যেকোনো গাড়ির ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে যন্ত্রাংশের সঠিক সুরক্ষা অপরিহার্য। এই সুরক্ষার মূল ভিত্তি হলো ইঞ্জিন অয়েল, যা গাড়ির সচলতাকে নির্বিঘ্ন রাখে। অন্যান্য লুব্রিকেন্ট, যেমন ট্রান্সমিশন/গিয়ার অয়েল, এটিএফ, ব্রেক-ফ্লুইড, গ্রিজ ইত্যাদিও যানবাহনকে নিরাপদে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইঞ্জিন অয়েলের গুরুত্ব: এক অদৃশ্য শক্তি

ইঞ্জিন অয়েলকে প্রায়ই ইঞ্জিনের ‘প্রাণ’ বলা হয়। এর কাজ অদৃশ্য হলেও এটি ইঞ্জিনের চলমান অংশগুলোকে মসৃণ রাখে, ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং নির্ভরযোগ্যভাবে চলতে সাহায্য করে। কিন্তু বাংলাদেশে, বিশেষ করে গাড়ির মালিকদের মধ্যে মানসম্পন্ন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের বিষয়ে একধরনের উদাসীনতা দেখা যায়। অনেক গ্রাহক ইঞ্জিন অয়েলের মানের পার্থক্য বুঝতে না পেরে ভুল পণ্য নির্বাচন করেন, যা দীর্ঘ মেয়াদে গাড়ির কর্মক্ষমতা হ্রাস করে।

ভোক্তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ না বুঝেই নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল ইঞ্জিন অয়েল বেছে নেন। তাঁরা প্রায়ই তাৎক্ষণিক সাশ্রয়কে অগ্রাধিকার দেন, দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা উপেক্ষা করেন। অবাক করার মতো বিষয় হলো, অনেকে স্বপ্নের গাড়ি কেনার জন্য বড় বাজেট রাখলেও মানসম্পন্ন ইঞ্জিন অয়েলের ক্ষেত্রে আপস করেন। চালকেরা সাধারণত গাড়ির সুপারিশকৃত গ্রেড বা ব্র্যান্ডের প্রতি অবহেলা করে কম দামি পণ্য বেছে নেন। অনেকেই অরিজিনাল ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার (OEM) দ্বারা সুপারিশকৃত নির্দিষ্ট ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড সম্পর্কে অবগত নন এবং সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতেও অবহেলা করেন। আপাতদৃষ্টিতে এই ছোটখাটো ভুলগুলো দীর্ঘ মেয়াদে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

স্বল্পমেয়াদি সাশ্রয়, দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি

আসলে কি আমরা নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে সাশ্রয় করছি? সত্য হলো, স্বল্প মেয়াদে কিছুটা সাশ্রয় হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটি আসলে অনেক বেশি খরচের কারণ হয়। নিম্নমানের, ভেজাল বা নকল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের তাৎক্ষণিক পরিণতি হলো জ্বালানি দক্ষতা হ্রাস এবং ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি। এ ছাড়া ফিল্টারগুলোতে ব্লক সৃষ্টি হয়ে ইঞ্জিন অয়েলের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, যা ইঞ্জিনের ক্ষতির ঝুঁকি দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। গুরুতর ক্ষেত্রে, ব্যয়বহুল রক্ষণাবেক্ষণ বা এমনকি সম্পূর্ণ ইঞ্জিন পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।

ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অন ক্লিন ট্রান্সপোর্টেশনের (আইসিসিটি) একটি সমীক্ষা অনুসারে, নকল যন্ত্রাংশ, যার মধ্যে ইঞ্জিন অয়েলও অন্তর্ভুক্ত, ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আমরা কি ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতার সঙ্গে আপস করে ধাপে ধাপে খরচ বৃদ্ধির মুখোমুখি হতে চাই, নাকি মানসম্পন্ন ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে ইঞ্জিনের দীর্ঘমেয়াদি কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই?

ইঞ্জিনের সর্বোত্তম কর্মক্ষমতার জন্য সঠিক ইঞ্জিন অয়েল

ইঞ্জিন অয়েলের কাজ শুধু মসৃণতা বজায় রাখা নয়। এর গঠন এবং প্রক্রিয়া বেশ জটিল। একটি মানসম্পন্ন ইঞ্জিন অয়েলের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সক্ষমতা থাকা উচিত:

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত তাপ থেকে ইঞ্জিনকে রক্ষা করা।

পরিষ্কার রাখা: ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ অংশ থেকে ময়লা এবং কাদা দূর করা।

সিলিং করা: ইঞ্জিনের উপাদানগুলোর মধ্যে ফাঁকা স্থান পূরণ করে বাইরের দূষণ থেকে রক্ষা করা।

সুরক্ষা দেওয়া: ক্ষয় এবং মরিচা থেকে ধাতব অংশগুলোকে রক্ষা করা।

মসৃণ রাখা: ঘর্ষণ কমিয়ে যন্ত্রাংশের মসৃণ চলাচল নিশ্চিত করা।

সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার ইঞ্জিনের সর্বোত্তম কর্মক্ষমতা, দীর্ঘায় এবং জ্বালানিসাশ্রয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিপরীতে, নিম্নমানের বা ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে; কারণ, সেগুলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, সিলিং, পরিষ্কার রাখা এবং সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়। অতএব সঠিক ইঞ্জিন অয়েল কীভাবে নির্বাচন করবেন, তা বোঝা অত্যন্ত জরুরি।

শুধু সঠিক ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করলেই ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা নিশ্চিত হবে না, যতক্ষণ না আমরা সঠিক উপায়ে ব্যবহার করি। সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আমাদের অয়েল ড্রেইন ইন্টারভাল (ওডিআই), অর্থাৎ ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময়ের ব্যবধান সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। ব্যবহৃত ইঞ্জিন অয়েলের ধরন এবং ড্রাইভিং। কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে ওডিআই নির্ধারিত হয়, অথবা নির্দেশিত ওডিআইয়ের জন্য ইঞ্জিন প্রস্তুতকারকের ম্যানুয়াল অনুসরণ করা উচিত। আরেকটি পন্থা হলো নির্দিষ্ট পরিবেশ, রাস্তার অবস্থা, ট্রাফিক পরিস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনা করে ওডিআই নির্ধারণ করা। সুতরাং, সর্বোত্তম কর্মক্ষমতার জন্য আপনার গাড়ির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা মেনে সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন।

মোবিল ইঞ্জিন অয়েল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর র জন য স রক ষ ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

খাওয়ার পরপরই যাঁরা বাসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা কেন অনন্য, জেনে নিন তাঁদের ৮টি গুণ

খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন পরিষ্কার করার মধ্য দিয়ে নিয়মানুবর্তিতা, মনোযোগ ও নম্রতা প্রকাশ পায়। অনেকেই যৌথ পরিবার বা মেসে থাকেন। তাঁদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস অপরকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা প্রকাশ করে।

এ ছাড়া এই অভ্যাস রুটিন মেনে চলা, অবসাদ কমানো, নিজের যত্ন নেওয়া এবং দায়িত্বশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেকেই ঘরের কাজ জমিয়ে রাখেন; কিন্তু যাঁরা খাওয়ার পরপরই বাসনকোসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা ঘরের কাজও সেরে ফেলেন চটজলদি। এতে তাঁদের দূরদৃষ্টি এবং উপস্থিত বুদ্ধি প্রকাশ পায়।

তাঁরা কাজ ফেলে রাখেন না

এ ধরনের ব্যক্তিরা বাসন মাজা শেষ না করলে খাওয়া শেষ হয়েছে বলেই মনে করেন না। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এই আচরণ ‘জিগারনিক প্রভাব’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত।
মনোবিজ্ঞানে জিগারনিক প্রভাব বলে বোঝায়, এম এক মানসিক প্রবণতা, যেখানে কোনো কাজ মাঝপথে থেমে গেলে বা অসম্পূর্ণ থাকলে তা সম্পূর্ণ হওয়া কাজের তুলনায় মানুষের মনে বেশি সময় ধরে থাকে। সহজভাবে বললে, মানুষ অসমাপ্ত বা বাধাগ্রস্ত কাজগুলো সম্পন্ন কাজের চেয়ে ভালোভাবে মনে রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অসমাপ্ত কাজ কীভাবে আমাদের মনে গেঁথে থাকে। কাজ জমিয়ে রাখলে সেসবের কথা আমাদের সব সময় মনে পড়তে থাকে। এতে মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।

ঘরের কাজগুলো সময়মতো সেরে ফেললে মন থাকে চাপমুক্ত। কাজ সময়মতো সেরে ফেললে মনে শান্তি আসে। কাজ অসমাপ্ত না রাখার এই অভ্যাসের সুফল শুধু রান্নাঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সময়মতো অফিসে আসা, প্রজেক্ট শেষ করা, রোজকার সব কাজেই প্রতিফলিত হয়।

আরও পড়ুননাভি কত দিন পরপর কীভাবে পরিষ্কার করতে হয়০৪ অক্টোবর ২০২৫তাঁরা অপরকে সম্মান দেন

দ্রুত বাসন মেজে ফেলা মানুষেরা দলবদ্ধভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নোংরা ময়লা তাঁরা বাড়ির অন্যদের জন্য ফেলে রাখেন না। কাজটি নিজে করে ফেলে জায়গাটি পরিষ্কার রাখেন। এ ধরনের মানুষ অন্যের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেন।

ছোট ছোট কাজগুলো তাঁরা নিজেরাই করেন। যেমন রান্নাঘর পরিপাটি রাখা, ব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া কিংবা ডিশওয়াশার শেষ হয়ে গেলে বোতলটা আবার ভরে রাখা। এসব কাজ বাড়ির অন্য সদস্যদের প্রতি তাঁদের সম্মান ও বিবেচনাবোধ প্রকাশ করে।  

তাঁরা রুটিন মেনে চলেন

খাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে বাসন মেজে ফেলা আদতে তাঁদের দৈনন্দিন রুটিনেরই অংশ। এই ছোট একটি কাজই প্রমাণ করে তাঁরা সময়ের কাজ সময়ে করতে কতটা পছন্দ করেন। ছোট ছোট কাজগুলো জমিয়ে না রাখার কারণে আরও বড় বড় কাজ করার জন্য তাঁরা যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে পারেন।

এই ছোট ছোট অভ্যাস জীবনে স্থিতিশীলতা আনে। আরও অনেক ইতিবাচক আচরণ দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। জীবনের কঠিন সময়গুলোয় তাঁরা সামলে নেন ভালোভাবে। সকালে হাঁটতে বের হওয়া, সন্ধ্যায় বই পড়ার মতো উপকারী অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সময় পান তাঁরা।

বাসন মাজা শুধু পরিচ্ছন্নতার সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়, কাজটি মনোযোগেরও বটে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাওয়ার পরপরই যাঁরা বাসন পরিষ্কার করেন, তাঁরা কেন অনন্য, জেনে নিন তাঁদের ৮টি গুণ