করোনাকালে নীলফামারীতে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে সাহায্য করছেন মারুফা আক্তার—সেই ছবিটি কি মনে আছে? কর্দমাক্ত জমিতে শক্ত হাতে লাঙলের হাল ধরে জমি চাষ করেছিলেন মারুফা। সেই অদম্য ছবিটি আজও অনেক উঠতি ক্রিকেটারের প্রেরণা। সেই মারুফাই এখন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন বিশ্বকাপে!

বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়ার পর কেমন লেগেছিল তাঁর? কেমন ছিল মা–বাবার মনের অবস্থা? এসব নিয়েই আইসিসির সঙ্গে কথা বলেছেন মারুফা। আজ সকালে আইসিসির ফেসবুক পেজে তাঁর ভিডিও সাক্ষাৎকারটি পোস্ট করা হয়।

খবর পেয়ে চোখে জল

গত ২৩ আগস্ট নারী বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হয়। সেদিন বিকেএসপিতে ক্যাম্প চলছিল মারুফাদের। সেই মুহূর্তের কথা মনে করে মারুফা বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে দেখি ফেসবুকে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। তখন কেন জানি চোখে পানি চলে এল। কারণ, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে থাকাটা সহজ না।’

এরপর যোগ করেন, ‘জানার পরই বাবাকে ফোন করেছি, মাকেও জানিয়েছি। তাঁরা খুব খুশি হন।’ মা–বাবা ক্রিকেট বোঝেন কি না, জানতে চাইলে হেসে বলেন, ‘ওরা তেমন কিছু বোঝে না। শুধু জানে, আমি দলে আছি, খেলছি। এখনো খেলা দেখে শুধু আমাকেই দেখে, খেলা কিন্তু বোঝে না। আমি বলি, “খেলা না বুঝলে আমায় দেখে লাভ কী!”’

মা–বাবার বিশ্বাস: ‘আমরা জানি তুই পাবি’

মা–বাবার বিশ্বাস ছিল, মারুফা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পাবেনই। মারুফা নিজেই জানান, তিনি মা–বাবাকে বলেছিলেন—(বিশ্বকাপ) অনেক বড় একটি মঞ্চ, এখানে সবাই সুযোগ পায় না। তাঁর কথা শুনে মা–বাবা বলেছিলেন, ‘আমরা জানি, তুই পাবি।’
খেলা দেখার প্রস্তুতি কেমন থাকে, সে কথাও বলেছেন মারুফা। তিনি জানান, ‘বাসায় অনেক কাজ থাকলেও সব বন্ধ রেখে তাঁরা টিভির সামনে পাঁচ মিনিট আগে থেকেই গিয়ে বসে থাকেন।’ কৃষকের মেয়ে মারুফা যেন মাঠে নামলেই, টিভির সামনে মা–বাবার হৃদয়েও এক অদম্য হাল ধরে রাখেন।

আরও পড়ুনইসফাকের জায়গায় বিসিবির পরিচালক রুবাবা দৌলা৪ ঘণ্টা আগেমারুফার প্রশংসায় মালিঙ্গা

নিশ্চয়ই মারুফার বাবা তাঁর মেয়ের বিশ্বকাপ অভিষেকও দেখেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে মারুফার বোলিং ছিল চোখধাঁধানো। পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ওভারে পরপর দুটি দুর্দান্ত ইনসুইং ডেলিভারিতে তিনি নেন দুটি উইকেট। তাঁর আগুনে বোলিংয়ে দুই ব্যাটারকেই ফিরতে হয় বোল্ড হয়ে।

তাঁর সেই দুটি ডেলিভারির প্রশংসা করেছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। মালিঙ্গা তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘নিখাদ দক্ষতা। দারুণ নিয়ন্ত্রণ। এখন পর্যন্ত এই আসরের সেরা ডেলিভারি।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ দুটি ডেলিভারিতে উইকেট নেন মারুফা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বক প

এছাড়াও পড়ুন:

বীমা আইন ২০১০: সঠিক প্রয়োগ হলে বীমা খাতের উন্নয়ন সম্ভব

বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে বীমা খাতের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্ভব। বীমা আইন- ২০১০ এ বীমা কোম্পানিতে নিরীক্ষা, তদন্ত, প্রশাসক নিয়োগ, আইন লঙ্ঘন ও অর্থ আত্মসাতে দোষী ব্যক্তিদের অপসারণ ও আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধারের বিধান রাখা হয়েছে। ফলে বীমা খাত সংস্কারের জন্য প্রয়োজন বীমা আইন ২০১০ এর সঠিক প্রয়োগ। আর এ জন্য বীমা আইনের সংশোধন নয়, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সদিচ্ছা।

শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি আয়োজিত বীমা আইন- ২০১০ সংশোধনী শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। সভা সঞ্চালনা করেন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু। 

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। সভায় ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের (আইআরএফ) সভাপতি গাজী আনোয়ার, বিআইপিডি’র মহাসচিব কাজী মো. মোরতুজা আলীসহ বিমা খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, বীমা আইনের সংশোধনীতে তফসিল-১ তুলে দেওয়াসহ কোম্পানির চেয়ারম্যান নিয়োগ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দেওয়া হলে কোম্পানি পরিচালনায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে পরিচালক বা নির্বাচিত চেয়ারম্যান- তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্নের অযুহাতে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। যা সংস্কারের পরিবর্তে নতুন সংকট তৈরি করবে।

বক্তারা আরো বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বীমা খাত সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ। তারা বীমা আইন ২০১০ এর সংশোধনী ছাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। লাইফ বীমা খাতের যেসব কোম্পানি তহবিল তছরুফ হয়েছে তা উদ্ধার, গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ, তহবিল তছরুফে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নন-লাইফ বীমা খাতের অবৈধ কমিশন বন্ধ ও দক্ষ জনবল তৈরিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।

বক্তারা বলেন, বীমা আইন ২০১০ প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এর মধ্যেই কি কারণে সংশোধনীর প্রয়োজন হলো- সেটিও স্পষ্ট নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হয় ২০১০ সালে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো চলছে প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা। যাদের বেশিরভাগের-ই বীমা বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বীমা আইন-২০১০ এর সঠিক প্রয়োগ হয়েছে কিনা- আইন সংশোধনের আগে সে বিষয়টি আরো ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন।

বক্তারা বলেন, বীমা কোম্পানি তদন্তের জন্য বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা, বিশেষ নিরীক্ষার জন্য ২৯ ধারা, প্রশাসক নিয়োগের জন্য ৯৫ ধারা, চেয়ারম্যান, পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপরাধে অপসারণ করার বিধান ৫০ ধারায় এবং বীমা কোম্পানির আত্মসাতকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ১৩৫ ও ১৩৬ ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিধানের সঠিক প্রয়োগ হলে বীমা খাতের বিদ্যমান সংকট নিরসন করা সম্ভব। তাই বীমা আইন ২০১০ সংশোধনীর এই প্রস্তাবনা আরো ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রস্তাবও করেন বক্তারা।

মূল প্রবন্ধে আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, “বীমা আইন-২০১০ -এ ১৬০টি ধারা আছে এবং প্রতিটি ধারায় কম-বেশি একাধিক উপধারা আছে। আইডিআরএ কর্তৃক আনিত সংশোধনী প্রস্তাবে মূল ১৬০ টি ধারার মধ্যে ৯৯টি মূল ধারা অপরিবর্তিত রেখেছে। কিন্তু সেগুলোর উপধারাগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকী ৬১টি ধারার উপধারাসহ তাদের পরির্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ১৬০টি ধারার মধ্যে- কয়েকটি বিলুপ্ত বা বাতিল প্রস্তাব করেছে। অধিকন্তু ৬৪ নতুন ধারা, উপ-ধারাসহ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।”

বীমা আইনের সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বলেন, “বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুধু যে বীমা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ বা কন্ট্রোল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে তা কিন্তু নয়। যেহেতু বীমা খাত অনুন্নত এবং অবহেলিত, জনগণ বীমা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বীমার জ্ঞান নেই- তাই এই শিল্পের বিকাশে নিয়ন্ত্রণের পাশাপশি উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে বীমা উন্নয়নে কোন ধরনের প্রস্তাব করা হয় নাই।”

বীমা আইন ২০১০-এ সংশোধনী প্রস্তাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, “বীমা আইন-২০১০ বীমাশিল্প নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত আইনে আরো ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ব্যাংকিং আইন-১৯৯১ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে যে ক্ষমতা ব্যবহার করে, বীমাশিল্প নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ একইরূপ ক্ষমতা ধারণ করতে চায়। কর্তৃপক্ষ নন-লাইফ বীমা কোম্পানির চেয়ে লাইফ বীমা কোম্পানিকে বেশি বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও পলিসিগ্রহীতার স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করে পরিবর্তন চাচ্ছে। কিন্তু বীমা গ্রহীতার দাবি পরিশেধে ৯০ দিনের বিধান অপরিবর্তিত রেখেছে।”

বীমা আইন অমান্যকারীদের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা জরিমানার প্রস্তাব করেছে। বীমা আইন-২০১০ এর মূল ধারার বিপরীতে যে সকল বিধি-প্রবিধান করা হয়েছে বা করতে হবে সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বীমা আইন-২০১০ এর তফসিল-১ বাদ দিয়েছে। এর পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের সময় সময় নির্দেশনা দিবে তার প্রস্তাব করেছে।”

কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তাই সংজ্ঞা যদি বুঝতে না পারা যায় তাহলে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। যেসব সংশোধন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা উন্নয়ন বান্ধব না, নিয়ন্ত্রণ বান্ধব। আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, উন্নয়নের গুরুত্ব কম দেওয়া হয়েছে, নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এই আইনের প্রবর্তন।”

ঢাকা/নাজমুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ