তখন বিকেল ৩টা ৫৮ মিনিট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুজন কর্মকর্তা অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে দুই হাত ধরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকের সামনে আসেন। এরপর তাঁকে দ্রুত হাঁটিয়ে সিঁড়ির কাছে নেওয়া হয়। এরপর দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে বসতে দেওয়া হয় আদালতকক্ষের একটি বেঞ্চে।

এ সময় দেখা যায়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা বলছেন। প্রায় ৩০ মিনিট ধরে তিনি তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। পরে দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের এক কর্মকর্তা এই শিক্ষককে আদালতের বেঞ্চ থেকে আসামির কাঠগড়ায় নিয়ে যেতে বলেন। এরপর কলিমুল্লাহ কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন।

বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো.

জাকির হোসেন আদালতকক্ষে আসেন। তখন অধ্যাপক কলিমুল্লাহ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যান। এ সময় কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান। তিনি আদালতকে বলেন, অধ্যাপক কলিমুল্লাহ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হল ও একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনিসহ অন্য আসামিরা ওই দুটি ভবনের নকশা পরিবর্তন করেছেন। ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চুক্তি করার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু অধ্যাপক কলিমুল্লাহসহ অন্যরা ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন নেননি।

অধ্যাপক কলিমুল্লাহর দুর্নীতির বিষয়ে পিপি দেলোয়ার জাহান আদালতকে বলেন, আসামিরা কোনো ধরনের অনাপত্তিপত্র ছাড়া ঠিকাদারকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। ঠিকাদারকে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার প্রথম যে নকশা ছিল, সেটি না মেনে সরকারি ক্রয়পদ্ধতির বাইরে গিয়ে দ্বিতীয় পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছেন।

অবশ্য দুদকের পিপির বক্তব্য শেষ হলে আসামি অধ্যাপক কলিমুল্লাহর এক আইনজীবী কথা বলতে শুরু করেন। তিনি আদালতকে বলছিলেন, ‘মাননীয় আদালত, অধ্যাপক কলিমুল্লাহ একজন বয়স্ক মানুষ। তিনি সাবেক উপাচার্য। জামিন দিলে তিনি পলাতক হবেন না। জামিন দেওয়া হোক।’ এরপরও যদি তাঁকে জামিন দেওয়া না হয়, তাহলে যেন তাঁকে প্রথম শ্রেণির কারাবন্দীর মর্যাদা দেওয়া হয়, সেই আবেদন জানান আইনজীবী।

অধ্যাপক কলিমুল্লাহর পক্ষে যখন এসব যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছিল, তখন দুদকের পিপি দেলোয়ার জাহান আদালতকে বলেন, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন অধ্যাপক কলিমুল্লাহ ঠিকমতো অফিস করেননি। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকার একটি লিয়াজোঁ অফিসে বসে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতেন। পিপি যখন এসব কথা বলছিলেন, তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অধ্যাপক কলিমুল্লাহ এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।

জামিন নাকচ হওয়ার পর প্রিজন ভ্যানে করে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে নেওয়া হয়। ৭ আগস্ট

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব ক ঠগড

এছাড়াও পড়ুন:

এখন ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে একটু পরপরই চোখে পড়েছে বাংলাদেশের পতাকা। দর্শকদের হাতে উড়তে থাকা সেই লাল-সবুজ ম্যাচ শেষে যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আনন্দ আর উল্লাসে রঙিন হয়ে উঠল গ্যালারি। সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে লিটন দাসের দল। বাংলাদেশ জিতেছে বলেই হয়তো ভুলে যাওয়া গেল শরীফুল ইসলামের বেধড়ক মার খাওয়া কিংবা ফসকে যাওয়া ক্যাচের হতাশা।

আবারও আলো ছড়ালেন মোস্তাফিজুর রহমান। সাইফ হাসান জানিয়ে দিলেন, তিনিও আছেন। কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গী ছিলেন লিটন দাস। ক্যাচ ফেলার হতাশা ভুলে শেষটা রাঙিয়ে তুললেন তাওহিদ হৃদয়। এমন ছোট ছোট মুহূর্ত মিলিয়েই বাংলাদেশ লিখল দারুণ এক জয়ের গল্প। যে জয় এখন দেখাচ্ছে আরও বড় স্বপ্ন—এশিয়া কাপ ফাইনাল। দিন দুয়েক আগেও যে পথটা মনে হচ্ছিল কাঁটায় ভরা, এখন তা বেশ প্রশস্তই লাগছে। আগামী বুধবার ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ, পরদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে। এই দুই ম্যাচের একটি জিতলেও বাংলাদেশের ফাইনাল খেলার যথেষ্টই সম্ভাবনা থাকবে। হেরে গেলে অবশ্যই থাকবে না। তবে ভারত বা পাকিস্তান কোনো দলকেই না হারিয়ে যে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা যায় না, এটা কে না জানে!

যদিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের শুরুটা এমন ছিল যে, তখন এসব আলোচনা করাটা রীতিমতো বাড়াবাড়ি মনে হতো। মাত্র ৪ ওভারেই শ্রীলঙ্কা তুলে ফেলে ৩৬ রান। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা খেয়ে চাপে পড়েন তাসকিন আহমেদ। তবে শেষ বলে পাতুম নিশাঙ্কাকে ফিরিয়ে পথ দেখান তিনিই। এরপর মেহেদী হাসান নেন পরপর দুটি উইকেট। কিন্তু চাপের মুখে শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ায় দাসুন শানাকার ব্যাটে।

শানাকা আর চারিত আসালাঙ্কার ২৭ বলে ৫৭ রানের জুটি আবারও চাপে ফেলে বাংলাদেশকে। শামীম–হৃদয়ের হাত ফসকে তিনটি ক্যাচ বেরিয়ে যাওয়ার পর বড় রানে চাপা পড়ার শঙ্কাও জাগে। ঠিক তখনই আশার আলো হয়ে হাজির মোস্তাফিজ।

প্রথম ৩ ওভারে ১৫ রান দিয়ে একটি উইকেট পেয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংসের ১৯তম এবং নিজের শেষ ওভারে যা করলেন, সেটাই ঘুরিয়ে দিল ম্যাচের মোড়। প্রথম বলেই হৃদয়ের হাত ফসকে গেল আসালাঙ্কার ক্যাচ, তবে হয়ে গেলেন রানআউট। পরের ৫ বলে মোস্তাফিজ দিলেন মাত্র ৩ রান, তুলে নিলেন আরও ২ উইকেট!

ওভারের শেষ বলে হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে মোস্তাফিজ ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব আল হাসানকে। টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক এখন তাঁরা দুজন। শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেমে গেল ১৬৮ রানে।

তাড়া করতে নামা তানজিদ হাসানকে দেখে মনে হচ্ছিল, এই ম্যাচেও হিসাব মেলাতে পারবে না বাংলাদেশ। নুয়ান তুষারার ধাঁধা তিনি এখনো মেলাতে পারেননি—ছয়বার মুখোমুখি হয়ে চারবারই আউট হয়েছেন। তবে এতটুকুই। এরপর গল্পটা সাইফ হাসান ও লিটন দাসের। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৪ বলে গড়েন ৫৯ রানের জুটি।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫৯ রান তুলে লিটন ফেরেন সপ্তম ওভারেই। তবে হাসারাঙ্গার বলে সুইপ করতে গিয়ে ১৬ বলে ২৩ রান করে অধিনায়ক ফিরলেও বাংলাদেশ পথ হারায়নি। এরপর কিছুক্ষণ হাল ধরে রাখেন সাইফ হাসান। টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৪৫ বলে করেন ৬১ রান, ৪ ছক্কা আর ২ চারে সাজানো ইনিংস।

তাঁর বিদায়ের পর ব্যাটন তুলে নেন হৃদয়। কামিন্দু মেন্ডিসের করা পরের ওভারে ২ চার ও ১ ছক্কায় তুলে নেন ১৬ রান। ম্যাচটা তখন বাংলাদেশের একেবারে হাতের মুঠোয়।
শেষ দিকে ১ রান বাকি থাকতে ৩ বলে বাংলাদেশ হারায় ২ উইকেট। কিন্তু তাতে শ্রীলঙ্কার আফসোসই বাড়ে। নাসুম আহমেদ জয়সূচক রানটা নিতেই অন্য প্রান্তে লাফিয়ে ওঠেন শামীম হোসেন। আনন্দে ভাসে বাংলাদেশের ডাগআউট, যেন পুরো দুবাইও।

সংক্ষিপ্ত স্কোরশ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (শানাকা ৬৪*, কুশল মেন্ডিস ৩৪, নিশাঙ্কা ২২, আসালাঙ্কা ২১, কুশল পেরেরা ১৬; মোস্তাফিজ ৩/২০, মেহেদী ২/২৫)। বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, লিটন ২৩, শামীম ১৪*; শানাকা ২/২১, হাসারাঙ্গা ২/২২)। ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাইফ হাসান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাবনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বেড়াবাসীর বিক্ষোভ
  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া
  • রাজশাহীতে মাদ্রাসায় দফায় দফায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন
  • সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল সালাহ উদ্দীন আহমাদ আর নেই
  • ৯ বছর পর কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন, পুরোনো নেতৃত্বেই আস্থা কাউন্সিলরদের
  • ঝালকাঠিতে আইনজীবীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পাশে পড়েছিল চিরকুট
  • ঝালকাঠিতে আইনজীবীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, মিলল চিরকুট
  • এখন ফাইনালের স্বপ্ন দেখতেই পারে বাংলাদেশ
  • ছেলেকে ছাড়াতে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের প্রস্তাবও দেন শাহরুখ
  • ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর স্ত্রী ব্রিজিত ‘নারী’ কি না, কেন এত বিতর্ক ও আইনি লড়াই