নারীরাও পারে, এটি দেখিয়ে দিতে চাই: তামান্না মাহবুব
Published: 16th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তামান্না মাহবুব। সদ্য অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে সহক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন তিনি। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ১৪ জন। এতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী প্রতিনিধি।
তামান্না মাহবুব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সদস্য। গত বছর আগস্টের পর তিনি সংগঠনটিতে যুক্ত হন। এ নির্বাচনে তিনি ছাত্র ফেডারেশন ও স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি সমর্থিত প্যানেলের ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্রার্থী ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ নির্বাচনের ২৬টি পদের ২৪টিতেই জিতেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। আর একটিতে জিতেছে ছাত্রদল। এ দুই দলের বাইরে তিনিই একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি। দৌড়, চাকতি, লম্বা জাম্প, ম্যারাথন, ভলিবল থেকে শুরু করে নানা ক্রীড়ার কর্মসূচিতে থাকায় এ পদে শুরু থেকেই আলোচিত ছিলেন তিনি।
তামান্নার খেলাধুলার যাত্রা হয়েছিল কলেজজীবন থেকে। ছোটবেলা থেকেই দৌড়, চাকতি নিক্ষেপ, লম্বা জাম্প সবকিছুতেই তিনি ছিলেন পারদর্শী। ২০১৭ সালে কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৮০০ ও ৪০০ মিটার দৌড়ে প্রথম হন, পরের বছরও হন ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে সেই ধারাই বজায় রেখেছেন তামান্না। অংশ নিয়েছেন ইন্টার ইউনিভার্সিটি হ্যান্ডবল টুর্নামেন্ট, আন্তজেলা ভলিবল প্রতিযোগিতা ও জাতীয় পর্যায়ের নারী ভলিবল টুর্নামেন্টেও। নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন দেশজুড়ে নানা ম্যারাথন ও লম্বা রান প্রতিযোগিতায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এখন ‘দ্রুততম মানবী’ খেতাবের অধিকারী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হল ও কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
সেই খেলাধুলার ১১ বছরের অভিজ্ঞতা এখন চাকসুতে কাজে লাগাতে চান তামান্না মাহবুব। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা শুধু আমার নেশা নয়, এটা আমার আত্মার একটা অংশ। আমি জানি মাঠে মেয়েদের কী কী বাধা আসে। সহক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে আমি চাই মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ুক, তারা যেন নিজেদের সক্ষমতা বুঝতে পারে।’
অবশ্য শুধু মেয়েদের জন্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের খেলাধুলায় উন্নয়ন করতে চান তিনি। নিয়মিত টুর্নামেন্টসহ বিভিন্ন আয়োজন করতে চান তিনি । তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাস গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম। আমি চাই, ক্যাম্পাসে এমন পরিবেশ তৈরি হোক যেখানে ছেলেমেয়ে–নির্বিশেষে সবাই অংশ নিতে উৎসাহিত হয়।’
সহক্রীড়া সম্পাদক বলেন, ‘ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন হবে। ছাত্রীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য হলেও আমার সবচেয়ে ভালো কাজ করতে হবে। মানুষজনকেও বিশ্বাস করাতে হবে যে একজন ছাত্রী পদে এলেও সে পারবে। যাতে সবাইকে বোঝানো যায়, আপনি চাইলেই ছাত্রীদের বিশ্বাস করতে পারেন।’
নির্বাচন নিয়ে নিজের সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তামান্না। তিনি বলেন, খেলাধুলা আর একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে সংগঠনকে তেমন সময় দিতে পারেননি। এরপরও সংগঠনের সবার কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছেন। নির্বাচনের খরচ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সাহায্য করেছে।
তামান্না মাহবুব বলেন, ‘আমার এই জয় কেবল নিজের নয়, বরং সেই মেয়েদের জয়, যাঁরা এখনো নেতৃত্বে আসতে দ্বিধাবোধ করেন। ভবিষ্যতেও আবার নির্বাচন হবে। আমি চাই, আমার কাজ দেখে মেয়েরা সাহস পাক। সবাই যেন বিশ্বাস করে, সুযোগ দিলে ছাত্রীরাও পারে। আমি এটি দেখিয়ে দিতে চাই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হব ব
এছাড়াও পড়ুন:
রায়ো ভায়েকানোর মাঠে থমকে গেল রিয়াল
চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঝসপ্তাহে লিভারপুলের বিপক্ষে হারের পর নতুন করে জয়ের ছন্দে ফেরার আশায় মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু শহরের প্রতিবেশী ক্লাব রায়ো ভায়েকানোর মাঠে গিয়ে তাদের ভাগ্যে জুটল কেবলই হতাশা। গোলশূন্য ড্রয়ে পয়েন্ট হারিয়েছে তারা।
বাংলাদেশ সময় রবিবার (০৯ নভেম্বর) রাতে মাদ্রিদের ভায়েকাস স্টেডিয়ামে ম্যাচটা যেন শুরু থেকেই গুমোট। সুযোগ ছিল দুই দলেরই, কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত গোল খুঁজে পায়নি। পুরো ম্যাচে উজ্জ্বল ছিলেন রায়ো গোলরক্ষক অগুস্তো ব্যাটালা। যিনি ভিনিসিউস জুনিয়র ও জুড বেলিংহ্যামকে একাধিকবার ঠেকিয়ে দেন।
ম্যাচের শুরুটা কিছুটা বিশৃঙ্খলই ছিল। ২১ মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় রায়ো। ডিফেন্ডার আন্দ্রে রাটিউ দারুণ দৌড়ে উঠে এসে শট নেন। কিন্তু সরাসরি থিবো কোর্তোয়ার গ্লাভসে। এক মিনিট পরই পাল্টা জবাব দেয় রিয়াল। ভিনিসিউস জুনিয়রের টার্ন থেকে নেওয়া শট চমৎকার রিফ্লেক্সে ঠেকান ব্যাটালা। ফিরতি বলে রাউল আসেনসিওর হেড সামান্য বাইরে চলে যায়। ২৭ মিনিটে ইনজুরিতে পড়ে রায়োকে বদলি আনতে হয়। পেদ্রো দিয়াসের জায়গায় নামেন পাচা এসপিনো।
হাফটাইমের ঠিক আগে ভিনিসিউস আবার আলো ছড়ানোর চেষ্টা করেন। বক্সে কেটে ঢুকে ডান পায়ে বাঁকানো শট নেন। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় তা। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই।
বিরতির পর দুই দলই আরও আক্রমণাত্মক হয়ে নামে। রায়োর হোর্হে দে ফ্রুতোস কাছাকাছি থেকে শট নেন, বল লাগে জালের বাইরের পাশে। অপর প্রান্তে তরুণ আরদা গুলার নেন দূরপাল্লার শট, যায় পোস্টের বাইরে। এরপর বেলিংহ্যাম নিজের ক্লাসিক ছোঁয়ায় হুমকি দেন। ডায়াগোনাল পাস ধরে কোণাকুণি শটে লক্ষ্যভেদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাটালা আবারও দেয়াল হয়ে দাঁড়ান।
ঘণ্টা পেরোতেই এমবাপ্পে তৈরি করেন দারুণ মুহূর্ত। ডান প্রান্ত থেকে বাঁ পায়ে কাটা শট নেন। কিন্তু তা অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে যায়। শেষ ২০ মিনিটে রিয়াল চাপ বাড়িয়ে দেয়। ফেডে ভালভার্দের নিচু শট ফিরিয়ে দেন ব্যাটালা। যার পর থেকেই যেন রিয়াল বুঝে যায় আজ গোল পাওয়া কঠিনই হবে।
রায়ো, যারা আগের আট ম্যাচে ছয়টিতেই জয় পেয়েছিল, এদিন তারা নিজেদের রক্ষণ এতটাই গোছানো রেখেছিল যে রিয়াল কোনোভাবেই ভাঙতে পারেনি তাদের দেয়াল। শেষ মুহূর্তে দানি সেবাইয়োস একবার জোরালো শট নেন, যায় বাইরে। ইনজুরি টাইমে গুলার ডি-বক্সে ঢুকে দুর্দান্ত ড্রিবল করলেও শেষ মুহূর্তে রক্ষণের চাপ সামলে ফেলেন রায়োর খেলোয়াড়রা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের কাছে ১-০ হারের পর এই ড্র নিঃসন্দেহে রিয়ালের জন্য হতাশাজনক। তবে ১২ ম্যাচ থেকে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগার টেবিলে তারা এখনো শীর্ষে।
ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ জানালেন, “আমরা সুযোগ তৈরি করেছি, কিন্তু শেষ মুহূর্তের ছোঁয়াটা পাইনি। ব্যাটালা দারুণ খেলেছে। আজ গোল পাওয়া সত্যিই কঠিন ছিল।”
ঢাকা/আমিনুল