নীলফামারীর মারুফা বিশ্বকাপে: চোখে জল এলেও বিশ্বাস ছিল মা–বাবার
Published: 7th, October 2025 GMT
করোনাকালে নীলফামারীতে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে সাহায্য করছেন মারুফা আক্তার—সেই ছবিটি কি মনে আছে? কর্দমাক্ত জমিতে শক্ত হাতে লাঙলের হাল ধরে জমি চাষ করেছিলেন মারুফা। সেই অদম্য ছবিটি আজও অনেক উঠতি ক্রিকেটারের প্রেরণা। সেই মারুফাই এখন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন বিশ্বকাপে!
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়ার পর কেমন লেগেছিল তাঁর? কেমন ছিল মা–বাবার মনের অবস্থা? এসব নিয়েই আইসিসির সঙ্গে কথা বলেছেন মারুফা। আজ সকালে আইসিসির ফেসবুক পেজে তাঁর ভিডিও সাক্ষাৎকারটি পোস্ট করা হয়।
খবর পেয়ে চোখে জলগত ২৩ আগস্ট নারী বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হয়। সেদিন বিকেএসপিতে ক্যাম্প চলছিল মারুফাদের। সেই মুহূর্তের কথা মনে করে মারুফা বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে দেখি ফেসবুকে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। তখন কেন জানি চোখে পানি চলে এল। কারণ, বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে থাকাটা সহজ না।’
এরপর যোগ করেন, ‘জানার পরই বাবাকে ফোন করেছি, মাকেও জানিয়েছি। তাঁরা খুব খুশি হন।’ মা–বাবা ক্রিকেট বোঝেন কি না, জানতে চাইলে হেসে বলেন, ‘ওরা তেমন কিছু বোঝে না। শুধু জানে, আমি দলে আছি, খেলছি। এখনো খেলা দেখে শুধু আমাকেই দেখে, খেলা কিন্তু বোঝে না। আমি বলি, “খেলা না বুঝলে আমায় দেখে লাভ কী!”’
মা–বাবার বিশ্বাস: ‘আমরা জানি তুই পাবি’মা–বাবার বিশ্বাস ছিল, মারুফা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পাবেনই। মারুফা নিজেই জানান, তিনি মা–বাবাকে বলেছিলেন—(বিশ্বকাপ) অনেক বড় একটি মঞ্চ, এখানে সবাই সুযোগ পায় না। তাঁর কথা শুনে মা–বাবা বলেছিলেন, ‘আমরা জানি, তুই পাবি।’
খেলা দেখার প্রস্তুতি কেমন থাকে, সে কথাও বলেছেন মারুফা। তিনি জানান, ‘বাসায় অনেক কাজ থাকলেও সব বন্ধ রেখে তাঁরা টিভির সামনে পাঁচ মিনিট আগে থেকেই গিয়ে বসে থাকেন।’ কৃষকের মেয়ে মারুফা যেন মাঠে নামলেই, টিভির সামনে মা–বাবার হৃদয়েও এক অদম্য হাল ধরে রাখেন।
নিশ্চয়ই মারুফার বাবা তাঁর মেয়ের বিশ্বকাপ অভিষেকও দেখেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে মারুফার বোলিং ছিল চোখধাঁধানো। পাকিস্তানের ইনিংসের প্রথম ওভারে পরপর দুটি দুর্দান্ত ইনসুইং ডেলিভারিতে তিনি নেন দুটি উইকেট। তাঁর আগুনে বোলিংয়ে দুই ব্যাটারকেই ফিরতে হয় বোল্ড হয়ে।
তাঁর সেই দুটি ডেলিভারির প্রশংসা করেছেন শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। মালিঙ্গা তাঁর ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লেখেন, ‘নিখাদ দক্ষতা। দারুণ নিয়ন্ত্রণ। এখন পর্যন্ত এই আসরের সেরা ডেলিভারি।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ দুটি ডেলিভারিতে উইকেট নেন মারুফা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি: আবরারের বাবা
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আপিল বিভাগে এখনো মামলা বিচারাধীন। সরকারের কাছে আবেদন, বিচারের কাজটি যেন দ্রুত শেষ করা হয়।’’
আজ মঙ্গলবার (৭ আক্টোবর) ছিল আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি ঘিরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে স্মৃতিচারণসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজন ছিল। ছেলেকে স্মরণ করে এ কথা বলেন আবরার ফাহাদের বাবা।
আরো পড়ুন:
আবরারের রক্ত বৃথা যায়নি, জাতিকে জাগিয়ে তুলেছে
কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করলেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা
শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘‘ছেলেটিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিষ্ঠুরতম এ অপরাধ করার পরও নিহতের পরিবার এখনো এর সুষ্ঠু বিচার পায়নি। আমরা দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাই।’’
আবরার বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট।
ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। সেই মামলার রায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্টের আপিল বেঞ্চ এ বছর ১৬ মার্চ সেই সাজাই বহাল রাখে।
আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, “হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন। আশা করছি আপিল বিভাগেও হাই কোর্টের রায় বহাল থাকবে। এই সরকার রায় কার্যকর করবে।”
এ মামলায় দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন এখনো পলাতক। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান বরকত উল্লাহ।
দিনটি উপলক্ষে রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরারের কবর জিয়ারত করেন এনসিপির নেতারা। দুপুর ২টায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক নয়ন আহমেদের নেতৃত্বে দলটির নেতারা কবর জিয়ারতে অংশ নেন। এ সময় তারা আবরার ফাহাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এসময় এনসিপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী জান্নাতুল ফেরদৌস টনি, যুগ্ম সমন্বয়কারী কে এম আর শাহীনসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিকেলে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে শহীদ আবরার ফাহাদের হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করে শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি গ্রন্থাগারের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ছাত্র-জনতা।
সন্ধ্যা ৭টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ আবরার ফাহাদের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল