গুম-খুনে জড়িত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি
Published: 12th, October 2025 GMT
গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানই আইনের শাসনের ঊর্ধ্বে নয় উল্লেখ করে তারা বলেছে, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কোনো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদার অবমাননা নয়; বরং এটি দায়িত্বশীলতা, পেশাদারত্ব ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের প্রকাশ। তাই আমরা সেনা নেতৃত্ব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, অপরাধীদের তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ায় পূর্ণ সহযোগিতা করুন।’
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন ছাত্র ইউনিয়নের এই অংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছাত্র ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সেনা, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের গ্রেপ্তার কার্যকর করা হয়নি। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও তাঁর শাসনামলের শীর্ষ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধেও গুম-খুন, নির্যাতন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগে তদন্ত শুরু হলেও বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান নয়। এই বিলম্ব ও দীর্ঘসূত্রতা জনগণের ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা নষ্ট করছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে আরও প্রলম্বিত করছে।’
ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বলেছেন, ‘আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না; এটি ছিল অন্যায়, স্বৈরশাসন ও রাষ্ট্রীয় দমননীতির বিরুদ্ধে জনগণের ঐতিহাসিক প্রতিরোধ। সেই অভ্যুত্থানের পর জনগণ একটি ন্যায়ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্নে একত্র হয়েছে। কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত গুম, খুন ও নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারে রাষ্ট্রীয় গাফিলতি সেই স্বপ্নকে বিপন্ন করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘গুম কমিশনের প্রতিবেদনে ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮০০-এর বেশি গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমজীবী মানুষ, নারী ও শিশুরা। সেনাবাহিনী, র্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার ছত্রচ্ছায়ায় “আয়নাঘর”সহ গোপন বন্দিশালায় সংঘটিত এসব অপরাধ মানবতার ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই নৃশংসতায় শেখ হাসিনা সরকার ও সংশ্লিষ্ট সামরিক-পুলিশ কর্মকর্তারা সরাসরি দায়ী। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করেনি, বরং জনগণের ন্যায্য আন্দোলন দমনে ইচ্ছাকৃতভাবে গণবিরোধী অবস্থান নিয়ে জুলুম করেছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের ৫৮ সেনা হত্যার দাবি কাবুলের, ১৯ আফগান ফাঁড়ি ‘দখল’ ইসলামাবাদের
আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে গতকাল শনিবার রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের পর কাবুল দাবি করেছে, তাদের অভিযানে ৫৮ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। অন্যদিকে সংঘর্ষকালে আফগান সীমান্তের ১৯টি ফাঁড়ি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে কাবুলে পাকিস্তানের বিমান হামলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে ওই সংঘর্ষ হয়।
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের বরাতে দেশটির সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ আজ রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়, পাকিস্তানের বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র আফগান বাহিনীর হাতে এসেছে। অভিযানে ২০ জনের বেশি তালেবান সেনা হতাহত হয়েছেন।
পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে তালেবান সরকারের এ দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
আজ সকালে তালেবান কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা কুনার ও হেলমান্দ প্রদেশের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়ে তিনটি ফাঁড়ি দখল করেছে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, তাদের সেনারা ১৯টি আফগান সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করেছেন। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে বলা হয়েছে, এসব ফাঁড়িতে থাকা আফগান সেনারা হয় নিহত হয়েছেন, নয় পালিয়েছেন।আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এনায়েতুল্লাহ খোয়ারিজমি গত রাতে বলেন, আফগানিস্তানের ভূখণ্ডে বারবার পাকিস্তানের সীমানা লঙ্ঘন ও বিমান হামলার জবাবে তালেবান ‘সফল প্রতিশোধমূলক অভিযান’ চালিয়েছে। এক্সে তিনি বলেন, অভিযানটি মধ্যরাতে শেষ হয়েছে।
আরও পড়ুনসংঘর্ষের পর আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা পাকিস্তানের১ ঘণ্টা আগেঅন্যদিকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, দেশটির সেনারা ১৯টি আফগান সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করেছেন। নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে বলা হয়, এসব ফাঁড়িতে থাকা আফগান যোদ্ধারা হয় নিহত হয়েছেন, নয় পালিয়েছেন।
পাকিস্তান টেলিভিশনে (পিটিভি) সম্প্রচারিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, কুররাম অঞ্চলে আফগান সীমান্ত ফাঁড়িগুলোয় আগুন জ্বলছে। কয়েকজন আফগান সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন বলে সেখানে দাবি করা হয়।
বেসামরিক জনগণের ওপর আফগান বাহিনী গুলিবর্ষণ করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আফগানিস্তান বিনা উসকানিতে এ হামলা করেছে। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে এর জবাব দিয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না।—মোহসিন নাকভি, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীআবার নিরাপত্তা–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে রেডিও পাকিস্তান বলেছে, পাকিস্তানি বাহিনী তালেবানের মানোজবা ক্যাম্প ব্যাটালিয়ন সদর, জান্দুসার ফাঁড়ি, তুর্কমেনজাই ক্যাম্প ও খারচার ফোর্ট ধ্বংস করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমটি আরও বলে, সীমান্তের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটিতে ‘অত্যন্ত নিখুঁতভাবে’ হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলার দুদিন পর এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। গত বৃহস্পতিবারের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে তালেবান।পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির দাবি, বেসামরিক জনগণের ওপর আফগান বাহিনী গুলিবর্ষণ করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। আফগানিস্তান বিনা উসকানিতে এ হামলা করেছে। পাকিস্তানের সাহসী বাহিনী দ্রুত ও কার্যকরভাবে এর জবাব দিয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি সহ্য করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানের কর্মকাণ্ড উসকানিমূলক, জবাব হবে কড়া: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী১ ঘণ্টা আগেআফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বিমান হামলার দুই দিন পর এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। গত বৃহস্পতিবারের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে তালেবান।
তবে ইসলামাবাদ ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি; বরং তারা অভিযোগ করেছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে; যারা ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
নয়াদিল্লি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আর তালেবান জানিয়েছে, তারা তাদের ভূখণ্ড অন্য দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেয় না।
আরও পড়ুনসীমান্তে পাকিস্তানের সেনা ও তালেবানের মধ্যে গোলাগুলি৫ ঘণ্টা আগে