কে জানত, ইশতিয়াকের জানাজাও পড়তে হবে স্বজনদের
Published: 21st, September 2025 GMT
প্রতিবেশী এক বন্ধুর আত্মীয়ের জানাজায় যাচ্ছিলেন ইশতিয়াক আহমেদ। পথে দ্রুতগামী একটি বাস তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। ফেনী কলেজ থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। জানাজার নামাজ পড়তে গিয়ে লাশ হয়ে গেলেন ২৭ বছর বয়সী তরতাজা এই যুবক। কে জানত, অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁর জানাজাও পড়তে হবে স্বজনদের।
আজ রোববার বিকেলে ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার গোবিন্দপুর বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইশতিয়াক ফেনী সদর উপজেলার কালীদহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবীর আহমদের ছেলে।
নিহত ব্যক্তির বন্ধু ও স্বজনেরা জানান, আজ বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী এক বন্ধুর নানির জানাজায় যাচ্ছিলেন ইশতিয়াক আহমেদ। ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার গোবিন্দপুর বটতলা এলাকায় এলে দ্রুতগতির একটি বাস তাঁকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক (ইএমও) মো.
ইশতিয়াকের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের সবাই বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে জানান তাঁর বন্ধু হাসান আহমেদ। তিনি বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে ইশতিয়াক সবার ছোট। তাঁর মা ছোট ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা বাসটির সন্ধান করছে পুলিশ। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা চলমান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশত য় ক
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষণের শিকার শিশুর স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকের দুর্ব্যবহারের ভিডিও ভাইরাল
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার এক শিশুর স্বজনদের সঙ্গে এক চিকিৎসকের অশোভন আচরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই চিকিৎসককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে তাঁকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে দায়িত্ব থেকে মৌখিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান।
অভিযুক্ত আবুল কাশেম পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। গতকাল বেলা পৌনে একটার দিকে হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ওই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়া ৩ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ভিডিওতে চিকিৎসককে ভুক্তভোগী শিশুটির স্বজনদের বলতে শোনা যায়, ‘হাসপাতালডাক তোমরা চিড়িয়াখানা পাইছ, চিড়িয়াখানার মতো ভর্তি হবার আইসো, কোনঠে সাংবাদিক আইসো, দেউনিয়া-মদ্দিনা আইসো, এলাকাবাসী আইসো, পুরুষ-মহিলা আইসো, ছোট-বড় আইসো, এইটা হরিবোল, হরিবোল দেওয়ার জায়গা নাকি? এই ছুটি বাড়ি যাও, আইজকে বিস্তিবার (বৃহস্পতিবার) আর কোথায় রাখব? তোমরা মামলা করলে করো, না করলে…(অশ্লীল ভাষায় কিছু বলেন)।’
নিচু স্বরে কথা বলায় শিশুটির বাবাকে একপর্যায়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘নাকের তলোত কথা কহেচিত, একদম নাক ফাটায় দিম। চুরি করিস নাকি রে, নাকের তলোত কথা কহেছিত।’ এ সময় চিকিৎসক ডান হাত দেখিয়ে বলেন, ‘নাকের তল ফাটায় দিম, থতমা উল্টায় দিম। মুই চিকিৎসাও করু, মাইরও দিবার পারু। বুঝো নাই, কিছু কথা ইশারায় বুঝে নিতে হয়। বায়োস্কোপ দেখানোর জন্য আইসছে আর জনগণ বায়োস্কোপ দেখতেছে। মানসম্মান তোমাদের কিচ্ছু নাইরে।’
এ সময় ওই চিকিৎসককে বলতে শোনা যায়, ‘আসার দিনে সাথে সাথে বলছি না রে, এই বলছি না? মানুষের সহ্য ক্ষমতা, ধৈর্য ক্ষমতা সবকিছুর একটা মাত্রা থাকে। মাত্রা পার হয়ে গেলে আর কিছু করার আছে? মোর মাত্রা পার। ছুটির কাগজ লেখে দিম, কাগজটা লে বাড়িত যাব যায়, থানাত যায় পড়ে রহিব।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার দেবীগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে রোগী দেখতে যান আরএমও আবুল কাশেম। তখন তিনি ভুক্তভোগী শিশুটিকে দেখে মামলা করতে বলা হয়েছিল, সেটা করা হয়েছে কি না শিশুটির বাবার কাছে জানতে চান। মামলা হয়েছে জানার পর তিনি মামলার এজাহার দেখতে চান। তখন শিশুটির বাবা কাগজ আনা হয়নি জানালে ওই চিকিৎসক রেগে যান। তখন উত্তেজিত হয়ে তিনি শিশুটির বাবা ও স্বজনদের গালাগাল করেন। পরে তিনি শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।
শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়ার্ডে এসে ডাক্তার বলেন, “তোমাদের যে মামলা করতে বলেছিলাম, করোনি কেন?” মামলা করেছি জানালে তিনি এজাহার দেখতে চান। পরে আমি বলি যে এজাহারের নকল তো থানা থেকে এখনো দেয়নি, আজ দেবে। এরপরেই তিনি রেগে গিয়ে গালিগালাজ শুরু করেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে আরএমও আবুল কাশেমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি খুবই বিব্রতকর, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত। গতকাল রাতে ভিডিওটি দেখার পরপরই আরএমও আবুল কাশেমকে শোকজ নোটিশ করা হয়েছে। শনিবারের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে আরএমওর দায়িত্ব থেকে মৌখিকভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলেই এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তিনি আশা করছেন, পঞ্চগড়বাসী ন্যায়বিচার পাবেন।