প্রায় আট দশক আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে জন্ম নিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। এত দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা আজও এক কঠিন ও জরুরি কাজ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দুই দেশের জনগণ এখনো ঘৃণা, সন্দেহ ও সামরিক উন্মাদনায় বন্দী—যেন একে অপরের রক্ত দেখেই তারা আশ্বস্ত হতে চায়।

এ বছরের ১৪-১৫ আগস্টে যখন দুই দেশ স্বাধীনতা উদ্‌যাপন করেছে, তখনো মে মাসের সীমান্ত সংঘর্ষের তীব্রতা কাটেনি। দুই পাশ থেকেই ‘আমরাই জিতব’ ধরনের বিদ্রূপাত্মক স্লোগান উঠেছে। যদিও অনেকেই ঘৃণার এই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, তবু ভারত ও পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই জানে না যে তাদের ইতিহাস এক ছিল এবং তাদের ভবিষ্যৎও আসলে একসঙ্গে গড়া যেতে পারে।

রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউয়ের মুখে আমি এখানে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাব্য কিছু ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরতে চাই। শুধু ভারত ও পাকিস্তান মিলিয়েই এখানে প্রায় ১৭০ কোটি মানুষ বাস করে। যদি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালকেও ধরা হয়, তাহলে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটিতে।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান আরও বিপজ্জনক এক যুগে ঢুকে পড়েছে১১ মে ২০২৫

সবচেয়ে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ হচ্ছে—আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, সেটাই আরও গভীরভাবে ও কঠিনভাবে টিকে থাকবে। হিন্দুত্ববাদ, উগ্র ইসলামবাদ আর বিদেশিবিদ্বেষী জাতীয়তাবাদের নানা রূপ তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে।

ভারতের ক্ষেত্রে এর মানে হবে—বিজেপি, আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) প্রভাব সমাজে আরও শক্তিশালী হবে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এর মানে হবে—সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আরও পোক্ত হবে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো সেনাবাহিনীর ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, আর ধর্মীয় ডানপন্থী শক্তিগুলো রাস্তায় নেমে বড় আন্দোলন গড়ে তোলার সামর্থ্য অর্জন করবে। কিন্তু আমাদের এই বিপজ্জনক বাস্তবতাকে কখনোই স্থায়ী ধরে নেওয়া উচিত নয়।

ভারতে হিন্দিভাষী উত্তর ভারতের রাজনৈতিক প্রাধান্য ভাঙতে হবে। কাশ্মীরি, নাগা, আদিবাসী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর ঐতিহাসিক নিপীড়ন স্বীকার করতে হবে এবং দক্ষিণ ভারতের প্রগতিশীল নেতাদের জন্য আরও জায়গা তৈরি করতে হবে।

দুই দেশেই রাষ্ট্রবিরোধী সহিংসতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চল বহুদিন ধরে নিপীড়নের শিকার, সেখানে এগুলো বাড়বে। ‘সন্ত্রাস দমন’-এর নামে রাষ্ট্র আরও ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে। এর ফলে ঘৃণা, ভয় ও বিভাজনের রাজনীতি সমাজের একমাত্র চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। সেখানে শান্তি, সহাবস্থান কিংবা মানবিক সংলাপের কোনো জায়গা থাকবে না।

তবু এই ‘অধঃপতনের দৌড়’-এর গতি কিছু সময়ের জন্য থামাতে পারে যদি উদার বা মাঝারি ধারার রাজনীতি কিছুটা পুনরুজ্জীবিত হয়।

ভারতে এর অর্থ হতে পারে কংগ্রেস ও তার সহযোগী কয়েকটি ছোট দল ক্ষমতায় ফিরে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের কিছু দিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পাকিস্তানে এর মানে হতে পারে বর্তমান ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ (অর্থাৎ সেনা ও বেসামরিক প্রশাসনের মিশ্র রূপ) বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক গণ-আন্দোলন দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুনট্রাম্পকে যে কৌশলে বশে আনলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান১২ ঘণ্টা আগে

তবে এই উদার কেন্দ্রের সীমাবদ্ধতা গুরুতর। তারা প্রচলিত উন্নয়ন মডেল—যা জমি কেড়ে নেওয়া, পরিবেশ ধ্বংস ও অন্ধ ভোগবাদে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে—তার কোনো বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিতে চায় না। ফলে এই মধ্যপন্থী প্রতিরোধও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। এর ফলে প্রতিক্রিয়াশীল, সামরিকবাদী ও অতি-ডানপন্থী শক্তিগুলো আরও গভীরভাবে রাষ্ট্রের ভেতরে শিকড় গাড়বে।

সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত কিন্তু একমাত্র টেকসই ভবিষ্যৎ হতে পারে—জনগণনির্ভর ঐক্যের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি ও যৌথ সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা। এটা তখনই সম্ভব, যখন শ্রমজীবী মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী প্রগতিশীল শক্তিগুলো একসঙ্গে আসবে। কাজটি সহজ নয়, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার বাম ও প্রগতিশীল রাজনীতি এখন প্রায় নিস্তেজ অবস্থায় আছে। তবু আমাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। স্থবির বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ না করে নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখতে হবে।

আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা০৬ আগস্ট ২০২৫

এই নতুন রাজনীতির জন্য বামপন্থী ঐতিহ্যবাহী শক্তিগুলোর (যারা শ্রেণিসংগ্রাম ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি করে) দরকার জাতিগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা গড়ে তোলা। না হলে এমন কোনো ঐক্যবদ্ধ শক্তি তৈরি হবে না, যা অতি ডানপন্থা ও উদার কেন্দ্র—দুয়েরই আধিপত্য ভাঙতে পারে।

ভারতে হিন্দিভাষী উত্তর ভারতের রাজনৈতিক প্রাধান্য ভাঙতে হবে। কাশ্মীরি, নাগা, আদিবাসী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর ঐতিহাসিক নিপীড়ন স্বীকার করতে হবে এবং দক্ষিণ ভারতের প্রগতিশীল নেতাদের জন্য আরও জায়গা তৈরি করতে হবে।

পাকিস্তানে বালুচ, পশতুন, গিলগিট-বালটিস্তানি, কাশ্মীরি, সিন্ধি ও সিরাইকি জনগণের জাতীয় প্রশ্নগুলোকে শ্রেণিনির্ভর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুনভারত হামলা চালিয়ে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিল২০ মে ২০২৫

সবশেষে দরকার একটি আঞ্চলিক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থ—লাদাখ থেকে বালটিস্তান, দুই কাশ্মীর থেকে সিন্ধু ও রাজস্থান, দুই পাঞ্জাব থেকে ডুরান্ড রেখার দুই পাশের পশতুন, এমনকি সবচেয়ে নিপীড়িত বালুচ ও নাগাদের স্বার্থ এক ও অভিন্ন হিসেবে দেখা হবে।

শুধু এই মানবিক ঐক্যই পারে সাম্রাজ্যবাদের সব রূপকে ইতিহাসের আবর্জনার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলতে।

আসিম সাজ্জাদ আখতার কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রগত শ ল র র জন ত র জন য র ওপর আরও প

এছাড়াও পড়ুন:

দাপুটে জয়ে ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনার প্রত্যাবর্তন

ফেরান তোরেসের দুর্দান্ত জোড়া গোল আর শুরুর দিকেই রবার্ট লেভানদোভস্কির আঘাত; সব মিলিয়ে দুই বছর পর ন্যু ক্যাম্পে ফিরে এসে একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিতেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল বার্সেলোনা। ১০ জনের বিলবাওকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগায় টানা তিন জয়ের আনন্দে ভাসল কাতালানরা।

নবায়ন কাজের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ন্যু ক্যাম্পে এটি ছিল বার্সার প্রথম ম্যাচ। শুরুতেই যেন সেই অপেক্ষার সব ক্ষত মুছে দিলেন লেভানদোভস্কি। ম্যাচের মাত্র চার মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে বল কাড়ার পর নিচু শটে উনাই সিমোনকে পরাস্ত করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

দ্রুততম ৪৪ গোলে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপ্পে

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে হারাল রিয়াল

এরপর দানি ওলমোর প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেয় বিলবাওয়ের রক্ষণ দেয়াল। লামিন ইয়ামালের শটও রুখে দেন সিমোন। অন্যদিকে আক্রমণে উঠেও সুযোগ নষ্ট করেন উনাই গোমেজ ও নিকো উইলিয়ামস। আয়েরিক লাপোর্তের হেডও পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

এরপর ফেরান তোরেস ও ফিরমিন লোপেজও গোলের খোঁজে সক্রিয় হন। গার্সিয়া চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরেই বিলবাওয়ের নিশ্চিত গোল ঠেকান।

হাফটাইমের ঠিক আগে ইয়ামালের দারুণ বাঁকানো পাসে সুযোগ পান তোরেস। নিচু শটে সিমোনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। সিমোন ছুঁয়ে দিলেও গোল ঠেকাতে পারেননি।

বিরতির পর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় লোপেজ দারুণ এক প্রচেষ্টায় সোজা শটে তৃতীয় গোলটি করেন। ৫৪ মিনিটে লোপেজের ওপর বিপজ্জনক ট্যাকল করে ওইহান সানসেট লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে বিলবাওয়ের দুর্ভাগ্য আরও ঘনীভূত হয়।

এরপর ডানি ভিভিয়ান হুমকি তৈরি করলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে ওলমোর শটও অল্পের জন্য বাইরে যায়। ভিভিয়ান পরে আরেকবার হেডে গোল করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তবে গার্সিয়ার গ্লাভসে আটকে যায় বল।

অবশেষে ৯০ মিনিটে ইয়ামালের সূক্ষ্ম পাস ধরে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ম্যাচের শেষ শব্দটি লিখে দেন ফেরান তোরেস।

দুই বছর পর ঘরের মাঠে ফিরল বার্সেলোনা। আর তোরেস-ইয়ামালরা যেন সেই আনন্দকে ফুটিয়ে তুললেন মাঠজুড়ে গোলের আতশবাজিতেই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ