আনন্দ আর অশ্রু মিশ্রিত আবেগে রাজধানীর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিদায় জানালেন দেবী দুর্গাকে। বুড়িগঙ্গার বুকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজারো ভক্ত ও পুণ্যার্থীর ঢল নামে।

এদিকে, ভক্তদের এই মিলনমেলা নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ও সর্বাত্মক সহযোগিতা।

আরো পড়ুন:

প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে পুরান ঢাকার সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাট পরিণত হয় ভক্ত-অনুরাগীর মিলনমেলায়।

ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা ও নাচ-গানের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কলা বৌকে একে একে নামানো হয় পিকআপ ভ্যান থেকে। এরপর প্রতিমাগুলো নৌকায় তুলে নিয়ে বুড়িগঙ্গার বুকে নিরঞ্জনের মাধ্যমে করা হয় বিসর্জন।

প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে সদরঘাট টার্মিনালের কাছে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটে নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী বিসর্জন মঞ্চ। সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

প্রতিমা বিসর্জন দেখতে লক্ষ্মীবাজার থেকে আসা ভক্ত পায়েল সরকার বলেন, “মা দুর্গা শান্তির বার্তা নিয়ে কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন। আজ তাকে বিদায় দিতে কষ্ট হচ্ছে, তবে এ অপেক্ষাটাও মধুর যে, আগামী বছর তিনি আবার আসবেন।”

কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির কোতোয়ালি থানার আহ্বায়ক শ্রীকান্ত দত্ত বলেন, “খুব সুন্দরভাবে এবারের পূজা উদযাপন সম্পন্ন হয়েছে। মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসুক, এই কামনা করি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এবার ছিল প্রশংসনীয়।”

কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, “শুধু স্থলেই নয়, নদীপথেও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ট্রলার ও স্পিডবোটে নদীতে টহল দিচ্ছে।”

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইসমাইল হোসেন বলেন, “প্রতিমা বিসর্জন যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে সম্পন্ন হয়, সেজন্য আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরনের সহযোগিতা করছে।”

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মো.

ফারুক হোসেন বলেন, “বিসর্জন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ওয়াইজ ঘাটে সুশৃঙ্খল পুলিশি ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। প্রতিমাগুলো নিরাপদে ঘাটে পৌঁছাতে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত কর্মকর্তা কাজ করছেন। সন্ধ্যার মধ্যে বাকি প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হবে।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

`কিছুই নাই, সব ছাই, ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে'

আগুনে বসতবাড়ির সবটুকু পুড়ে ছাই হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া টিন। এর ভেতরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে ভস্মীভূত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। উঠানে পড়ে আছে পোড়া মোটরসাইকেলের কাঠামো। রক্ষা পায়নি আয়–উপার্জনের দোকানটিও।

এ রকম বিধ্বস্ত বসতভিটার পাশে বিষণ্ন মনে বসে ছিলেন মিবু মারমা। ঘর হারানো কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য।

গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার রামেসু বাজার এলাকায় দেখা যায় এ দৃশ্য। গত রোববার বিক্ষোভ ও সহিংসতার সময় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মিবু মারমার বাড়ি ও খাবারের দোকান। ওই দিন সহিংসতার সময় বাজারের দোকানপাট, বসতঘর ও ভবনে আগুন দেওয়া হয়। বসতঘর ও দোকানমালিকদের অধিকাংশই পাহাড়ি। কিছু প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাঙালি। গতকাল সকালেও বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

আমার ঘরবাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিত। তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।মিবু মারমা

শুধু মিবু মারমার ঘর নয়, বাজারজুড়ে চারদিকে পোড়া ক্ষত। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরেও কিছু ঘর টিকে থাকলেও তা আর মেরামতের উপযোগী নেই। সব হারানো পাহাড়ি মানুষের অবস্থা এখন অসহায়। তাঁদের কারও চোখে জল, কারও মধ্যে রাগ–ক্ষোভ। আবার এর মধ্যে অজানা আতঙ্ক ভর করেছে পাড়াবাসীর মধ্যে।

বসতবাড়ি ও দোকান পুড়ে যাওয়ায় সামনের দিন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন মিবু মারমা। তাঁর বেদনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আগুন থেকে মেয়ের আদুরে বিড়ালকে রক্ষা করতে না পারার কষ্ট। তিনি বলেন, ‘কিছুই নাই, সব ছাই। ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। ঢুকেও গিয়েছিলাম। কিন্তু স্বজনেরা আটকিয়েছিলেন। আমার ঘরবাড়ি না পুড়ে, আমাকেও আগুনের মধ্যে দিয়ে দিত। তাহলে আর এত দুঃখ–কষ্ট সহ্য করতে হতো না।’

আরও পড়ুন‘এককাপড়ে বের হয়েছিলাম, এখনো সেভাবে আছি’১৩ ঘণ্টা আগে

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে পাহাড়ি সংগঠন ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত রোববার গুইমারার রামেসু বাজারে বিক্ষোভ ও সহিংসতা ঘটে। পাহাড়িদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় একটি পক্ষ।

এদিকে তিনজন নিহত এবং সহিংসতার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।

বিক্ষোভ ও সহিংসতা চলাকালে তিন পাহাড়ির মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর মেজরসহ আহত হন অন্তত ২০ জন। এ সময় আগুনে পুড়ে যায় বাজারের দোকানপাট ও বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৪০টি দোকান ও ৫০টির মতো বসতঘর। এই পাড়ায় প্রায় এক হাজার লোক বাস করেন।

বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনায় তিন পাহাড়ির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত রোববার থেকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সদর ও উপজেলায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল। এতে রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল। এসব এলাকার দোকানপাটও বন্ধ ছিল। সোমবারও একই পরিস্থিতি ছিল। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি ছিল। অবরোধও প্রত্যাহার করেনি জুম্ম ছাত্র–জনতা।

আরও পড়ুনখাগড়াছড়িতে গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় শনাক্ত, দুই সড়কে অবরোধ শিথিল১৭ ঘণ্টা আগে

এদিকে তিনজন নিহত এবং সহিংসতার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত এখনো সম্পন্ন হয়নি।

সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহলে রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েলসকালে অবস্থান, দুপুরে ফাঁকা

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ ও সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত হওয়া গুইমারা রামেসু বাজারের পরিস্থিতি গতকাল সকাল থেকে ছিল থমথমে।

অবরোধের সমর্থনকারীরা সকালে বাজারে অবস্থান নিয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাজারের প্রবেশমুখের সড়কে সতর্ক পাহারায় ছিলেন। দুই পক্ষের মাঝখানে সড়কে প্রতিবন্ধকতা দিয়েছেন অবরোধকারীরা।

তবে বেলা গড়াতেই বাজার থেকে অবরোধের সমর্থনকারীদের সরে যেতে দেখা যায়। দুপুরের পর বাজারে গিয়ে পাড়াবাসী ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি। এর মধ্যে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন। বেলা একটায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাজারে প্রবেশ করেন। তাঁরা বাজার এলাকা পরিদর্শন করেন। আরেকটি দল বাজারের প্রবেশমুখে অবস্থান নেন।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টহলে রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এক দিন পর লাশের পরিচয় শনাক্ত

গত রোববার গুলিতে নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা। নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের দেবলছড়ি চেয়ারম্যান পাড়ার আথুই মারমা (২১), হাফছড়ি ইউনিয়নের সাং চেং গুলিপাড়ার আথ্রাউ মারমা (২২) ও রামেসু বাজার বটতলার তৈইচিং মারমা (২০)।

খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাবের বলেন, গত রোববার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আহত ১৪ জনকে সদর হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসাধীন, ১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

জুম্ম ছাত্র-জনতার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে জানানো হয়, দুপুর ১২টা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি ও ঢাকা-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ শিথিল করা হয়েছে। জুম্ম ছাত্র-জনতার একজন মুখপাত্র প্রথম আলোকে বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং নিহত ব্যক্তিদের সৎকারের সুবিধার্থে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

নিহত ব্যক্তিরা রামেসু বাজারের নন, তবে গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা। পেশা বা কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি না, বিস্তারিত জানা যায়নি। হামলাকারীদের সম্পর্কে ডিআইজি বলেন, হামলায় জড়িত মুখোশ পরা অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। একই সঙ্গে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলবে।

আমাদের পাড়ার কেউ অবরোধে অংশ নেননি। আমরা কিছুই করিনি। এরপরও বাইরে থেকে লোকজন এসে আমাদের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। বই, কলম, খাতাও পুড়িয়ে ফেলেছে। এক কাপড়ে বের হয়েছি, সেভাবেই আছি এখনো।চিয়া প্রু মারমাসব হারিয়ে অসহায় বাসিন্দারাপুড়িয়ে দেওয়া দোকান। গতকাল দুপুরে খাগড়াছড়ির রামেসু বাজারে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, মোটরসাইকেলে এসে গুলি–ছুরিকাঘাত
  • বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন শুরু, সদরঘাটে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা
  • অনীষাদের পূজার আনন্দ বাড়িয়ে দিলেন প্রধান উপদেষ্টার সহকারী
  • চার দিন পর স্বাভাবিক যান চলাচল, জনজীবনে স্বস্তি
  • পূজামণ্ডপের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা জানতে ও ব্যবস্থা নিতে ‘শারদীয় সুরক্ষা অ্যাপ’ চালু এনটিএমসির
  • দুর্গাপূজা যাতে শান্তিপূর্ণ না হতে পারে, সে জন্যই খাগড়াছড়ির ঘটনা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • খাগড়াছড়িতে আজও অবরোধ চলছে, স্থবির জনজীবন
  • খাগড়াছড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করছে বিজিবি
  • `কিছুই নাই, সব ছাই, ছাইয়ের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে'