আল্লাহ জানেন কিন্তু বাধ্য করেন না
Published: 9th, November 2025 GMT
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কাজ করি, কথা বলি। কিন্তু কেউ কি জানেন আমরা কী করব? আল্লাহ তায়ালা সবকিছু জানেন—অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে ঘিরে আছে, কিন্তু এই জ্ঞান কখনো জোর করে আমাদের পথে চালায় না।
এটাকে ঠিক একটা আয়নার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা দেখায় আমরা কী করছি বা করবে, কিন্তু আমাদের করতে বাধ্য করে না। তাই বলা হয়, আল্লাহর জ্ঞান শুধু প্রকাশকারী, আমাদের জন্য জবরদস্তিকারী কিছু নয়।
যদি আল্লাহর জ্ঞান জোর করে কোনো কাজ করাত, তাহলে তা অন্যায় হত। কিন্তু আল্লাহ সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ, তিনি সৃষ্টিকে ন্যায় ও সত্যের ওপর গড়েছেন। তিনি আমাদের সেই ন্যায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
কিছু লোক আজও ভুল করে বলেন, আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন না, শুধু ঘটনা ঘটার পর জানেন। তারা বলেন, এতে আল্লাহকে অন্যায় থেকে মুক্ত রাখা যায়। কিন্তু এভাবে তারা আল্লাহকে প্রকারান্তরে অজ্ঞ বলে ফেলেন।কিছু লোক আজও ভুল করে বলেন, আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন না, শুধু ঘটনা ঘটার পর জানেন। তারা বলেন, এতে আল্লাহকে অন্যায় থেকে মুক্ত রাখা যায়। কিন্তু এভাবে তারা আল্লাহকে প্রকারান্তরে অজ্ঞ বলে ফেলেন।
কোরআনের অনেক আয়াত এই ভুল খণ্ডন করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসিতে বলা হয়, ‘তিনি জানেন যা তাদের সামনে ও পিছনে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫)
অর্থাৎ অতীতের কাজ ও ভবিষ্যতের কাজ সবই তাঁর জানা। এই কথা অনেক সুরায় এসেছে। সুরা রুমের শুরুতে আল্লাহ বলেন, রোমানরা পরাজিত হয়েছে, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তারা জয়ী হবে। (সুরা রুম, আয়াত: ২-৪)
ঠিক তাই হয়েছে। তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে রোমানরা পারস্যকে হারায়। এটা প্রমাণ করে আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন।
আরও পড়ুন“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”০১ অক্টোবর ২০২৫সুরা লাহাবে আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর পরিণতি বলা হয়েছে, তারা কুফরিতে মরবে, জাহান্নামে যাবে (সুরা লাহাব, আয়াত: ১-৫)। ঠিক তাই হয়েছে।
জিবরীল (আ.
জিবরীলের এই সংবাদ আল্লাহর ওহি, যা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে মহানবীকে।
সুরা ফাতহে বলা হয়, পিছনে পড়ে থাকা বেদুঈনরা বলবে, আমাদের সম্পদ ও পরিবার আমাদের ব্যস্ত রেখেছে, আমাদের জন্য ক্ষমা চাও (সুরা ফাতহ, আয়াত: ১১)। দেখা গেল তারা ঠিক তা–ই বলেছে। আয়াত শেষ হয় ‘আল্লাহ তোমাদের কাজের খবর রাখেন’। সুরা হজ্জে ‘আল্লাহ জানেন তোমরা কী করছ’ (সুরা হজ্জ, আয়াত: ৬৮)।
আরবিতে ‘বর্তমান ক্রিয়া’ (মুজারে) এটা ভবিষ্যতকেও বোঝায়। সুরা লুকমানে বলা হয়েছে, কেয়ামতের সময়, বৃষ্টি, গর্ভের সন্তান, আগামীকালের উপার্জন, মৃত্যুর স্থান– সব আল্লাহ জানেন (সুরা লুকমান, আয়াত: ৩৪)। সুরা আনআমে এসেছে ‘গায়েবের চাবি তাঁর কাছে’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৫৯)।
এটাকে ঠিক একটা আয়নার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা দেখায় আমরা কী করছি বা করবে, কিন্তু আমাদের করতে বাধ্য করে না।সুরা বাকারায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জানেন তোমরা তাদের স্মরণ করবে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৫)। সুরা মুজ্জাম্মিলে ‘জানেন তোমরা গণনা করতে পারবে না’, ‘জানেন তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হবে’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ২০)।
সময় আল্লাহর সৃষ্টি, মানুষ সময়ের অধীন, কিন্তু আল্লাহ নন। তাঁর জ্ঞান সময়কে অতিক্রম করে যায়। ‘আল্লাহ সবকিছু জানেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮২)। এখানে ‘আলিমুন’ শব্দটি স্থায়ী জ্ঞান বোঝায়। সুরা ইয়াসিনে এসেছে ‘আমি জানি তারা গোপন করে ও প্রকাশ করে’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৭৬)। সুরা তাওবায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ গায়েবসমূহ জানেন’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৭৮)।
সুরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, ‘লিয়া’লামান্নাল্লাহু’—আল্লাহ জানবেন সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদীদের (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৩)।
উপরের এই সবগুলো আয়াতে ‘জানা’ মানে প্রকাশ করা, পরীক্ষা করে দেখানো। যাতে সত্য প্রকাশ পায়, মোনাফেক ধরা পড়ে।
আরও পড়ুনআল-গাফফার: এই নামে আল্লাহ ক্ষমার অপার সমুদ্র১১ জুলাই ২০২৫পরীক্ষা মানে জিহাদ, জাকাত, ধৈর্য, পাপ ত্যাগ—এ-ধরনের কাজে মোনাফেকের কৃপণতা, ভীরুতা প্রকাশ পেয়ে যায়। একইভাবে সুরা আনকাবুতে পরে ‘আল্লাহ জানবেন ইমানদার ও মোনাফেকদের’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ১১)। যদি শুধু জ্ঞান মানে নেওয়া হয়, তাহলে আয়াতের আগে ‘আল্লাহ কি জানেন না অন্তরে যা আছে?’—এর সঙ্গে অসঙ্গতি হয়।
তাই ‘জানা’ মানে প্রকাশ করা মাত্র। সুরা হাক্কায় আছে, ‘আমি জানি তোমাদের মধ্যে মিথ্যাবাদী আছে’ (সুরা হাক্কা, আয়াত: ৪৯)। সুরা কাফে এসেছে ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি, জানি তার অন্তরের ফিসফিসানি’ (সুরা কাফ, আয়াত: ১৬)।
অনেক আয়াতে আছে “লিনা’লামা”—যাতে জানি কে রাসুল অনুসরণ করে (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৩), কোন দল সঠিক গণনা করে (সুরা কাহফ, আয়াত: ১২), মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল কারা। (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩১)
এসব মানে প্রকাশ করা। হাদিসে আছে, কেউ জান্নাতের কাজ করে, কিন্তু শেষে জাহান্নামে যাবে, কারণ তার অন্তরে নেফাক ছিল, যা পরে প্রকাশ পায় (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৫২)
মানুষের সুযোগ আছে পরিবর্তনের। পাপ করে শাস্তি পাওয়ার আগে তওবা করলে, দোয়া করলে, সদকা দিলে শাস্তি উঠে যায়। হাদিসে আছে ‘দোয়া ছাড়া কিছু নিয়তি পরিবর্তন করে না।’এতে মোনাফেকের প্রতারণা রোধ হয়, সত্যের জয় হয়।
মানুষের সুযোগ আছে পরিবর্তনের। পাপ করে শাস্তি পাওয়ার আগে তওবা করলে, দোয়া করলে, সদকা দিলে শাস্তি উঠে যায়। হাদিসে আছে ‘দোয়া ছাড়া কিছু নিয়তি পরিবর্তন করে না’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২১৩৯)। ‘গোপন সদকা আল্লাহর ক্রোধ নিভায়, আত্মীয়তা রক্ষা আয়ু বাড়ায়’ (আল-মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস: ৬২৫৪)। পাপ করলে রিজিক বন্ধ হয় (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৭৩৮৪)। আল্লাহ মুছে দেন যা চান, স্থির করেন যা চান (সুরা রাদ, আয়াত: ৩৯)।
ওমর (রা.) বলেছেন, ভালো কাজে ভালো, খারাপে শাস্তি (সুরা জাসিয়া, আয়াত: ১৫) এটা সাধারণ ব্যাপার, অলৌকিক কিছু নয়। ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে’ (সুরা রাদ, আয়াত: ১১)।
পথভ্রষ্ট হলে আল্লাহ তাকে সংকীর্ণ জীবন দেন, যাতে ফিরে আসে (সুরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪-১২৭)। যাকে হেদায়েত দিতে চান, তার অন্তর প্রশস্ত করেন; যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, সংকীর্ণ করেন (সুরা আনআম, আয়াত: ১২৫)।
পথভ্রষ্টদের বলুন, ‘হে ইমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর, সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন, পাপ মাফ করবেন’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৭০-৭১)।
সুতরাং আল্লাহর জ্ঞান আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয় না, বরং দায়িত্ব বাড়ায়। চলুন, সচেতন হয়ে ভালো পথে চলি।
আরও পড়ুনযে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না২৮ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ জ ন ন আল ল হ ত আনক ব ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আল্লাহ জানেন কিন্তু বাধ্য করেন না
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, কাজ করি, কথা বলি। কিন্তু কেউ কি জানেন আমরা কী করব? আল্লাহ তায়ালা সবকিছু জানেন—অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। তাঁর জ্ঞান সবকিছুকে ঘিরে আছে, কিন্তু এই জ্ঞান কখনো জোর করে আমাদের পথে চালায় না।
এটাকে ঠিক একটা আয়নার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা দেখায় আমরা কী করছি বা করবে, কিন্তু আমাদের করতে বাধ্য করে না। তাই বলা হয়, আল্লাহর জ্ঞান শুধু প্রকাশকারী, আমাদের জন্য জবরদস্তিকারী কিছু নয়।
যদি আল্লাহর জ্ঞান জোর করে কোনো কাজ করাত, তাহলে তা অন্যায় হত। কিন্তু আল্লাহ সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ, তিনি সৃষ্টিকে ন্যায় ও সত্যের ওপর গড়েছেন। তিনি আমাদের সেই ন্যায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
কিছু লোক আজও ভুল করে বলেন, আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন না, শুধু ঘটনা ঘটার পর জানেন। তারা বলেন, এতে আল্লাহকে অন্যায় থেকে মুক্ত রাখা যায়। কিন্তু এভাবে তারা আল্লাহকে প্রকারান্তরে অজ্ঞ বলে ফেলেন।কিছু লোক আজও ভুল করে বলেন, আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন না, শুধু ঘটনা ঘটার পর জানেন। তারা বলেন, এতে আল্লাহকে অন্যায় থেকে মুক্ত রাখা যায়। কিন্তু এভাবে তারা আল্লাহকে প্রকারান্তরে অজ্ঞ বলে ফেলেন।
কোরআনের অনেক আয়াত এই ভুল খণ্ডন করা হয়েছে। আয়াতুল কুরসিতে বলা হয়, ‘তিনি জানেন যা তাদের সামনে ও পিছনে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫)
অর্থাৎ অতীতের কাজ ও ভবিষ্যতের কাজ সবই তাঁর জানা। এই কথা অনেক সুরায় এসেছে। সুরা রুমের শুরুতে আল্লাহ বলেন, রোমানরা পরাজিত হয়েছে, কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে তারা জয়ী হবে। (সুরা রুম, আয়াত: ২-৪)
ঠিক তাই হয়েছে। তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে রোমানরা পারস্যকে হারায়। এটা প্রমাণ করে আল্লাহ ভবিষ্যৎ জানেন।
আরও পড়ুন“আল্লাহ ধনী, তোমরা দরিদ্র”০১ অক্টোবর ২০২৫সুরা লাহাবে আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর পরিণতি বলা হয়েছে, তারা কুফরিতে মরবে, জাহান্নামে যাবে (সুরা লাহাব, আয়াত: ১-৫)। ঠিক তাই হয়েছে।
জিবরীল (আ.) নবীজিকে বলেছেন, উবাই ইবনে খালাফ কাফির অবস্থায় মরবে। সে পচা হাড় নিয়ে এসে বলেছিল, এটা কে জীবিত করবে? নবীজি বললেন, ‘হ্যাঁ, আল্লাহ তোমাকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং জাহান্নামে দেবেন’। উহুদ যুদ্ধে নবীজি তাকে হত্যা করেন, সে কাফিরই অবস্থায়ই মারা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয় সুরা ইয়াসিনের আয়াত (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৭৮)
জিবরীলের এই সংবাদ আল্লাহর ওহি, যা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে মহানবীকে।
সুরা ফাতহে বলা হয়, পিছনে পড়ে থাকা বেদুঈনরা বলবে, আমাদের সম্পদ ও পরিবার আমাদের ব্যস্ত রেখেছে, আমাদের জন্য ক্ষমা চাও (সুরা ফাতহ, আয়াত: ১১)। দেখা গেল তারা ঠিক তা–ই বলেছে। আয়াত শেষ হয় ‘আল্লাহ তোমাদের কাজের খবর রাখেন’। সুরা হজ্জে ‘আল্লাহ জানেন তোমরা কী করছ’ (সুরা হজ্জ, আয়াত: ৬৮)।
আরবিতে ‘বর্তমান ক্রিয়া’ (মুজারে) এটা ভবিষ্যতকেও বোঝায়। সুরা লুকমানে বলা হয়েছে, কেয়ামতের সময়, বৃষ্টি, গর্ভের সন্তান, আগামীকালের উপার্জন, মৃত্যুর স্থান– সব আল্লাহ জানেন (সুরা লুকমান, আয়াত: ৩৪)। সুরা আনআমে এসেছে ‘গায়েবের চাবি তাঁর কাছে’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৫৯)।
এটাকে ঠিক একটা আয়নার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা দেখায় আমরা কী করছি বা করবে, কিন্তু আমাদের করতে বাধ্য করে না।সুরা বাকারায় তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জানেন তোমরা তাদের স্মরণ করবে’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৫)। সুরা মুজ্জাম্মিলে ‘জানেন তোমরা গণনা করতে পারবে না’, ‘জানেন তোমাদের মধ্যে অসুস্থ হবে’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত: ২০)।
সময় আল্লাহর সৃষ্টি, মানুষ সময়ের অধীন, কিন্তু আল্লাহ নন। তাঁর জ্ঞান সময়কে অতিক্রম করে যায়। ‘আল্লাহ সবকিছু জানেন’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮২)। এখানে ‘আলিমুন’ শব্দটি স্থায়ী জ্ঞান বোঝায়। সুরা ইয়াসিনে এসেছে ‘আমি জানি তারা গোপন করে ও প্রকাশ করে’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৭৬)। সুরা তাওবায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ গায়েবসমূহ জানেন’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৭৮)।
সুরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, ‘লিয়া’লামান্নাল্লাহু’—আল্লাহ জানবেন সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদীদের (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৩)।
উপরের এই সবগুলো আয়াতে ‘জানা’ মানে প্রকাশ করা, পরীক্ষা করে দেখানো। যাতে সত্য প্রকাশ পায়, মোনাফেক ধরা পড়ে।
আরও পড়ুনআল-গাফফার: এই নামে আল্লাহ ক্ষমার অপার সমুদ্র১১ জুলাই ২০২৫পরীক্ষা মানে জিহাদ, জাকাত, ধৈর্য, পাপ ত্যাগ—এ-ধরনের কাজে মোনাফেকের কৃপণতা, ভীরুতা প্রকাশ পেয়ে যায়। একইভাবে সুরা আনকাবুতে পরে ‘আল্লাহ জানবেন ইমানদার ও মোনাফেকদের’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ১১)। যদি শুধু জ্ঞান মানে নেওয়া হয়, তাহলে আয়াতের আগে ‘আল্লাহ কি জানেন না অন্তরে যা আছে?’—এর সঙ্গে অসঙ্গতি হয়।
তাই ‘জানা’ মানে প্রকাশ করা মাত্র। সুরা হাক্কায় আছে, ‘আমি জানি তোমাদের মধ্যে মিথ্যাবাদী আছে’ (সুরা হাক্কা, আয়াত: ৪৯)। সুরা কাফে এসেছে ‘আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি, জানি তার অন্তরের ফিসফিসানি’ (সুরা কাফ, আয়াত: ১৬)।
অনেক আয়াতে আছে “লিনা’লামা”—যাতে জানি কে রাসুল অনুসরণ করে (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৩), কোন দল সঠিক গণনা করে (সুরা কাহফ, আয়াত: ১২), মুজাহিদ ও ধৈর্যশীল কারা। (সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩১)
এসব মানে প্রকাশ করা। হাদিসে আছে, কেউ জান্নাতের কাজ করে, কিন্তু শেষে জাহান্নামে যাবে, কারণ তার অন্তরে নেফাক ছিল, যা পরে প্রকাশ পায় (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৫২)
মানুষের সুযোগ আছে পরিবর্তনের। পাপ করে শাস্তি পাওয়ার আগে তওবা করলে, দোয়া করলে, সদকা দিলে শাস্তি উঠে যায়। হাদিসে আছে ‘দোয়া ছাড়া কিছু নিয়তি পরিবর্তন করে না।’এতে মোনাফেকের প্রতারণা রোধ হয়, সত্যের জয় হয়।
মানুষের সুযোগ আছে পরিবর্তনের। পাপ করে শাস্তি পাওয়ার আগে তওবা করলে, দোয়া করলে, সদকা দিলে শাস্তি উঠে যায়। হাদিসে আছে ‘দোয়া ছাড়া কিছু নিয়তি পরিবর্তন করে না’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২১৩৯)। ‘গোপন সদকা আল্লাহর ক্রোধ নিভায়, আত্মীয়তা রক্ষা আয়ু বাড়ায়’ (আল-মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, হাদিস: ৬২৫৪)। পাপ করলে রিজিক বন্ধ হয় (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৭৩৮৪)। আল্লাহ মুছে দেন যা চান, স্থির করেন যা চান (সুরা রাদ, আয়াত: ৩৯)।
ওমর (রা.) বলেছেন, ভালো কাজে ভালো, খারাপে শাস্তি (সুরা জাসিয়া, আয়াত: ১৫) এটা সাধারণ ব্যাপার, অলৌকিক কিছু নয়। ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে’ (সুরা রাদ, আয়াত: ১১)।
পথভ্রষ্ট হলে আল্লাহ তাকে সংকীর্ণ জীবন দেন, যাতে ফিরে আসে (সুরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪-১২৭)। যাকে হেদায়েত দিতে চান, তার অন্তর প্রশস্ত করেন; যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, সংকীর্ণ করেন (সুরা আনআম, আয়াত: ১২৫)।
পথভ্রষ্টদের বলুন, ‘হে ইমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর, সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের কাজ সংশোধন করবেন, পাপ মাফ করবেন’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৭০-৭১)।
সুতরাং আল্লাহর জ্ঞান আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয় না, বরং দায়িত্ব বাড়ায়। চলুন, সচেতন হয়ে ভালো পথে চলি।
আরও পড়ুনযে ৬ ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না২৮ জুন ২০২৫