চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে একইদিনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর ১টায় চাকসু নির্বাচন কমিশনে প্রথম লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয় ছাত্রদল। এরপর বিকেল ৫টায় লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয় ছাত্রশিবির।

আরো পড়ুন:

চাকসু: ছাত্রদলের ৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা

চাকসু: ছাত্রশিবিরের ১২ মাসে ৩৩ ইশতেহার

ছাত্রদলের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বুধবার ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো.

ইব্রাহীম রনি দুপুরে শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনের (নতুন কলা ভবন) ইতিহাস বিভাগের ৩২৩ নম্বর কক্ষে প্রায় ২০ মিনিট ধরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছেন, যা চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। 

অভিযোগের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “শিবিরের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। এ নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। তিনি প্রায় ২০ মিনিট ধরে শ্রেণীকক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও উপস্থিত শিক্ষকরা সেটাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, “চবিতে যেন বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না হয়। অভিযোগের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা নির্বাচন কমিশনকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে শিবিরের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনি বলেন, “আমি আমার বিভাগের কাজে গিয়েছিলাম, নির্বাচনী কোনো প্রচার চালাতে যাইনি। সেখানে কিছু শিক্ষার্থী আমাদের অ্যালামনাইয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিল, আমি শুধু সেটার উত্তর দিয়েছি। এছাড়া, অভিযোগপত্রে যে ২০ মিনিট বক্তব্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মাত্র কয়েক মিনিট ছিলাম সেখানে।”

অপরদিকে, ছাত্রশিবিরের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বুধবার আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এলএলএম শ্রেণীকক্ষে অনুষ্ঠিত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলাকালে আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন (ছাত্রদলের কর্মী) ক্লাসে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচার চালান।

এ সময় তিনি চাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারমূলক বক্তব্য প্রদান ও লিফলেট বিতরণ করেন। এছাড়া অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ও উত্তেজনাকর মন্তব্য করেন, যা চলমান পাঠদান কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে।

অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই ফ্যাকাল্টির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলে ঘটনার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যাবে। এছাড়াও, আমাদের কাছে ঘটনাটির ভিডিও প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে, যা ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সচিব বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, “আইন অনুষদে আমাদের প্রার্থীরা যখন প্রচার চালাতে যায়, সেখানে তারা একজন ছাত্রদল কর্মীকে ক্লাসে ঢুকে লিফলেট নিয়ে ছাত্রদলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাতে দেখে। আমাদের কাছে এর ভিডিওসহ প্রমাণ আছে।”

তিনি বলেন, “শুধু প্রচার নয়, সেখানে তিনি বিভিন্ন দল ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও উস্কানিমূলক বক্তব্যও দিয়েছে। এ নিয়ে আমরা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আশা করি, নির্বাচন কমিশন এর যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।”

অভিযোগের বিষয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি নাঈম উদ্দিন নামে ছাত্রদলের কাউকে চিনতে পারছি না। তবে যে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক, আমরা এটাই চাই।”

এ নিয়ে চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, “আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ে তাদের দুটি অভিযোগপত্র পেয়েছি। আমরা অভিযোগপত্রটি আচরণবিধি লঙ্ঘন কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছি। অভিযোগের যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

চাকসু নির্বাচনী আচরণবিধিমালার ৪ এর (ঙ) বিধিতে নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, প্রতিটি অনুষদের যেখানে ক্লাস-পরীক্ষা হয়, সেখানে কিংবা আশে পাশে সভা সমাবেশ করা যাবে না। ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়- এমন কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন- কোনো ধরনের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না। সেদিকে সব প্রার্থী বা তার সমর্থকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র আচরণব ধ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু: ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ভোটারদের অর্থ প্রদানের অভিযোগ শিবিরের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ভোটারদের সরাসরি অর্থ প্রদানের অভিযোগ করেছে ছাত্রশিবির।

অভিযোগে জানা যায়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আরবি বিভাগ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৫ হাজার টাকা বিতরণ করে ছাত্রদল।

আরো পড়ুন:

রাবিতে নবীন শিক্ষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু

রাকসু: অভিনব সাজে নির্বাচনী প্রচারে এক প্রার্থী

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর নির্বাচনে ছাত্রদলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে স্মারকলিপি প্রদান করেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আসন্ন রাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদলের প্যানেল একাধিক ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে। এতে নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতি অসঙ্গত আচরণ প্রদর্শিত হচ্ছে। 

ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে ক্লাসরুমে প্রবেশ করে প্রচার চালাচ্ছেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর জিএস প্রার্থী নাফিউল ইসলাম জীবন আরবি বিভাগের ২০২৪–২৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে (শহীদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবন, কক্ষ ৩০৬) প্রচার চালান। এছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর আরবি বিভাগের ২০২৪–২৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের ৫ হাজার টাকা প্রদান করে তারা।

পাশাপাশি, নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে প্রচার চালানো এবং ভোটার নন এমন ব্যক্তিদের প্রচারে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়েও অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, যা নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত নিয়মাবলীর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান শেষে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, “শুরু থেকেই কিছু প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আসছেন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগেই অনেকে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচজনের বেশি নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে না। কিন্তু দেখা গেছে, অনেক প্রার্থী বহর নিয়ে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে রঙিন লিফলেট বিতরণ করেছেন এবং ক্লাসরুমের ভিতরে গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘন।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক রাখার স্বার্থে এর আগে কোনো লিখিত অভিযোগ দিইনি। তবে আমরা আবরার ফাহাদ স্মরণে ক্যাম্পাসে নিপীড়নবিরোধী দিবস পালনের অনুমতি চেয়েছিলাম, যা নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলে অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু ছাত্রদল নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়াই আজ বিকেলে নিজ উদ্যোগে কর্মসূচি আয়োজন করেছে। আমরা এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।”

এ বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “কয়েকবার নির্বাচন পেছানোর কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসন ক্যাম্পাসে যে অস্থিরতা ছিল, তার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে অনেকগুলোরই সমাধান করেছে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে অতিরিক্ত বাজেট প্রয়োজন হবে। তাই সব প্রার্থীদেরও অতিরিক্ত খরচ লাগবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা ১৬ তারিখে নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর আচরণবিধি প্রকাশ করার আহ্বান তথ্য উপদেষ্টা
  • শিবিরের ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ছাত্রদলের
  • ছাত্রশিবিরের করা অভিযোগের প্রমাণ চাইলেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী
  • এক প্রার্থীর প্রচারণায় মা, নির্বাচন কমিশন বলল, আচরণবিধির লঙ্ঘন
  • রাকসু: ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ভোটারদের অর্থ প্রদানের অভিযোগ শিবিরের
  • চাকসু: ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ছাত্রীসংস্থার নানা অভিযোগ
  • আচরণবিধি লঙ্ঘন ও ছাত্রদলের ‘অযাচিত হস্তক্ষেপের’ অভিযোগ ছাত্রীসংস্থার