ধরা যাক, জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্সের আবেদন এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে। এই আবেদন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঁচ মন্ত্রী নিয়ে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাবে বিটিআরসি। মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নেবেন, এই লাইসেন্স কে পাবে, কতটি পাবে। বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় আগে হয়তো এক মন্ত্রীর প্রভাব প্রাধান্য পেত। নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে সেখানে আরও চার মন্ত্রীর প্রভাব খাটানোর সুযোগ তৈরি হবে। বিটিআরসির কাজ হবে, সেই কমিটির ফরমাশ কার্যকর করা।

অন্তর্বর্তী সরকার টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের যে খসড়া প্রকাশ করেছে, তা কার্যকর হলে বিষয়টি এমনই দাঁড়াবে। ‘স্বাধীন’ প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি চাইছিল, প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে। অথচ ঘটতে যাচ্ছে তার উল্টো।

বর্তমান বিধান অনুযায়ী, বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়গুলো ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে হয়ে থাকে। এখন দুটি কমিটি বিটিআরসির মাথার ওপর বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একে বিটিআরসির ওপর ‘অযথা ওপরওয়ালা বসানো’র সঙ্গে তুলনা করছেন প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো.

তানভীর হোসেন।

বিটিআরসির কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, এতে কমিশনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী বলছেন, পূর্বানুমোদন যদি প্রতি পদে পদে নিতে হয়, সেটা জবাবদিহি নয়, নিয়ন্ত্রণ।

আরও পড়ুনবিটিআরসি যেন টেলিটকের ‘মামাবাড়ি’ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫বিটিআরসি চেয়েছিল স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে

২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ আইন হওয়ার পরপরই বিটিআরসি প্রতিষ্ঠা হয়। শুরুতে এই কমিশনের ওপর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ তেমন ছিল না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর টেলিযোগাযোগ খাতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে টেলিযোগাযোগ আইনে সংশোধন এনে লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন, ট্যারিফ অনুমোদনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সরকারের পূর্বানুমোদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তখন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বাড়তি নম্বর দিয়ে রাজনৈতিক কারণে অনেক লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগও আছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার এলে হারানো স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিটিআরসির কর্মকর্তারা। গত ১৬ এপ্রিল কমিশন থেকে চিঠি দেওয়া হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে।

আরও পড়ুনহারানো স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে চায় বিটিআরসি, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বানুমতির পক্ষে মন্ত্রণালয়২৪ এপ্রিল ২০২৫২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ আইন হওয়ার পরপরই বিটিআরসি প্রতিষ্ঠা হয়। শুরুতে কমিশনে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ তেমন ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আইন সংশোধন হয়। তাতে টেলিযোগাযোগ খাতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকে।

আইনে ২০১০ সালে আনা সংশোধনী বাতিল চেয়ে চিঠিতে বলা হয়েছিল, সরকারের এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি নেতিবাচক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার জন্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণের বিষয়টি বিটিআরসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষমতা খর্ব করছে। এ কারণে টেলিযোগাযোগ খাতে একটি অসম বাজারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আইন সংশোধনে হাত দেয়। গত ৪ নভেম্বর সংশোধিত আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়। এটি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে তা কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ট আরস র র জন ত ক সরক র র মন ত র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বিটিআরসি কি ফরমাশ তামিলের কমিশন হবে

ধরা যাক, জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্সের আবেদন এসেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাছে। এই আবেদন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঁচ মন্ত্রী নিয়ে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাবে বিটিআরসি। মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত নেবেন, এই লাইসেন্স কে পাবে, কতটি পাবে। বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় আগে হয়তো এক মন্ত্রীর প্রভাব প্রাধান্য পেত। নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে সেখানে আরও চার মন্ত্রীর প্রভাব খাটানোর সুযোগ তৈরি হবে। বিটিআরসির কাজ হবে, সেই কমিটির ফরমাশ কার্যকর করা।

অন্তর্বর্তী সরকার টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের যে খসড়া প্রকাশ করেছে, তা কার্যকর হলে বিষয়টি এমনই দাঁড়াবে। ‘স্বাধীন’ প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি চাইছিল, প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে। অথচ ঘটতে যাচ্ছে তার উল্টো।

বর্তমান বিধান অনুযায়ী, বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়গুলো ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে হয়ে থাকে। এখন দুটি কমিটি বিটিআরসির মাথার ওপর বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একে বিটিআরসির ওপর ‘অযথা ওপরওয়ালা বসানো’র সঙ্গে তুলনা করছেন প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন।

বিটিআরসির কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, এতে কমিশনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বাড়বে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. এমদাদ উল বারী বলছেন, পূর্বানুমোদন যদি প্রতি পদে পদে নিতে হয়, সেটা জবাবদিহি নয়, নিয়ন্ত্রণ।

আরও পড়ুনবিটিআরসি যেন টেলিটকের ‘মামাবাড়ি’ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫বিটিআরসি চেয়েছিল স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে

২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ আইন হওয়ার পরপরই বিটিআরসি প্রতিষ্ঠা হয়। শুরুতে এই কমিশনের ওপর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ তেমন ছিল না।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর টেলিযোগাযোগ খাতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকে। ২০১০ সালে টেলিযোগাযোগ আইনে সংশোধন এনে লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন, ট্যারিফ অনুমোদনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে সরকারের পূর্বানুমোদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তখন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিটিআরসির নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে বাড়তি নম্বর দিয়ে রাজনৈতিক কারণে অনেক লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগও আছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার এলে হারানো স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে আশাবাদী হয়ে ওঠেন বিটিআরসির কর্মকর্তারা। গত ১৬ এপ্রিল কমিশন থেকে চিঠি দেওয়া হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে।

আরও পড়ুনহারানো স্বায়ত্তশাসন ফিরে পেতে চায় বিটিআরসি, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্বানুমতির পক্ষে মন্ত্রণালয়২৪ এপ্রিল ২০২৫২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ আইন হওয়ার পরপরই বিটিআরসি প্রতিষ্ঠা হয়। শুরুতে কমিশনে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ তেমন ছিল না। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আইন সংশোধন হয়। তাতে টেলিযোগাযোগ খাতে রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকে।

আইনে ২০১০ সালে আনা সংশোধনী বাতিল চেয়ে চিঠিতে বলা হয়েছিল, সরকারের এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার পাশাপাশি নেতিবাচক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনার জন্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণের বিষয়টি বিটিআরসির স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষমতা খর্ব করছে। এ কারণে টেলিযোগাযোগ খাতে একটি অসম বাজারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

এরপর অন্তর্বর্তী সরকার আইন সংশোধনে হাত দেয়। গত ৪ নভেম্বর সংশোধিত আইনের খসড়া প্রকাশ করা হয়। এটি উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে তা কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)

সম্পর্কিত নিবন্ধ