খাগড়াছড়িতে পানিবন্দী ২০০ পরিবার, বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে বাস চলাচল বন্ধ
Published: 7th, August 2025 GMT
টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার পাঁচটি পাড়ায় পানিবন্দী রয়েছে অন্তত ২০০ পরিবার। অন্যদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হ্রদের পানি বাড়ায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিলেটিপাড়া, চট্টগ্রামপাড়া, ব্রিজপাড়া, কাপ্তাইপাড়া ও কেয়াংঘাট সাতঘড়িয়াপাড়ার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের সঙ্গে সব ধরনের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত তিন দিন ধরেই এসব এলাকার এই অবস্থা। এখন পর্যন্ত এসব এলাকার ১২ পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সিংগিনালা সড়কে দেখা যায়, সড়কের তিনটি জায়গায় হাঁটু ও কোমর সমান পানি। জরুরি প্রয়োজনে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌকায় চলাচল করছেন। পানিবন্দী থাকায় ওই এলাকার শিশু, শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধারা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
মুবাছড়ি ইউনিয়নের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রোসনা চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, কোমর সমান পানি পার হয়ে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বাড়তি পোশাক নিয়ে বের হতে হয়। পরীক্ষাকেন্দ্রের পাশের কোনো বাসায় গিয়ে পোশাক বদলে পরীক্ষায় বসেন তিনি।
চট্টগ্রামপাড়ার বাসিন্দা মো.
মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রায়হান বলেন, ‘পানিবন্দী বাসিন্দাদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা ১২টি পরিবারকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।’
বান্দরবান-রাঙামাটির সড়ক বন্ধ
এদিকে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে আজ সকাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিবহনমালিকেরা জানিয়েছেন, কাপ্তাই হ্রদের বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। এ কারণে আজ সকাল সাতটা থেকে চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ওই সড়ক দিয়ে বাস চলাচল করতে পারছে না। পানি বাড়ায় রাঙামাটির বিসিক শিল্পনগরীর ৩০ থেকে ৪০টি কারখানায়ও পানি উঠেছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, বাঁধের উজানে টানা বৃষ্টিতে পানির চাপ বাড়ায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। নিরাপত্তার কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে বান্দরবানের পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম বলেন, ‘চন্দ্রঘোনা ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় আজ সকাল থেকে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে কোনো বাস চলাচল করেনি। তবে ঘাটের দুই পাশে ছোট যান চলছে।’
সওজ রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘ফেরি চলাচল এখন বিপজ্জনক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ফেরি বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প সড়ক-কোদালা ও শীলঘাটা হয়ে যানবাহন চলতে পারে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন র ঙ ম ট প ন বন দ উপজ ল র এল ক র পর ক ষ পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না: ইমরুল
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে ১২ হাজার টাকায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। যদিও শুরুর দিকে বিসিবি আমিনুলকে নিজেদের ব্যবস্থায় একটি পাঁচ তারকা হোটেলে রেখেছিল। পরবর্তীতে বিদেশি কোচরা যেখানে থাকেন সেখানে থাকার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
কিন্তু আমিনুল নিজের ইচ্ছাতে বিসিবির কোনো ব্যবস্থায় না থাকার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ট্রেলিয়ায় থাকে তার পুরো পরিবার। ঢাকার গেণ্ডারিয়াতে তার বেড়ে ওঠা। এখন সেখানে থাকার সুযোগ নেই। ঢাকায় অল্প কয়েকদিনের জন্য এলে আত্মীয়দের বাসাতেই উঠেন। এবার দেশে আসার পর তাকে দেওয়া হয় বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব। ফলে স্থায়ীভাবেই তাকে কয়েকমাস কাটাতে হচ্ছে বাংলাদেশে।
বিসিবি তার আবাসনের ব্যবস্থা করছে, এমন কথা শোনার পর নিজ থেকে সরে আসেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম কথা হয়নি। পরবর্তী ১২ হাজার টাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপাক সাড়া ফেলেছে।
তবে এসবের আড়ালে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে অসম্মান করা হয়েছে বলে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে ইমরুল নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ইমরুল লিখেছেন, ‘‘গত কয়েকদিন ধরে একটা বিষয় হয়তো আপনারা অনেকেই দেখেছেন—যে বিসিবি সভাপতি বর্তমানে মাত্র ১২ হাজার টাকার ভাড়ার একটি বাসায় থাকছেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে হয়নি।’’
‘‘একজন মানুষ, যিনি নিজের স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসে, শুধুমাত্র বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন, তাঁকে যদি এমন একটি বাসায় থাকতে হয়—তাহলে সেটা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।’’
‘‘আমার জানা মতে, বিসিবি শুরুতে তাঁকে ভালো মানের একটি থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ এবং কিছু দুষ্টচক্র সেই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি শুরু করে, যা তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত করে। আর সেই সম্মানের খাতিরেই তিনি আজ এত সাধারণভাবে থাকছেন।’’
‘‘আমরা দেখে থাকি বিসিবি কত টাকা খরচ করে বিদেশি স্টাফ এবং কোচদের পেছনে, যার হিসাব কোটি টাকায় গড়ায়। অথচ, অন্যদিকে একজন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান বোর্ড সভাপতিকে মাত্র ১২ হাজার টাকার একটি হোটেলে রাখা হচ্ছে। আমরা না হয় ব্যক্তি বুলবুলকে মূল্যায়ন না-ই করলাম, কিন্তু তাঁর মেধাকে তো অন্তত মূল্যায়ন করা উচিত, তাই না? নাকি আগের মতো যেভাবে সব কিছু চলেছে, সেভাবেই চলবে?’’
‘‘আসলে আমরা কবে শিখব একজন ভালো মানুষ কিংবা ভালো কিছুর সঠিক মূল্যায়ন করতে? কবে আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের উন্নয়নে যারা কাজ করছে, তাদের পাশে দাঁড়াব?’’
‘‘এমন কিছু সংখ্যালঘু মানুষ সব সময়ই থাকে—যারা শুধু দেশের ক্রিকেট নয়, বরং গোটা দেশেরই ক্ষতি করে। যেমনি করে বুলবুল ভাই নিজেই বলেছেন, কিছুদিন পর তিনি চলে যাবেন।’’
‘‘দুঃখের বিষয়, আমরা অনেক সময় সঠিক মানুষকে সঠিক সম্মান দিতে পারি না।’’
ঢাকা/ইয়াসিন