ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোন দিকে
Published: 8th, October 2025 GMT
প্রায় আট দশক আগে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে জন্ম নিয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। এত দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা আজও এক কঠিন ও জরুরি কাজ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দুই দেশের জনগণ এখনো ঘৃণা, সন্দেহ ও সামরিক উন্মাদনায় বন্দী—যেন একে অপরের রক্ত দেখেই তারা আশ্বস্ত হতে চায়।
এ বছরের ১৪-১৫ আগস্টে যখন দুই দেশ স্বাধীনতা উদ্যাপন করেছে, তখনো মে মাসের সীমান্ত সংঘর্ষের তীব্রতা কাটেনি। দুই পাশ থেকেই ‘আমরাই জিতব’ ধরনের বিদ্রূপাত্মক স্লোগান উঠেছে। যদিও অনেকেই ঘৃণার এই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, তবু ভারত ও পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই জানে না যে তাদের ইতিহাস এক ছিল এবং তাদের ভবিষ্যৎও আসলে একসঙ্গে গড়া যেতে পারে।
রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদের নতুন ঢেউয়ের মুখে আমি এখানে দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাব্য কিছু ভবিষ্যৎ চিত্র তুলে ধরতে চাই। শুধু ভারত ও পাকিস্তান মিলিয়েই এখানে প্রায় ১৭০ কোটি মানুষ বাস করে। যদি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালকেও ধরা হয়, তাহলে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২০০ কোটিতে।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান আরও বিপজ্জনক এক যুগে ঢুকে পড়েছে১১ মে ২০২৫সবচেয়ে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ হচ্ছে—আমরা এখন যে অবস্থায় আছি, সেটাই আরও গভীরভাবে ও কঠিনভাবে টিকে থাকবে। হিন্দুত্ববাদ, উগ্র ইসলামবাদ আর বিদেশিবিদ্বেষী জাতীয়তাবাদের নানা রূপ তরুণ প্রজন্মকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে।
ভারতের ক্ষেত্রে এর মানে হবে—বিজেপি, আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) প্রভাব সমাজে আরও শক্তিশালী হবে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এর মানে হবে—সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আরও পোক্ত হবে, মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো সেনাবাহিনীর ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, আর ধর্মীয় ডানপন্থী শক্তিগুলো রাস্তায় নেমে বড় আন্দোলন গড়ে তোলার সামর্থ্য অর্জন করবে। কিন্তু আমাদের এই বিপজ্জনক বাস্তবতাকে কখনোই স্থায়ী ধরে নেওয়া উচিত নয়।
ভারতে হিন্দিভাষী উত্তর ভারতের রাজনৈতিক প্রাধান্য ভাঙতে হবে। কাশ্মীরি, নাগা, আদিবাসী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর ঐতিহাসিক নিপীড়ন স্বীকার করতে হবে এবং দক্ষিণ ভারতের প্রগতিশীল নেতাদের জন্য আরও জায়গা তৈরি করতে হবে।দুই দেশেই রাষ্ট্রবিরোধী সহিংসতা আরও বাড়বে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চল বহুদিন ধরে নিপীড়নের শিকার, সেখানে এগুলো বাড়বে। ‘সন্ত্রাস দমন’-এর নামে রাষ্ট্র আরও ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে। এর ফলে ঘৃণা, ভয় ও বিভাজনের রাজনীতি সমাজের একমাত্র চালিকা শক্তি হয়ে উঠবে। সেখানে শান্তি, সহাবস্থান কিংবা মানবিক সংলাপের কোনো জায়গা থাকবে না।
তবু এই ‘অধঃপতনের দৌড়’-এর গতি কিছু সময়ের জন্য থামাতে পারে যদি উদার বা মাঝারি ধারার রাজনীতি কিছুটা পুনরুজ্জীবিত হয়।
ভারতে এর অর্থ হতে পারে কংগ্রেস ও তার সহযোগী কয়েকটি ছোট দল ক্ষমতায় ফিরে এসে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের কিছু দিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। পাকিস্তানে এর মানে হতে পারে বর্তমান ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ (অর্থাৎ সেনা ও বেসামরিক প্রশাসনের মিশ্র রূপ) বিরুদ্ধে একটি ব্যাপক গণ-আন্দোলন দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুনট্রাম্পকে যে কৌশলে বশে আনলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান১২ ঘণ্টা আগেতবে এই উদার কেন্দ্রের সীমাবদ্ধতা গুরুতর। তারা প্রচলিত উন্নয়ন মডেল—যা জমি কেড়ে নেওয়া, পরিবেশ ধ্বংস ও অন্ধ ভোগবাদে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে—তার কোনো বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচি দিতে চায় না। ফলে এই মধ্যপন্থী প্রতিরোধও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হবে। এর ফলে প্রতিক্রিয়াশীল, সামরিকবাদী ও অতি-ডানপন্থী শক্তিগুলো আরও গভীরভাবে রাষ্ট্রের ভেতরে শিকড় গাড়বে।
সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত কিন্তু একমাত্র টেকসই ভবিষ্যৎ হতে পারে—জনগণনির্ভর ঐক্যের মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি ও যৌথ সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা। এটা তখনই সম্ভব, যখন শ্রমজীবী মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী প্রগতিশীল শক্তিগুলো একসঙ্গে আসবে। কাজটি সহজ নয়, কারণ দক্ষিণ এশিয়ার বাম ও প্রগতিশীল রাজনীতি এখন প্রায় নিস্তেজ অবস্থায় আছে। তবু আমাদের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। স্থবির বাস্তবতার কাছে আত্মসমর্পণ না করে নতুন রাজনীতির স্বপ্ন দেখতে হবে।
আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা০৬ আগস্ট ২০২৫এই নতুন রাজনীতির জন্য বামপন্থী ঐতিহ্যবাহী শক্তিগুলোর (যারা শ্রেণিসংগ্রাম ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি করে) দরকার জাতিগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা গড়ে তোলা। না হলে এমন কোনো ঐক্যবদ্ধ শক্তি তৈরি হবে না, যা অতি ডানপন্থা ও উদার কেন্দ্র—দুয়েরই আধিপত্য ভাঙতে পারে।
ভারতে হিন্দিভাষী উত্তর ভারতের রাজনৈতিক প্রাধান্য ভাঙতে হবে। কাশ্মীরি, নাগা, আদিবাসী ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর ঐতিহাসিক নিপীড়ন স্বীকার করতে হবে এবং দক্ষিণ ভারতের প্রগতিশীল নেতাদের জন্য আরও জায়গা তৈরি করতে হবে।
পাকিস্তানে বালুচ, পশতুন, গিলগিট-বালটিস্তানি, কাশ্মীরি, সিন্ধি ও সিরাইকি জনগণের জাতীয় প্রশ্নগুলোকে শ্রেণিনির্ভর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনভারত হামলা চালিয়ে যেভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়িয়ে দিল২০ মে ২০২৫সবশেষে দরকার একটি আঞ্চলিক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থ—লাদাখ থেকে বালটিস্তান, দুই কাশ্মীর থেকে সিন্ধু ও রাজস্থান, দুই পাঞ্জাব থেকে ডুরান্ড রেখার দুই পাশের পশতুন, এমনকি সবচেয়ে নিপীড়িত বালুচ ও নাগাদের স্বার্থ এক ও অভিন্ন হিসেবে দেখা হবে।
শুধু এই মানবিক ঐক্যই পারে সাম্রাজ্যবাদের সব রূপকে ইতিহাসের আবর্জনার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলতে।
আসিম সাজ্জাদ আখতার কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রগত শ ল র র জন ত র জন য র ওপর আরও প
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা ১৫ বছর কষ্ট করেছি সেই কষ্টের ফসল কিন্তু সামনে নির্বাচন : সাখাওয়াত
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আপনারা জানেন দেশে একটি অন্তবর্তী কালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এই অন্তবর্তী কালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো এদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা।
সেই সুষ্ঠু নির্বাচনে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে হে নির্বাচনে আমরা ধানের শীষের মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু সেই নির্বাচনকে আমাদেরকে অনেক কিছুই ভাবলে চলবে না।
আপনাদেরকে অবশ্যই কিন্তু খরগোশ ও কচ্ছপের কিচ্ছা মনে আছে। খরগোশ ও কচ্ছপের যে দৌড় হয়েছিল। সেই দৌড়ে কিন্তু খরগোশ মধ্যবতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর কচ্ছপ কিন্তু আস্তে আস্তে গিয়ে সে কিন্তু বিজয় হয়েছিল। আর আমরা কিন্তু সেই খরগোশ এর মতনই আচরণ করছি। আমরা যেন সেই খরগোশের আচরণ না করি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির অন্তর্গত সদর থানা বিএনপির আওতাধীন গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্রীয় মেরামতে ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেল নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন গোগনগর ইউনিয়নের সৈয়দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটরিয়ামে এই কর্মীসভার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আমরা মনে হয় বর্তমানে ঘুমিয়ে আছি সেই ঘুম ভেঙ্গে আমাদেরকে সজাগ হতে হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি তথা ধানের শীষকে বিজয় করতে হলে আগামী কয়েক মাস আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। আর সকল ভেদাভেদ ভুলে কি আমাদের নেতাকর্মীদেরকে এক হতে হবে।
আমরা যদি এক হতে না পারি তাহলে কিন্তু অন্য দল বিজয়ী ছিনিয়ে নিবে। এটা কিন্তু আমাদের সবাইকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আমরা ১৫ বছর কষ্ট করেছি সেই কষ্টের ফসল কিন্তু সামনে নির্বাচন। সেই ফসল যদি আমাদের জন্য অন্য কেউ ঘরে তুলে নেয় তাহলে সেটা কিন্তু আমাদের জন্য হবে অনেক কষ্টের হবে।
যদি অন্য কেউ নির্বাচিত হয় তাহলে সে গত ১৫ বছরের মতন আমাদের উপর আবারও নির্যাতন আসবে। জেল জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সুতরাং আপনাদের প্রতি অনুরোধ এই গোগনগর হলো বিএনপির ঘাঁটি। গোগনগর ইউনিয়নের মানুষ বিএনপিকে অনেক ভালোবাসে। আপনারা গ্রুপ নিয়ে না জড়িয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকেন ,বিএনপি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে থাকেন এবং ধানের শীষের পক্ষে থাকেন। আগামী নির্বাচনে যাকে দল থেকে নির্বাচিত করে ধানের শীষের প্রার্থী দিবে তার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করে বিজয় করবেন।
গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়াজীর সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম সরদার।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন চঞ্চল, মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মনির মল্লিক,গোগনগর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কবির হোসেন শিকদার, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক খলিলুর রহমান, সহ- সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ ফকির, সাংগঠনিক সম্পাদক মঈনুল হাসান লিমন, মো. লিটন, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন, গোগনগর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক রাসেল আহমেদ মন্টু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, বিএনপি নেতা জামাল হোসেন, আব্দুল লতিফ, কবির হোসেন, গোগনগর ইউনিয়ন মহিলা দলের সভানেত্রী পপি আক্তারসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।