অনুমতি ছাড়াই মেটার বিজ্ঞাপনে স্কুলশিক্ষার্থীদের ছবি
Published: 20th, September 2025 GMT
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। মেটা তার বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে স্কুলছাত্রীদের ছবি ব্যবহার করছে বলে সমালোচনা চলছে। স্কুলগামী কিশোরী শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যবহার করছে মেটা। জানা গেছে, এসব ছবি ৩৭ বছর বয়সী পুরুষদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক অভিভাবক বিষয়টিকে ভয়ানক ও বিব্রতকর বলে মনে করছেন।
দেখা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে মেটার খুদে ব্লগ লেখার সাইট থ্রেডসে যোগ দেওয়ার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হচ্ছে। ইনস্টাগ্রামে এই বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোস্টে ১৩ বছর বয়সী স্কুল ইউনিফর্ম পরা নারী শিক্ষার্থীর মুখ ও নাম দেখা যায়।
মেটা শিশুদের ছবি ব্যবহার করেছে; কারণ, তাদের অভিভাবকেরাই স্কুলে থেকে ফেরার পরে তোলা এসব ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন। অভিভাবকেরা অবশ্য মেটার বিজ্ঞাপনের নিয়ম জানতেন না। একজন মা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট প্রাইভেট করা ছিল। প্রাইভেট থাকার পরেও বিভিন্ন পোস্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে থ্রেডসে চলে গেছে। আরেক অভিভাবক জানান, তিনি তাঁর মেয়ের ছবিটি একটি পাবলিক ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। সেই ছবি পরে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে শিশুর ছবিসহ সাজেশন হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। এসব ছবি দেখা এক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, এমন পোস্ট উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানিমূলক। এতে সংশ্লিষ্ট শিশু ও তাদের পরিবারকে শোষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ছবিতে থাকা ১৩ বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর বাবা এই ঘটনাকে পুরোপুরি ভয়ানক বলে অভিহিত করেছেন। বিভিন্ন ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব স্কুলছাত্রীই ছোট স্কার্ট পরে আছে। তাদের পা হয় উন্মুক্ত বা স্টকিং পরা সবাই। সেই বাবা জানান, আমার শেয়ার করা একটি ছবি ফেসবুকের মতো এমন একটি বিশাল কোম্পানি যৌনতাপূর্ণ উপায়ে পণ্যের বিপণনের জন্য ব্যবহার করেছে। বিষয়টি দেখে আমি খুবই বিরক্ত বোধ করেছি।
মেটা অবশ্য জানিয়েছে, এসব ছবি তাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। মেটার ভাষ্যে, যেসব ছবি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও মানদণ্ড মেনে জনসম্মুখে শেয়ার করা হয়, তা ব্যবহার করে অন্যদের থ্রেডস ভিজিট করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। মেটার সিস্টেম কিশোর-কিশোরীদের মাধ্যমে শেয়ার করা থ্রেডস পোস্ট সুপারিশ করে না। যেসব ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, তা আসলে প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন দেখা এক ব্যক্তি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুধু স্কুলছাত্রীদের ছবি দিয়েই প্রচারমূলক পোস্ট পাঠানো হচ্ছে। কোনো স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলের ছবি দেখা যায়নি। এখানে যৌনতার একটি দিক আছে বলে মনে হচ্ছে।
১৫ বছর বয়সী এক কিশোরীর মা জানান, আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়ার একটি সাধারণ ছবি প্রকাশ করেছি। আমার কোনো ধারণাই ছিল না ইনস্টাগ্রাম থেকে তা নিয়ে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি অনেক জঘন্য। সে একজন নাবালিকা মাত্র। এ ধরনের কাজে কখনোই আমি সম্মতি দিতাম না। টাকার বিনিময়েও আমি স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়ের ছবি দিয়ে অনলাইন মাধ্যমে লোক আকর্ষণ করার অনুমতি দিতাম না। যিনি এই অভিযোগ করেছেন সেই মায়ের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ২৬৭ জন ফলোয়ার আছেন। আর তাঁর সন্তানের পোস্টটি প্রায় ৭ হাজার ভিউ পেয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ফলোয়ার নয়। অর্ধেক দর্শক ৪৪ বছরের বেশি বয়সী ও ৯০ শতাংশই পুরুষ।
আরেকজন মা অভিযোগ করে বলেন, মেটা এমন কিছু করছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। আমাদের কিছু না জানিয়ে এসব হচ্ছে। মেটা কনটেন্ট তৈরি করতে চায়। এটি খুবই ঘৃণ্য কাজ। থ্রেডসে বিজ্ঞাপনটি কে তৈরি করেছে? প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের জন্য মাধ্যমের প্রচারে শিশুদের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে কেন?
মেটা জানিয়েছে, এ ধরনের পোস্টকে রেকমেন্ডেশন টুলের মাধ্যমে অন্যদের সামনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোম্পানির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, শেয়ার করা ছবি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করে না। এসব ছবি অভিভাবকেরা জনসমক্ষে পোস্ট করেছেন। আমাদের ব্যবস্থায় টিনএজারদের নিজেরা শেয়ার করা ছবি থ্রেডস পোস্টে সুপারিশ করা হয় না। ব্যবহারকারীরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মেটা তাদের পাবলিক পোস্টকে ইনস্টাগ্রামে সুপারিশ করবে কি না।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের থাকা ৩৭ বছর বয়সী ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী জানান, কয়েক দিন ধরে আমাকে থ্রেডসে যাওয়ার জন্য মেটার বিজ্ঞাপন বারবার দেখানো হয়। সেখানে শুধু অভিভাবকের পোস্ট করা স্কুল ইউনিফর্ম পরা মেয়েদের ছবি ছিল। কিছু ছবিতে তাদের নামও দেখা যাচ্ছিল। একজন বাবা হিসেবে, আমি মনে করি মেটার এ ধরনের পোস্ট প্রাপ্তবয়স্কদের লক্ষ্য করে প্রচারের জন্য উপযুক্ত নয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনস ট গ র ম ব যবহ র কর অ য ক উন ট প স ট কর কর ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা
রংপুরের পীরগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইংয়ের এক কেন্দ্রীয় সংগঠকের করা হত্যাচেষ্টার মামলাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মামলার কয়েকজন আসামি ঘটনার দিন কারাগারে ছিলেন, একজন ছিলেন বিদেশে। তাঁদের অভিযোগ, হয়রানি ও মামলা বাণিজ্যের জন্যই তাঁদের আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, বাদীর তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহার হয়েছে।
পুলিশ, আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন মিঠিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর সরকার। তিনি এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক এবং রংপুর বিভাগীয় সার্চ কমিটির প্রধান বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার নাম এসেছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে শহর থেকে ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে কুতুবপুর মৌজার পাল্লার পাতা এলাকায় হামলার শিকার হন হাফিজুর। তিনি উল্লেখ করেন, আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা ভ্যান থামিয়ে গালিগালাজ করেন। তখন ভ্যান থেকে নেমে আসামিদের ‘মোবাইল ফোনের আলোতে চিনতে পারিয়া’ তাঁদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। এরপর ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলামের নির্দেশে আসামিরা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাঁকে গুরুতর জখম করেন।
হাফিজুর আরও দাবি করেন, এর আগের বছর ৪ আগস্ট মহাসড়কে অনুষ্ঠিত এক দফার আন্দোলনকালে একই আসামিরা তাঁর ওপর হামলা চালায়, যাতে ২০ থেকে ৩০ জন আহত হন।
কারাগারে ছিলেন দুই আসামিমামলায় উল্লেখিত ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র। ৬ নম্বর আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে পিন্টু জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২৭ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও শহিদুল ইসলাম কারাগারে ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন ও জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম।
মো. মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুল ইসলাম ১৬ জুন থেকে কারাগারে আছেন। নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দুর্নীতি দমন আইনের মামলায় ১৯ জুন কারাগারে যান। ১৩ জুলাই তিনি জামিন পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী হাফিজুর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ৬ জুলাই তাঁর ওপর হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তবে তিনি মামলার ঘটনায় গত বছরের ৪ আগস্টের ঘটনাও তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষ্য, তখন কেউ জেলে ছিলেন না। হুকুমদাতা হিসেবে যেকোনো জায়গা থেকে হুকুম দিতে পারেন।
বিদেশে থেকেও আসামিমামলার ৫ নম্বর আসামি সিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী। তিনি মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন। সিরাজুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ৪ জুলাই দিবাগত রাত তিনটার সময় থাইল্যান্ডে যাই, দেশে ফিরি ২০ জুলাই। তাহলে আমাকে “মোবাইলের আলোতে” দেখল কীভাবে? মামলা দিয়ে বাণিজ্য করতেই আমার নাম দিয়েছে।’ তিনি জানান, থানায় লিখিতভাবে তাঁর বিদেশে থাকার প্রমাণ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই মামলায় স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার দুজন হাফেজকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ওই দিন (৬ জুলাই) পবিত্র ওমরাহ পালনে যেতে ঢাকায় এজেন্সির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। মামলায় আসামি হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের একজন ব্যবসায়ী ও একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকছেন।
এ বিষয়ে হাফিজুর বলেন, ‘আমি শুনতে পারছি, আরও একজন (আসামি) নাকি হজে ছিল। এটার ব্যাখ্যা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। যে উকিলের কাছ থেকে এজাহার করেছি, ওনার কাছ থেকে শুনে আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে পারব।’
বড় দরগাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাফিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, মামলায় চার ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়াকে মামলার দিনই গ্রেপ্তার করা হয়। মাফিয়া আক্তারের দাবি, মামলা থেকে নাম বাদ দিতে টাকা দাবি করেছে বাদীপক্ষের লোকজন, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশ্য হাফিজুরের দাবি, তিনি কোনো মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় দুটি ঘটনার উল্লেখ আছে। তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তদন্ত শেষ হলে আসামিদের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।