চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না মাহবুব। সদ্য অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে সহক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন তিনি। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১৪ জন। এতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী প্রতিনিধি।

তামান্না মাহবুব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য। গত বছর আগস্টের পর তিনি সংগঠনটিতে যুক্ত হন। এ নির্বাচনে তিনি ছাত্র ফেডারেশন ও স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি সমর্থিত প্যানেলের ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্রার্থী ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নির্বাচনের ২৬টি পদের ২৪টিতেই জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। আর একটিতে জিতেছে ছাত্রদল। এ দুই দলের বাইরে তিনিই একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি। দৌড়, চাকতি, লম্বা জাম্প, ম্যারাথন, ভলিবল থেকে শুরু করে নানা ক্রীড়ার কর্মসূচিতে থাকায় এ পদে শুরু থেকেই আলোচিত ছিলেন তিনি।

তামান্নার খেলাধুলার যাত্রা হয়েছিল কলেজজীবন থেকে। ছোটবেলা থেকেই দৌড়, চাকতি নিক্ষেপ, লম্বা জাম্প সবকিছুতেই তিনি ছিলেন পারদর্শী। ২০১৭ সালে কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৮০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন, পরের বছরও হন ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে সেই ধারাই বজায় রেখেছেন তামান্না। অংশ নিয়েছেন ইন্টার ইউনিভার্সিটি হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট, আন্তজেলা ভলিবল প্রতিযোগিতা ও জাতীয় পর্যায়ের নারী ভলিবল টুর্নামেন্টেও। নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন দেশজুড়ে নানা ম্যারাথন ও লম্বা রান প্রতিযোগিতায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এখন ‘দ্রুততম মানবী’ খেতাবের অধিকারী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হল ও কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

সেই খেলাধুলার ১১ বছরের অভিজ্ঞতা এখন চাকসুতে কাজে লাগাতে চান তামান্না মাহবুব। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা শুধু আমার নেশা নয়, এটা আমার আত্মার একটা অংশ। আমি জানি মাঠে মেয়েদের কী কী বাধা আসে। সহক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে আমি চাই মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ুক, তারা যেন নিজেদের সক্ষমতা বুঝতে পারে।’

অবশ্য শুধু মেয়েদের জন্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের খেলাধুলায় উন্নয়ন করতে চান তিনি। নিয়মিত টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন আয়োজন করতে চান তিনি । তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাস গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম। আমি চাই, ক্যাম্পাসে এমন পরিবেশ তৈরি হোক যেখানে ছেলেমেয়ে–নির্বিশেষে সবাই অংশ নিতে উৎসাহিত হয়।’

সহক্রীড়া সম্পাদক বলেন, ‘ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন হবে। ছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য হলেও আমার সবচেয়ে ভালো কাজ করতে হবে। মানুষজনকেও বিশ্বাস করাতে হবে যে একজন ছাত্রী পদে এলেও সে পারবে। যাতে সবাইকে বোঝানো যায়, আপনি চাইলেই ছাত্রীদের বিশ্বাস করতে পারেন।’

নির্বাচন নিয়ে নিজের সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তামান্না। তিনি বলেন, খেলাধুলা আর একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে সংগঠনকে তেমন সময় দিতে পারেননি। এরপরও সংগঠনের সবার কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছেন। নির্বাচনের খরচ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সাহায্য করেছে।

তামান্না মাহবুব বলেন, ‘আমার এই জয় কেবল নিজের নয়, বরং সেই মেয়েদের জয়, যাঁরা এখনো নেতৃত্বে আসতে দ্বিধাবোধ করেন। ভবিষ্যতেও আবার নির্বাচন হবে। আমি চাই, আমার কাজ দেখে মেয়েরা সাহস পাক। সবাই যেন বিশ্বাস করে, সুযোগ দিলে ছাত্রীরাও পারে। আমি এটি দেখিয়ে দিতে চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হব ব

এছাড়াও পড়ুন:

অবশেষে সৎকার হলো হিমাগারে থাকা ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমাগারে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ভারতীয় নাগরিক রাজনের (৬৩) মরদেহের সৎকার করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে পৌরসভার মনোহরবাজার শ্মশানঘাটে মরদেহটি সৎকার করা হয়। প্রায় ৭ মাস ধরে এই মরদেহ সদর হাসপাতালের হিমাগারে রাখা ছিল।

আরো পড়ুন:

নড়াইলে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাংবাদিকের ভাইয়ের মৃত্যু

নবাবগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে বৃদ্ধের মৃত্যু, ভস্মীভূত ১১ ঘর 

রাজন ভারতের দিল্লি প্রদেশের দিলিপের ছেলে। তবে তার জেলার নাম জানা যায়নি।

শরীয়তপুর কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজন নামে এই ব্যক্তিকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়। ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই মামলায় তাকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি আর পি বন্দী হিসেবে কারাগারে ছিলেন। 

গত ১৮ মে রাজন অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই রাজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের হিমাগারে রাখা ছিলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহটি সৎকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

শরীয়তপুরের জেল সুপার বজলুর রশিদ বলেন, “রাজন নামের ওই ব্যক্তি আর পি বন্দী ছিলেন। হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এরপর থেকে তার মরদেহ হিমাগারে রাখা ছিল। পরে দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) উচ্চ পর্যায়ে সভার মাধ্যমে মরদেহটি দাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সৎকার শেষে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়ে দেব।” 

ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ