আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, যারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে, তাঁদের বিষয়সহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ বুধবার ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে ‘বিজিবির নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ও মহড়া’ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে বিজিবির ১২১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে বলে বাহিনীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলে তা কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তা নিয়েই চলে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ও মহড়া।

সিইসি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের কী রকম প্রস্তুতি, সেটির একটি নমুনা আপনারা দেখেছেন। আমাদের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা নির্বাচনে যুক্ত করব। এটি আমার তৃতীয় মহড়া পরিদর্শন। এর আগে পুলিশ ও আনসার–ভিডিপির মহড়া পরিদর্শন করেছি। তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনের জন্য। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা যাতে তাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে পারে, সে জন্য তারা এসব মহড়ার মাধ্যমে তাদের সদস্যদের তৈরি করছে।’

মহড়া আয়োজনের জন্য বিজিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এ প্রশিক্ষণ নির্বাচনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশাল প্রভাব রাখবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সবার সহযোগিতা চেয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা আমাদের সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও আমাদের প্রায় ১৩ কোটি ভোটার মিলে, আমরা জাতিকে যে ওয়াদা দিয়েছি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ নির্বাচনের, সেটি আমরা অর্জন করতে পারব।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন আসতে আসতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে বিজিবির ১২১০ প্লাটুন সদস্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে। তিনটি দ্বীপ উপজেলা—সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও কুতুবদিয়া ছাড়া বাকি সব উপজেলায় বিজিবি থাকবে। সীমান্তবর্তী ১১৫টি উপজেলার মধ্যে ৬০টিতে বিজিবি সদস্য এককভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবে।

মহড়া পরিদর্শনের সময় সিইসির সঙ্গে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে সিইসি বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ শাকিল আহমেদ হলে সব পর্যায়ের বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে ডিবি হেফাজতে দুজনের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি

ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে ডিবি পুলিশের হেফাজতে দুই নাগরিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। ঘটনাগুলোকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে দুই ঘটনার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন দুটি। আজ রোববার গণমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত বিবৃতি পাঠিয়েছেন সংগঠন দুটির নেতারা।

বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি আসকের

আইন ও সালিশ কেন্দ্র তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, গণমাধ্যমের সূত্রে ঢাকা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ডিবি পুলিশের হেফাজতে মুক্তার হোসেন ও শাহাদত হোসেন নামের দুই নাগরিকের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এ ঘটনায় আসক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

আসক মনে করে, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব ও সাংবিধানিক কর্তব্য। এ ধরনের মৃত্যু আমাদের জাতীয় মানবাধিকার অঙ্গীকার, সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার প্রয়াসে নতুন করে আলোচনা ও মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

বিবৃতিতে আসক বলেছে, রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা কোনো ব্যক্তির মৃত্যু অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। এটি সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকারকে লঙ্ঘন করে। একই সঙ্গে এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের মৌলিক নীতির পরিপন্থী। যেখানে হেফাজতে থাকা ব্যক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের আইনগত ও নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।

আসকের হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানা হেফাজতসহ, র‍্যাব, পিবিআই ও ডিবির হেফাজতে রাখা অবস্থায় দেশে কমপক্ষে ১৫ নাগরিকের মৃত্যু ঘটেছে। এটা কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি দায়িত্বহীনতা, জবাবদিহির অভাব ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার সংকটকে আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরে।

হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি জানিয়ে আসক বলেছে, সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোতে দায়ী ব্যক্তিদের দায় নিরূপণ করে আইনগত জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচারের অধিকার এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করাও অত্যাবশ্যক।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ

একইভাবে ডিবি হেফাজতে দুই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। নিহত ওই দুই ব্যক্তি অভিযুক্ত আসামি ছিলেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, স্বজনদের অভিযোগ, ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।

বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন মনে করে, গোয়েন্দা পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দুটি মৃত্যুর বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দাবি রাখে। কারণ, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যু জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে থাকা যেকোনো ব্যক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আইনি দায়িত্ব। এমএসএফ মোক্তার ও শাহাদতের মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিবারের অভিযোগের বিষয়টি অনতিবিলম্বে গুরুত্ব দিয়ে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো ভালো হবে: সিইসি
  • সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কাজে মিল দেখতে চাই
  • নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: নৌবাহিনী প্রধান
  • মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপির ৫ সদস্যকে আটক করেছে বিজিবি
  • ঢাকা ও সিরাজগঞ্জে ডিবি হেফাজতে দুজনের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি
  • ভোটের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলায় অবনতির শঙ্কা দেখছেন না স্বরাষ্ট্র উপদে
  • ভূমিকম্প সতর্কতা অ্যাপের বিষয়ে ভাবছে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা