মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য আটকে আছে: আমীর খসরু
Published: 9th, November 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমানে দেশে নির্বাচনের জন্য বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমনকি মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্তও স্থগিত-স্থবির হয়ে আছে।
আজ রোববার রাজধানীর ক্র্যাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমীর খসরু এই মন্তব্য করেন। ‘আগামীর উন্নত জাতি গঠনে দিকনির্দেশনামূলক সুপারিশ’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজক বইটির লেখক ও প্রকাশক এবং নিউ হোপ গ্লোবালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দিন।
আমীর খসরু বলেন, ‘মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তি চায়। আর দেশের মানুষের সবগুলো সিদ্ধান্ত এখন স্থগিত। কেন স্থগিত? বলে আমরা নির্বাচনের পরে করব। এটা বিনিয়োগ হোক, ব্যবসা-বাণিজ্য হোক, মানুষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত আমি জানি। ভাই, নির্বাচনটা হয়ে যাক, তারপরে আমরা এগুলো করব। সবকিছু স্থগিত, স্থবির।’
নির্বাচন নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেও একটি পক্ষ তা বিলম্বিত করতে মাঠে নেমেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি মনে করেন, এই পক্ষটি মূলত গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যারা বিলম্বিত করতে চায়, তাঁরা কি গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ? বিশ্বাস করা যায়?
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেই সংবিধানের অধীনে শপথ গ্রহণ করেছে, সেই সংবিধানের অধীনে গণভোটের আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, সংবিধানের স্পিরিটের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সরকার গঠন করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান আছে বর্তমানে। যেই সংবিধানের অধীনে অন্তর্বর্তী সরকার হয়েছে। এই সংবিধানে গণভোটের কোনো অপশন নেই। এখন গণভোট নির্বাচনে আগে কেন, নির্বাচনের দিনেও গণভোট করা এই সংবিধান অ্যালাউ করবে না।
আমীর খসরু বলেন, গণভোট নির্বাচনের দিনে আয়োজন করার সিদ্ধান্তে বিএনপি একমত হয়ে উদারতার পরিচয় দিয়েছে। যাতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সহনশীল পরিস্থিতি বজায় থাকে। দেশে পরস্পরের মধ্যে সম্মানবোধ থাকে, বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয়।
আগামীর বাংলাদেশ কীভাবে কাজ করবে, তা নিয়ে বিএনপির বেশ কয়েকটি দল কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রথম দিন থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অপেক্ষা করতে না হয়। বিএনপির এই দলগুলোর কাজ ইতিমধ্যে শেষের পথে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যেসব প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, সেগুলোতে ঐকমত্য হয়নি বলে উল্লেখ করেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, নোট অব ডিসেন্ট যেখানে, সেখানে দ্বিমত পোষণ করা হয়েছে। দ্বিমত পোষণ করার অর্থ হচ্ছে ঐকমত্য হয়নি। যে বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, সেটাও গণভোটে যেতে পারে না।
আমীর খসরু বলেন, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, তার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এখন ঐকমত্য হয়নি, এমন অনেক দাবিও উত্থাপন করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে নতুন বাংলাদেশ হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে মানুষ মাথা উঁচু করে চলতে পারবে। উন্নয়ন হবে দুর্নীতিমুক্ত। মানুষ অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারবে। মানুষের অধিকার নিজের কাছে ফিরে আসবে। ভবিষ্যতে তেমন বাংলাদেশ চান তাঁরা, যার নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বাংলাদেশে সংস্কারের ধারণা বিএনপি এনেছে। সংস্কারের জন্য বিএনপির ৩১ দফা মানুষ গ্রহণ করেছে। তাই মানুষ বিশ্বাস করে, বিএনপির কাছেই দেশ নিরাপদ। কারণ ক্ষমতায় থাকার জন্য বিএনপি কখনো মানুষের ওপর নির্যাতন করেনি।
দ্যা ফিন্যান্স টুডের নির্বাহী সম্পাদক শাহীন আব্দুল বারী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য দেন যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক, জাহিদ চৌধুরী প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঐকমত য হয়ন ঐকমত য হয় ব এনপ র র জন য গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
কমিশনে কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না, ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে: আমীর খসরু
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কী সিদ্ধান্ত হলো, সেটি দেখার বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৩১ দফার মধ্যে সংস্কারের সম্পূর্ণ একটা রূপরেখা আছে। তো তারা সংস্কার চাক, আর না চাক। বলুক, আর না বলুক। আমরা সবাই মিলে যুগপৎ আন্দোলনে যারা ছিলাম, আমরা কিন্তু আমাদের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করব। ওই কমিশন কী বলে, ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো, এটাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণফোরাম। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি কামাল হোসেন। তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
জামায়াতকে ইঙ্গিত করে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, অন্য কারও (রাজনৈতিক দল) যদি কিছু থাকে, তারাও জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারে।...ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসেন। সংসদে আপনি পরিবর্তন করেন, এটাই তো নিয়ম। কিন্তু আপনি জোর করে ঢাকা শহরে বসে, আপনার দাবি মানতে হবে, এটার জন্য আবার ঐকমত্য কমিশনকে ব্যবহার করবেন, অথবা সরকারের ব্লেসিং (আশীর্বাদ) নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এটার জন্য তো বাংলাদেশের মানুষ এত ত্যাগস্বীকার করেনি।
উল্লেখ্য, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করাসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ জামায়াতসহ আন্দোলনরত আটটি দলরে পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর মৎস্য ভবন মোড়ে এক ব্রিফিংয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ১১ নভেম্বরের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব দাবি মেনে নিতে সময় বেঁধে দেন। তা না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গণভোট বর্তমান সংবিধানের পরিপন্থী উল্লেখ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, ‘এই সংবিধানে গণভোটের কোনো প্রভিশন (অনুমতি/বিধান) নেই, ক্লিয়ারলি (পরিষ্কার)। আপনার যদি গণভোট করতে হয়, তাহলে এই সংবিধান পরিবর্তন করে গণভোটের প্রভিশন আগে আনতে হবে। তাহলে এই পরিবর্তনটা আপনাকে কোথায় করতে হবে? সংসদে করতে হবে এবং সংসদ হচ্ছে জনগণের রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রতিনিধি)।’
গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি উদারতা দেখানো ঠিক হয়নি বলে জানান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশে সহনশীলতা ও রাজনৈতিক ঐক্যের প্রেক্ষাপটে এই গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছে, তা–ও নির্বাচনের দিন। কিন্তু আসলে নির্বাচনের দিনও তো গণভোট হতে পারে না। এটা তো বিএনপির উদারতা এবং এই উদারতাটা দেখানো বিএনপির ঠিক হয়নি। কারণ, এটা সাংবিধানিকভাবে কারেক্ট (সঠিক) না। এটা নৈতিকভাবে কারেক্ট না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কারেক্ট না যে উদাহরণটা দেখিয়েছে, এটার জন্য আজকে আমরা সমস্যা ফেস করতেছি।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। সঞ্চালনা করেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নারী পক্ষের সভাপতি শিরীন হক প্রমুখ।