পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন বলেছেন, “তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা এখনো পুঁজিবাজারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ, যা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির কারণ হয়ে আছে।”

বুধবার (৮ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) যৌথ উদ্যোগে হাইব্রিড পদ্ধতিতে আয়োজিত এক শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

আরএকে সিরামিকসের একটি উৎপাদন লাইন সাময়িক বন্ধ

বিনিয়োগকারীদের বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিএসইসির দুই বিধিমালা অনুমোদন

ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ ২০২৫ এর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ডিবিএ'র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিএসই’র চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিএসই’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুন নাহার।

সাইফুদ্দিন বলেন, “আমাদের পুঁজিবাজারে একটি সম্পূর্ণ ইনভেস্টমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। আমরা এখন কোথায় আছি, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের বর্তমান অবস্থা, কাঠামোগত ঘাটতি এবং জবাবদিহিতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।”

বিএসইসি’র কমিশনার বলেন, “পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত কাঠামোয় রয়েছে এক্সচেঞ্জ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারগণ যেমন সিডিবিএল, সিসিবিএল ইত্যাদি। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখনো যথাযথ যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাব আছে। এখন সময় এসেছে সব প্রতিষ্ঠানের একসাথে সমন্বয় করে কাজ করার।”

তিনি বলেন, “বিএসইসি সম্প্রতি একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে-এক্সট্যান্ডেড বিজনেস রিপোর্টিং মডেল (এসবিআরএম) ফরম্যাটে আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা চালু করার।এটি একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেশিন-রিডেবল ফরম্যাট, যা আইএফআরএস স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে তৈরি। এতে গবেষণা, বিশ্লেষণ, এবং নজরদারি অনেক সহজ হবে।এটি করতে হলে অডিটরসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতার প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “বাস্তবতা হচ্ছে বাজারের অংশগ্রহণ কমছে, ফলে সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে।যারা পুঁজিবাজারে আছেন তাদের সম্পদ বাড়ছে না, বরং বাজারের আকার বছরে প্রায় ৩ শতাংশ হারে সঙ্কুচিত হচ্ছে, যা দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির বিপরীত চিত্র। এখনই সময় যৌথভাবে দায়িত্ব নেওয়ার।”

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি এখন আমাদেরকে নতুনভাবে গড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে। আগে যেসব কাজে সীমাবদ্ধতা ছিল, আজ তা সম্ভব। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আমরা যদি উদ্যোগ নিই, তাহলে পুরো কাঠামোকে বদলে দেওয়া সম্ভব। আসুন, আমরা সবাই মিলে সেটি বাস্তবায়ন করি।”

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে নতুন নতুন প্রোডাক্ট আসছে। সাথে সাথে পুঁজিবাজারে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রযুক্তিতে বড় বড় বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু সেখান থেকে সুফল খুব ভালভাবে পাইনি। একটা বড় কারণ হলো পুঁজিবাজারের স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সম্বয়ের অভাব। আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারের টেকনোলজি আর্কিটেক্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের জন্য যদি অবাধ তথ্য প্রবাহ না থাকে তবে প্রযুক্তির মাধ্যমে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তার অনেক কিছু সিস্টেম ধরতে পারছে না।এজন্য অনেক অনিচ্ছাকৃত ননকমপ্লায়েন্স হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে।”

তিনি বলেন, “ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট নির্ভর করে তার আন্ডারলাইন অ্যাসেটের উপর। ডিএসই’র প্রোডাক্টগুলোর অধিকাংশই হলো ইক্যুইটি। একটি বড় অংশের কোম্পানির তথ্যগুলো সঠিকভাবে আসছে না। সেক্ষেত্রে পুরো দেশের ইকোসিস্টেম পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। আমাদের কার্যক্রমগুলোকে টেকনোলজি ব্যবহার করে ডিজিটাইলাইজ করতে পারলে স্বচ্ছতা বৃদ্দি পাবে। সেক্ষেত্রে শুধু পুঁজিবাজার নয় ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব আদায়সহ আরো সব ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করে অর্থনীতিকে আরো দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।”

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, “শেয়ারবাজারে অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশনের পরও কিছু অনিয়ম ও প্রতারণা ঘটেছে, যা ইঙ্গিত করে যে প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ ও তদারকি এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।”

তিনি বলেন, “প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি; তবে তা সফল করতে রিপোর্টিং, সারভেলেন্স ও মনিটরিং সিস্টেম শক্তিশালী করা জরুরি।”

তিনি বলেন, “পুঁজিবাজারের ইকোসিস্টেমে এখনো কিছু ‘মিসিং লিংক’ রয়েছে, যা স্ক্যামের ঝুঁকি বাড়ায়। এজন্য তথ্যের সঠিক ব্যবহার, যাচাই ও ডিজিটাল টুলস ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।”

হাবীবুর রহমান উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৭৫ শতাংশের বেশি মানুষের আর্থিক জ্ঞান সীমিত, ফলে অনেক বিনিয়োগকারী গুজবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হন।”

ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, “বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও সুরক্ষা প্রচার এবং ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা বৃদ্ধি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আমরা আমাদের বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। সুশাসন ও জবাবদিহিতার মান বজায় রাখতে এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো শক্তিশালী করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সিডিবিএলর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আব্দুল মোতালেব চৌধুরী বলেন, “উদীয়মান প্রযুক্তির ব্লকচেইন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মতো উদ্ভাবনী বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। সিডিবিএল ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বেশ কিছু কার্যক্রম চালু করেছে, যার মধ্যে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য বিনিয়োগকারীদের ই-মেইল ও মোবাইল নম্বরে প্রেরণ অন্যতম।”

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকলে ডিবিএ'র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, “অগ্রসরমান প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ফাইন্যান্স বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। সচেতন ও তথ্যসমৃদ্ধ বিনিয়োগকারীই একটি টেকসই, স্বচ্ছ ও কার্যকর বাজার গঠনের মূল চালিকাশক্তি।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ দ্রুত বাড়ছে এবং ডিজিটাল ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বিনিয়োগকে আরো সহজ করেছে। তবে এখনও অনেক বিনিয়োগকারী রিয়েল-টাইম তথ্যের সীমিত প্রাপ্যতা, আর্থিক পণ্যের জটিলতা, কম আর্থিক সাক্ষরতা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্য ও প্রতারণার ঝুঁকির মুখে রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন, ডেটা অ্যানালিটিক্স ও রোবো-অ্যাডভাইজরের মতো উদীয়মান প্রযুক্তি পুঁজিবাজারে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এসব প্রযুক্তি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে তথ্যভিত্তিক ও নিরাপদ করছে, একই সঙ্গে বাজারে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করছে।”

সমাপণী বক্তব্যে ডিএসই’র পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.

) মোহাম্মদ কামরুজ্জাান বলেন, “আমরা যে সকল টেকনোলজি ব্যবহার করি সেগুলো আমাদের নিজেদের তৈরি করা শিখতে হবে। সেটি যদি আমরা না করি আমরা প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের অধিনস্ত হয়ে থাকবো। আমাদের নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে এ সকল কাজে যুক্ত করতে হবে। তাহলেই আমরা প্রযুক্তিতে উন্নত হতে পারবো, যা আমাদের দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

সিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাই্ফুর রহমান মজুমদারের সঞ্চালনায় প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সিএফএ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আসিফ খান, আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং আইসিএবির, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রাক্তন সিনিয়র সচিব শুভাশীষ বোস।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ল য টফর ম স ড ব এল অন ষ ঠ ন ব যবস থ ড এসই র ল ইসল ম র রহম ন ব যবহ র ব এসইস আর থ ক আম দ র ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আর্থিক জালিয়াতি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ উদযাপন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগাগাঁওয়ে বিএসইসির মাল্টি পারপাস হলে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

আরো পড়ুন:

বন্ডহোল্ডাররা পেলেন পূবালী ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডের কুপন

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দিলেন ওয়াজিদ

বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনারবৃন্দ, বিএসইসির কর্মকর্তাবৃন্দ, পুঁজিবাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ কর্কমর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরাম ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি) ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ পালন করে আসছে।

আসাদুজ্জামান আরো বলেন, ~বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত করে একটি আইন করা উচিত। একইসাথে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত বিষয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন রুলসকে সহজবোধ্য করে একটি জায়গাতে আনা উচিত। এর মাধ্যমে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইনী প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস পাবে।” 

তিনি আরো বলেন, “দেশে আর্থিক জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জালিয়াতি ও লুটের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে। একইসাথে জালিয়াতি ও লুটের অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা তথা: দুদক, বিএফআইইউ ইত্যাদির সাথে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসি কমিশনার মো. আলী আকবর। 

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জিসান হায়দার এবং আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাইদ। প্রেজেন্টেশনটিতে প্রতারণা ও জালিয়াতির প্রধান ধরণ বা প্রকারসমূহ, জালিয়াতি শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের বিএসইসির ভিত্তিসমূহ, রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক, কঠোর বাজার নজরদারি ও সনাক্তকরণ, এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন, উত্তরণ বা উন্নতির জন্য সুপারিশ এবং বিনিয়োগকারীর অন্তর্দৃষ্টি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। প্রেজেন্টেশনে প্রতারণা ও জালিয়াতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত প্যানেল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। প্যানেল আলোচনায় আইওএসসিও ঘোষিত ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ ২০২৫ এর প্রধান বার্তাগুলো তুলে ধরা হয় এবং দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন ও দক্ষ বিনিয়োগকারীতে পরিণত করার নিমিত্তে বিএসইসি ও পুঁজিবাজার  সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন উদ্যোগ, কার্যক্রম ও প্রচেষ্টার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। 

এসময় কীভাবে প্রতারণা এবং জালিয়াতি রোধ করা যায়, কী ধরনের জালিয়াতি বেশি ঘটছে ও সেগুলো থেকে পরিত্রাণের উপায়সমূহ এবং বিনিয়োগকারী বা ক্ষতিগ্রস্তদের কিভাবে ক্ষতিপূরণ করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’- এই দুটি আইনকে একত্রিত করতে কমিশন ইতোমধ্যে কাজ করছে এবং সমস্ত সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত রুলসকে এক জায়গায় আনতেও কাজ চলছে। অনিয়ম ও জালিয়াতি রূখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেই বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্পতম সময়ে বিগত সময়ের অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছিল। উক্ত কমিটির পেশকৃত ১২টি প্রতিবেদনের মধ্যে কমিশন এরইমধ্যে ৭টি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”


মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপক এর ভূমিকা ও দায়িত্বকে আরো সুসংহত করা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের জন্য কমিশন কাজ করছে বলে জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান।

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ রূখতে বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারের সকল ব্রোকারদের অসংশোধনযোগ্য সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের আওতায় এনেছে। তিনি দেশের পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়ন এবং উন্নত পুঁজিবাজার গড়তে সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তা কামনা করেন রাশেদ মাকসুদ।

বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করা এবং বিনিয়োগে নিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তাদের জন্য একটি প্রতারণামুক্ত আধুনিক ও সুরক্ষিত পুঁজিবাজার গড়ার উপর জোর দেন তিনি। এছাড়া দেশে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা আরো ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিনিয়োগকারীদের বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিএসইসির দুই বিধিমালা অনুমোদন
  • ‘আর্থিক জালিয়াতি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োজন’