গ্যাস অনুসন্ধানে দুটি কূপ খননে চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)।

চুক্তি অনুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস ও কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে এ দুটি কূপ খনন করবে চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কোম্পানির (সিএনপিসি) সহযোগী কোম্পানি সিএনপিসি চুয়াংইং ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিসিডিসি)।

পেট্রোবাংলা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ চুক্তির কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশের বিরাজমান জ্বালানিঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ভূগর্ভস্থ গভীরতম স্তর থেকে গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) দুটি গ্যাসক্ষেত্রে কূপ দুটি খনন করছে। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত সিসিডিসি ৫৯৪ কোটি ২৫ লাখ টাকায় কূপ দুটি খনন করবে।

পেট্রোবাংলা বলছে, সফলভাবে খনন সম্পন্ন হলে দেশের গ্যাস খাতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং বর্তমানের চেয়ে গ্যাসের মজুত বৃদ্ধি পাবে। কূপ খনন শেষে তিতাস-৩১ কূপ থেকে দিনে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট গ্যাস এবং বাখরাবাদ-১১ কূপ থেকে দিনে প্রায় ১ কোটি ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করছে পেট্রোবাংলা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিতাস-৩১ কূপে ৫ হাজার ৬০০ মিটার এবং বাখরাবাদ-১১ কূপে ৪ হাজার ৩০০ মিটার খনন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। কূপ খনন, ভূমি অধিগ্রহণ ও গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি টাকা। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। গভীর কূপ দুটি খননের মাধ্যমে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের ৩ হাজার ৭০০ মিটার থেকে ৫ হাজার ৬০০ মিটার ভূ-অভ্যন্তরে গ্যাসের উপস্থিতি, বিস্তৃতি ও গ্যাস মজুত নিশ্চিত হওয়া যাবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো.

রেজানুর রহমান। বিজিএফসিএলের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন কোম্পানি সচিব মো. মোজাহার আলী এবং সিসিডিসির পক্ষে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লি জিয়াওমিং।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক প খনন খনন ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব

খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ট্রলার থেকে নামলেন কয়রার ঘাটে। তিন দিন পর তিনি ফিরেছেন সুন্দরবনের গভীর দুবলারচরের আলোরকোল থেকে। চোখে–মুখে ক্লান্তি, কিন্তু ভেতরে প্রশান্তি।

বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘গতকাল বুধবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে আমরা ফিরতি পথ ধরে আজ লোকালয়ে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার মা আর দিদি—দুজনেই অসুস্থ। তাঁরাও ছিলেন, খুব ভয়ে ছিলাম।’

৩ নভেম্বর শুরু হওয়া সুন্দরবনের দুবলারচরের আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব শেষ হয় গতকাল ভোরে। পূর্ণিমার জোয়ারের লোনাজলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুণ্যস্নান। আলোরকোলের দুই কিলোমিটারজুড়ে তখন শুধু ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য। হাজারো নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ একসঙ্গে নেমে পড়েন সমুদ্রের জলে। শঙ্খধ্বনি, কীর্তন, ঢাকের বাদ্য আর ধূপের গন্ধে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।

কয়রার মহারাজপুর এলাকার পুণ্যার্থী মনোজিত কুমার রায় বলেন, ‘পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করলে পাপমোচন হয়—এ বিশ্বাস নিয়েই গিয়েছিলাম। সৈকতের পাড়ে চোখ বুজে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছি।’

বন বিভাগের হিসাবে, এবারের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ জন পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন। পূজা-অর্চনা, ভজন ও লীলাকীর্তন শেষে গতকাল ভোরে তাঁরা সাগরে স্নান করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন। উৎসব চলাকালে বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক দল সার্বক্ষণিক টহলে ছিল। গত মঙ্গলবার সমুদ্রে স্নান করতে গিয়ে সুমন নামের এক পুণ্যার্থী নিখোঁজ হলেও কোস্টগার্ড পরে তাঁকে জীবিত উদ্ধার করে।

রাস উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল বলেন, উনিশ শতকের শুরুর দিকে সাধু হরিভজন প্রথম দুবলারচরের আলোরকোলে রাসপূর্ণিমার পূজা শুরু করেন। তিনি তাঁর ভক্তদের নিয়ে সাগরে পুণ্যস্নান করতেন। পরে ধীরে ধীরে এই আয়োজন লোকসমাগমের মাধ্যমে এক বৃহৎ রাসমেলায় পরিণত হয়। তবে ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগের সিদ্ধান্তে মেলার আয়োজন বন্ধ আছে।

রাস উৎসবের সময় সুন্দরবনে হরিণ শিকার বেড়ে যায়—এ অভিযোগ পুরোনো। তবে এ বছর বন বিভাগ বলছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তারা দমন করতে পেরেছে।

পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাস উৎসবের দ্বিতীয় দিন কেওড়াবনে টহলের সময় বনরক্ষীরা প্রায় চার হাজার ফুট লম্বা হরিণ শিকারের ফাঁদ উদ্ধার করেন। এবার উৎসবের সময় ৩২ জন শিকারি আটক হয়েছেন। শিকারের ফাঁদগুলো আগেভাগে না সরাতে পারলে শতাধিক হরিণ মারা যেত।’

দুবলারচরের আলোরকোলে রাস উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, শতাব্দীকাল ধরে আলোরকোলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ভারত থেকেও অনেক ভক্ত অংশ নেন। এটি শুধু পূজা নয়, এক আধ্যাত্মিক মিলনমেলা।

সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, এবারের রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। পুণ্যার্থীরা সব নির্দেশনা মেনে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। আগাম প্রস্তুতি ও যৌথ টহলের কারণে অপরাধও অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ