বর্তমানে আলোচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপ্রযুক্তি (এআই) সমাজের নানা ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন আনছে। এআই-প্রযুক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের কাজের ধরন বদলে দিয়েছে। এর ফলে অনেক পেশার কর্মীদের চাকরি হুমকিতে পড়ার পাশাপাশি নতুন ধরনের চাকরির সুযোগও তৈরি হচ্ছে। আর তাই মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ভবিষ্যতের কাজের ধরন সম্পর্কে জেন-জি বা জেনারেশন জেড নামে পরিচিত তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক করেছেন।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস জানিয়েছেন, বর্তমান বা ভবিষ্যতে চাকরি পাওয়ার জন্য শুধু এআইনির্ভর বিভিন্ন টুলের ব্যবহার শেখাই যথেষ্ট নয়। এসব প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ইতিমধ্যেই প্রাথমিক বা এন্ট্রি লেভেলের চাকরির বাজারের ভারসাম্যে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এর ফলে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনো শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক ও সংকুচিত কর্মসংস্থানের বাজারে চাকরির জন্য লড়াই করছেন।

বিল গেটস বলেন, ‘সাম্প্রতিক এই পরিবর্তিত সময়ে এআই টুলসের ব্যবহার যেমন আনন্দের, তেমনি কাজের। আমি একসময় পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে জানতে চাইলে সেই বিষয়ের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে জিজ্ঞাসা করতাম। এখন আমি ডিপ রিসার্চ করে প্রশ্নের উত্তর জেনে অভিজ্ঞদের পাঠাই। তখন তাঁরা বলেন, তাঁদের আর দরকার নেই। এআইয়ের সব তথ্য সঠিক। এখন অনেক কিছু শেখার সুযোগ আছে। খান একাডেমির মতো সাইট থেকে শেখার সুযোগ আছে। এআই–প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। যদিও এসব জানলেই যে চাকরি নিশ্চিত হবে, বিষয়টি এমন নয়। আগ্রহ থাকতে হবে, পড়তে হবে এআই চ্যালেঞ্জের জন্য।’

আরও পড়ুনমেয়ের প্রতি বিল গেটসের বিরল ভালোবাসা২৬ জুলাই ২০২৫

এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিল্প খাতে এআইয়ের ব্যবহারের কারণে প্রাথমিক স্তরের অনেক চাকরি বিলুপ্ত হওয়ায় প্রচলিত নবিশ বা প্রবেশ পর্যায়ে চাকরির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের পদের জন্য চাকরির বিজ্ঞাপন প্রায় ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। আর তাই বিল গেটস তরুণদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণ প্রজন্মকে কৌতূহলী থাকতে ও নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

আরও পড়ুনযেসব জীবনী অনুসরণ করেন বিল গেটস০৬ জুন ২০২৫

বিল গেটস সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে তরুণদের এআই–প্রযুক্তি সম্পর্কে নিজেদের জ্ঞান নিয়মিত হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিল গেটসের মতে, শুধু এআই জানলেই হবে না। বিভিন্ন কাজের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া, মানসিক বুদ্ধিমত্তা এবং হাতে-কলমে দক্ষতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে প্রযুক্তি জানা ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করে কাজ করতে সক্ষম প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অনেক নিয়োগকর্তা।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুনযে পেশা ছাড়া প্রায় সব এআই দখল করে নেবে০২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল গ টস ব যবহ র র চ কর চ কর র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক সমস্যা সমাধানে এআইয়ের ব্যবহার

সমাজের অনেক মানুষ সাধারণ মানুষের মতো ভাষা ব্যবহার করেন না। তাঁরা হয়তো শুনতে পান না কিংবা কথা বলতে পারেন না। বিশেষ ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। এসব মানুষ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফিরোজা মেহজাবিন বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেটর প্রকল্প তৈরি করেন।

মেহজাবিন বলেন, ‘অনেকেই ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে আমি এই ভাবনা নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই ভাষা–জড়তার কারণে যোগাযোগ করতে পারেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান—যেমন হাসপাতাল বা করপোরেট—থেকে তাদের গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। আমার এই উদ্ভাবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে ইশারা ভাষাকে লেখা ও বাক্যে পরিণত করা যাবে, যেন তাঁদের সঙ্গে আমরা সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করতে পারি। একইভাবে এআই ব্যবহার করে আমাদের ভাষাকে বাক্য ও ইশারা ভাষায় পরিণত করার মাধ্যমে তাঁরা আমাদের কথা সহজেই বুঝতে পারবেন।’

ফিরোজা মেহজাবিনের টিম ওয়াটারমেলন গ্রামীণফোনের এআইভিত্তিক ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী হিসেবে এআই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়াকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন মেহজাবিন। প্রযুক্তি খাতে নারীদের উপস্থিতি এমনিতেই কম, সেখানে এমন আয়োজন নারীদের আরও উৎসাহ দেবে।

গ্রামীণফোনের আয়োজনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ফিউচারমেকার্স নামের প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে আয়োজন করা হয়। দেশের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের এআইভিত্তিক আইডিয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ৭৮২টি আইডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রদর্শন করেন।

প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছে টিম ওপিয়ন। তাদের প্রকল্প এআই-ড্রিভেন নিউজ ক্রেডিবিলিটি প্ল্যাটফর্ম। টিম সিন্যাপজ তাদের এআই ইনক্লুশন ফর ডিফারেন্টলি-এবলড লার্নারস প্রকল্প এবং টিম লাস্তা তাদের দিশা: ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন থ্রো এআই প্রকল্পের জন্য যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গত সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বাছাইপর্ব শেষে নির্বাচিত দল বিচারক প্যানেলের সামনে তাদের এআইভিত্তিক ধারণাগুলো উপস্থাপন করে।

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির (সিইও) আজমান বলেন, ‘আমরা যখন এআইনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তখন তরুণ প্রজন্মকে সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণফোনে আমরা এআইকে দেখি উদ্ভাবন, উৎপাদনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে। ফিউচারমেকার্সের মাধ্যমে আমরা এমন তরুণ উদ্ভাবকদের গড়ে তুলতে চাই, যারা ভবিষ্যতের কর্মশক্তিকে নেতৃত্ব দেবে এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা পুরস্কারের পাশাপাশি গ্রামীণফোনের শীর্ষ প্রতিভা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে দ্রুত অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। প্রাইজ মানির পাশাপাশি বাস্তব উদ্ভাবনী পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও নিজেদের ধারণা আরও পরিমার্জন করার সুযোগ পাবেন, যা তাঁদের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে।

বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকের দায়িত্বে থাকা গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, চিফ বিজনেস অফিসার আসিফ নাইমুর রশীদ ও চিফ ইনফরমেশন অফিসার ড. নিরঞ্জন শ্রীনিবাসন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক সমস্যা সমাধানে এআইয়ের ব্যবহার
  • নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে শঙ্কা কেন
  • লাখো মানুষের চাকরি ঝুঁকিতে, সতর্ক করলেন এআইয়ের গডফাদার জিওফ্রি হিন্টন