অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ প্রস্তুতিতে নেমে এসেছে এক অপ্রত্যাশিত ছায়া। দলের অধিনায়ক ও তারকা পেসার প্যাট কামিন্স এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। ফলে সিরিজ শুরুর মাত্র ছয় সপ্তাহ আগে তিনি বোলিং শুরু করার ছাড়পত্র পাননি। এর ফলে নভেম্বরের শেষের দিকে শুরু হতে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী অ্যাশেজ সিরিজে তার খেলা নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।
কামিন্সের পিঠের নিচের অংশে ল্যাম্বার বোন স্ট্রেস ইনজুরি ধরা পড়েছে। যা তার বোলিং কার্যক্রমকে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বশেষ স্ক্যানে কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও, চিকিৎসকরা এখনো তাকে বোলিং শুরু করার অনুমতি দেননি। এর ফলে ২১ নভেম্বর পার্থে শুরু হতে যাওয়া প্রথম টেস্ট তো বটেই, গোটা সিরিজেই তার অংশগ্রহণ এখন শঙ্কার মুখে।
আরো পড়ুন:
টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, সাইফের অভিষেক
র্যাংকিংয়ে ১৭ ধাপ এগিয়ে সেরা বিশে সাইফ, নাসুমের ৮৭ ধাপ উন্নতি
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে জানা গেছে, কামিন্সের পুনর্বাসন ধীরে এগোচ্ছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। প্রথম টেস্টে তাকে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত আসবে আরও কিছুদিন পর।
কামিন্স শেষবার বল করেছিলেন জুলাইয়ে, জ্যামাইকায় অস্ট্রেলিয়ার শেষ টেস্টে। সেপ্টেম্বরে তিনি জানিয়েছিলেন, অ্যাশেজের জন্য প্রয়োজনে ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত আছেন। প্রয়োজনে লাল ও সাদা বলের প্রস্তুতি ম্যাচ বাদ দিতে হলেও। কিন্তু সময় এখন ফুরিয়ে আসছে, এবং চিকিৎসক দল তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কোনো তাড়াহুড়ো করতে চাইছে না।
বর্তমানে তিনি শুধু পায়ের শক্তি বাড়ানোর ট্রেনিং করছেন। কিন্তু বোলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়ামগুলো এখনো করতে পারছেন না। এতে তার পুরোনো অ্যাঙ্কেল ও মাংসপেশির ইনজুরি ফিরে আসার ঝুঁকি বাড়ছে।
অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট জানে, তাড়াহুড়ো করে কামিন্সকে ফেরানো মানে আরও বড় ক্ষতি ডেকে আনা। আগেও বড় সিরিজের আগে তিনি দীর্ঘ পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মাঠে ফিরেছেন। গত বছর তিনি সীমিত ওভারের ইংল্যান্ড সফর বাদ দিয়েছিলেন কেবল ভারতের বিপক্ষে বর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের জন্য নিজেকে তৈরি করতে। এইবারও হয়তো তেমনই পরিকল্পনা, কিন্তু সময় এবার অনেক কম।
অ্যাশেজ সিরিজ শুরু হবে ২১ নভেম্বর পার্থে, এরপর টেস্ট হবে ব্রিসবেন (৪ ডিসেম্বর), অ্যাডিলেড (১৭ ডিসেম্বর), মেলবোর্ন (২৬ ডিসেম্বর) ও সিডনি (৩ জানুয়ারি)।
যদি কামিন্স প্রথম টেস্টে না খেলতে পারেন, তাহলে মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড ও স্কট বোল্যান্ড; এই তিন পেসার নেতৃত্ব দেবেন অস্ট্রেলিয়ার আক্রমণভাগে।
প্রথম দুই টেস্টের মাঝে আট দিনের বিরতি থাকায় বিশ্রামের সুযোগ থাকলেও, শেষ তিন টেস্টের মাঝে ব্যবধান মাত্র চার দিন। ফলে রোটেশন পলিসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ইংল্যান্ডে ২০২৩ অ্যাশেজে যেমন বিশ্রাম নেওয়ার পর ফিরে এসে দাপট দেখিয়েছিলেন মার্ক উড ও ক্রিস ওকস, অস্ট্রেলিয়াও এবার সেদিকেই নজর দেবে।
কামিন্সের অনুপস্থিতিতে ওভারলোড সামলানো হবে বড় চ্যালেঞ্জ। স্টার্ক ও হ্যাজলউড রয়েছেন ভারতের বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে, যা শুরু হবে ১৯ অক্টোবর। হ্যাজলউড আবার প্রথম দুই টি–টোয়েন্টিতেও থাকবেন।
বোল্যান্ড এরই মধ্যে ভিক্টোরিয়ার হয়ে শিল্ড ম্যাচে ৩৫ ওভার বল করেছেন, আরেকটি ম্যাচ খেলবেন বলেই ধারণা। অন্যদিকে মাইকেল নেসার ঘরোয়া ম্যাচে তাসমানিয়ার বিপক্ষে নিয়েছেন ৬ উইকেট, ফ্ল্যাট উইকেটে।
ব্রেন্ডন ডগেট হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি থেকে সেরে উঠছেন। আর শন অ্যাবট শিগগিরই ফিরবেন নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে খেলার জন্য।
যদি কামিন্স প্রথম টেস্টে না খেলেন, তাহলে স্টিভ স্মিথই নেতৃত্ব দেবেন অস্ট্রেলিয়াকে। ২০২১ সালের পর থেকে কামিন্সের অনুপস্থিতিতে তিনি ছয়বার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মোট ৪০ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সহ–অধিনায়ক ট্রাভিস হেড বিকল্প থাকলেও, এত বড় সিরিজে স্মিথের অভিজ্ঞতাকেই প্রাধান্য দেবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড এখনো আশা ছাড়ছে না। কামিন্সের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে এবং সিরিজ শুরুর আগমুহূর্তে তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে আপাতত সব নজর একটি প্রশ্নের দিকে- অ্যাশেজের সেই ঐতিহাসিক মঞ্চে কি দেখা যাবে প্যাট কামিন্সকে, নাকি দলের আত্মা হয়ে থাকবে কেবল তার অনুপস্থিতির ছায়া?
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম ট স ট র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দুই নতুন মুখ নিয়ে পার্থে নামবে অস্ট্রেলিয়া
পার্থে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের একাদশ ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের এই প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হবে পেসার ব্রেন্ডন ডগেট ও ব্যাটসম্যান জেক ওয়েদারাল্ডের। একাদশে জায়গা হারিয়েছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার বিউ ওয়েবস্টার। আগামীকাল শুরু হবে পার্থ টেস্ট।
পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন বোলিংয়ে ফেরায় স্বস্তি পেয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকেরা। প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজলউডের অনুপস্থিতিতে তাঁরা ভেবেছিলেন দলে হয়তো অতিরিক্ত বোলার সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু গ্রিন বোলিংয়ে ফেরায় চার পেসার পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া—মিচেল স্টার্ক, স্কট বোল্যান্ড, ক্যামেরন গ্রিন ও ব্রেন্ডন ডগেট।
মৌসুমের শুরুতে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে দারুণ ফর্মে ছিলেন মারনাস লাবুশেন। নিজের পছন্দের ব্যাটিং পজিশন তিনেই খেলবেন। পার্থের দ্রুতগতির উইকেটে দলে রাখা হয়েছে অভিজ্ঞ অফ স্পিনার নাথান লায়নকেও।
একই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুজন খেলোয়াড়ের অভিষেকের সর্বশেষ নজির এর আগে দেখা গিয়েছে ২০১৯ সালে গ্যাবায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে। সে ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ঝাই রিচার্ডসন ও কার্টিস প্যাটারসনের। অ্যাশেজে সর্বশেষ এমন কিছু দেখা গেছে ২০১০-১১ মৌসুমে। সেবার উসমান খাজা ও মাইকেল বিয়ারের অভিষেক ঘটেছিল সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে।
চোটে ছিটকে যাওয়া হ্যাজলউডের বদলি হিসেবে অভিষেক হবে ৩১ বছর বয়সী ডগেটের। এর অর্থ হলো অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট একাদশে প্রথমবারের মতো দুজন আদিবাসী খেলোয়াড়কে দেখা যাবে। মৌসুমের শুরুতে হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে ফেরার পর দারুণ ফর্মে আছেন ডগেট। ১৪.৬৯ গড়ে নিয়েছেন ১৩ উইকেট।
ওয়ার্নার গত বছর অবসর নেওয়ার পর ওপেনিংয়ে খাজার ষষ্ঠ সতীর্থ হবেন ওয়েদারাল্ড। পার্থে আজ স্থানীয় সময় সকালে শ্যাডো অনুশীলনের পাশাপাশি ঐচ্ছিক অনুশীলনও করেন ৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
দল থেকে বাদ পড়ায় ওয়েবস্টার নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। এ বছরের শুরুতে সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ৭ টেস্টে চারটি ফিফটি পেয়েছেন ওয়েবস্টার। সব কটি ফিফটিই ছিল কঠিন কন্ডিশনে। তাসমানিয়া দলে ওয়েদারাল্ডের এই সতীর্থ গত সপ্তাহে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেট নেন।
ব্যাটিং অর্ডারে এবার একটু পরিবর্তন এনেছে অস্ট্রেলিয়া। ৬ নম্বর পজিশনে ফিরে গেছেন গ্রিন। এই পজিশনে তিনি টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনে ব্যাট করেছেন।
পার্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া একাদশ: উসমান খাজা, জেক ওয়েদারাল্ড, মারনাস লাবুশেন, স্টিভেন স্মিথ (অধিনায়ক), ট্রাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটকিপার), মিচেল স্টার্ক, নাথান লায়ন, স্কট বোল্যান্ড ও ব্রেন্ডন ডগেট।