দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-ঘোড়াঘাট-হাকিমপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আয়ের উৎস বহির্ভূত প্রায় ৮ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে দুদকের দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ে এ মামলা দায়ের করা হয়। দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো.

আলম মিয়া বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপি নেতার জামিন নামঞ্জুর, আইনজীবীর উপর হামলার চেষ্টা

ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার

দিনাজপুর দুদকের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে, সাবেক এমপি শিবলী সাদিক বৈধ আয়ের উৎস ছাড়াই বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। যথাযথ তদন্ত, নথিপত্র যাচাই ও কমিশনের অনুমোদনক্রমে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি এখন তদন্তাধীন রয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, শিবলী সাদিক বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মোট ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে যেসব সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার আফতাবগঞ্জে ৬ তলা ভবন, ঢাকার ধানমণ্ডিতে ২ হাজার ২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, কক্সবাজারে দুটি ফ্ল্যাট, দিনাজপুরের রাণীপুরে স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কের ৫০ শতাংশ মালিকানা, নবাবগঞ্জ, বিরামপুর ও হাকিমপুর থানার বিভিন্ন মৌজায় ৪৫ দশমিক ৫২ একর জমি

দুদক জানায়, এসব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ১৯ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ৩০৪ টাকা। দায়-দেনা বাদে নিট সম্পদ ১৫ কোটি ৯৪ লাখ ২২ হাজার ৩০৪ টাকা। বৈধ আয়ের পরিমাণ ১০ কোটি ৮০ লাখ ২ হাজার ৭০৮ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় ২ কোটি ৮২ লাখ ১৪ হাজার ৩৭ টাকা। অব্যাখ্যাত (যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি) সম্পদ ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৬৫ টাকা। বৈধ উৎস ছাড়া এই বিপুল সম্পদ অর্জনের প্রমাণ দেখাতে না পারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে দুদক জানিয়েছে।

মামলাটি এখন দুদকের তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। 
 

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স থ বর তদন ত বগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষকের ৩১টি পদ শূন্য, ১টি বিষয়ে কেউ নেই পাঁচ বছর

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৭৬টি। এর বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ৪৫ জন। শিক্ষকের ৩১টি পদ খালি রয়েছে দুই থেকে পাঁচ বছর ধরে। শিক্ষকসংকটের কারণে কলেজটিতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঠিকমতো ক্লাসে পাঠদান না হওয়ায় তাঁদের কোচিংনির্ভর হয়ে পড়তে হচ্ছে। সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কলেজে বাংলাসহ ১১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু থাকলেও অধিকাংশ বিভাগেই রয়েছে শিক্ষকসংকট। বাংলা বিভাগে অনুমোদিত চারটি পদের বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। তিনিই স্নাতকসহ (সম্মান) সব শ্রেণির বাংলা বিষয়ে ক্লাস নেন।

কলেজসূত্রে জানা গেছে, কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে একজন শিক্ষকও নেই। পাঁচ বছর ধরে এ বিষয়ে শিক্ষকের দুটি পদই শূন্য। একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েই উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে পাঠদান করা হচ্ছে।

কলেজে বাংলাসহ ১১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু থাকলেও অধিকাংশ বিভাগেই রয়েছে শিক্ষকসংকট। বাংলা বিভাগে অনুমোদিত চারটি পদের বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। তিনিই স্নাতকসহ (সম্মান) সব শ্রেণির বাংলা বিষয়ে ক্লাস নেন।

একই ভাবে দর্শন বিভাগে তিনজন শিক্ষকের বিপরীতে একজন, সমাজকর্ম বিভাগে তিনজনের বিপরীতে একজন, রসায়ন বিভাগে চারজনের বিপরীতে দুজন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে সাতজনের বিপরীতে চারজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, কলেজে রয়েছে ছয়টি ভবন। এসব ভবনে থাকা শ্রেণিকক্ষের কোনোটিতে ক্লাস হচ্ছে, কোনোটিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকলেও শিক্ষক নেই। কলেজের মাঠে আড্ডা দিতে দেখা যায় কিছু শিক্ষার্থীকে।

শিক্ষকসংকট নিরসনের বিষয়ে আবেদন-নিবেদন, মানববন্ধন—কোনোটাই বাদ রাখিনি। তবু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিক্ষকসংকটের মধ্যেই কলেজের পাঠদান চলছে।মামুনুর রশিদ, শিক্ষার্থী, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ

জাকির হোসেন নামের একজন জানান, তিনি বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। তাঁর বিভাগে নিয়মিত ক্লাস হয় না। বাজারের গাইড বই ও নোট সংগ্রহ করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এলেই তাঁদের উদ্বেগ বেড়ে যায়।

স্নাতকের (পাস) আরেক শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘শিক্ষকসংকট নিরসনের বিষয়ে আবেদন-নিবেদন, মানববন্ধন—কোনোটাই বাদ রাখিনি। তবু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিক্ষকসংকটের মধ্যেই কলেজের পাঠদান চলছে।’

শিক্ষকেরা জানান, কলেজের শিক্ষকসংকটের বিষয়টি বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও শূন্য পদে শিক্ষক পদায়নের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মঞ্জুরুর রহমান বলেন, ‘প্রতি মাসেই এ বিষয়ে চিঠি দিচ্ছি। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে গিয়েও সংকটের বিষয়টি জানিয়েছি, তবু সমস্যার সমাধান হয়নি। সংকটের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান যাতে ব্যাহত না হয়, সেই চেষ্টায় করা হয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ