লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেননি নিজাম হাজারী ও তাঁর স্ত্রী, আদালতে অভিযোগপত্র গ্রহণ
Published: 7th, August 2025 GMT
ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগমসহ আওয়ামী লীগের চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদের আদালতে চারটি অস্ত্র মামলার পৃথক চারটি অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানি হয়। আদালত অভিযোগপত্রগুলো গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠান। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ওই আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
পুলিশ জানায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে লাইসেন্স করা অস্ত্রগুলো জমা না দেওয়ায় গত ২৩ এপ্রিল পুলিশ সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করিম উল্ল্যাহ ও ফাজিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে চারটি পৃথক মামলা করে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ অভিযুক্ত চারজন পলাতক রয়েছেন।
ফেনী আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম জানান, মামলাগুলো তদন্ত শেষে গত ৩০ জুন ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফেনী সদর আমলি আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম কিবরিয়া বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নিজাম উদ্দিন হাজারীর নামে একটি ৩২ বোর এনপিবি পিস্তল ইস্যু হয়। তার স্ত্রীর নুরজাহান বেগমের নামে টু টু বোর রাইফেল এবং মুজিবুল হক ও করিম উল্লাহর নামে একটি করে ১২ বোর শটগান ইস্যু করা হয়। সরকার পরিবর্তনের পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চার আসামি তাঁদের নামে ইস্যু করা অস্ত্র জমা দেননি।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের মধ্যে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রসহ গোলাবারুদ গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। ওপরে উল্লেখিত চার ব্যক্তি তাঁদের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্রগুলো জমা না দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ফেনী আদালতের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন ভূঞা বলেন, গত বছরের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেখানে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতাদের এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বৈধ অস্ত্রগুলো অবৈধ কাজে ব্যবহার করে নির্মম হত্যাযোগ্য চালানোয় আমরা তাঁদের বিচার দাবি করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত রগ ল গ রহণ সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা ১০টি, এর সমাধানই সংস্কার
স্বাস্থ্য খাতের মূল রোগ, সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ ১০টি। এগুলো সমাধানের মধ্য দিয়ে এই খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা মনে করেন, অন্য কোনো খাতের সংস্কার অর্থবহ হবে না, যদি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে, মতামত নিয়ে মনে হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা, রোগ বা চ্যালেঞ্জ মূলত ১০টি। এগুলো হচ্ছে: বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতাবিচ্ছিন্ন; এই ব্যবস্থা অতিকেন্দ্রীভূত; এই ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উপেক্ষিত, বিশেষায়িত সেবায় উৎসাহী; এখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রবল; এখানে কাজ করেন উৎসাহ ও মনোবলহীন জনবল; আছে মনন ও মানসিকতার সংকট; এই খাতে নৈতিকতার অবক্ষয় ও স্বাস্থ্যের দ্বন্দ্ব প্রবল; আছে পরনির্ভরশীলতা; এখানে নেতৃত্ব দুর্বল এবং চলছে বরাদ্দের ঘাটতির সঙ্গে পরিকল্পনাহীনভাবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এই ১০টি সমস্যার বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় বলেন, স্বাস্থ্য সরকারের ভাবনার কেন্দ্রে না থাকলে সব সংস্কার অর্থহীন হবে।
এর আগে ব্রিফিংয়ের শুরুতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম গত এক বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করেছে, তার বর্ণনা দেন। এই এক বছরে বড় কাজগুলোর মধ্যে আছে: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের দেশে ও বিদেশ চিকিৎসা, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করানো, কয়েক হাজার চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, ৭ হাজার চিকিৎসকের জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুই পালা চালু, মেডিকেল শিক্ষায় মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকদের বেতন ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি, আবার লিভার ও বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ১৯টি হোস্টেল নির্মাণের উদ্যোগ, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি।
নূরজাহান বেগম আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সময় নির্দলীয়, সৎ ও দক্ষ মানুষ পাওয়া কঠিন। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদে, চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বা বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগের সময় এটা দেখা গেছে।
সংস্কার কত দূরস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেন, ১০টি সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কাজ মূলত শুরু হয়ে গেছে। সব কাজ তাঁরা শেষ করতে পারবেন না।
অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সব ধরনের পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায় ইন্টার্নশিপ ১৮ মাসের হবে এবং এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে ছয় মাস গ্রামে থাকতে হবে। বিশেষায়িত সেবা রাজধানীর বাইরে নেওয়ার জন্য বিশেষায়িত সেবার একটি ‘মেডিকেল সিটি’ হবে উত্তরবঙ্গে, নারী স্বাস্থ্যের বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দক্ষিণবঙ্গে এবং প্রবীণদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দেশের পূর্বাঞ্চলে। এসব হাসপাতাল বিদেশি বিনিয়োগে হবে।
মানুষের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসি নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। মো. সায়েদুর রহমান বলেন, মুদিদোকান আর ফার্মেসি এক জিনিস নয়। ওষুধ দেওয়া একটি বিশেষায়িত কাজ। এর জন্য চাই ফার্মাসিস্ট। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। স্বার্থের দ্বন্দ্ব যেন না থাকে, সে জন্য ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে চিকিৎসকদের সব ধরনের উপহার নেওয়া বন্ধের আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ ওষুধশিল্পের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অন্য এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল পরিস্থিতি। এই দুটি বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকেরা।
মো. সায়েদুর রহমান স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের মন্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, সরকার কার স্বার্থ দেখবে। সরকার চাইবে মানুষ মানসম্পন্ন ওষুধ পাক আবার কোম্পানিগুলো ন্যায়সংগত মুনাফা করুক। সরকার কোম্পানিগুলোর কোনো ক্ষতি করবে না, বরং বিকাশে সহযোগিতা করবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী দেড় ঘণ্টা কথা বলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাঈদুর রহমান, শিক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন।