মার্কিন আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেট গতকাল সোমবার টানা পঞ্চমবারের মতো ব্যয় বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিল পাসে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিল পাস হলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার শাটডাউন (অচলাবস্থা) কাটিয়ে আবার সচল হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ব্যয় বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিল পাসের জন্য ৬০টি ভোট প্রয়োজন। কিন্তু এর কম ভোট পাওয়ায় গতকাল ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান—উভয় পক্ষের প্রস্তাবই ভেস্তে গেছে।

গতকাল দিনের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও হুমকি দিয়েছেন, সিনেট আবার বিল পাসে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের গণহারে ছাঁটাই করা হবে। তহবিল ফুরিয়ে যাওয়ায় হাজারো কর্মী পাঁচ দিন ধরে বিনা বেতনে কাজ করছেন।

ডেমোক্র্যাটরা ব্যয় বিলে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। বিপরীতে রিপাবলিকানরা নিরেট একটি ব্যয় বিলের জন্য চাপ দিচ্ছে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে তিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে আগ্রহী।

গতকাল শুরুতে ডেমোক্র্যাটদের ব্যয় বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিলের প্রস্তাব ৪৫-৫০ ভোটে বাতিল হয়ে যায়। এরপর ৫২-৪২ ভোটে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবও বাতিল হয়ে যায়।

ভোটাভুটির পরপরই ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। সরকারে অচলাবস্থা বজায় থাকার পেছনে তিনি ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেন।

ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি ডেমোক্র্যাটদের ব্যর্থ স্বাস্থ্যসেবা নীতি কিংবা অন্য যেকোনো কিছু নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। কিন্তু এর আগে অবশ্যই তাদের শাটডাউন কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করতে হবে। বস্তুত আজ রাতের মধ্যেই সরকার সচল করা উচিত।’

আরও পড়ুনকংগ্রেসে অর্থ বিল নাকচ, সংকটে ট্রাম্প প্রশাসন০১ অক্টোবর ২০২৫

ডেমোক্র্যাটরা শুরু থেকেই রিপাবলিকানদের ব্যয় বিলের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। কারণ, এই প্রস্তাব পাস হলে নিম্ন-আয়ের মার্কিনিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে।

ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ব্যয়–সংক্রান্ত যেকোনো বিলে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের মেডিকএইড স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে কাটছাঁট বাতিল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

রিপাবলিকানরা বারবার অভিযোগ করেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ডেমোক্র্যাটরা সরকার অচল করে দিয়েছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা। তাঁরা বলেছেন, সরকার সচল হলে আলাদা বিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি সমাধানে কাজ করবেন।

গতকাল ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি সম্ভাব্য স্বাস্থ্যসেবা–সংক্রান্ত নীতি নিয়ে বর্তমানে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার ট্রাম্পের এই দাবি অস্বীকার করেছেন। তিনি এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এটা সত্য নয়।’

গত বুধবার শাটডাউন শুরুর পর থেকেই হোয়াইট হাউস সতর্ক করছে, শিগগিরই কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের স্থায়ী ছাঁটাই করা হতে পারে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গতকাল একই সতর্কবার্তা দেন। যেসব সংস্থায় কর্মী ছাঁটাই প্রয়োজন হবে, সেগুলোর সঙ্গে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনা ও বাজেট দপ্তর।

ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ‘আমরা চাই না কেউ চাকরি হারাক। তবে দুঃখজনকভাবে যদি শাটডাউন চলতে থাকে, তবে ছাঁটাই অনিবার্য।’ অচলাবস্থা কাটানোর জন্য ডেমোক্র্যাটদের নমনীয় হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন লেভিট। তিনি বলেন, ‘এখানে আলোচনার আর কিছু নেই। কেবল সরকার সচল করুন।’

আরও পড়ুনশাটডাউন আলোচনা ব্যর্থ হলে সরকারি কর্মীদের গণহারে ছাঁটাইয়ের হুমকি ট্রাম্প প্রশাসনের২২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প রস ত ব র প বল ক ন র জন য সরক র র সচল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় নিশ্চিত করল ডিনেট

মৌলভীবাজারের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুশাসন ও সরকারি সেবার মান নিশ্চিতে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) একটি পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিনেটের (Dnet) উদ্যোগে এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্থানীয় হোটেল রেস্ট ইনের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সভার লক্ষ্য হলো—প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন, চাহিদা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন এবং সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য মূল সরকারি বিভাগ ও স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতামূলক সমর্থন নিশ্চিত করা।

সভায় বিশেষ অতিথি এবং প্যানেল আলোচনা অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা)। তিনি বলেছেন, “মৌলভীবাজারে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। প্রথমত, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন, যা নিশ্চিত করবে যেন জনগণের বিকল্প কোনো পথের প্রয়োজন না হয়। দ্বিতীয়ত, চা শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া।” 

২৭ মাসব্যাপী ‘নাগরিক সমন্বয়’ প্রকল্পটি সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার (জিএসি) আর্থিক সহায়তায় সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের (নাগরিকতা) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ডিনেট চারটি স্থানীয় সহযোগী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাগুলো হলো—কমলগঞ্জে জনকল্যাণ কেন্দ্র (জে কে কে), শ্রীমঙ্গলে প্রগতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (পিএসইউএস), কুলাউড়ায় নিঃস্ব সহায়ক সংস্থা (এনএসএস) এবং বড়লেখায় প্রচেষ্টা।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—মৌলভীবাজারের চার উপজেলা—বড়লেখা, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, যুব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ক্লাইমেট জাস্টিস এবং সরকারি সেবার সমতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

সভার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—প্রকল্পের চাহিদা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করা। এই গবেষণামূলক তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি সেবার ঘাটতি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্ণিত করেছে, যা সবার মধ্যে একটি অভিন্ন বোঝাপড়া তৈরি করবে এবং প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি কৌশল নির্ধারণে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

সভায় উপস্থাপিত মূল গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজার জেলায় অর্থনৈতিক বৈষম্য বেশ প্রকট। চা শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশ এখনো মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার। সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পেতেও নাগরিকদের জটিলতা পোহাতে হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন যে, ভাতা পেতে তাদের ঘুষ (১০০ থেকে ৩০০ টাকা) দিতে হয়েছে। জলবায়ুগত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মতো উপজেলাগুলোতে ৬৪ শতাংশ নারী বন্যা ও ভূমিধসের মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে তাদের আয়ের প্রধান উৎস হারিয়েছেন।

ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেছেন, “আগামী দুই বছরে আমাদের লক্ষ্য—মৌলভীবাজারে এমন কিছু সাফল্যের গল্প তৈরি করা, যা এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপের যাত্রাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।”

নাগরিকতা ফান্ডের প্রতিনিধি ও জিএফএ কনসাল্টিং গ্রুপের লিড এক্সপার্ট– সিএসও সক্ষমতা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কর্মকর্তা জনাব নুরুল ইসলাম বলেছেন, “নাগরিকতা কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের লক্ষ্য— ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৬ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছানো। তাই, আমরা চেষ্টা করছি এই কর্মসূচি ভৌগোলিক ও জনমিতিকভাবে সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে।” 

নাগরিক সমন্বয়ের প্রকল্প পরিচালক আসিফ আহমেদ তন্ময় সভা পরিচালনা করেন।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ