চার গুলিতে থেমে গেলে শতাব্দীর সেরা কণ্ঠ
Published: 9th, October 2025 GMT
সালটা ১৯৪০। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছে এক বছর আগে। যুক্তরাজ্যের আকাশে অনবরত চক্কর দিচ্ছে হিটলারের যুদ্ধবিমান। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। প্রতিদিন বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে আসছে শত শত মৃত্যুর মিছিল।
ওই বছরের আজকের দিনে, ৯ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের বন্দর শহর লিভারপুলের নিউক্যাসল রোডের একটি ছোট ফ্ল্যাটে জন্ম হয়েছিল জন লেননের। বাবা আলফ্রেড লেনন (ফ্রেডি লেনন নামেই পরিচিত) সে সময় লিভারপুলে ছিলেন না। নাবিক বাবাকে আগেই জাহাজে করে পাড়ি দিতে হয়েছিল অন্য দেশে।
মা জুলিয়া ছেলের নাম রাখলেন জন উইনস্টন লেনন। তিনি যে চার্চিলের ভক্ত ছিলেন, এই নামেই তা পরিষ্কার। কিন্তু স্বভাবে আমোদপ্রিয় ছিলেন জুলিয়া। তিনি একাকী এই সন্তানকে বড় করতে চাইলেন না। ওদিকে বাবা ফ্রেডির জাহাজ তখন শত্রুদেশের কবলে। কারাগারে যেতে হলো তাঁকে। জুলিয়ার সঙ্গে ফ্রেডির বিচ্ছেদ ঘটে গেল। শিশু লেননের বয়স তখন চার বছর। মা আরেকটা বিয়ে করলেন।
মায়ের বিয়ের পর লেননের আশ্রয় হলো খালা মিমির কাছে। মিমি-জর্জ দম্পতির সন্তান ছিল না। তাই আদর-আপ্যায়নের কমতি হলো না লেননের। তবে খালা মিমি স্নেহবৎসল হলেও ছিলেন কঠোর নিয়মপন্থী। অনেকটা মায়ের ঠিক উল্টো। প্রথমে ডোভডেল প্রাইমারি স্কুল, এরপর কেয়ারি হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন লেনন।
কীভাবে এল সংগীতসত্তাপ্রশ্ন হলো, লেননের মধ্যে সংগীতসত্তা এল কোথা থেকে? এর উত্তর, তাঁর মা ও বাবা দুজনই ছিলেন শিল্পী। দুজনই ভালো ব্যাঞ্জো, উকুলেলে বাজাতে পারতেন। মা-ই শিখিয়েছিলেন ছোট্ট লেননকে। মা নতুন সংসার পাতলেও নিয়মিত ছেলেকে দেখতে যেতেন। ছেলের শখ-আবদার পূরণের চেষ্টা করতেন যথাসাধ্য। একবার স্কুলে থাকতেই লেনন মায়ের কাছে একটি গিটার কিনে দেওয়ার আবদার করলেন। তরুণ বয়সে গিটার পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন লেনন। সারাক্ষণ পড়ে থাকতেন গিটার নিয়ে।
ভালো মাউথ অর্গান বাজাতে পারতেন লেনন। স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটিতে লিভারপুল থেকে এডিনবরা যেতেন। বাসে জানালার পাশে বসে মাউথ অর্গান বাজাতে বাজাতে লম্বা পথটা শেষ হতো তাঁর।
লেনন কোনো গানের স্কুলে পড়েননি। আলাদা করে তাঁর কোনো গানের শিক্ষকও ছিল না। ছোটবেলা থেকেই ছবি আকার প্রতি তাঁর ছিল বিশেষ ঝোঁক। তাই ১৯৫৭ সালে ১৭ বছর বয়সে ভর্তি হলেন লিভারপুল আর্ট কলেজে।
দুনিয়া তখন এলভিস প্রিসলির জাদুতে মাতোয়ারা। (এই শিল্পীও অকালপ্রয়াত। বেঁচে ছিলেন মোটে ৪২ বছর।) লেননও তাঁর বেজায় ভক্ত। এরই মধ্যে লিভারপুলের ম্যাথিউ স্ট্রিটের দ্য কাভার্ন ক্লাবে, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৫৭ সালে, গাওয়া শুরু করলেন লেনন ও তাঁর দুই বন্ধু পল ম্যাকার্টনি ও জর্জ হ্যারিসন। তাঁরা দুজনই লিভারপুলের বাসিন্দা। তবে তাঁরা পড়তেন ভিন্ন কলেজে।
লেননের দ্য বিটলসের দল–১৯৬৪ সাল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ৬ ডিসেম্বর
অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরির প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গে বাবরি মসজিদ তৈরির ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবির। এবার মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন ঘোষণা করেছেন ওই বিধায়ক।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩তম বর্ষপূর্তি, অর্থাৎ আগামী ৬ ডিসেম্বর মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙ্গায় বাবরি মসজিদের অনুকরণে একটি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের ওই বিধায়ক। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে কয়েক লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছে হুমায়ুন।
আরো পড়ুন:
কুষ্টিয়া সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক
অভিনয় ছেড়ে ধর্মে মনোযোগী অভিনেত্রী
শনিবার গণমাধ্যমের সামনে হুমায়ুন কবীর বলেন, “চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। মসজিদটি সম্পূর্ণ হতে তিন বছর সময় লাগবে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রায় দুই লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মঞ্চে ৪০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন। আমি সবাইকে আমন্ত্রণ জানাবো। কেউ যদি আসতে চান সেটা তার ইচ্ছা, না আসতে চাইলেও কোনো অসুবিধা নেই।”
গতবছর, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর রাজ্য বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়েই বাবরি মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হুমায়ূন।
বছর ঘুরলেই আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিল (সম্ভাব্য) মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলের মুসলিম বিধায়কের এই ঘোষণা নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগও তুলেছে বিজেপি।
তবে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে, মসজিদ বানানোতে দোষের কী আছে?
বিজেপি নেতার রাহুল সিনহার অভিযোগ, হুমায়ুন কবীর এই ইস্যুকে খামোকাই রাজনৈতিক করে তুলছেন।
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু ভোট ম্যানেজ করার জন্য দীঘায় পুরী মন্দির বানিয়েছেন, দার্জিলিংয়ে মহাকালের মন্দির বানাচ্ছেন এবার মুর্শিদাবাদে মুসলিম ভোট ম্যানেজ করার জন্য বাবরি মসজিদ বানাচ্ছেন। আমরা চাইনা মন্দির মসজিদ নিয়ে এই বাংলায় মানুষের মধ্যে বিভাজন হোক। আমাদের একটাই দাবি, যাই করুন বিভাজন করবেন না। আমরা হিন্দু মুসলমান মিলেমিশে থাকতে চাই।”
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ