Prothomalo:
2025-11-10@20:34:59 GMT

অপ্রত্যাশিত আতিথেয়তা

Published: 5th, November 2025 GMT

সময়টা ২০২২ সালের মাঝামাঝি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। বেলা দেড়টার দিকে মগবাজার থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পুরান ঢাকার একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে ছুটে চলা। উদ্দেশ্য, একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে পরীক্ষায় সহধর্মিণীর অংশগ্রহণ। সঙ্গে আছে ছয় মাসের কম বয়সী সন্তান। রোদে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা। অবশ্য অটোরিকশা চলতে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে সে।

পরীক্ষার সময় ছিল বেলা তিনটা। পুরান ঢাকার সরু গলির যানজটের কথা ভেবে সময় হাতে রেখে বের হওয়ার চেষ্টা ছিল। যা ভেবেছিলাম, তা–ই হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সড়কে ঢুকতেই গাড়ির জট। ধীরে এগোচ্ছে অটোরিকশা। দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। অটোরিকশার দরজার ফাঁক দিয়ে পরীক্ষার্থীদের অনেককে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সঙ্গে শিশুসন্তান থাকায় আমাদের সে সুযোগ ছিল না।

ভিড় ঠেলে শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক আগে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে পৌঁছাল অটোরিকশা। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। তখনো ঘুমিয়ে খুদে যাত্রী। প্রথম সন্তান; এত ছোট শিশু কোলে নিতে অভ্যস্ত নই আমি। তাই আসার সময় বেড়াতে আসা আমার ছোট বোনকেও নিয়ে এলাম। সন্তানকে বোনের কোলে রাখলাম। ফিডারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে কেন্দ্রের উদ্দেশে ছুটল ওর মা। তখনো খুদে অভিভাবক ঘুমাচ্ছে। মন থেকে চাচ্ছিলাম, যতটুকু বেশি ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায়।

কিন্তু বিপত্তি বাধাল কড়া রোদ। আশপাশে সেভাবে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। সূর্যের আলো পড়তেই ঘুমের মধ্যে সে নড়াচড়া করছে। গরমে ঘেমেও যাচ্ছে। বাসা থেকে নেওয়া হাতপাখাও তেমন কাজে দিচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে বললাম, ভেতরে ঢোকা যাবে কি না। তিনি জানালেন, ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই।

কিছুটা অসহায় লাগছিল। কিছুক্ষণ পর আবার ওই কর্মচারীকে বললাম, ছোট শিশু। গরমে বেকায়দা অবস্থা। শুধু ওকে নিয়ে সীমানাদেয়ালের ভেতরে আড়ালে একটু দাঁড়াতে দিলে ভালো হতো। কিছুটা ভেবেচিন্তে তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে; তবে ভেতরে যাওয়া যাবে না। বুঝেনই তো, আমাদেরও কিছু করার থাকে না।’ যাক বাবা, আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

পকেট গেট (মূল ফটক লাগোয়া ছোট একটি ফটক) পেরিয়ে ছোট বোন আমার শিশুসন্তানকে নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের একটি ভবন আর সীমানাদেয়ালের মাঝের গলিতে গিয়ে দাঁড়াল। আমিও ওর জিনিসপত্র আনা ব্যাগটি নিয়ে ঢুকলাম। এর মধ্যে পাশের দাপ্তরিক কক্ষ থেকে একটি চেয়ার এনে আমার বোনকে বসতে দিলেন ওই কর্মচারী। আমি দাঁড়িয়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছি। তবে গরমের মধ্যে কোলে রাখায় তেমন কাজ হচ্ছিল না। মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় বাচ্চার ঘুম ভেঙে যাবে।

একপর্যায়ে ওই কর্মচারী জানতে চাইলেন আমি কী করি। সাংবাদিকতা নিয়ে সমাজের একটি অংশের নেতিবাচক ধারণা আছে। তাই আগ বাড়িয়ে আমি পেশার পরিচয় দিই না। কেউ জানতে চাইলে, সাংবাদিকতা করি—এতটুকু বলেই থামতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করি। তবে ওই কর্মচারী থামলেন না। বললেন, ‘কোন পেপারে (পত্রিকায়)?’ তখন আমি বললাম, প্রথম আলোতে। এ কথা শুনতেই ওই কর্মচারীর অভিব্যক্তি পাল্টে গেল। হাসিমুখে বললেন, ‘আমি প্রথম আলো পত্রিকা পড়ি।’

এরপর ওই কর্মচারী বললেন, ‘একটি চেয়ার এনে দিই, বসুন।’ বিনয়ের সঙ্গে না করলাম। বললাম, না, লাগবে না। কিছুক্ষণ পর এসে বললেন, ‘বাবুকে নিয়ে অফিসের রুমে বসেন, ফ্যানের নিচে।’ এবার আর ‘না’ করলাম না। আমার বোন গিয়ে অফিসের বড়সড় একটি টেবিলের এক পাশে একটি চেয়ারে বসল। যাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা, সে কোলে তখনো ঘুমে। দেয়ালে লাগানো ফ্যানটির বাতাস গায়ে লাগতেই ঘুম আরও গভীর হলো। আর দূর থেকে দেখেই ফ্যানের বাতাসের প্রশান্তি যেন আমাকেই ছুঁয়ে গেল।

আমি গা এলিয়ে দিয়ে গলিতে রাখা চেয়ারটাতে গিয়ে বসলাম। ওই কর্মচারী এসে বললেন, ভেতরে বসুন ফ্যানের নিচে। বললাম, সেখানে ভিড় বাড়ানোর দরকার নেই। এবার বললেন, চা খাবেন? বিনয়ের সঙ্গে বললাম, না থাক; গরমের মধ্যে চা খাব না। মনে মনে বলছি, এমনিতে আমার সন্তানের জন্য যতটুকু করেছেন, তাতেই অনেক কৃতজ্ঞ।

এদিকে দেড় ঘণ্টার পরীক্ষার সময় যেন ফুরাতেই চায় না। বারবার মুঠোফোনে সময় দেখি। ঘুম থেকে জেগে বাচ্চা যদি কান্না শুরু করে, থামাতে না পারলে মুশকিল হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার মিনিট বিশেক আগে ও জেগে গেল। ফ্যানের নিচে বসেই তাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে আমার বোন। পরীক্ষার সময় শেষ হয়ে এলে আমরা ফটকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। শেষের ঘণ্টা বাজতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে রীতিমতো দৌড়ে এসে হাজির সন্তানের মা; হাঁপাচ্ছিল সে। বলল, চারতলায় সিট পড়েছে, এ জন্য আসতে দেরি হয়েছে। পরীক্ষা মিনিট দশেক আগেই শেষ করে অপেক্ষা করছিল কখন ঘণ্টা বাজবে। জানতে চাইছে, ও কান্না করেছে কি না, কোনো সমস্যা হয়েছে কি না। আমি বললাম, কোনো সমস্যা হয়নি। পরে কথা বলব, আগে অটোরিকশা ধরো। মানুষ বেশি, অটোরিকশা পাব না। পরে এক চালক ভাড়া কিছুটা বেশি চাইলেও অটোরিকশা নিয়ে নিলাম।

সন্তান মায়ের কোলে, আমি নির্ভার। এরপর অটোরিকশায় বসে এতক্ষণ যা যা ঘটেছে বললাম। সহধর্মিণী সব শুনে বলল, লোকটা (কর্মচারী) অনেক ভালো মানুষ; আল্লাহ ওনার ভালো করুন। এরপর অটোরিকশা চলছিল আর আমি ভাবছিলাম, মাত্র কয়েক মাস আগে যোগ দেওয়া কর্মস্থলের পরিচয় দিতেই লোকটার বদলে যাওয়া অভিব্যক্তি, সেই অপ্রত্যাশিত আতিথেয়তার কথা। এই আস্থা ও ভালোবাসা প্রথম আলো রাতারাতি অর্জন করেনি, এত সহজে অর্জিত হয়নি।

মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমন্বিত বার্তা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র সন ত ন বলল ন প রথম বলল ম র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ঢাকামুখী লেনে একটি লাইনচ্যুত বগিসহ মোট তিনটি বগি রেখে চলে গেছে একটি মালবাহী ট্রেন। এই দুর্ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বগি তিনটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে শেখপাড়া এলাকায়। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হতে পারে বলে জানায় রেলওয়ে সূত্র।

গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনচ্যুত হওয়ার পর ট্রেনের ইঞ্জিন লাইনচ্যুত বগিটিকে অন্তত ১০০ মিটার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যায়। ফলে বগিটি ছাড়াও রেলের স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলসূত্র জানিয়েছে, ঘটনার খবর পেয়ে আজ শনিবার সকালে উদ্ধারকাজ শুরু করে উদ্ধারকারীরা। এরপর ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলো ডাউন লাইন (চট্টগ্রামমুখী লেন) দিয়ে চলাচল করেছে। এতে গন্তব্যে কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছে ট্রেনগুলো। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগিতে গার্মেন্টস পণ্য ও জুতা রয়েছে।

রেল পুলিশের সীতাকুণ্ড ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকামুখী একটি মালবাহী ট্রেন সীতাকুণ্ড রেলস্টেশন থেকে এক কিলোমিটার দূরে শেখপাড়া এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ফলে দুর্ঘটনাকবলিত বগিটির একপাশের চাকা রেললাইনের বাইরে অপর পাশের চাকা দুই রেললাইনের মাঝে ছিল। এতে সামনের দিকের আরও দুটি বগি আটকা পড়ে। দুর্ঘটনাকবলিত তিনটি বগি রেখে ট্রেনটি পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে লাইনচ্যুত বগিটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। আজ বেলা দুইটার দিকে লাইনচ্যুত বগিটি রেললাইনের ওপরে তুলতে সক্ষম হয়।

রেলওয়ে পূর্বঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটির একটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর অন্তত ১০০ মিটার টেনে নিয়ে যায় ইঞ্জিন। ফলে রেলের চাকার সঙ্গে সিমেন্টের স্লিপার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বগিটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এসে বগিটি উদ্ধার করে লাইনের ওপর তোলেন। যে সব স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোকে তুলে তাৎক্ষণিক কাঠের স্লিপার দিয়ে রেললাইন সচল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

দুর্ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ের প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত বগিটিকে ওয়ার্কশপে নেওয়া হবে। ঢাকামুখী রেললাইন ঠিক করার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে। এরপর ওই পথ দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। ততক্ষণ সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামমুখী লাইন দিয়ে উভয় দিকে রেল চলাচল করবে। এতে যাত্রাপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর কিছুটা সময় বিলম্ব হচ্ছে। তবে ট্রেন চলাচল বন্ধ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা নিয়ে ওমর আবদুল্লাহ-বিজেপি কাজিয়া তীব্র হচ্ছে
  • পার্বতীপুর-সৈয়দপুর ৩৩ হাজার ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের ১৭ কিলোমিটারের তার চুরি
  • আকুর বিল পরিশোধের পর কমল রিজার্ভ
  • ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের পরিচালক মারা গেছেন
  • গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন অটোরিকশাচালক, পরে মৃত্যু
  • কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
  • শরীয়তপুরে জাতীয় যুবশক্তির কমিটি ঘোষণার ২০ মিনিট পরই সদস্যসচিবের পদত্যাগ
  • ৩৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারল দ. আফ্রিকা
  • ‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
  • লাইনচ্যুত বগি রেখে চলে গেল ট্রেন, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার