বাংলাদেশের হারে ভারতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক, নাইটও ভেবেছিলেন তিনি আউট
Published: 8th, October 2025 GMT
বাংলাদেশের ১৭৮ রান তাড়া করতে নেমেছিল ইংল্যান্ড। হিদার নাইটকে তিনে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় দ্বিতীয় ওভারে। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে নাইট দেখেছেন ৭৮ রান তুলতেই ইংল্যান্ডের নেই ৫ উইকেট। ১০৩ রানে সেটাই ৬ উইকেট। ইংল্যান্ড তখন হারের মুখে।
কিন্তু নাইটের অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস শেষ পর্যন্ত হতাশ করেছে বাংলাদেশকে। তাঁর দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে হারতে হয় নিগার সুলতানার দলকে। ধরুন, নাইট যদি দ্রুত আউট হতেন, তাহলে কি ইংল্যান্ড হারত? স্কোরবোর্ড দেখেই বলে দেওয়া যায়, সে সম্ভাবনাই বেশি ছিল। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুনও বলেছেন, ‘(হিদার নাইটের) ওই উইকেটটা কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা আমরা সবাই জানি। সিদ্ধান্তটি আমাদের পক্ষে এলে ম্যাচের ফল ভিন্ন হওয়ার সব রকম সম্ভাবনাই ছিল।’
সিদ্ধান্ত পক্ষে না আসা নিয়ে ফাহিমার হতাশার কারণ এতক্ষণে প্রায় সবারই জানা। গুয়াহাটিতে গতকাল রাতে শেষ হওয়া এ ম্যাচে নাইটের একটি ক্যাচ নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। টিভি আম্পায়ার ভারতের গায়াত্রী ভেনুগোপালান অকাট্য প্রমাণ না পাওয়ায় নাইটকে আউট দেননি। যদিও জয়ের পর নাইট নিজেই জানিয়েছেন, তিনিও ভেবেছিলেন আউট হয়েছেন।
প্রথমে ভেবেছি, এটা আউট ছিল। ভেবেছিলাম, বলটা ওপরেই ছিল এবং ক্যাচটা ন্যায্য তাই চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু টিভি আম্পায়ার অন্য সিদ্ধান্ত দেন। অবশ্যই একটু তো ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছিই।জয়ের পর ইংল্যান্ড তারকা হিদার নাইটহ্যামস্ট্রিংয়ের চোট কাটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফেরা ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেটের কিংবদন্তি নাইট এ ম্যাচে আসলে তিনবার বেঁচে গেছেন। তাঁর খেলা প্রথম বলেই আউটের আবেদন হয়েছিল। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন নিগার সুলতানাকে, মাঠের আম্পায়ার আউটও দেন কিন্তু রিভিউয়ে যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ায় আউটের সিদ্ধান্ত পাল্টান টিভি আম্পায়ার গায়াত্রী ভেনুগোপালান। সপ্তম ওভারে ব্যক্তিগত ৮ রানে মারুফার বলে এলবিডব্লু হন নাইট। এবারও মাঠের আম্পায়ার আউট দেন। কিন্তু নাইট আবারও রিভিউ নেওয়ার পর দেখা যায় বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেত—এ কারণে আউট দেননি টিভি আম্পায়ার।
ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন হিদার নাইট.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ দ র ন ইট আম প য় র উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
বীমা আইন ২০১০: সঠিক প্রয়োগ হলে বীমা খাতের উন্নয়ন সম্ভব
বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে বীমা খাতের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্ভব। বীমা আইন- ২০১০ এ বীমা কোম্পানিতে নিরীক্ষা, তদন্ত, প্রশাসক নিয়োগ, আইন লঙ্ঘন ও অর্থ আত্মসাতে দোষী ব্যক্তিদের অপসারণ ও আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধারের বিধান রাখা হয়েছে। ফলে বীমা খাত সংস্কারের জন্য প্রয়োজন বীমা আইন ২০১০ এর সঠিক প্রয়োগ। আর এ জন্য বীমা আইনের সংশোধন নয়, আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সদিচ্ছা।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি আয়োজিত বীমা আইন- ২০১০ সংশোধনী শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। সভা সঞ্চালনা করেন ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র সম্পাদক ও প্রকাশক মোস্তাফিজুর রহমান টুংকু।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা। সভায় ইন্স্যুরেন্স রিপোর্টার্স ফোরামের (আইআরএফ) সভাপতি গাজী আনোয়ার, বিআইপিডি’র মহাসচিব কাজী মো. মোরতুজা আলীসহ বিমা খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বীমা আইনের সংশোধনীতে তফসিল-১ তুলে দেওয়াসহ কোম্পানির চেয়ারম্যান নিয়োগ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিএফও এবং কোম্পানি সেক্রেটারি নিয়োগ অনুমোদনের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দেওয়া হলে কোম্পানি পরিচালনায় বিরূপ প্রভাব পড়বে। এতে পরিচালক বা নির্বাচিত চেয়ারম্যান- তাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্নের অযুহাতে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। যা সংস্কারের পরিবর্তে নতুন সংকট তৈরি করবে।
বক্তারা আরো বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বীমা খাত সংস্কারের কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি আইডিআরএ। তারা বীমা আইন ২০১০ এর সংশোধনী ছাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কারে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। লাইফ বীমা খাতের যেসব কোম্পানি তহবিল তছরুফ হয়েছে তা উদ্ধার, গ্রাহকদের বকেয়া দাবি পরিশোধ, তহবিল তছরুফে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নন-লাইফ বীমা খাতের অবৈধ কমিশন বন্ধ ও দক্ষ জনবল তৈরিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।
বক্তারা বলেন, বীমা আইন ২০১০ প্রণীত হয় ২০১০ সালে। এর মধ্যেই কি কারণে সংশোধনীর প্রয়োজন হলো- সেটিও স্পষ্ট নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠিত হয় ২০১০ সালে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখনো চলছে প্রেষণে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা। যাদের বেশিরভাগের-ই বীমা বিষয়ক অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বীমা আইন-২০১০ এর সঠিক প্রয়োগ হয়েছে কিনা- আইন সংশোধনের আগে সে বিষয়টি আরো ব্যাপকভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, বীমা কোম্পানি তদন্তের জন্য বীমা আইন ২০১০ এর ৪৮ ধারা, বিশেষ নিরীক্ষার জন্য ২৯ ধারা, প্রশাসক নিয়োগের জন্য ৯৫ ধারা, চেয়ারম্যান, পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপরাধে অপসারণ করার বিধান ৫০ ধারায় এবং বীমা কোম্পানির আত্মসাতকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য ১৩৫ ও ১৩৬ ধারায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিধানের সঠিক প্রয়োগ হলে বীমা খাতের বিদ্যমান সংকট নিরসন করা সম্ভব। তাই বীমা আইন ২০১০ সংশোধনীর এই প্রস্তাবনা আরো ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রস্তাবও করেন বক্তারা।
মূল প্রবন্ধে আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য (লাইফ) সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, “বীমা আইন-২০১০ -এ ১৬০টি ধারা আছে এবং প্রতিটি ধারায় কম-বেশি একাধিক উপধারা আছে। আইডিআরএ কর্তৃক আনিত সংশোধনী প্রস্তাবে মূল ১৬০ টি ধারার মধ্যে ৯৯টি মূল ধারা অপরিবর্তিত রেখেছে। কিন্তু সেগুলোর উপধারাগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকী ৬১টি ধারার উপধারাসহ তাদের পরির্তন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ১৬০টি ধারার মধ্যে- কয়েকটি বিলুপ্ত বা বাতিল প্রস্তাব করেছে। অধিকন্তু ৬৪ নতুন ধারা, উপ-ধারাসহ সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।”
বীমা আইনের সংশোধনীর বিষয়ে তিনি বলেন, “বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুধু যে বীমা শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ বা কন্ট্রোল করার জন্য তৈরি করা হয়েছে তা কিন্তু নয়। যেহেতু বীমা খাত অনুন্নত এবং অবহেলিত, জনগণ বীমা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বীমার জ্ঞান নেই- তাই এই শিল্পের বিকাশে নিয়ন্ত্রণের পাশাপশি উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনে বীমা উন্নয়নে কোন ধরনের প্রস্তাব করা হয় নাই।”
বীমা আইন ২০১০-এ সংশোধনী প্রস্তাবনার বিষয়ে তিনি বলেন, “বীমা আইন-২০১০ বীমাশিল্প নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবিত আইনে আরো ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ব্যাংকিং আইন-১৯৯১ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে যে ক্ষমতা ব্যবহার করে, বীমাশিল্প নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ একইরূপ ক্ষমতা ধারণ করতে চায়। কর্তৃপক্ষ নন-লাইফ বীমা কোম্পানির চেয়ে লাইফ বীমা কোম্পানিকে বেশি বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও পলিসিগ্রহীতার স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বিবেচনা করে পরিবর্তন চাচ্ছে। কিন্তু বীমা গ্রহীতার দাবি পরিশেধে ৯০ দিনের বিধান অপরিবর্তিত রেখেছে।”
বীমা আইন অমান্যকারীদের ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা জরিমানার প্রস্তাব করেছে। বীমা আইন-২০১০ এর মূল ধারার বিপরীতে যে সকল বিধি-প্রবিধান করা হয়েছে বা করতে হবে সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বীমা আইন-২০১০ এর তফসিল-১ বাদ দিয়েছে। এর পরিবর্তে কর্তৃপক্ষের সময় সময় নির্দেশনা দিবে তার প্রস্তাব করেছে।”
কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, “সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেসব সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তাই সংজ্ঞা যদি বুঝতে না পারা যায় তাহলে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। যেসব সংশোধন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা উন্নয়ন বান্ধব না, নিয়ন্ত্রণ বান্ধব। আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, উন্নয়নের গুরুত্ব কম দেওয়া হয়েছে, নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এই আইনের প্রবর্তন।”
ঢাকা/নাজমুল/এস