১৩ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। তাতে বলা হয়, গত ৮ জুলাই বসুন্ধরাসংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ একটি গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে ৩০০-৪০০ জন অংশ নেন। তাঁরা সেখানে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন। বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পাওয়ার পর সারা দেশ থেকে লোকজন এসে ঢাকায় সমবেত হবেন। তাঁরা ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা সেখানে এসব ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

আরও পড়ুনসেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে: আইএসপিআর০১ আগস্ট ২০২৫

গত ৩১ জুলাই সেনাসদরের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, মেজরকে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরদিন ১ আগস্ট আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা ওই সেনা কর্মকর্তাকে ১৭ জুলাই রাজধানীর উত্তরা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনসেনা হেফাজতে থাকা মেজর সাদিকুলের স্ত্রী এখন ডিবি হেফাজতে১৭ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ