মোবাইল ফোন এখন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, নামাজ চলাকালে কারও মোবাইল ফোন বেজে ওঠে, যা ইমাম ও জামাতের মনোযোগ নষ্ট করে এবং অন্যদের খুশু-খুজু (নিবিষ্টতা) ভঙ্গ করে।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই দ্বিধায় পড়ে যান, এসময় মোবাইল বন্ধ করা যাবে কি না, নাকি নামাজ ভেঙে যাবে?

নামাজে অল্প কাজের অনুমতি শরিয়তে

ইসলামি শরিয়াহ নামাজে অতি সামান্য ও প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুমতি দিয়েছে, যদি তা মনোযোগ নষ্ট না করে বা নামাজের আসল কাঠামো ভেঙে না দেয়। রাসুল (সা.

)-এর আমলে সাহাবিরা নামাজে হালকা কাজ করতেন, সাহাবিরা নামাজে সেজদার জায়গা থেকে কাঁকর সরিয়ে নিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৪৬)।

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, “যদি কোনো কাজ স্বল্প হয় এবং ইবাদতের স্বভাব পরিবর্তন না করে, তবে তা নামাজ নষ্ট করে না।” (শারহু মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃ. ২৩৫)

অতএব, নামাজে একটি হাত নেড়ে মোবাইল সাইলেন্ট বা বন্ধ করা শরিয়তসম্মত ও অনুমোদিত কাজ, কারণ এটি অপ্রয়োজনীয় নয়; বরং ইবাদতের সংরক্ষণমূলক কাজ।

আরও পড়ুনঘড়ির চাপে কি আমাদের ইবাদতের ক্ষতি হচ্ছে২২ মে ২০২৫খুশু ও খুজুর গুরুত্ব

কোরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা নামাজে বিনম্রভাবে মনোযোগী।” (সুরা মুমিনুন, আয়াত: ১–২)

ইবন কাসির বলেন, “খুশু মানে এমন মনোযোগ যা মানুষকে বাহ্যিক বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে।” (তাফসির ইবনু কাসির, খণ্ড ৫, পৃ. ৪৫৬)

সুতরাং, যদি কারও মোবাইল বেজে ওঠে এবং সে সেটি বন্ধ না করে, ফলে অন্যদের মনোযোগ নষ্ট হয়, তাহলে সে নামাজের খুশু বিনষ্ট করছে—যা ইসলাম নিরুৎসাহিত করেছে।

হাদিসের আলোকে

রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের নামাজ নষ্ট করে, সে অন্যায়ের কাজ করে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৭৫)

মোবাইলের শব্দ দ্বারা অন্যের নামাজ নষ্ট করা এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানি বলেন, “যে কোনো কাজ, যা অন্যের খুশু বিনষ্ট করে, তা নামাজের শিষ্টাচারবিরুদ্ধ।” (ফাতহুল বারি, খণ্ড ২, পৃ. ৩৭২)

ফিকহি মতামত

হানাফি মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী, যদি নামাজে হালকা নড়াচড়া (যেমন—হাতে মোবাইল বন্ধ করা) প্রয়োজনীয় কারণে হয়, তবে নামাজ বাতিল হয় না। (আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, খণ্ড ১, পৃ. ১১৪)

শাফেয়ি ও হাম্বলি আলেমদের মতে, অল্প নড়াচড়া, যা নামাজের রূপ নষ্ট করে না, তা জায়েজ। তবে অপ্রয়োজনীয় হলে তা মাকরূহ। (আল-মুগনি, ইবন কুদামাহ, খণ্ড ২, পৃ. ৪০৫)

আরও পড়ুননামাজ যেভাবে শারীরিক–মানসিক সুস্থতা বাড়ায়১৪ আগস্ট ২০২৫

প্রয়োজনীয় নির্দেশনা

নামাজের আগে মোবাইল সাইলেন্ট বা ভাইব্রেটে রাখুন। এটি দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক এবং অন্যের ইবাদত রক্ষার একটি আদব।

যদি নামাজ চলাকালীন মোবাইল বেজে ওঠে, তাহলে হাত বা আঙুল সামান্য নেড়ে তা বন্ধ করে দিন; এতে নামাজ ভাঙে না। (ইসলামিক ফিকহ একাডেমি, জেদ্দা, ফতোয়া নং ২৪৫/২০০৯)

ইমাম বা মুআজ্জিনের মোবাইল বাজলে তাদের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য; তবে চেষ্টা করতে হবে, যেন তা দ্রুত বন্ধ করা হয়, যাতে জামাতের খুশু বিনষ্ট না হয়।

অন্যের মোবাইল বাজলে তাকে হাত দিয়ে সংকেত দেওয়া বা তাকবিরে আওয়াজ তোলা যাবে না, কারণ এতে নিজের নামাজ বিঘ্নিত হতে পারে।

এই ছোট্ট বিষয়ে ইসলাম আমাদের বড় শিক্ষা দেয়, ইবাদতে মনোযোগ রক্ষা করা শুধু নিজের দায়িত্ব নয়, বরং সমাজের প্রতি দায়িত্বও। প্রযুক্তি ব্যবহার ইসলাম-বিরোধী নয়; তবে তা নিয়ন্ত্রিত ও সচেতনভাবে ব্যবহার করতে হবে।

রাসুল (সা.) বলেছেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহ সুন্দর এবং তিনি প্রত্যেক কাজকে সুন্দরভাবে করাটা পছন্দ করেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৯৫৫)

অতএব, ইবাদতের ক্ষেত্রেও আমাদের আচরণ হতে হবে পরিশীলিত ও পরিপূর্ণ সৌন্দর্যমণ্ডিত।

নামাজে মোবাইল বেজে উঠলে আতঙ্কিত বা বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। বরং সংযতভাবে এক হাতে মোবাইল সাইলেন্ট বা বন্ধ করা উচিত, যাতে অন্যদের খুশু নষ্ট না হয়।

শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি অনুমোদিত এবং দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই—এটি বাস্তব জীবনের ক্ষুদ্রতম বিষয়েও শালীনতা, জ্ঞান ও ভারসাম্যের শিক্ষা দেয়।

আরও পড়ুনএআই কি কোরআনের সঠিক অনুবাদ করতে পারে০৮ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন য র আম দ র মন য গ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

দাপুটে জয়ে ক্যাম্প ন্যুতে বার্সেলোনার প্রত্যাবর্তন

ফেরান তোরেসের দুর্দান্ত জোড়া গোল আর শুরুর দিকেই রবার্ট লেভানদোভস্কির আঘাত; সব মিলিয়ে দুই বছর পর ন্যু ক্যাম্পে ফিরে এসে একেবারে রাজকীয় ভঙ্গিতেই নিজেদের উপস্থিতি জানান দিল বার্সেলোনা। ১০ জনের বিলবাওকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে লা লিগায় টানা তিন জয়ের আনন্দে ভাসল কাতালানরা।

নবায়ন কাজের কারণে দীর্ঘ বিরতির পর ন্যু ক্যাম্পে এটি ছিল বার্সার প্রথম ম্যাচ। শুরুতেই যেন সেই অপেক্ষার সব ক্ষত মুছে দিলেন লেভানদোভস্কি। ম্যাচের মাত্র চার মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে বল কাড়ার পর নিচু শটে উনাই সিমোনকে পরাস্ত করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

দ্রুততম ৪৪ গোলে রোনালদোর রেকর্ড ভাঙলেন এমবাপ্পে

মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনাকে হারাল রিয়াল

এরপর দানি ওলমোর প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেয় বিলবাওয়ের রক্ষণ দেয়াল। লামিন ইয়ামালের শটও রুখে দেন সিমোন। অন্যদিকে আক্রমণে উঠেও সুযোগ নষ্ট করেন উনাই গোমেজ ও নিকো উইলিয়ামস। আয়েরিক লাপোর্তের হেডও পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।

এরপর ফেরান তোরেস ও ফিরমিন লোপেজও গোলের খোঁজে সক্রিয় হন। গার্সিয়া চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরেই বিলবাওয়ের নিশ্চিত গোল ঠেকান।

হাফটাইমের ঠিক আগে ইয়ামালের দারুণ বাঁকানো পাসে সুযোগ পান তোরেস। নিচু শটে সিমোনকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। সিমোন ছুঁয়ে দিলেও গোল ঠেকাতে পারেননি।

বিরতির পর মাত্র তিন মিনিটের মাথায় লোপেজ দারুণ এক প্রচেষ্টায় সোজা শটে তৃতীয় গোলটি করেন। ৫৪ মিনিটে লোপেজের ওপর বিপজ্জনক ট্যাকল করে ওইহান সানসেট লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে বিলবাওয়ের দুর্ভাগ্য আরও ঘনীভূত হয়।

এরপর ডানি ভিভিয়ান হুমকি তৈরি করলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। পাল্টা আক্রমণে ওলমোর শটও অল্পের জন্য বাইরে যায়। ভিভিয়ান পরে আরেকবার হেডে গোল করতে উদ্যত হয়েছিলেন, তবে গার্সিয়ার গ্লাভসে আটকে যায় বল।

অবশেষে ৯০ মিনিটে ইয়ামালের সূক্ষ্ম পাস ধরে ঠান্ডা মাথার ফিনিশিংয়ে ম্যাচের শেষ শব্দটি লিখে দেন ফেরান তোরেস।

দুই বছর পর ঘরের মাঠে ফিরল বার্সেলোনা। আর তোরেস-ইয়ামালরা যেন সেই আনন্দকে ফুটিয়ে তুললেন মাঠজুড়ে গোলের আতশবাজিতেই।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ