ভিডিও গেম নিয়ে বিতর্ক বহু পুরোনো। ভিডিও গেমস শিশু-কিশোরদের দক্ষতা বাড়ায় নাকি কেবল সময়ের অপচয় করে, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তাই শিশুদের ভিডিও গেম খেলা নিয়ে অনেক অভিভাবকই উদ্বিগ্ন থাকেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত তথ্যমতে, ভিডিও গেম খেলার অভ্যাস শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্ক ও আচরণে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে গেমের ধরন এবং তা কতক্ষণ খেলা হচ্ছে তার ওপর।

ভিডিও গেম খেলার উপকারিতা নিয়ে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীরা নিয়মিত ভিডিও গেম খেললে তাদের মস্তিষ্কের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে উন্নতি দেখা যায়। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ডাফিন ব্যাভেলিয়ার বলেন, অ্যাকশনভিত্তিক বা কৌশলগত ভিডিও গেম, যেমন রিয়েল-টাইম স্ট্র্যাটেজি গেমগুলো কিশোর-কিশোরীদের নিয়ন্ত্রণ ও দৃষ্টি আকর্ষণ ক্ষমতা উন্নত করে। এ গেমগুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও একাধিক তথ্যের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত গেম খেলা শিশুদের মস্তিষ্কের কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে পারে। মস্তিষ্কের বাঁ প্রিফ্রন্টাল করটেক্স ও কগনিটিভ নিয়ন্ত্রণে যুক্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক ধূসর পদার্থের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। ধূসর পদার্থ হলো সেই অংশ যেখানে নিউরোনাল প্রসেসিং হয়। সহজ ভাষায়, গেম খেলার মাধ্যমে মস্তিষ্ক যেন আরও দক্ষ ও সুসংগঠিত হয়ে উঠছে।

বর্তমানে জনপ্রিয় কিছু গেম, যেমন মাইনক্রাফট বা ফোর্টনাইটের খেলার তথ্য সংগ্রহ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মাইনক্রাফটের মতো স্যান্ডবক্স গেমে শিশুরা নিজেদের জগৎ তৈরি করে। শিশুদের স্থানিক যুক্তি ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ব্যাপকভাবে উন্নত করে। এটি অনেকটা ভার্চ্যুয়াল লেগো খেলার মতো, যেখানে কোনো গাইডলাইন থাকে না। ফোর্টনাইট বা অন্যান্য মাল্টিপ্লেয়ার গেম খেলার সময় কিশোর-কিশোরীরা আন্তর্জাতিক গেমারদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। একটি অভিন্ন লক্ষ্যের জন্য দলগতভাবে পরিকল্পনা করা ও দ্রুত পরিস্থিতিতে যোগাযোগ স্থাপন করা তাদের টিমওয়ার্ক ও যোগাযোগের দক্ষতা শক্তিশালী করে তোলে।

বিজ্ঞানীরা ভিডিও গেমের উপকারিতার পাশাপাশি ক্ষতিকর দিকসমূহ স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। অতিরিক্ত ভিডিও গেম খেলার সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো গেমিং ডিজঅর্ডার বা গেমিং আসক্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন এটিকে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ওরসোলে কিরালি জানান, রাতে অতিরিক্ত গেম খেললে ঘুমের ধরন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়, যা পরের দিন মনোযোগের অভাব ও বিরক্তির সৃষ্টি করে। আসক্তিমূলক গেমিংয়ের ক্ষেত্রে শিশুরা স্কুলের পড়া বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়। যখন কোনো গেম বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলার মাধ্যম হয়ে ওঠে এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে, তখন তা উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

সূত্র: সায়েন্স ডাইরেক্ট ডটকম, ওয়্যারড ডটকম

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাতিয়াতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যার পরে উপজেলার ওছখালী জিরো পয়েন্টে বিএনপি মনোনীত প্রাথী কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এবং হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আজিম অনুসারী হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ইফতেখার হোসেন বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় ওছখালী বাজারে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রাথী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের প্রার্থীতা পরিবর্তনের দাবিতে মশাল মিছিল কর্মসূচি দেয় সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের অনুসারীরা।” 

তিনি আরো বলেন, “সন্ধ্যার দিকে উপজেলার তমরদ্দি থেকে মশাল মিছিলে যোগ দিতে আজিম অনুসারী বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার ওছখালীর বাড়ির উদ্দেশ্যে আসতে থাকে। ওই সময় শামীম অনুসারীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এতে সাবেক সাংসদ আজিম অনুসারী প্রায় ১০জন নেতাকর্মী আহত হয়। পরে আজিম অনুসরাী নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে শামীম অনুসারীদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে শামীম অনুসারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। বর্তমানে আমাদের প্রায় ১০জন নেতাকর্মী উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।”

শামীম অনুসারী হাতিয়া পৌরসভা যুবদলের সদস্য সচিব কাউছার মোস্তফা বলেন, “ওছখালী বাজারের রেডট্রি হোটেলের সামনে থেকে ধানের শীষ মার্কার সমর্থনে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। ওই সময় উপজেলার তমরদ্দি থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আজিম অনুসারী নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে ওছখালি বাজারে আসে।” 

তিনি আরো বলেন, “একপর্যায়ে ওছখালি বাজার মোড়ে দুটি মিছিল মুখোমুখি হয়ে যায়। এ সময় আজিম অনুসারী নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ১০-১২জন নেতাকর্মী আহত হয়। পরবর্তীতে তারা শামীম অনুসারী হাতিয়া পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোকারম বিল্লাহ শাহদাতের বাসায় হামলা চালায় এবং ছররা গুলি ছোড়ে। ওই সময় সড়কে শামীম অনুসারীদের কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।” 

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, “দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে আহত হওয়ার কোন সংবাদ নেই।”

ঢাকা/সুজন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ